মার্চ মাসের বিকেলে ওয়েলসের কার্ডিগানের বেনের কার্যালয়ে একটি ফোন আসে। তড়িঘড়ি ছুটে আসতে বলা হয় তাঁকে। অকুস্থল লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের একটি থিয়েটার। প্রবেশপথে মানুষের মল ও রক্তের ছড়াছড়ি। আধ ঘণ্টার মধ্যে একটি অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। সেই নারকীয় পরিবেশ আধ ঘণ্টার মধ্যে ঝকঝকে করে তোলেন বেনের সংস্থা আলটিমার কর্মীরা।
পুরো কর্মজীবন জুড়ে, বেন এমন অনেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন যা বেশির ভাগ মানুষ হয়তো সহ্য করতে পারবেন না। পরিষ্কার করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত, শরীরের অংশ, প্রস্রাব, বমি এবং চাপ চাপ শ্লেষ্মা। তবে, যে সব কারণে তাঁর ডাক পড়ে, তার বিস্তারিত বিবরণ সব সময় গোচরে আসে না বেনের। সে কারণে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন।
বয়লার স্যুট এবং প্লাস্টিক বুট পরা বেন শিখেছিলেন কী ভাবে সংঘর্ষে, বিক্ষোভে ছিটকে পড়া দেহ উদ্ধার করে আনতে হয়। বিস্ফোরণ, আগুনের রক্তাক্ত পরিবেশ ঝকঝকে করে তুলতে হয়। বেশির ভাগ প্রমাণ মুছে ফেলতে হয়। দীর্ঘ কেরিয়ারের কারণে এক জন স্বশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন বেন। প্রতি দিন এই ধরনের ঘটনা তাঁর তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
২০ বছর বয়সে তিনি ৫০ পাউন্ড কড়ারে প্রতিটি জানলার কাচ পরিষ্কার করতেন। সেই সময় তাঁর এক গ্রাহক ছিলেন যিনি অ্যাবেরিস্টউইথে থাকতেন। সেই মহিলা তাঁকে একটি ফাঁকা বাড়ি পরিষ্কার করার প্রস্তাব দেন। বেন যখন বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করেন তখন তাঁর চোখের সামনে এমন একটি দৃশ্য ভেসে ওঠে যা দেখে যে কারওরই অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসতে বাধ্য।
৪৯ বছরের বেনকে এখন অপরাধের দৃশ্য, দুর্ঘটনাস্থল, পচাগলা মৃতদেহ পরিষ্কার করার জন্য আর বিশেষ বেগ পেতে হয় না। অবশ্য তাঁর এই মানসিক দৃঢ়়তা শৈশবেই তৈরি হয়ে গেছিল। মা-বাবার সঙ্গে খামারবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে তাঁর বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়। খামার মালিক ও কৃষক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা বেনের প্রাত্যহিক কাজের মধ্যে ছিল কার্পেট থেকে পশুর মল পরিষ্কার করা।
প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের এই সংস্থায় বেন এখন এক জন পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। মাঝেমাঝে অপরাধের দৃশ্যস্থল পরিদর্শন করেন। ২০১০ সালে একটি প্রশিক্ষণ সংস্থা শুরু করেছিলেন তিনি। যেখান থেকে প্রায় ৬০০ জন ‘ফ্রিল্যান্স ক্লিনারের’ একটি বিশাল দল তৈরি হয়েছে। সেই দলের সদস্যেরা বেনের একটি ফোনেই দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যেতে পারেন।
প্রাথমিক ভাবে একটি ঘটনা বেনকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল। কয়েক বছর আগে একটি ঘর পরিষ্কার করতে ডাকা হয়েছিল বেনকে। যেখানে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেন। রান্নাঘরের ড্রয়ারের ভেতরেও রক্তের ছিটে পৌঁছে গিয়েছিল। বেন পরে সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করেন, ‘‘এক জন বিবাহিত পুরুষ হিসাবে আমি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি। রক্ত রান্নাঘরের ড্রয়ার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সেই অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।’’
জীবনে সবচেয়ে অদ্ভুত কোন জিনিসটির মুখোমুখি হতে হয়েছে বেনকে? ২০১৯ সালের ঘটনা সেটি। একটি ২২ মিটার লম্বা তিমি পণ্যবাহী জাহাজে ধাক্কা খেয়ে নোঙরে আটকে গিয়েছিল। পচন শুরু করেছিল সেটি। পোর্টসমাউথ বন্দরে সেটিকে আনা হয়। এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না বেন ও সহকর্মীদের। পরে মৃত স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে বৈদ্যুতিন করাত দিয়ে সাবধানে কেটে টুকরো টুকরো করে জাহাজ থেকে অপসারণ করা হয়।
আপাতত এই দুনিয়া থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছেন বেন। সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার পর বেন একটি ইটালীয় রেস্তরাঁ কিনেছেন। একপাল গরু পুষছেন তিনি। প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়লে পরামর্শের জন্য ফোন করেন তাঁকে। বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর মতামত পাওয়ার জন্য বিদেশ থেকেও বহু বার অনুরোধ এসেছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন নিয়মকানুন রয়েছে, তাই তিনি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি কখনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy