Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
True Story of Jonestown

জঙ্গলে ‘উপনিবেশ’ গড়ে মাদকসেবন, কিশোরীদের নির্যাতন! ৯০০ অনুগামীকে বিষ খাইয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য করেন ‘ধর্মগুরু’

১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর পিপল্‌স টেম্পল নামের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জিম জোন্স। তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক বৃহৎ কৃষিখামার গড়ে তোলেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৫ ১১:৪৭
Share: Save:
০১ ১৮
True Story of Jonestown

ভরা সভার মাঝখান থেকেই উঠে একটি জরুরি কাজে চলে যেতে হয়েছিল জিম কার্টারকে। দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূলের একটি দেশ গায়ানায় বসেছিল জরুরিভিত্তিক এক ধর্মসভা। সেই ধর্মেরই অনুসারী ছিলেন জিম। জোন্সটাউন নামের একটি ক্ষুদ্র শহরের কম্পাউন্ডের ভিতরে একটি চত্বরে বসেছিল সেই জরুরি সভা। কিছু ক্ষণের জন্য সভা ছেড়ে চলে যান জিম।

০২ ১৮
True Story of Jonestown

ফিরে আসার পর তিনি যে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা দেখে বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল জিমের। সভার চত্বরে পড়ে কাতরাচ্ছেন শয়ে শয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা। সেই সমস্ত মৃত্যুপথযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন জিমের স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু এবং প্রতিবেশীরাও। জোন্সটাউনের আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল মৃত্যুর হাহাকার। চিৎকার ও ক্রন্দনরোলে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল সভাচত্বর।

০৩ ১৮
True Story of Jonestown

পরে সেনাবাহিনী এসে দেখে জোন্সটাউনের প্রাঙ্গণে ৯০০ জনেরও বেশি আমেরিকানের মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। হতভাগ্যেরা সকলেই স্বঘোষিত ধর্মগুরু জিম জোন্সের অনুসারী ছিলেন। আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার মধ্যে একটি হল জোন্সটাউনের এই গণ-আত্মহত্যা। একসঙ্গে ৯০০ জন বিষপান করে আত্মহত্যা করেছিলেন সে দিন।

০৪ ১৮
True Story of Jonestown

১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর, পিপল্‌স টেম্পলের প্রতিষ্ঠাতা জিম জোন্স দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক বৃহৎ কৃষিখামার গড়ে তোলেন। তাঁর শত শত অনুসারী সেখানে বসবাস করা শুরু করেন। সে দিন জোন্সের বহু অনুসারী স্বেচ্ছায় বিষমিশ্রিত পানীয় খেয়েছিলেন। যাঁরা আত্মহত্যা করতে অরাজি ছিলেন তাঁরাও বন্দুকের নলের সামনে ধর্মগুরুর আদেশ পালন করতে বাধ্য হন। সে দিন জোন্সটাউনে চূড়ান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৯০৯। নিহতদের এক তৃতীয়াংশই ছিল শিশু।

০৫ ১৮
True Story of Jonestown

জিম জোন্স ছিলেন বাক্‌পটু ও অন্যদের সহজেই আকৃষ্ট করতে পারতেন। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ানাপোলিসে ‘পিপল্‌স টেম্পল’ নামে একটি খ্রিস্টান উপ-সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন।

০৬ ১৮
True Story of Jonestown

তিনি নাগরিক অধিকার এবং তৎকালীন মার্কিন সমাজে বিদ্যমান অবিচারের বিরুদ্ধে সুর চ়ড়িয়েছিলেন। সে কারণে তাঁর ধর্মোপদেশগুলি বহু আফ্রো-আমেরিকানের কাছে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পায়।

০৭ ১৮
True Story of Jonestown

এর পর খ্রিস্টীয় এক উপশাখার ধর্মপ্রচারে বেরিয়ে পড়েন জোন্স। কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কিছু অনুগামীও জুটিয়ে ফেলেন। বিভিন্ন মহলে শোনা যেতে থাকে তাঁর নাম। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ধর্মোপদেশগুলি। ৭০-এর দশকে সান ফ্রান্সিসকোয় চলে যান জোন্স।

০৮ ১৮
True Story of Jonestown

তখন তাঁর ধর্মসভার সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল। এঁদের অনেকেই বলতে শুরু করেন যে তাঁরা জোন্সের যুদ্ধবিরোধী এবং পুঁজিবাদবিরোধী বার্তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোন্সের মনোভাব পাল্টাতে শুরু করে বলে পরে তাঁর বেঁচে থাকা অনুগামীরা স্বীকার করে নেন।

০৯ ১৮
True Story of Jonestown

ক্ষমতা ও খ্যাতি বাড়তে থাকার পর জোন্স আরও চরমপন্থী হয়ে ওঠেন। যাঁরা তাঁকে অসন্তুষ্ট করতেন তাঁদের অপমান, এমনকি মারধরও করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। প্রাক্তন অনুসারীদের দাবি, তিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের প্রতি অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়েন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন।

১০ ১৮
True Story of Jonestown

১৯৬৫ সালে তিনি তাঁর দলের সদস্যদের নিয়ে সংগঠনটিকে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থানান্তরিত করেন। ১৯৭১ সালের পরে তাঁরা সান ফ্রান্সিসকোয় বসতি স্থাপন করেন। ৭০-এর দশকে তাঁর গির্জার বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি, সদস্যদের শারীরিক নির্যাতন এবং শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিল সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম।

১১ ১৮
True Story of Jonestown

১৯৭৪ সালে জোন্স গায়ানা সরকারের কাছ থেকে ৩ হাজার ৮০০ একরেরও বেশি বিচ্ছিন্ন জঙ্গল লিজ়ে নিয়ে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি তাঁর এই ধর্মসভার জন্য কাল্পনিক ‘স্বর্গরাজ্য’ গড়ে তোলার পক্ষে আদর্শ। ১৯৭৮ সালের মধ্যে তাঁর প্রায় ১,০০০ অনুসারী নিয়ে গায়ানায় নির্জন জঙ্গলে চলে যান। সেখানে জোন্সটাউন নামে একটি খামার ও ক্ষুদ্র বসতি গড়ে তোলেন।

১২ ১৮
True Story of Jonestown

এখানে আসার পর তাঁর অনুগামীদের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। গায়না আসার আগে পূর্ব প্রতিশ্রুতির কিছুই অবশিষ্ট রাখা হয়নি। নারী-পুরুষ উভয়কেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হত। জীবনধারণের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হত না। জোন্সের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাঁদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের চিঠিপত্রও পরীক্ষা করে ছাড়া হত।

১৩ ১৮
True Story of Jonestown

সদস্যদের একে অপরের সম্পর্কে তথ্য জানাতে উৎসাহিত করা হত। গভীর রাতে দীর্ঘ সভায় যোগ দিতে বাধ্য করা হত সকলকে। মাদকের প্রভাবে মানসিক অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটতে থাকতে জোন্সের। তাঁর ধারণা হয় তৎকালীন মার্কিন সরকার তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র কষছে। আসল ঘটনার আগে মধ্যরাতে সদস্যদের নকল আত্মহত্যার মহড়ায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি।

১৪ ১৮
True Story of Jonestown

১৯৭৮ সালে এখানকার সদস্যদের আত্মীয়দের পীড়াপীড়িতে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য লিও রায়ান জোন্সটাউনে পা রাখেন। ১৭ নভেম্বর রায়ান, সাংবাদিক এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষকের একটি দল জোন্সটাউনে পৌঁছোয়। সফরের প্রথম দিনটি ভাল ভাবে উতরে যায়।

১৫ ১৮
True Story of Jonestown

পরের দিন রায়ানের প্রতিনিধিদলের জোন্সটাউন ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তখন জোন্সটাউনের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা তাঁদের কাছে এসে গায়ানা থেকে তাঁদের আমেরিকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এতে জোন্স মর্মাহত হন এবং জোন্সের ঘনিষ্ঠ এক সদস্য রায়ানকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেন।

১৬ ১৮
True Story of Jonestown

সেই সময়ে আক্রমণ এড়িয়ে প্রাণ বাঁচাতে সমর্থ হয়ে রায়ান ও তাঁর দলবল বিমানে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। তখনই জোন্সের নিরাপত্তা বিভাগের কয়েক জন সদস্য একটি ট্র্যাক্টরে করে বিমানবন্দরে এসে তাঁদের উপর গুলি চালান। গুলির লড়াইয়ে রায়ান নিহত হন।

১৭ ১৮
True Story of Jonestown

শহরে ফিরে জোন্স সকলকে মূল মণ্ডপে জড়ো হতে নির্দেশ দেন। সকলকে বিষ পান করে আত্মহত্যার নির্দেশ দেন। পিপল্‌স টেম্পলের সবচেয়ে কমবয়সি সদস্যেরা প্রথমে মারা যায়। কারণ বাবা-মা এবং নার্সরা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে সায়ানাইড, ঘুমের ওষুধ ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে শিশুদের গলায় ঢেলে দেন। এর পর প্রাপ্তবয়স্কেরা বিষপান করার জন্য সারিবদ্ধ হন। সশস্ত্র রক্ষীরা গোটা মণ্ডপ ঘিরে রেখেছিল।

১৮ ১৮
True Story of Jonestown

আত্মহত্যার সময় কয়েক জন বাসিন্দা জঙ্গলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্য দিকে, জোন্সের বেশ কয়েক জন পুত্র-সহ কমপক্ষে কয়েক ডজন পিপল্‌স টেম্পল সদস্য বেঁচে যান। কারণ তাঁরা সেই সময় গায়ানার অন্য অংশে ছিলেন। অন্যদের গুলি করা হয়েছিল। জিম জোন্সকে মাথায় একটি মাত্র গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy