Illegal miners trapped inside abandoned gold mine in South Africa, start cannibalism to survive dgtl
Cannibalism
খাবার, জল ছাড়া খনিতে বন্দি! মৃত বন্ধুদের খেয়ে প্রাণ বাঁচান শ্রমিকেরা, উদ্ধার হন সাত মাস পর
ঘটনাটি দক্ষিণ আফ্রিকার। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম গভীর সোনার খনি বাফেল্সফন্টেন। সেখানেই প্রায় সাত মাস আটকে ছিলেন অনেক শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছিল। বাকিরা বেঁচে গিয়েছিলেন নরমাংস ভক্ষণ করে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
প্রায় সাত মাস ধরে সোনার খনিতে আটকে। খাদ্যাভাবে নরখাদকে পরিণক হয়েছিলেন খনিশ্রমিকেরা। সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন বেঁচে ফিরে আসা শ্রমিকেরাই।
০২২০
ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম গভীর সোনার খনি বাফেল্সফন্টেন। সেখানেই প্রায় সাত মাস ধরে আটকে ছিলেন অনেক খনিশ্রমিক। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছিল। বাকিরা বেঁচে গিয়েছিলেন নরমাংস ভক্ষণ করে।
০৩২০
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার সোনার খনিগুলিতে চোরাকারবারিদের দাপট রয়েছে।
০৪২০
অবৈধ খনিশ্রমিকদের নিয়োগকারী অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রিত খনি বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই কঠোর পন্থা অবলম্বন করেছে সে দেশের সরকার।
০৫২০
অবৈধ খনিশ্রমিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত সোনার খনিগুলিতে অবশিষ্ট সোনার সন্ধান করেন। কিন্তু তাঁদের আটকানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে খাবার এবং পানীয়ের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বাধ্য হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন ওই শ্রমিকেরা। কখনও কখনও অনেক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়।
০৬২০
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবৈধ খনিশ্রমিকদের ‘জামা জামাস’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর অর্থ ‘যারা বেঁচে থাকার জন্য ঝুঁকি নেন’ বা ‘যাঁরা নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করেন’।
০৭২০
২০২৪ সালের জুলাইয়ে একই ভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে বাফেল্সফন্টেনের একটি পরিত্যক্ত খনিতে নেমেছিলেন ৩০০ জনেরও বেশি খনিশ্রমিক। খাবার, ওষুধ, পানীয় এবং দড়ি নিয়ে সুড়ঙ্গে নেমেছিলেন তাঁরা।
০৮২০
প্রাথমিক ভাবে তাঁদের পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সরবরাহ করা হচ্ছিল। মাসে প্রায় ৪০০ পাউন্ড (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৩ হাজার টাকা) উপার্জনও করছিলেন তাঁরা।
০৯২০
কিন্তু অগস্টে অবৈধ খনিশ্রমিকদের খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের সমস্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। খাবার এবং জলের অভাবে বেঁচে থাকার জন্য দীর্ঘ লড়াই শুরু করেন তাঁরা। লড়াই চলে মাসের পর মাস।
১০২০
খাবারের অভাবে অনেকেই মারা যান। অভিযোগ, অবৈধ খনিশ্রমিকদের জোর করে খনি থেকে বার করার জন্য কর্তৃপক্ষ খাবার এবং পানীয় সরবরাহ বন্ধ করার জন্যই ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়।
১১২০
সম্প্রতি তাঁদের অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খনিতে প্রবেশ করা ৩২৪ জন শ্রমিকের মধ্যে ৭৮ জন মারা গিয়েছেন। ২৪৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
১২২০
কিন্তু কী ভাবে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানীয় ছাড়া এত দিন খনিতে কাটালেন ওই ২৪৬ জন? মৃত্যুর সংখ্যা তো আরও অনেক বেশি হতে পারত!
১৩২০
উদ্ধার হওয়ার পর সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে এক খনিশ্রমিক জানিয়েছেন, বেঁচে থাকতে মৃত শ্রমিকদের মৃতদেহের উপর নির্ভর করেছিলেন তিনি। নরমাংস খেয়েই বেঁচেছিলেন দীর্ঘ দিন।
১৪২০
ওই শ্রমিকের কথায়, “দীর্ঘ দিন আটকে থাকার পর অনেকেই মৃতদেহগুলির পা, হাত এবং পাঁজরের অংশ কেটে খেতে শুরু করেন। বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র ওই বিকল্পই অবশিষ্ট ছিল।’’
১৫২০
যদিও কেউ কেউ মানুষের মাংস খেতে রাজি ছিলেন না। খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে আরশোলা-সহ অন্যান্য পোকামাকড় খেতে শুরু করেন তাঁরা।
১৬২০
অন্য এক শ্রমিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, “মৃতদেহগুলি থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করে। অনেকেই সেই দেহগুলি খেতে শুরু করেন। অনেকে আরশোলাও খাচ্ছিলেন।’’
১৭২০
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চোরাকারবারি এবং অবৈধ খনিশ্রমিকদের কারণে বছরে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি পাউন্ড লোকসান হয়। প্রায়শই প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা খনিশ্রমিকদেরও অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়।
১৮২০
স্থানীয় পুলিশের সন্দেহ, জেমস নিয়ো সোয়েলি ওরফে টাইগার ভূগর্ভস্থ খনিতে অবৈধ অভিযানের নেতা। কঠোর পরিশ্রমী খনিশ্রমিকদের লোভ দেখিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়াই নাকি তাঁর কাজ। এমনকি শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তাঁর উপর।
১৯২০
এই মাসের শুরুতেই সোয়েলিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় রহস্যজনক ভাবে পালিয়ে যান তিনি।
২০২০
অবৈধ শ্রমিকদের আটকাতে সরকারের ওই ভাবে খাবার এবং পানীয়ের সরবরাহ বন্ধ করার পদক্ষেপের নিন্দায় সরব হয়েছেন অনেকেই। যদিও খনিমন্ত্রী গোয়েদে মানতাশেহের দাবি, ‘‘কেউ যদি পরিত্যক্ত খনির মতো বিপজ্জনক জায়গায় যান এবং সেখানে মাসের পর মাস না খেয়ে অনাহারে মারা যান, তবে কী ভাবে তা রাষ্ট্রের দায় হতে পারে?’’