Bill Gates Donates Billions and Keeps Only 1 percent for Children, Know Who Will Inherit His Wealth dgtl
Bill Gates wealth distribution
সন্তানদের জন্য এক শতাংশ রেখে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলার বিলিয়ে দিচ্ছেন বিল গেটস! কারা পাবেন ধনকুবেরের সম্পত্তি?
সম্পত্তির প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের ৯৯ শতাংশ দান করবেন। শেষ জীবনে এত টাকার মালিক হতে চান না তিনি। টানা ১৮ বার বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এক নম্বরে থাকা বিল গেটস বিলিয়ে দিচ্ছেন নিজের সর্বস্ব।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ১২:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
১৯৯৫-এ প্রথম বার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির খেতাব মেলে। তার পর থেকে টানা ১৮ বছর তাঁকে প্রথম স্থান থেকে কেউ সরাতে পারেননি। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে প্রোগ্রামিংয়ের পথে যাত্রা শুরু করেন একসময়ের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি। কিন্তু বর্তমানে নিজের সম্পতির সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অনড়। কথা হচ্ছে, মাইক্রোসফ্ট সংস্থার অন্যতম কর্ণধার বিল গেটসের।
০২১৫
বিল গেটস, যার পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস তৃতীয়। ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে জন্ম তাঁর। ছোট থেকেই কম্পিউটার নিয়ে আগ্রহ ছিল। সফ্টঅয়্যার কী ভাবে কাজ করে, নতুন কিছু উদ্ভাবন করার দিকে বরাবরই ঝোঁক ছিল তাঁর। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই কম্পিউটারে প্রোগ্রামিংয়ের বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকেন তিনি।
০৩১৫
সিয়াটলের লেকসাইড স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭৩-এ গণিত এবং কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করেননি। নতুন কিছু উদ্ভাবনের তাগিদে মাঝপথেই ছেড়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা।
০৪১৫
স্কুলে পড়ার সময়কালেই বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে নানা সফ্টঅয়্যার তৈরির কাজে লেগে থাকতেন। প্রথমে বন্ধুর সঙ্গে ট্রাফ-ও-ডেটা নামক এক সফ্টঅয়্যার তৈরি করেছিলেন। এই সফ্টঅয়্যার গাড়ির ট্রাফিক ডেটা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে বলে দাবি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে সে ভাবে সাড়া পাননি। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে সম্পূর্ণ সময়ের জন্য মাইক্রোসফ্ট তৈরির কাজে নিযুক্ত করেন নিজেকে।
০৫১৫
১৯৭৫-এ মাইক্রোসফ্ট সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন গেটস ও তাঁর বন্ধু। শোনা যায়, ভারতীয় মুদ্রার নিরিখে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে শুরু হয়েছিল মাইক্রোসফ্টের যাত্রা। সেখান থেকে এখন এই সংস্থার বার্ষিক আয় কয়েকশো কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলারের মালিক গেটস। কিন্তু এত টাকা কুক্ষিগত করে রাখতে নারাজ বিশ্বের অন্যতম ধনী এই ব্যক্তি।
০৬১৫
১৯৯৪-এ মাইক্রোসফ্টের প্রোডাক্ট ম্যানেজার মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করেন বিল। তবে ২৭ বছর দাম্পত্যের পর ২০২১-এ তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে। জেনিফার ক্যাথরিন গেটস, ররি জন গেটস এবং ফোবি অ্যাডেল গেটস। বড় সন্তান জেনিফার একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ররি গেটস দম্পতির একমাত্র পুত্র। তিনি পছন্দ করেন কবিতা লিখতে। বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সে পিএইচডি করছেন। ছোট সন্তান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন।
০৭১৫
২০০০ সালে বিল গেটস এবং মেলিন্ডা একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম দেওয়া হয় ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। এটি মূলত একটি স্বাস্থ্য উন্নয়ন কেন্দ্রভূমি, যেখানে ম্যালেরিয়া, পোলিয়ো, এইচআইভি-সহ আরও অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি রোধের জন্য কাজ হয়। এ ছাড়াও আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলিতে শিক্ষাকে উন্নত করার জন্যও কাজ করে তাঁদের এই সংস্থা।
০৮১৫
চলতি বছরে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা দিবসের ২৫ বছর পূর্তি উদ্যাপন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গেটস। সেখানে বক্তৃতা দিতে গিয়েই তিনি নিজের সম্পত্তি বিলিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তার পরই শোরগোল পড়ে যায় আন্তর্জাতিক স্তরে।
০৯১৫
একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে গেটস জানান, নিজের ২০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তির মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে সন্তানদের জন্য। বাকি টাকা দান তহবিলে খরচ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি সম্প্রতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আগামী ২০ বছরের মধ্যে আমার সম্পদ দান করে দেব। সেই তহবিলের বেশির ভাগই আফ্রিকার মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে।’’
১০১৫
গেটসের এমন সিদ্ধান্তে বহু মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছেন ঠিকই, তবে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। অনেকের মতে, গেটস আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমালোচকেরা বলেন, এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থার হওয়া উচিত, কোনও একজন ধনকুবেরের নয়।
১১১৫
যদিও গেটসের দাবি অন্য। কেন তিনি এই সম্পত্তি বিলিয়ে দিতে চান তা স্পষ্ট করতে সম্প্রতি একটি চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘‘আমি মারা গেলে মানুষ আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলবে। কিন্তু এমন কথা যেন কেউ না বলে যে, ‘লোকটা বড্ড বড়লোক ছিল’। সম্পদ দখল করে রাখার বদলে জরুরি সমস্যাগুলি সমাধান করাই আমার লক্ষ্য।’’
১২১৫
চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা কাজে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছেন গেটস। এর ফলে বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে বলেও দাবি করেন অনেকে। কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট নন তিনি। তাঁর আশঙ্কা, যে হারে বিদেশি সাহায্য কমানো হচ্ছে তাতে আফ্রিকার দেশগুলিতে এর পর আর উন্নতিই হবে না।
১৩১৫
শেষ জীবনে যেন তাঁর সম্পদের সবটুকু উন্নয়নমূলক কোনও কাজে লাগে সেই চেষ্টাতেই রয়েছেন গেটস। প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ইস, যদি আমার আরও সময় থাকত! কিন্তু আমায় মানতে হবে, এটাই আমার জীবনের শেষ অধ্যায়। আর আমি এই সম্পদের এক জন অভিভাবক। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন এই অর্থ সঠিক ভাবে ব্যয় হয়। এখন এটাই আমার যাত্রার শেষ ধাপ।”
১৪১৫
শীঘ্রই ৭০-এ পা দিতে চলেছেন গেটস। বার্ধক্যে এসে আগামী ২০ বছর নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তিনি। শেষ বয়সে এসে বিপুল সম্পদ ছেড়ে দিতে কোনও আফসোস নেই বলেই জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ২০ বছরের কথা বলতে গিয়ে মজার ছলেই বলেন, “আমি আশা করি ২০ বছর পরও জীবিত থাকব। কিন্তু যতটুকু দরকার ততটুকু হ্যামবার্গার কিনতে সামান্য কিছু টাকা আমি রেখে দেব। বাকিটা রইল আফ্রিকার জন্য।”
১৫১৫
আফ্রিকায় মোট ৫৪টি দেশ রয়েছে। তার মধ্যে সব দেশের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সমান নয়। কিছু কিছু দেশে সার্বিক ভাবে বড় সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকের ঘাটতি, দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অপুষ্টি, শিশুমৃত্যু-সহ আরও বেশ কিছু সমস্যা আফ্রিকায় যেন ‘জন্মগত’। সেই সমস্যাগুলি হ্রাস করতেই এমন উদ্যোগ বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গেটসের।