এক বার একটি বিমানের সিঙ্কের নীচে তিন কেজি সোনার গুঁড়ো উদ্ধার হয়েছিল। সেই সোনার মূল্য ছিল এক কোটি টাকারও বেশি। সোনাপাচারের সবচেয়ে সোজা উপায়গুলির মধ্যে কয়েকটি হল হেডফোনের ভিতরের অংশে সোনা ভরে দেওয়া, বেল্টের ধাতব অংশটি সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে নেওয়া। এমনকি চকোলেট ও খেজুরের মধ্যে ভরে সোনাপাচারও চলে। প্রতি বারই নতুন নতুন পদ্ধতি ও উপায় বেছে নেন পাচারকারীরা।
বিভিন্ন বিমানবন্দর ও সীমান্তে যে সব সোনা উদ্ধারের খবর সংবাদ শিরোনামে আসে, সেই সমস্ত পাচারচক্রের জাল বিছিয়ে রয়েছে ভারত জুড়ে। সংবাদমাধ্যমের প্রাপ্ত তথ্য বলছে ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা চলে বেআইনি সোনাপাচারকে কেন্দ্র করে। এই অন্ধকার সাম্রাজ্যের শিকড় ছড়িয়ে রয়েছে পড়শি দেশ পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত।
২০২৪ সালের আগে ভারতে সোনার উপর কর ছিল ১৫ শতাংশ। কর ব্যতীত বিদেশ থেকে ভারতীয় পুরুষদের সোনা আনার ক্ষেত্রে ছাড়ের উর্ধ্বসীমা ছিল ৫০ হাজার টাকা অথবা ২০ গ্রাম পরিমাণ সোনার মধ্যে যে পরিমাণ বেশি হবে সেটি। মহিলাদের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে সোনা আনার ক্ষেত্রে এই ছাড় কিছুটা বেশি। মহিলারা ১ লক্ষ টাকা বা ৪০ গ্রাম সোনা কোনও প্রকার কর ছাড়াই ভারতে আনতে পারবেন বৈধ ভাবে।
তবে কেন এই অবৈধ ব্যবসার রমরমা? সাদা চোখে দেখতে গেলে ১৫ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। সোনা পাচারকারীরা ভারতীয় বাজারে সোনা বিক্রি করে সোনার দাম ছাড়াও করের এই অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ লাভ করতে পারতেন। সরকার ২০২৪ সালের জুলাই থেকে সোনা আমদানির ক্ষেত্রে করের বোঝা এক ধাক্কায় অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনে।
মাত্র ৬ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনেকে পাচার করা সোনা কিনতে উৎসাহী। এর প্রধান কারণ, ভারতীয়েরা বিশ্বাস করেন, সোনা জমানো মানে ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা থাকা। ভারতীয় পরিবারের মহিলাদের গহনাপ্রীতি অজানা নয়। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় মহিলাদের কাছে যত সোনা গচ্ছিত রয়েছে সেই পরিমাণ সোনা খুব কম দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ভল্টে জমা রয়েছে।
বিপুল চাহিদার জন্যই সোনাপাচারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। পশ্চিম এশিয়া, বিশেষ করে দুবাই থেকে সোনা এনে তা পাচারকারী দলের হাতে তুলে দিলেই হাতে হাতে মেলে নগদ টাকা। তথ্য বলছে, শুল্ক দফতরের নজর এড়িয়ে এক বার দুবাই বা পশ্চিম এশিয়ার দেশ থেকে সোনা আনতে পারলেই মেলে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা। সঙ্গে বিনামূল্যে বিদেশভ্রমণ, বিলাসবহুল হোটেলে থাকা তো রয়েইছে।
ডায়রেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স ও সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমসের তথ্য খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, প্রতি বছর ১৫০ থেকে ২০০ টন সোনা অবৈধ ভাবে ভারতে ঢুকছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশই ধরা পড়ে তল্লাশি অভিযানে। ধরা না পড়া সেই টন টন সোনার মূল্য ৮৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। প্রতি বছরই ৯ হাজার কোটি টাকা কর হারায় সংশ্লিষ্ট দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy