গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিল ইডি। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু শাহজাহানের বাড়ির কাছে তাঁদের ঘিরে ফেলেন শাহজাহানের অনুগামী এবং স্থানীয়েরা। মারধর করা হয় ইডি আধিকারিকদের। সেই মারে আহত হন তদন্তকারীরা। এক জনের মাথাও ফাটে। সেই সময় মার খেয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকারিকদের।
শাহজাহান নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষনেতারা প্রথমে মুখ না খুললেও গত ২৭ জানুয়ারি রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁর সমালোচনা করেন। এক কর্মসূচিতে গিয়ে ফিরহাদ (ববি) বলেন, ‘‘শাহজাহান যা করেছে অন্যায় করেছে। আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। যেটা করেছে, নিশ্চিত করে বলছি, অন্যায় করেছে!’’
অভিযোগ ওঠে, চার বছরে ৪২টি মামলা, এর মধ্যে ৪১টির চার্জশিটও দাখিল হয়ে গিয়েছে শাহজাহানের নামে। সূত্রের খবর, চার বছরে একটি মামলাতেও (যার মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারাও আছে) শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টে, অভিযোগকারীকেই নিগৃহীত হতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ভিটেমাটিটুকুও খোয়াতে হয়েছে বলে হাই কোর্টে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর মধ্যেই সন্দেশখালির একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বার বার সন্দেশখালি ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বিরোধী বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেসের নেতারা। বিজেপির অনেক নেতা সন্দেশখালি ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁদের গ্রেফতার করে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে কার্যত ‘জঙ্গি’ আন্দোলন শুরু করে বিজেপি।
অভিযোগ, গত এক দশকে শাহজাহন এবং তাঁর ভাই সিরাজের ‘সৌজন্যে’ ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে এলাকার জমির ‘চরিত্র’। একের পর এক ফসলের ক্ষেত্র গায়ের জোরে দখল করে বানানো হয়েছে মাছের ভেড়ি। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দখল করা হয়েছে চাষের জমি। বদলে ফেলা হয়েছে বর্গা রেকর্ডও। তবে সিরাজ তৃণমূলের কোনও পদে নেই বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দাবি করেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।
সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। না হলে রাজ্য সরকারের পুলিশই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ বলেন, “শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’
গত সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট জানায়, তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারবে রাজ্যের পুলিশ। কোনও স্থগিতাদেশ তাতে দেওয়া হয়নি। এই সংক্রান্ত মামলায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের মন্তব্য, ‘‘স্পষ্ট ভাবে বলছি, পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পুলিশকে বলিনি, যে গ্রেফতার করা যাবে না।’’ বুধবার প্রধান বিচারপতি বলেন, “সিবিআই, ইডি এবং রাজ্য পুলিশ যে কেউ শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারে।”
বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশের অষ্টম অনুচ্ছেদের পরিবর্তন চায় রাজ্য। রাজ্যের আইনজীবী জানান, নির্দেশের ওই অংশটিই শাহজাহানকে গ্রেফতার করার বিষয়ে পুলিশের প্রধান বাধা। কিন্তু কী আছে অষ্টম অনুচ্ছেদে? সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ইডি। সেই আক্রমণের প্রেক্ষিতে তিনটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। যা নিয়ে হাই কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা।
হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ ইডি আধিকারিকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকে যৌথ ভাবে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। যাকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় ইডি এবং রাজ্য পুলিশ। সেখানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের অষ্টম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্য পুলিশও এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে দূরে থাকবে। অর্থাৎ, এই সংক্রান্ত তদন্ত থেকে রাজ্যের পুলিশকে বিরত থাকতে বলেছিল হাই কোর্ট। আদালত জানায় পুলিশ, সিবিআই, ইডি— যে কেউ গ্রেফতার করতে পারে শাহজাহানকে।
শাহজাহানের গ্রেফতারির জন্য পরোক্ষে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কৃতিত্ব দিচ্ছে শাসক তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ লেখেন, “আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি।” তার পরেই তিনি লেখেন “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে আদালত বাধা সরিয়েছে। পুলিশ যা করার করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy