India is developing Sudarshan Chakra to counter Rocket Force of Pakistan Army, say sources dgtl
India Pakistan Weapons
চিনকে টুকে ‘রকেট ফোর্স’ তৈরিতে ব্যস্ত পাকিস্তান! নতুন বাহিনীর মুণ্ডচ্ছেদে শ্রীকৃষ্ণের ‘সুদর্শন চক্রে’ শান দিচ্ছে ভারত
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার ভাষণে ‘সুদর্শন চক্র’ নামের নতুন যুগের অত্যাধুনিক একটি অস্ত্র তৈরির কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রস্তাবিত রকেট ফোর্সের আক্রমণ ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত? উঠছে প্রশ্ন।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৫ ১৪:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের সংঘর্ষে ভারতের হাতে মার খেয়েও হুঁশ ফেরেনি পাকিস্তানের। আর তাই ক্রমাগত পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে চলেছেন ইসলামাবাদের ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। অন্য দিকে ফৌজকে আরও শক্তিশালী করতে ‘রকেট ফোর্স’ গঠনের ঘোষণা করেছেন খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তারই প্রতিষেধক হিসাবে নয়াদিল্লি ‘সুদর্শন চক্র’ তৈরি করছে বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
০২২০
চলতি বছরের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে অত্যাধুনিক ‘সুদর্শন চক্র’ হাতিয়ার নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বহুস্তরীয় এই অস্ত্র শত্রুর উপরে নজরদারির পাশাপাশি সাইবার আক্রমণ ঠেকাবে এবং অন্যান্য সুরক্ষা দেবে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি রক্ষণাত্মক এবং আক্রমণাত্মক, দু’টি ভূমিকাই পালন করবে বলে জানা গিয়েছে।
০৩২০
সূত্রের খবর, আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী ‘সুদর্শন চক্র’ নির্মাণ এবং নকশা তৈরির কাজে ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)। তবে এটি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে একাধিক বেসরকারি সংস্থাও। অস্ত্রটির সক্ষমতা এবং প্রয়োগকৌশল সংক্রান্ত অধিকাংশ তথ্যই বর্তমানে গোপন রেখেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
০৪২০
তবে দিল্লিভিত্তিক একাধিক গণমাধ্যমের দাবি, ‘সুদর্শন চক্র’ সাধারণ আর পাঁচটা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো হবে না। এর কর্মপদ্ধতির জন্য ইজ়রায়েলের জনপ্রিয় আকাশ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোমের মিল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গোল্ডেন ডোমের ছোঁয়াও পাবে এ দেশের বাহিনী।
০৫২০
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, শত্রুর রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করার পাশাপাশি নিখুঁত নিশানায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা প্রত্যাঘাতের ক্ষমতা থাকবে ভারতের প্রস্তাবিত ‘সুদর্শন চক্রের’। এটিকে ব্যবহার করে হ্যাকিং বা ফিশিংয়ের মতো ডিজিটাল হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করবে সেনা। অর্থাৎ, আগামী দিনে সাইবার যুদ্ধের বড় হাতিয়ার হাতে পেতে চলেছে নয়াদিল্লির ফৌজ।
০৬২০
সূত্রের খবর, নতুন যুগের অত্যাধুনিক অস্ত্রটির নকশা তৈরিতে প্রতিরক্ষা গবেষকদের পাশাপাশি বাহিনীর শীর্ষ অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকবে। হাতিয়ারটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘২০৩৫ সালের মধ্যে সুদর্শন চক্র পুরোপুরি ভাবে তৈরি হয়ে যাবে। এর সাহায্যে প্রত্যেক নাগরিককে সুরক্ষা দেব আমরা।’’
০৭২০
লালকেল্লার ভাষণে অত্যাধুনিক হাতিয়ার নির্মাণের কথা বলতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর ব্যবহার করা অস্ত্র ছিল ‘সুদর্শন চক্র’। সেখান থেকেই নামটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট অস্ত্র তৈরি করতে কত অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা জানায়নি কেন্দ্র।
০৮২০
অন্য দিকে, ১৪ অগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে ‘আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড’ গঠনের কথা ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ়। এটি ইসলামাবাদের স্থলবাহিনীর একটি শাখা হিসাবে কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে। উন্নত প্রযুক্তিতে সজ্জিত প্রস্তাবিত বাহিনীটি ‘মাইলফলক’ হয়ে থাকবে বলে দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
০৯২০
ইসলামাবাদের নতুন বাহিনীর কাজ কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, চিনের অনুকরণে ফৌজের এই শাখাটিকে তৈরি করছেন রাওয়ালপিন্ডির জেনারেলরা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বেজিঙের ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ-র চতুর্থ বিভাগের নাম ‘রকেট ফোর্স’। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু হাতিয়ারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ড্রাগনের লাল সেনার এই শাখার হাতে।
১০২০
বর্তমানে ভারতীয় ফৌজ অবশ্য বিভিন্ন ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর নাম। ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চলা সংঘাতের সময় নিজের জাত চিনিয়েছে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। এর সাহায্যে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের পাক লড়াকু জেটকে ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ।
১১২০
এস-৪০০-এর পর অবশ্যই বলতে হবে বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কথা। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই হাতিয়ার। ভারতীয় বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌবাহিনীও এটিকে ব্যবহার করে থাকে। বারাক-৮-এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ দুই ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে।
১২২০
সীমান্তে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজ়রায়েলি স্পাইডার নামের হাতিয়ার ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। এতে রয়েছে পাইথন-৫ এবং ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া ডিআরডিও-র তৈরি কুইক রিয়্যাকশান সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং শর্ট রেঞ্জ সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ভারতীয় ফৌজের হাতে। প্রথমটি ব্যবহার করে স্থলসেনা এবং দ্বিতীয়টি এ দেশের নৌবাহিনী।
১৩২০
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারতীয় ফৌজের একাধিক ছাউনিকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিশানা করে পাক সেনা। মাঝ-আকাশে সেগুলিকে ধ্বংস করে খবরের শিরোনামে এসেছে ‘আকাশ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ডিআরডিও-র তৈরি এই এয়ার ডিফেন্সের নির্মাণকারী সংস্থা হল ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড। এর পাল্লা ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার।
১৪২০
এ ছাড়া ‘যুদ্ধের’ সময়ে পাক সেনার পাঠানো ড্রোনের ঝাঁককে উড়িয়ে দিতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) তৈরি জোড়া হাতিয়ার ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। সেগুলি হল, জ়ু-২৩এমএম অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্ট বন্দুক এবং জ়েডএসইউ-২৩-৪ শিল্কা। গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে আমেরিকার সঙ্গে ‘ঠান্ডা লড়াই’য়ের সময়ে এগুলি তৈরি করেছিল মস্কো।
১৫২০
এই দু’টি ছাড়া আরও একটি ‘বুড়ো’ অস্ত্র দিয়ে পাক ফৌজের পাঠানো ড্রোনের ঝাঁককে উড়িয়েছে ভারতীয় ফৌজ। তার নাম এল-৭০। এটি ৪০ মিলিমিটারের বন্দুক। ১৯৫২ সালে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ারটি তৈরি করে সুইডিশ সংস্থা বফোর্স। মিনিটে ২৫০ থেকে ৩৩০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে সক্ষম এল-৭০-এর পাল্লা অবশ্য মাত্র চার কিলোমিটার। গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে রুশ ফৌজকে।
১৬২০
এ ছাড়া চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল অত্যাধুনিক লেজ়ার হাতিয়ারের সফল পরীক্ষা চালায় ডিআরডিও। অস্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন সিস্টেম’ বা ডিইডব্লিউ। বর্তমান বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কাছে আছে এই হাতিয়ার।
১৭২০
এত ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একসঙ্গে চালানোর জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ তৈরি করেছে এ দেশের বাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চলা সংঘাতের সময়ে এই কমান্ড সেন্টারই পাক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোন অস্ত্র দিয়ে কোনটিকে মাঝ-আকাশে কী ভাবে ধ্বংস করতে হবে, তার সিদ্ধান্ত ছিল এই কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকদের হাতে।
১৮২০
এখন প্রশ্ন হল, এত কিছু থাকা সত্ত্বেও কেন ‘সুদর্শন চক্র’ তৈরি করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী? প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, পাকিস্তান যে ভাবে রকেট ফোর্স তৈরি করছে সেটা ভারতের কাছে উদ্বেগের। আগামী দিনে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন পাঠিয়ে এ দেশের বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করার ছক কষতে পারেন রাওয়ালপিন্ডির জেনারেলরা।
১৯২০
সাম্প্রতিক সময়ের ইজ়রায়েল-হামাস বা ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাতে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সেটা হল, একসঙ্গে কয়েক হাজার রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালালে সে ভাবে কাজ না-ও করতে পারে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তা ছাড়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে এর ব্যর্থ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২০
তা ছাড়া যুদ্ধের গতি যে ভাবে পাল্টাছে তাতে রক্ষণ সামলে আক্রমণে যাওয়া দিন দিন কঠিন হচ্ছে। সেই ফাঁক ‘সুদর্শন চক্র’ দিয়ে পূরণ করতে চাইছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এতে শত্রুর হামলা ঠেকানোর সঙ্গে সঙ্গেই সমান তীব্রতায় প্রত্যাঘাত শানাতে পারবে সেনা, যা মুহূর্তে রণাঙ্গনে খেলা ঘুরিয়ে দেবে বলে মনে করছেন সাবেক ফৌজি অফিসারেরা।