India cannot sell BrahMos supersonic cruise missile freely amid its high demand after Operation Sindoor dgtl
BrahMos Cruise Missile
বেয়াদপ পাক ফৌজকে শিক্ষা দেওয়া ব্রহ্মস কিনতে হুড়োহুড়ি! ভারতের ‘লাভের গুড়ে’ বসবে রুশ ‘পিঁপড়ে’?
পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ভারতের ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। এর চাহিদা দুনিয়া জুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও সহজে অন্য দেশকে ক্ষেপণাস্ত্রটি বিক্রি করে আয় করতে পারবে না নয়াদিল্লি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ০৭:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা ‘যুদ্ধে’ দুর্ঘর্ষ পারফরম্যান্স! পাকিস্তানের বুকে আতঙ্ক ধরিয়েছে ভারতের ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। সূত্রের খবর, এর আঘাতেই চোখের নিমেষে ধূলোয় মিশেছে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির অন্তত ন’টি বায়ুসেনা ঘাঁটি। ফলে লড়াই থামতেই দুনিয়ার অস্ত্রবাজারে তুঙ্গে উঠেছে এই ক্ষেপণাস্ত্রের চাহিদা। যদিও ‘ব্রহ্মস’ বিক্রি করে নয়াদিল্লির দু’পয়সা রোজগারের পরিকল্পনায় জল ঢালতে পারে ‘বন্ধু’ রাশিয়া।
০২১৯
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ‘ব্রহ্মস’ বিশ্বের একাধিক দেশকে বিক্রি করলে, রাতারাতি রং বদলাবে ভারতীয় অর্থনীতি। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরুও করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু, ঘরের মাটিতে তৈরি হওয়া এ-হেন সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বিক্রি করা মোটেই সহজ নয়। কারণ, ‘ব্রহ্মস’ বিক্রির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে মস্কো।
০৩১৯
বিশ্বের হাতিয়ারের বাজারের প্রায় পুরোটাই রয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা, চিন বা ফ্রান্সের মতো দেশের দখলে। এই রাষ্ট্রগুলি ইচ্ছামতো অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। তা হলে ভারতের ক্ষেত্রে ‘ব্রহ্মস’ বিক্রিতে বাধা কোথায়? বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এর মূল কারণ হল সংশ্লিষ্ট সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রটি পুরোপুরি ভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নয়। এর প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্ব রয়েছে রাশিয়ার।
০৪১৯
উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রহ্মপু্ত্র এবং রাশিয়ার মস্কোভা নদীর নাম মিলিয়ে ‘ব্রহ্মস’ শব্দটি তৈরি করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎপাদনকারী সংস্থা হল ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট মারণাস্ত্রটির প্রযু্ক্তি তৈরিতে রয়েছে ভারতের ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও এবং রুশ প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ার যৌথ উদ্যোগ। সেই কারণেই হাতিয়ারটি বিক্রি করার ক্ষেত্রে কখনও একক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না নয়াদিল্লি।
০৫১৯
‘ব্রহ্মস’ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডিআরডিও এবং এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ারের ৫০-৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। তাই নিয়ম অনুযায়ী, মারণাস্ত্রটি বিক্রি করতে হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিতে হবে রাশিয়ার অনুমতি। সেই জায়গাতেই রয়েছে মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, মস্কো এবং নয়াদিল্লির ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এক নয়। তাই এ ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের বার বার ‘ভিটো’ ক্ষমতা (অর্থাৎ না বলা) প্রয়োগ করার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
০৬১৯
উদাহরণ হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার কথা বলা যেতে পারে। সূত্রের খবর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ‘ব্রহ্মস’ কিনতে ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু, সেই প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি নয়াদিল্লি। গত তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপে থাকা মস্কোর চিন নির্ভরশীলতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেজিঙের সমস্যা হতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করার আগে অন্তত দু’বার ভাববে ক্রেমলিন, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৭১৯
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশের সঙ্গে ড্রাগনের সীমান্ত সংঘাত রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগর এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনা নৌসেনার ‘উৎপাতের’ অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। ফলে, ‘ব্রহ্মস’ কিনতে সেখানকার দেশগুলির ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। নয়াদিল্লি ও মস্কোর যৌথ উদ্যোগে তৈরি মারণাস্ত্রটি তারা হাত পেলে বাড়বে বেজিঙের বিপদ। ফলে এ ব্যাপারে ড্রাগন-সরকার যে রাশিয়ার উপর চাপ তৈরি করবে, তা বলাই বাহুল্য।
০৮১৯
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি ও বেজিং, দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চাইছে মস্কো। দু’দিন আগেই এ ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সর্গেই লেভরভ। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমি দুনিয়া আমাদের দুই বন্ধু ভারত ও চিনের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে সংঘাত তৈরির চেষ্টা করছে।’’ তাঁর ওই মন্তব্যে এটা স্পষ্ট যে চিনের লোকসান হোক, এমন কোনও পদক্ষেপ করবে না ক্রেমলিন।
০৯১৯
এ ছাড়া পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশ ভারতের থেকে ‘ব্রহ্মস’ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের নাম। কিন্তু, এই এলাকার দেশগুলির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক যথেষ্ট জটিল। কারণ, উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে মার্কিন প্রভাব খুব বেশি। ফলে তাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে মস্কো হ্যাঁ বলবেই, এমন নিশ্চয়তা নেই।
১০১৯
পশ্চিম এশিয়ার হাতিয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতের আরও একটি বাধা রয়েছে। সেটা হল ইজ়রায়েল। পাকিস্তান বা চিনের সঙ্গে সংঘাতে প্রকাশ্যেই নয়াদিল্লির পাশে থেকেছে এই ইহুদি রাষ্ট্র। বিপদের সময়ে অস্ত্র বা গোলাবারুদ দিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে তারা। অন্য দিকে ইজ়রায়েলের বিলুপ্তি ঘটানোর বার বার চেষ্টা করেছে আরব দুনিয়ার একাধিক দেশ। ফলে তাদের হাতে ‘ব্রহ্মস’ তুলে দেওয়া ইহুদিভূমির পক্ষে অত্যন্ত বিপদজ্জনক হতে পারে।
১১১৯
ভারত ও রাশিয়া, দু’টি দেশই ‘মিসাইল টেকনোলজ়ি কন্ট্রোল রিজ়িম’ বা এমটিসিআর চুক্তির আওতাভুক্ত। ফলে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। এই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, নয়াদিল্লি ২৯০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে পারবে। পাল্লা কম হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি নিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অসম্মতি জানাতে পারে কিনতে আগ্রহী রাষ্ট্র। সে ক্ষেত্রে চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়।
১২১৯
বর্তমানে ‘ব্রহ্মস’-এর উন্নত সংস্করণ তৈরিতে মন দিয়েছে ভারত ও রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে সুপারসনিক থেকে হাইপারসনিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মস্কো ও নয়াদিল্লির। চলতি বছরের শেষের দিকে নতুন সংস্করণটির (পড়ুন ব্রহ্মস মার্ক-২) সফল পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এটি তৈরি হলে আট ম্যাক (শব্দের চেয়ে আট গুণ বেশি) গতি সম্পন্ন ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পাবে ভারতীয় সেনা।
১৩১৯
সূত্রের খবর, ‘ব্রহ্মস মার্ক-২’কে রণতরী ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করতে পারে রুশ নৌবাহিনী। মস্কো চাইলে মারণাস্ত্রটি সরবরাহ করতে বাধ্য হবে নয়াদিল্লি। হাইপারসোনিকের মতো জটিল প্রযুক্তি বিক্রি করার ব্যাপারে ক্রেমলিনের যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। কারণ, বর্তমানে বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের কাছে উচ্চ গতির এই মারণাস্ত্র রয়েছে। রাশিয়া ছাড়াও তালিকায় আছে আমেরিকা ও চিনের নাম।
১৪১৯
বর্তমানে ভারত যে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তার চারটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। স্থল, রণতরী, যুদ্ধবিমান এবং ডুবোজাহাজ থেকে একে ছোড়া যায়। প্রথাগত বিস্ফোরকের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রটি পরমাণু হাতিয়ার বহনেও সমান ভাবে সক্ষম। এর গতিবেগ তিন ম্যাকের সামান্য বেশি। সূত্রের খবর, ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪,৯০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে ‘ব্রহ্মস’।
১৫১৯
২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে এই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী। এর পাল্লার রকমফের রয়েছে। প্রায় সাড়ে আট মিটার লম্বা ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কেজি বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। এক একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন তিন হাজার কেজি। মারণাস্ত্রটি হাইপারসনিক শ্রেণিতে বদলে গেলে এর পাল্লা বেড়ে দাঁড়াবে দেড় হাজার কিলোমিটার।
১৬১৯
ভারতীয় সেনা এবং নৌবাহিনী যে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তার পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার। অন্য দিকে এ দেশের বিমানবাহিনীর হাতে থাকা এই হাতিয়ার ৪৫০-৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
১৭১৯
২০২২ সালে ‘ব্রহ্মস’ ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে ফিলিপিন্স। এর জন্য ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার পাবে নয়াদিল্লি। গত বছরের ১৯ এপ্রিল এই মারণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটিতে পাঠায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। পরবর্তী ধাপে নয়াদিল্লি আরও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে বলে জানা গিয়েছে।
১৮১৯
ফিলিপিন্সের এই চুক্তির ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও বাধা দেয়নি মস্কো। ফলে এ ব্যাপারে আশাবাদী প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সূত্রের খবর, ‘ব্রহ্মস’ নিয়ে ৪৫ কোটি ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি করতে চাইছে ইন্দোনেশিয়া। অত্যাধুনিক এই হাতিয়ারটি কেনার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ। এ ব্যাপারে ক্রেমলিন সবুজ সঙ্কেত দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
১৯১৯
তবে এই নিয়ম শুধু যে ‘ব্রহ্মস’-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা নয়। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘স্কাইস্ট্রাইকার’ আত্মঘাতী ড্রোন-সহ একাধিক হাতিয়ার তৈরি করেছে ভারত। সেগুলিকে বিক্রির ক্ষেত্রেও একই সমস্যার মুখে পড়তে হবে নয়াদিল্লিকে। ফলে দ্রুত হাতিয়ারের বাজারে মোদী সরকার কতটা পা জমাতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।