সমুদ্রের গভীরে ১ হাজার ১৬০ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের ভান্ডার লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর মাথাচাড়া দেওয়ার মধ্যেই এই সুখবরে আশায় বুক বাঁধছে ভারত।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ১২:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
‘তরল সোনা’র ভান্ডার লুকিয়ে সাগরের বুকে। তুলে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে। খনিজ তেলের জন্য আর ওপেকভুক্ত দেশ বা রাশিয়ার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না বলে আশায় বুক বাঁধছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সোমবার জানিয়েছেন, আন্দামান সাগরে খনিজ তেলের বিপুল সঞ্চয় থাকার ইঙ্গিত পেয়েছে ভারত।
০২১৬
১ হাজার ১৬০ কোটি ব্যারেলের অপরিশোধিত তেলের ভান্ডার সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন পুরী। তাঁর দাবি, ব্রাজ়িলের প্রতিবেশী ছোট্ট দেশ গায়ানার মতো আন্দামান সাগরে একটি বৃহৎ তেলের খনি আবিষ্কারের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ভারত। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর মাথাচাড়া দেওয়ার মধ্যেই এই সুখবরে আশায় বুক বাঁধছে ভারত।
০৩১৬
এই আবিষ্কার সত্যি বলে প্রমাণিত হলে, আর সাগরের বুক ছেঁচে এই ‘যকের ধন’ তুলে আনতে পারলে তা ভারতের অর্থনীতির পালে তুফান তুলতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এমন আশাই প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী।
০৪১৬
সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে পুরী জানিয়েছেন, কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় অনুসন্ধান পর্বের সময় তিনি যখন জমা তেলের ভান্ডার নিয়ে কথা বলেছিলেন তখন সেটিই একমাত্র জায়গা ছিল। বর্তমানে ওএনজিসির সন্ধানের ফলে ভারতের বহু জায়গায় তেলের ভান্ডার থাকার খবর মিলছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রীর দাবি, সে দিন আর বেশি দূরে নেই যখন ভারতেও গায়ানার মতো তেলের ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। সেই সুদিন দেখার জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হবে না বলেও আশাবাদী তিনি।
০৫১৬
ছবির মতো সাজানো দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট দেশ গায়ানা। ব্রাজ়িল লাগোয়া ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র গায়ানা কয়েক বছর আগে খনিজ তেলের বিশাল ভান্ডার খুঁজে পায়। এর ফলে সেখানকার অর্থনীতি দুরন্ত গতিতে ছুটতে শুরু করে।
০৬১৬
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ২০২৬ সালের মধ্যে ‘তরল সোনা’ উৎপাদনের নিরিখে ভেনেজুয়েলাকে ছাপিয়ে যাবে গায়ানা। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববাজারে খনিজ তেলের সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ব্রাজ়িলের এই প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তেল উত্তোলক দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সব রকমের সম্ভাবনা গায়ানার মধ্যে রয়েছে। গত দু’-তিন বছরে অস্বাভাবিক উচ্চতায় এর জিডিপিকে উঠতে দেখা গিয়েছে।
০৭১৬
২০২০ এবং ২০২১ সালে গায়ানার আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালে যা ৬২ শতাংশে পৌঁছে যায়। ২০২৩ সালে সূচক কিছুটা নেমে ৩৩ শতাংশে থেমেছিল। ২০১৫ সালে তেলের খনি খুঁজে পায় গায়ানা প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির মাটির নীচে রয়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল ‘তরল সোনা’।
০৮১৬
আন্দামানের কাছে তেলের খনিটির সন্ধান মিললে তা আকারে গায়ানার তৈলক্ষেত্র আবিষ্কারের মতোই উল্লেখযোগ্য ঘটনা হবে। সেই তেলের বলে বলীয়ান হয়ে দেশটির জিডিপি যেমন চড়চড় করে বৃদ্ধি পেয়েছিল, সেই হারেই ভারতের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন তেলমন্ত্রী পুরী।
০৯১৬
আপাতত পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের তিনটি জায়গায় ৫৩.৩ লক্ষ টন (৩.৮ কোটি ব্যারেল) তেল মজুতের ভান্ডার আছে ভারতের। সেগুলি হল কর্নাটকের মেঙ্গালুরুতে ১৫ কোটি টন, পাদুরে ২৫ কোটি টন এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ১৩.৩ কোটি টন। এ ছা়ড়া অসম, গুজরাত, রাজস্থান, মুম্বইয়ে তেলের খনিগুলি উৎপাদনক্ষম।
১০১৬
এই বছর সর্বাধিক তেলের কূপ খনন করেছে ওএনসি়জি। পুরী জানান, ২০২৪ অর্থবর্ষে মোট ৫৪১টি তেলের কূপ খনন করা হয়েছে। ৩৪ বছরে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ১০৩টি অনুসন্ধান চালানোর জন্য। সব ক’টির জন্য ৩৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তেল মন্ত্রক। তেল অনুসন্ধান পর্বের খরচের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বেশি।
১১১৬
আন্দামানে অনুসন্ধান সফল হলে ভারতে তেল আমদানি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস হতে পারে, এমনটাই আশা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে এটি। দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল ভারত।
১২১৬
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাজারে তেলের দর হু-হু করে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে মস্কো থেকে সস্তা দরে ‘তরল সোনা’ আমদানি করছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আর ফের বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একের পর এক ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে এই ছবি দেখেছে সারা বিশ্ব।
১৩১৬
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখান থেকে তেল উত্তোলন ও রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে সারা বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। দাম বাড়বে অশোধিত তেলের। প্রভাব পড়তে পারে দেশেও। কারণ ইরানের উপরে ইজ়রায়েল হামলা চালানোর পরেই আন্তর্জাতিক বাজারে মাথাচাড়া দিয়েছে অশোধিত তেলের দাম।
১৪১৬
ব্রেন্ট ক্রুড ঘোরাফেরা করছে ব্যারেলে ৭৬ ডলারের আশপাশে। যুদ্ধের জিগির উঠলেই সারা বিশ্বে জ্বালানি সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশ্ব বাজারে তেলের দর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম ফের মাথাচাড়া দেওয়ার ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে আমজনতা।
১৫১৬
বিশ্বের তেল আমদানিকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত তৃতীয় বৃহত্তম। এ বছরের মে মাসে দৈনিক ৫১ লক্ষ ব্যারেল তেল কিনেছে নয়াদিল্লি। এর সিংহভাগই এসেছে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভারতে রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল এক শতাংশেরও কম। কিন্তু, বর্তমানে সেটা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৪ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও রুশ খনিজ তেলের উপর ভরসা রাখার একটাই কারণ, দামে সস্তা।
১৬১৬
ভবিষ্যতের কথা ভেবে তেলের ব্যাপারে ভারত আত্মনির্ভর হতে চাইছে। তেলের অনুসন্ধান পর্ব এখন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সম্প্রসারিত হয়েছে। অয়েল ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসির মতো সংস্থাগুলি নতুন মজুতের সন্ধানে জরিপ এবং খোঁড়াখুঁড়ির কাজ আরম্ভ করেছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। এই পরিস্থিতিতে আন্দামান সাগরের গভীরে যদি তেল উত্তোলন শুরু হয়, তা হলে ভারতকে জ্বালানির জন্য ওপেক বা রাশিয়ার মতো দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।