Bahrain Golden Residency visa a new gulf opportunity for Indians, here are details dgtl
UAE vs Bahrain Visa
ভিসার আইন বদলে আরব দুনিয়ায় নতুন মরূদ্যানের খোঁজ! দুবাই-শারজা ছেড়ে কেন পারস্যের দ্বীপে ছুটছেন ভারতীয়েরা?
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে অতিরিক্ত রোজগারের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকেই বেশি পছন্দ করছিলেন ভারতীয়েরা। কিন্তু ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে বাহরাইনের দিকে যেতে শুরু করেছেন তাঁরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৬:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
ভিসার নিয়মে বদল আসতেই ঘুরল খেলা! এক আরব মুলুক ছেড়ে অন্যটিতে ছুটছেন ভারতীয়েরা। সকলেরই দাবি, পারস্য উপসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রে গেলেই নাকি ফিরছে ভাগ্য। আর তাই দুবাই, শারজা বা আবু ধাবির মতো ঝাঁ-চকচকে শহর ছেড়ে অন্য ‘মরূদ্যান’-এ পাড়ি জমাচ্ছেন প্রবাসে ভাগ্যান্বেষণে যাওয়া এ দেশের বাসিন্দারা।
০২১৭
পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশগুলিতে ভারতীয়দের চাকরি, ব্যবসা বা কাজের খোঁজে যাওয়ার প্রবণতা আজকের নয়। এ ব্যাপারে এখানকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বেশি টানত সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। অতিরিক্ত রোজগারের আশায় গত কয়েক দশকে সেখানকার রাজধানী আবু ধাবি-সহ দুবাই বা শারজায় পাড়ি জমিয়েছেন কয়েক হাজার ভারতবাসী। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে সেই সূচকে পতন লক্ষ করা গিয়েছে।
০৩১৭
আমিরশাহির উত্তরে পারস্য উপসাগরের কোলে ৫০টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে বাহরাইন। আরবভূমির দেশটি কাতারের প্রতিবেশী। বর্তমানে কাজের খোঁজে ওই দ্বীপরাষ্ট্রকে বেশি করে বেছে নিতে দেখা যাচ্ছে ভারতীয়দের। এর জন্য বাহরাইনের ভিসা নীতিকেই মূলত দায়ী করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে এত দিন পর্যন্ত আবু ধাবি, দুবাই বা শারজার ‘প্রেমে’ এ দেশের বাসিন্দাদের হাবুডুবু খাওয়ার নেপথ্যে ছিল একাধিক কারণ।
০৪১৭
আমিরশাহিতে নেই কোনও আয়কর। বিশ্লেষকদের দাবি, পশ্চিম এশিয়ার ওই আরব মুলুকটিতে ভারতীয়দের কাজ করতে যাওয়ার সেটা সবচেয়ে বড় কারণ। এ ছাড়া সেখানকার বেতনকাঠামো বেশ ভাল। স্বল্প প্রশিক্ষিত ভারতীয়দের আমিরশাহিতে আর্থিক ভাবে জীবনে বড় বদল আনার মতো রোজগারের সুযোগ রয়েছে, যেটা এ দেশে প্রায় দুর্লভ।
০৫১৭
একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে কাজ করে বিহারে এক জন শ্রমিক মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় করছেন, সেই একই কাজের জন্য আমিরশাহিতে তাঁর রোজগার দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজারের চেয়ে সামান্য বেশি। উপরন্তু, দ্রুত কাজ পাওয়া এবং কাজের স্থায়িত্ব রয়েছে সেখানে।
০৬১৭
প্রবাসে কাজ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমিরশাহিকে বেছে নেওয়ার দ্বিতীয় কারণ হল দেশটির কৌশলগত অবস্থান। ভারত থেকে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় পৌঁছোনো যায় ওই আরব মুলুকে। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে বহু ভারতীয় যাওয়ার ফলে সেখানে গড়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য। ২০১৪ সালে দুবাইয়ে হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
০৭১৭
কাজের জন্য আসতে চাওয়া ভারতীয়দের খুব সহজে ভিসা দিয়ে থাকে আমিরশাহির সরকার। ২০১৯ সালে ভিসা নীতিতে কিছু বদল আনে আরব মুলুকটির প্রশাসন। বলা হয়, বছরে ৪.৬৬ কোটি লগ্নি করলে একরকম নাগরিক হিসাবে থাকতে পারবেন বিদেশিরা। আবার যাঁরা বছরে ২৩.৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করবেন তাঁদের দেওয়া হবে আজীবন থাকার ভিসা। এই জোড়া নীতির জেরে ভারতীয়দের সেখানে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৮১৭
অন্য দিকে, ২০২২ সালে ভিসা নীতিকে আমূল বদলে দেয় বাহরাইন। পারস্য উপসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি চালু করে ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসা। এতে মাত্র ৬৯ হাজার টাকা খরচ করে ১০ বছরের জন্য আরব মুলুকটিতে থাকার দরজা খুলে যায় ভারতীয়দের সামনে। কাজের স্বাধীনতা বেশি এবং খরচ তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ার কারণে এর পরেই ধীরে ধীরে দুবাই, শারজা বা আবু ধাবি থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেন ভারতীয়েরা।
০৯১৭
আমিরশাহি এবং বাহরাইনে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে মূলগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্রথম দেশটির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনও সংস্থায় কাজ করা বাধ্যতামূলক। চুক্তি ভেঙে কাজ ছেড়ে দিলে বা অন্য কোনও কাজে চলে গেলে রেসিডেন্সি ভিসা বাতিল করতে পারে আবু ধাবির প্রশাসন। কিন্তু বাহরাইনের ক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা অনেক বেশি।
১০১৭
পারস্য উপসাগরের কোলের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে কোনও ব্যক্তি ইচ্ছেমতো কাজ বা ব্যবসা করলেও ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসার সুবিধা পেতে পারেন। চাকরি বা কাজ বদল করলে, কাজ ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা বা স্বাধীন ভাবে কিছু শুরু করলে এই ভিসা বাতিল হবে না। এই নিয়ম বাহরাইনের প্রতি ভারতীয়দের টান বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১১১৭
আমিরশাহিতে জীবনধারণের খরচ অনেক বেশি। তাই উচ্চ বেতন হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার শহরগুলিতে থাকলে কম টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ভারতীয় নাগরিক। বাহরাইনের চিত্রটা ঠিক উল্টো। সেখানে আয় বেশি এবং ব্যয় কম। পাশাপাশি, কাজের ফাঁকে বেড়াতে গিয়ে বা ভারতে ফেরার কারণে কিছু দিন না থাকলেই রেসিডেন্সি ভিসা বাতিল করে থাকে আবু ধাবি প্রশাসন। তাঁদের এই নিয়ম একেবারেই না-পসন্দ ভারতীয়দের।
১২১৭
অন্য দিকে, ১০ বছরের জন্য ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসা পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে টানা বাহরাইনে থাকতে হবে, এমন কোনও নিয়ম নেই। পাশাপাশি, এই ভিসার সুবিধা পাবে তাঁর পরিবারও। যদিও যে কেউ আবেদন করলে ওই ভিসা পাবেন, এমনটা নয়। মূলত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদেরই এই ভিসা দিচ্ছে বাহরাইনের বিদেশ মন্ত্রক।
১৩১৭
বাহরাইনে টানা পাঁচ বছর কর্মরত ভারতীয়দের ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসার জন্য আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে তাঁদের আনুমানিক মাসিক আয় স্থানীয় মুদ্রায় দু’হাজার হতে হবে। ভারতীয় টাকায় সেটাই গিয়ে দাঁড়াবে ৪.৫৫ লক্ষ টাকায়। বাহরাইনে যাঁদের দু’লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে, তাঁরাও ওই ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
১৪১৭
অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসার আবেদনের শর্ত হিসাবে মাসিক আয় স্থানীয় মুদ্রায় চার হাজার রাখা হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় যেটা প্রায় ৯.১ লক্ষ টাকার সমান। এ ছাড়া বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী অধ্যাপক বা গবেষকদের ওই ভিসা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বাহরাইন সরকার।
১৫১৭
আরব মুলুকের বেশ কয়েকটি দেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে বেশ উন্নতি করছে। সেখানে পিছিয়ে নেই বাহরাইনও। সেই কারণে ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার দিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। তবে সেখানে কিছু শর্তও রয়েছে তাদের।
১৬১৭
‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি’ ভিসার আবেদনের জন্য বাহরাইন সরকারের সুনির্দিষ্ট একটি পোর্টাল রয়েছে। সেখানে ঢুকে যে কেউ এর জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনের পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু করে দেয় সেখানকার প্রশাসন।
১৭১৭
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে আমিরশাহিকে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের মধ্যে ছিল চূড়ান্ত মাতামাতি। আবু ধাবি, শারজা বা দুবাই পৌঁছোলে ‘উপসাগরীয় স্বপ্ন’ পূরণ হল বলে মনে করতেন এ দেশের বহু বাসিন্দা। ২০২৫ সালে এসে বাহরাইনের দিকে সেই হাওয়া ঘুরে গিয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।