From Pahalgam attack to Operation Sindoor, a brief timeline dgtl
Operation Sindoor
ঘরে ঢুকে মার! পহেলগাঁও কাণ্ড থেকে অপারেশন সিঁদুর, দু’সপ্তাহে কী ভাবে বৃত্ত সম্পূর্ণ করল ভারত?
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ৬ মে মধ্যরাতে অপারেশন সিঁদুর। ১৪ দিনের মাথায় জঙ্গি হামলার বদলা কী ভাবে নিল ভারত?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ১০:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আঘাত হেনেছে ভারতীয় বাহিনী। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার জবাব পাকিস্তানকে ভারত নিজের পছন্দের সময়ে এবং পছন্দের স্থানে দেবে বলে নয়াদিল্লির তরফে আগেই বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।
০২২৬
ভারত এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে যে, পাকিস্তানে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ করা হয়েছে। যে সব জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে বলে বিবৃতিতে দাবি করেছে মন্ত্রক।
০৩২৬
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “আমাদের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং অপ্ররোচনামূলক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং আঘাত হানার প্রশ্নে ভারত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখিয়েছে।”
০৪২৬
মঙ্গলবার মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেই আঘাত হানা হয়েছে বলে ভারতীয় সেনার তরফ থেকেও এক্স হ্যান্ডলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর অন্যতম নিশানা ছিল বহওয়ালপুর শহর। এখানে ভারতের হামলার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানও।
০৫২৬
ইসলামাবাদের দাবি, ভারতীয় হামলায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনসের ডিরেক্টর জেনারেল সাংবাদিক বৈঠক করে এই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন।
০৬২৬
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাত ১টা নাগাদ পাকিস্তানের মোট ছ’টি জায়গায় ২৪টি হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। একাধিক মহিলা, শিশুর মৃত্যুর কথাও জানিয়েছে পাকিস্তান।
০৭২৬
২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ৬ মে মধ্যরাতে অপারেশন সিঁদুর। ১৪ দিনের মাথায় জঙ্গি হামলার বদলা কী ভাবে নিল ভারত?
০৮২৬
কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছিলেন কয়েক জন পর্যটক। ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের ঠিকানা ছিল কাশ্মীরের ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত সবুজে ঢাকা বৈসরন উপত্যকা। জাফরান, আখরোট, আপেলের বাগান আর জঙ্গলে ঢাকা, পাহাড়ে ঘেরা ওই পর্যটনস্থল এই মরসুমে ভিড়ে ঠাসা থাকে। সে দিনও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু পর্যটকেরা তখনও জানতেন না তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করছে!
০৯২৬
ঘোড়ায় চড়ে আর পায়ে হেঁটে পর্যটকেরা পহেলগাঁওয়ের নৈসর্গিক দৃশ্য ঘুরে দেখছিলেন। অনেকে আবার স্থানীয় হোম স্টে লাগোয়া ছোট রেস্তরাঁগুলিতে ভিড় জমিয়েছিলেন ভেলপুরি, পাপড়ি চাটের জন্য। বৈসরন ময়দান ও আশপাশের পাইন বনে ঘোড়সওয়ারি করছিলেন কেউ কেউ। এমন সময়ই আগমন হয় স্বয়ংক্রিয় রাইফেলধারী মৃত্যুদূতদের।
১০২৬
হামলাকারীরা সংখ্যায় ছিল চার থেকে ছ’জন। হঠাৎই তারা রাইফেল উঁচিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে পর্যটকদের এক এক করে পরিচয় জানতে শুরু করে। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ছাড়া বাকিদের উপর নির্বিচারে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় কয়েক জন পর্যটককে।
১১২৬
জঙ্গিদের হাত থেকে বিদেশিরাও রেহাই পাননি। পর্যটকদের অনেককেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে মারা হয়। পালাতে গিয়ে গুলির শিকার হন অনেকে। শতাধিক রাউন্ড গুলি চালিয়ে জঙ্গলে গা-ঢাকা দেয় জঙ্গিরা। অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন পর্যটক। নিহত পর্যটকদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা ছিলেন।
১২২৬
সেনাকর্তারা পরে নিশ্চিত করেন, বৈসরন উপত্যকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের দলকে লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়েছিল। ২২ এপ্রিল দুপুরের ওই ঘটনার দায় নিয়েছিল ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির আবহে জন্ম হয়েছিল এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। সে সময় পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ।
১৩২৬
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
১৪২৬
পাশাপাশি, অটারী-ওয়াঘা সীমান্তে চলাচল বন্ধ করা, উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময় দেওয়া হয়।
১৫২৬
ভারত জানায়, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে আর ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অতীতে এই ভিসায় প্রবেশের জন্য পাকিস্তানিদের যত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়। ওই ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দেশ ছাড়তে হবে বলেও জানায় সরকার।
১৬২৬
এর পাশাপাশি পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করার পাশাপাশি সে দেশের ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়। পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টটিও ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই আবহে।
১৭২৬
কিন্তু প্রথম থেকেই পাকিস্তান দাবি করে এসেছিল, পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। তাই ভারতের ওই পদক্ষেপগুলির পর পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা করে সে দেশের শাহবাজ় শরিফ সরকার।
১৮২৬
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতের যে সিদ্ধান্ত, তা পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে জানায়, সিন্ধু জল চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানে জলের প্রবাহ বন্ধের যে কোনও প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে। সম্পূর্ণ শক্তির সঙ্গে এর জবাব দেওয়া হবে বলেও জানায় পাকিস্তান।
১৯২৬
অবিলম্বে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা করে পাকিস্তান। এসভিইএস-এর অধীনে যে ভারতীয়েরা পাকিস্তানে ছিলেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতে নিয়ন্ত্রিত সব বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ করারও ঘোষণা করে পাকিস্তান।
২০২৬
অন্য দিকে, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর থেকে জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে তল্লাশি অভিযানে নামে নিরাপত্তাবাহিনী। জঙ্গিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। গুঁড়িয়েও দেওয়া হয় তাদের বাড়ি। এর মধ্যে পহেলগাঁও কাণ্ডের অন্যতম চক্রী, কাশ্মীরের সেই জঙ্গি আদিল আহমেদ ঠোকরের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। তার খোঁজে নামে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। স্থানীয়দের প্রায় ১০০ জনকে জঙ্গিদের সহযোগিতা করার সন্দেহে আটক করা হয়।
২১২৬
পহেলগাঁও কাণ্ড এবং সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছিল আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প সরকার জানায়, আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে আছে। তবে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রথম থেকেই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল আমেরিকা। উভয় পক্ষকেই ‘দায়িত্বশীল’ ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলেছিল ওয়াশিংটন।
২২২৬
পহেলগাঁও ঘটনার পর থেকেই বদলার আগুনে ফুঁসতে থাকে গোটা দেশ। এ ব্যাপারে প্রত্যাঘাত শানাতে ফৌজের তিন শাখাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পহেলগাঁওয়ে হামলার যোগ্য জবাব দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
২৩২৬
দুই দেশের টানাপড়েনের আবহে ভারতের রাজ্যগুলিতে অসামরিক মহড়ার কথা ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বুধবার সেই মহড়া হওয়ার কথা। আপৎকালীন বা যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সাধারণ মানুষকে প্রস্তুত করতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। তবে তার আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালাল ভারত।
২৪২৬
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বহাওয়ালপুরে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভারত আঘাত হেনেছে বলে কয়েকটি সমাজমাধ্যম পোস্টে দাবি করা হয়েছে। তবে মধ্যরাতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশ করা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে কোনও শহরের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
২৫২৬
বুধবার এই অভিযান তথা প্রিসিশন স্ট্রাইকের বিষয়ে বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রাতে জানিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পরে এক্স হ্যান্ডলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লিখেছেন, ‘ভারতমাতা কী জয়!’ ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় উদ্যাপন শুরু করেছে। রাজস্থানের স্থানীয়দের আতশবাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে। উঠেছে ‘হিন্দুস্তান জ়িন্দাবাদ’ এবং ‘ভারতমাতা কী জয়’ স্লোগান।
২৬২৬
তবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীনই জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ-রাজৌরি এলাকায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙে গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনার তরফে এক্স হ্যান্ডলে এ কথা ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের এই হামলায় জম্মু ও কাশ্মীরে একাধিক সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ভারতীয় সেনাও জবাব দেওয়া শুরু করেছে।