India tested Stratospheric Airship may be a game changer in futuristic warfare dgtl
India’s Secret Weapon
আটকাবে ক্ষেপণাস্ত্র, সীমান্তে রাখবে শ্যেনদৃষ্টি! পাক-চিনের ঘরে উঁকি দিতে ‘গুপ্তচর’ ছায়া-উপগ্রহ বানাল ভারত
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের প্রথম সফল পরীক্ষা চালিয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যুদ্ধবিমানের জিপিএস জ্যামিংয়ের মতো একগুচ্ছ কাজে বাহিনী একে ব্যবহার করতে পারবে বলে জানা গিয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই প্রতিরক্ষা গবেষণায় এল বড় সাফল্য। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের প্রথম সফল পরীক্ষা চালাল ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও। বিশ্বের গুটিকতক দেশের হাতে রয়েছে এই প্রযুক্তি। সেই তালিকায় এ বার নাম উঠল ভারতের। অত্যাধুনিক এই এয়ারশিপ শত্রুর উপর নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে যাচ্ছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০২১৮
চলতি বছরের ৩ মে মধ্যপ্রদেশের শেওপুরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের প্রথম পরীক্ষায় সাফল্য পায় ডিআরডিও। আগরার অ্যারিয়াল ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্টের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট যানটি তৈরি করেছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। প্রথম উড়ান শেষে এর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং ডিআরডিওর চেয়ারম্যান সমীর ভি কামাত।
০৩১৮
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপটি পরীক্ষার সময়ে মাটি থেকে ১৭ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছয়। এটি মোট ৬২ মিনিট বাতাসে ভেসে ছিল। ওজন বহনেও এটি সক্ষম বলে জানা গিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির কাজে একে সেনা বা সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফ) ব্যবহার করতে পারবে বলে স্পষ্ট করেছে ডিআরডিও।
০৪১৮
দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় নিরাপত্তা এবং নজরদারি বৃদ্ধির জন্য ছদ্ম-উপগ্রহ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। অবশেষে তাতে সাফল্য পেলেন তাঁরা। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ মহাশূন্যে না গিয়েও গুপ্তচর উপগ্রহের মতো কাজ করতে সক্ষম। ফলে চিন ও পাকিস্তানের মতো শত্রু দেশগুলির সীমান্তে নজরদারি অনেক বেশি সহজ হবে।
০৫১৮
অতিকায় বেলুনের আকারের মানববিহীন এই যান কিন্তু একেবারেই ড্রোন নয়। ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ঘোরাফেরা করতে সক্ষম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে হাই-অল্টিটিউড প্ল্যাটফর্ম সিস্টেম বা এইচএপিএস হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। কৃত্রিম উপগ্রহের বেশ কিছু কাজ এর মাধ্যমে করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
০৬১৮
ডিআরডিও সূত্রে খবর, বাণিজ্যিক বিমান বায়ুমণ্ডলের যে স্তর দিয়ে যাতায়াত করে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ থাকবে তার উপরে। মেঘ-ঝড়-বৃষ্টি এর উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। কৃত্রিম উপগ্রহের চেয়ে অনেক কম খরচে টেলিযোগাযোগ, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারির কাজ চালাতে সক্ষম এই যান।
০৭১৮
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করেছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এটি অত্যন্ত হালকা হওয়ায় যানটিকে বায়ুমণ্ডলের ওই স্তরে নিয়ে যেতে তাঁদের সমস্যা হয়নি। হাই-অল্টিটিউড প্ল্যাটফর্ম সিস্টেমটিতে বিমানের মতো ডানা রয়েছে। এর ভিতরে একটি প্রপালসান সিস্টেম বসিয়েছেন তাঁরা, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বৈদ্যুতিক মোটর ছাড়া আর কিছুই নয়।
০৮১৮
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপটির প্রপালসান মোটরটিকে চালু রাখতে ডিআরডিওর গবেষকেরা হাইড্রোজেনের মতো পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্রটির মধ্যে লাগানো হয়েছে বেশ কয়েকটি সৌর প্যানেল। যানটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার বাতাসে ভেসে বেড়ানোর রাস্তা ঠিক করতে রয়েছে উন্নত নেভিগেশন ব্যবস্থাও।
০৯১৮
যে কোনও পরিবেশে কাজ করার সক্ষমতা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের রয়েছে বলে দাবি করেছে ডিআরডিও। যানটি হিমাঙ্কের ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে দিব্যি চলাফেরা করতে পারে। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির বিকিরণ বা বাতাসের ওজোন স্তরের ক্ষয় সহ্য করার শক্তি রয়েছে ভারতের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের।
১০১৮
এই যানটিকে তৈরি করতে পলিথিন বা মাইলারের মতো সামগ্রী ব্যবহার করছেন ডিআরডিওর বিজ্ঞানীরা। এর সৌর প্যানেলগুলি ক্রমাগত শক্তি জুগিয়ে যাবে। ফলে বার বার এতে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন নেই। উল্টে দীর্ঘ সময়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারবে এই অত্যাধুনিক ছদ্ম ‘কৃত্রিম উপগ্রহ’।
১১১৮
সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট যানটি ১,৫০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম। এতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা ও সেন্সর বসিয়েছেন ডিআরডিওর বিজ্ঞানীরা। সেগুলির সাহায্যে নজরদারির কাজ চালাতে পারবে সেনা ও বিএসএফের মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সময়ে একে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।
১২১৮
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারি ছাড়া স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে অন্য কাজে ব্যবহার করার সুযোগও রয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দিতে এটি দারুণ ভাবে কাজ করে। উদাহরণ হিসাবে মিরা অ্যারোস্পেসের কথা বলা যেতে পারে। আফ্রিকার দেশে রুয়ান্ডার বেশ কিছু এলাকায় ৫জি নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে দারুণ কাজ করেছিল ওই যান।
১৩১৮
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নজরদারির কাজে সংশ্লিষ্ট স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে কাজে লাগাতে পারে সরকার। গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে এই যানের। বছর কয়েক আগে নিউ মেক্সিকোর সংস্থা স্কেই ইনকর্পোরেটেডের তৈরি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে এই কাজে লাগানো হয়েছিল। সেখানে যানটির সাফল্য ছিল নজরকাড়া।
১৪১৮
সামরিক ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের জিপিএস জ্যামিং, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, লড়াইয়ের সময়ে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় রাখা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধের কাজে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপকে কাজে লাগতে পারবে এ দেশের বাহিনী। মাসের পর মাস, এমনকি টানা কয়েক বছর ধরে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে এই যানের। তবে এগুলির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
১৫১৮
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপের বেশ কিছু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আর তাই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি এর প্রোটোটাইপ নির্মাণ করেছে। কোনও বাহিনীই এখনও সরাসরি একে ব্যবহার করে না। সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি বা হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রা সহ্য করে এগুলি কত ক্ষণ টিকে থাকতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তা সত্ত্বেও ডিআরডিওর সফল পরীক্ষাকে মাইলফলক হিসাবে দেখা হচ্ছে।
১৬১৮
বর্তমানে আমেরিকা, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশের হাতে এই ধরনের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সংশ্লিষ্ট যানটি তৈরি করেছে লড়াকু জেট নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিন। ২০০৫ সালে তাদের এই যান ৭৪ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
১৭১৮
২০১৫ সালে এই ধরনের একটি যানের পরীক্ষামূলক উড়ান চালায় চিনা প্রতিরক্ষা সংস্থা ইউয়ানমেং এয়ারশিপ। দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ এবং নজরদারির কাজে বেজিং এটিকে ব্যবহার করবে বলে জানা গিয়েছে।
১৮১৮
বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। আর এতে বড় ভূমিকা নিতে পারে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক এয়ারশিপ। এখন থেকেই সেই রাস্তায় ভারত যে অনেকটা এগিয়ে গেল, তা বলাই বাহুল্য।