Flashback to Similar air tragedies that have claimed the lives of some of India’s most prominent figures dgtl
Ahmedabad plane crash
চালকের ভুল, ষড়যন্ত্র থেকে আনাড়ি স্টান্ট! ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, মুখ্যমন্ত্রী, নায়িকারও
ভারতের ইতিহাসে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে চিত্রতারকা, সেনাকর্তা ও কিংবদন্তি ব্যক্তিরা। বার বারই ফিরে এসেছে ১২ জুনের মতো অভিশপ্ত কালো দিনগুলি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫ ১৬:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
গুজরাতে অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর পাঁচ মিনিট পরেই ভেঙে পড়ে লন্ডনগামী বিমান। দুর্ঘটনাগ্রস্ত অভিশপ্ত বিমানের যাত্রীতালিকায় নাম ছিল গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিজয় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন।
০২২২
রূপাণীর এক ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলে আমেরিকায় থাকেন। আর মেয়ে লন্ডনে। কয়েক দিন আগেই সেখানে গিয়েছিলেন রূপাণীর স্ত্রী। বৃহস্পতিবার রূপাণীর যাওয়ার কথা ছিল। স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে লন্ডন থেকে ফেরার কথা ছিল ১ জুলাই। পুলিশের তরফে রূপাণীর মৃত্যুর খবর ঘনিষ্ঠদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
০৩২২
ভারতের ইতিহাসে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে চিত্রতারকা, সেনাকর্তা ও কিংবদন্তি ব্যক্তিরা। বার বারই ফিরে এসেছে ১২ জুনের মতো অভিশপ্ত কালো দিনগুলি।
০৪২২
৮ ডিসেম্বর ২০২১। তামিলনাড়ুর কুন্নুরে নীলগিরির জঙ্গলে ভেঙে পড়ে সেনার একটি হেলিকপ্টার। তাতে ছিলেন ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক তথা চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়ত। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মধুলিকা। বেলা ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ নীলগিরির একটি চা-বাগানের উপর ভেঙে পড়ে সেনাবাহিনীর এমআই-১৭ ভি-৫ হেলিকপ্টারটি।
০৫২২
অগ্নিদগ্ধ, গুরুতর আহত অবস্থায় বিপিন রাওয়তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন হেলিকপ্টারটি একটি গাছে ধাক্কা মারার ফলে আগুন ধরে যায়। আগুনের গোলার মতো তা আছড়ে পড়ে অন্য একটি গাছে। ১৪ জন সওয়ারির মধ্যে ১৩ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক ভাবে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল বিপিনকে। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রাণ হারান বিপিনের স্ত্রী মধুলিকাও।
০৬২২
দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ। পরে তিনিও মারা যান। ঘটনার তিন বছর পর প্রতিরক্ষা দফতরের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, চালকের ভুলেই কপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। বিপিনের ওয়েলিংটন সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন সেনার বেশ কয়েক জন পদস্থ কর্তা। রিপোর্ট বলা হয়েছিল, ‘মানবিক ভুল’-এর কারণেই সে দিন ঘটেছিল বিপর্যয়।
০৭২২
৪৫ বছর আগে এই জুন মাসেই একটি বিমান দুর্ঘটনার খবর নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। দিল্লির সফদরজং বিমানবন্দর ফ্লাইং ক্লাব থেকে একটি নতুন পিটস এস-২এ বিমান ওড়াতে গিয়ে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন সঞ্জয় গান্ধী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে। মাঝ-আকাশে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় উড়ান পর্ব।
০৮২২
সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে বিমানটি আকাশে ওড়ে। সঞ্জয়ের সঙ্গে ছিলেন তাঁর উড়ান প্রশিক্ষক সুভাষ সাক্সেনা। বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখেছিলেন ইন্দিরা-পুত্র। এর আগে তাঁর মাত্র ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল। সেই অভিজ্ঞতা সম্বল করেই প্রিয় বিমানটি নিয়ে স্টান্ট দেখাতে শুরু করেন সঞ্জয়। বিমান ঠিক কতটা উচ্চতায় চালাচ্ছেন তা আন্দাজ করতে পারেননি চালক।
০৯২২
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাত্র ১২ মিনিটের মাথায় ভেঙে পড়ে বিমানটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৩৩ বছরের সঞ্জয় গান্ধীর। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছোন ইন্দিরা। তত ক্ষণে সব শেষ। ছেলেকে আর ফিরে পাননি তিনি। শুধুই বিমানের ধ্বংসস্তূপ পড়ে ছিল সেখানে। আর ছিল সঞ্জয়ের ছিন্নভিন্ন দেহাবশেষ।
১০২২
একই ভাবে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান পারমাণবিক পদার্থবিদ হোমি জাহাঙ্গির ভাবা। ভারতের পরমাণু শক্তি গবেষণার জনক বলা হয় তাঁকে। তাঁর হাত ধরেই পরমাণু গবেষণার জগতে প্রবেশ করে ভারত। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর।
১১২২
১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি সকাল ৮টা ২ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মুম্বই থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিমানটিতে ১১ জন বিমানকর্মীর সঙ্গে ছিলেন ১০৬ জন যাত্রী। দিল্লি, বেরুট (লেবানন) এবং জেনেভা হয়ে লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল বিমানটির।
১২২২
বেরুট থেকে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার পর ইটালি এবং ফ্রান্স সীমান্তে আল্পস পর্বতমালার শৃঙ্গ মঁ ব্লাঁ-র কাছে ধাক্কা খায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধারকার্যের জন্য পৌঁছোয় উদ্ধারকারী বাহিনী। কিন্তু যত ক্ষণে তাঁরা সেখানে পৌঁছেছিলেন তত ক্ষণে বিমানের ধ্বংসাবশেষ ডুবে গিয়েছে বরফের মাঝে। তাই বিমানের ব্ল্যাক বক্স কিংবা অন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কিছুই পাওয়া যায়নি।
১৩২২
ভাবার মৃত্যু নিয়ে দানা বেঁধেছিল নানা বিতর্ক। অনেকেরই মতে এটি নিছক বিমান দুর্ঘটনা নয়। তাঁর মৃত্যুর নেপথ্যে ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে তিনি ভারতকে সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই প্রয়াস নাকি তৎকালীন ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয় বলে মনে করেন অনেকে।
১৪২২
অল্প বয়সে ‘সূর্যবংশম’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দক্ষিণী অভিনেত্রী সৌন্দর্য। তাঁর আসল নাম সৌম্য সত্যনারায়ণ। ২১ বছর আগে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। ভাইকে সঙ্গে নিয়ে অভিনেত্রী এক রাজনৈতিক প্রচার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
১৫২২
সৌন্দর্যের সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। অভিনেত্রী হিসাবেও তাঁর কদর কম ছিল না। অল্প বয়সেই অমিতাভ বচ্চন, রজনীকান্ত থেকে শুরু করে মোহনলাল, নাগার্জুনের মতো নামী অভিনেতাদের বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই দক্ষিণী নায়িকা।
১৬২২
২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল রাজনৈতিক প্রচার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অন্ধ্রপ্রদেশের করিমনগর যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই মতো বেঙ্গালুরুর জাক্কুর বিমানবন্দর থেকে একক ইঞ্জিনের একটি ব্যক্তিগত বিমানে উঠেছিলেন তিনি।
১৭২২
সৌন্দর্যের সঙ্গে ওই বিমানে ছিলেন তাঁর ভাই অমরনাথ এবং বিজেপি কর্মী রমেশ কদম। যাত্রার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বেঙ্গালুরুর গান্ধী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (জিকেভিকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ভেঙে পড়ে বিমানটি। পুড়ে মারা যান বিমানে থাকা সকলেই। কারও দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর সময় সৌন্দর্য অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
১৮২২
২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৎকালীন কংগ্রেস সাংসদ মাধবরাও সিন্ধিয়াও। উত্তরপ্রদেশের মোত্তা গ্রামে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। ৫৬ বছর বয়সি সিন্ধিয়া কানপুরে একটি সমাবেশে ভাষণ দিতে যাচ্ছিলেন।
১৯২২
আট জন যাত্রী বহনকারী ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে কানপুর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে মৈনপুরীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন মাধবরাও। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ধ্বংসাবশেষ থেকে বিমানের আট জন আরোহীর দেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহগুলি এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে তাঁদের চেনার উপায় ছিল না। সিন্ধিয়ার গলার একটি লকেট দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছিল। বিমানে সিন্ধিয়া ছাড়াও ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব রুপিন্দর সিংহ, চার জন সাংবাদিক। দু’জন চালক-সহ যাত্রীরা সকলেই মারা যান।
২০২২
২০০৯ সালে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন অখণ্ড অন্ধ্রের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা রাজশেখর রেড্ডিও। অন্ধ্র-রায়লসীমার মাঝামাঝি জায়গায় নাল্লামালার জঙ্গলে আছড়ে পড়ে বেল ৪৩০ সিরিজ়ের হেলিকপ্টারটি।
২১২২
এরই দু’বছর পর তাওয়াং থেকে ইটানগর যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অরুণাচল প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা দোরজি খান্ডূ। হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী দোরজি খান্ডূর মৃতদেহ চিন সীমান্তের কাছে লুগুথাং-এ পাওয়া যায়।
২২২২
পবনহংস হেলিকপ্টারে করে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং থেকে ইটানগর যাত্রা করেছিলেন তিনি। ওড়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই ১৩ হাজার ফুট উপরে সেলা পাসের কাছে পৌঁছোনোর পর হেলিকপ্টারটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ায় পড়েই কপ্টারটি ভেঙে পড়ে বলে জানা যায়।