Indian Air Force should launch preemptive strike on AWACS of Pakistan with S-400 or Barak Air Defence System, say experts dgtl
IAF Strike on Pakistan
রাশিয়া আর ইজ়রায়েলের অস্ত্রে ধ্বংস ‘উড়ুক্কু রেডার’! পহেলগাঁও প্রতিশোধে নিশানায় পাকিস্তানের ‘অ্যাওয়াক্স’?
পহেলগাঁওয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালানোর আগে ভারতীয় বায়ুসেনাকে সতর্ক করলেন বাহিনীরই অবসরপ্রাপ্ত অফিসারেরা। ইসলামাবাদের উড়ুক্কু রেডারের বিমানবহরকে আগাম ধ্বংস করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ১৪:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কী ভাবে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার বদলা নেবে নয়াদিল্লি? সেই প্রত্যাঘাতকে কেন্দ্র করে পুরোদস্তুর যুদ্ধে জড়াবে ভারত ও পাকিস্তান? এই সব প্রশ্ন ঘিরে দুনিয়া জুড়ে জল্পনার মধ্যেই ইসলামাবাদের বিশেষ একটি ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে সতর্ক করলেন বায়ুসেনার সাবেক অফিসারেরা। মুখোমুখি লড়াইয়ে নামার আগে অঙ্কুরেই তা বিনষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
০২২০
পাক বিমানবাহিনীর ওই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হল এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বা অ্যাওয়াক্স। এটি প্রকৃতপক্ষে বিমানের পিঠে বসানো অত্যাধুনিক উড়ন্ত রেডার। ইসলামাবাদের হাতে এই ধরনের মোট ১১টি বিমান রয়েছে। মাঝ-আকাশে ‘ডগফাইট’-এর সময় এগুলির সাহায্যে ভারতীয় লড়াকু জেটকে বিপথে চালিত করতে পারে পাক বায়ুসেনা। তাই একে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের আস্তিনের লুকোনো সাপ বললে অত্যুক্তি হবে না।
০৩২০
এ হেন অ্যাওয়াক্স বিমানগুলিকে মাঝ-আকাশে কমান্ড সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করে পাক বায়ুসেনা। সেগুলিতে রয়েছে অতি শক্তিশালী সুইডিশ অ্যারে রেডার। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা অ্যাওয়াক্স বিমানগুলিকে ইসলামাবাদের ‘চোখ’ ও ‘কান’ বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলির জন্য সীমান্তে পাকিস্তানের নজরদারির ক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
০৪২০
ভারতীয় বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত অফিসারেরা মনে করেন, অ্যাওয়াক্স বহরের জন্যেই কিছুটা এগিয়ে আছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। এগুলির নজর এড়িয়ে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে বিমানহানা চালানো বেশ কঠিন। এ দেশের লড়াকু জেট ইসলামাবাদের আকাশসীমায় ঢুকলেই অ্যাওয়াক্সের মাধ্যমে সেগুলিকে চিহ্নিত করতে পারবেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রকে চিনিয়ে দিতে পারে ওই উড়ন্ত রেডার।
০৫২০
বিশ্লেষকদের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত হয়ে গেলে মাঝ-আকাশে তা ধ্বংস করার সুযোগ পেয়ে যাবে পাক ফৌজ। কারণ, তাঁদের হাতে রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। আর তাই পহেলগাঁওয়ের বদলার অপারেশন শুরুর আগে ইসলামাবাদের অ্যাওয়াক্স বিমানের বহর ধ্বংসের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক বায়ুসেনা অফিসারেরা।
০৬২০
কী ভাবে উড়ন্ত রেডার-বিমান ধ্বংস করা যাবে, তারও রূপরেখা দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি আধিকারিকেরা। তাঁদের মতে, এ ব্যাপারে দু’টি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে ভারত। প্রথমত, যুদ্ধের জিগির তোলা পাক বিমানবাহিনী সীমান্তের খুব কাছে মহড়ায় ব্যস্ত রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে ভারতের আকাশ-যোদ্ধারা পাল্টা যুদ্ধাভ্যাসে নামলে সংযম খোয়াবে ইসলামাবাদ। তখনই এ দেশে ঢুকে হামলা চালানোর ঝুঁকি নেবে পাক বিমানবাহিনী।
০৭২০
এই ধরনের অপারেশনে ইসলামাবাদের লড়াকু জেটের সঙ্গে অবশ্যই থাকবে অ্যাওয়াক্স বিমান। এক বার ভারতের আকাশসীমায় ঢুকলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাহায্যে সেগুলিকে ওড়ানো খুব একটা কঠিন হবে না। উড়ন্ত রেডার হারালে একরকম অন্ধ হয়ে পড়বে পাকিস্তানের বায়ুসেনা। অনেকটাই ঢিলেঢালা হবে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
০৮২০
দ্বিতীয় পন্থা হিসাবে পহেলগাঁওয়ের বদলা নিতে একসঙ্গে জোড়া অপারেশন শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন বায়ুসেনার সাবেক অফিসারেরা। তাতে পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নিশানা করবে বায়ুসেনার লড়াকু জেট। রাস্তায় ইসলামাবাদে অ্যাওয়াক্স বহরকে ধ্বংস করে এগোবে তারা। তবে এই পদ্ধতি নিলে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাত যে আরও তীব্র হবে, তা বলাই বাহুল্য।
০৯২০
উল্লেখ্য, ক্ষেপণাস্ত্র বা বিমান হামলা আটকানোর জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে ছ’টি করে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। কিন্তু, তার পরও এ ব্যাপারে নয়াদিল্লিকে কয়েক গুণ এগিয়ে রাখছেন বিশ্বের তাবড় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, নয়াদিল্লির কবচ ভেদ করা শুধু কঠিনই নয়, একরকম দুঃসাধ্য। এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন তাঁরা।
১০২০
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল হাতিয়ার হল রাশিয়ার তৈরি এস ৪০০ ট্রায়াম্ফ। সীমান্তে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাকে অভেদ্য বর্মে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে মস্কোর এই অস্ত্রের। শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করতে পারে এস-৪০০। শুধু তা-ই নয়, এর ‘অ্যাক্টিভ ইলেট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে’ বা এইএসএ রেডারের সাহায্যে একসঙ্গে ৩০০ লক্ষ্য চিহ্নিত করা যায়।
১১২০
এস-৪০০ ট্রায়াম্ফে স্বল্প, মাঝারি এবং দূরপাল্লার মিলিয়ে মোট তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। শব্দের চেয়ে ১৪ গুণ গতিতে (পড়ুন ম্যাক ১৪) ছুটতে পারে সেগুলি। ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লিকে মোট তিনটি এস-৪০০ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে মস্কো। চলতি বছরে এই হাতিয়ারের আরও একটি ব্যাচ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চলে এলে আকাশেই দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করতে সক্ষম হবে এ দেশের বিমানবাহিনী।
১২২০
এস-৪০০র পর অবশ্যই বলতে হবে বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কথা। ইজ়রায়েলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে নয়াদিল্লি। ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই হাতিয়ার। ভারতীয় বায়ুসেনার পাশাপাশি নৌবাহিনীও এটিকে ব্যবহার করে থাকে। বারাক-৮-এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ দুই ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে।
১৩২০
সীমান্তে ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজ়রায়েলি স্পাইডার নামের হাতিয়ার ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা। এতে রয়েছে পাইথন-৫ এবং ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর তৈরি কুইক রিয়্যাকশান সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং শর্ট রেঞ্জ সার্ফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ভারতীয় ফৌজের হাতে। এগুলিকে নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন রেখেছে নয়াদিল্লি।
১৪২০
মাঝ-আকাশে শত্রু বিমান ধ্বংস করার ক্ষেত্রে ডিআরডিওর তৈরি আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থারও জুড়ি মেলা ভার। ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত নিশানায় হামলা করার ক্ষমতা রয়েছে এই হাতিয়ারের। ২.৫ ম্যাক গতিতে ছুটতে পারে ডিআরডিওর আকাশ। মধ্য এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়া ইতিমধ্যেই ভারতের থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটিকে কিনেছে।
১৫২০
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে মানববোমা দ্বারা হামলা চালায় ইসলামাবাদ মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪০ জন জওয়ানের। কয়েক দিনের মধ্যে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে জইশের জঙ্গি ক্যাম্প এবং প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমানহানা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা।
১৬২০
নয়াদিল্লির ওই পদক্ষেপের পর চুপ করে বসে থাকেনি পাকিস্তান। ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে হামলা চালানোর চেষ্টা করে ইসলামাবাদের বায়ুসেনা। আমেরিকার তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে এসেছিল তারা। কিন্তু মাঝ-আকাশে অত্যাধুনিক ওই লড়াকু জেটের একটিকে গুলি করে নামান ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমানে ছিলেন তিনি।
১৭২০
কিন্তু, এফ-১৬কে তাড়া করার সময়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) ঢুকে পড়েন অভিনন্দন। লড়াকু জেট নিয়ে তাঁকে বিমানঘাঁটিতে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মোক্ষম সময়ে অ্যাওয়েক্স বিমানের সাহায্যে মিগ-২১ বাইসনকে ভুল পথে চালিত করতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। এর পর সুযোগ বুঝে গুলি করে তাঁর বিমান ধ্বংস করা হয়।
১৮২০
২০১৯ সালের ওই ঘটনায় অবশ্য বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে যান উইং কমান্ডার অভিনন্দন। পিওকে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের ফৌজ। পরে অবশ্য নয়াদিল্লির চাপে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইসলামাবাদ। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই যাবতীয় পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক বায়ুসেনার অফিসারেরা।
১৯২০
পহেলগাঁও হামলার পর ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিকে স্থগিত করেছে ভারত। নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্তে ফুঁসে উঠেছে ইসলামাবাদ। নদীর জল আটকাতে কোনও বাঁধ হলে তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। তাঁর ওই মন্তব্যকে সুবর্ণসুযোগ হিসাবে দেখছেন এ দেশের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারেরা।
২০২০
প্রাক্তন ফৌজিদের কথায়, বাঁধ গুঁড়িয়ে দিতে হলে ইসলামাবাদের ভরসা সেই বায়ুসেনা। এই ধরনের অভিযানের জন্য ভারতের আকাশসীমায় ঢুকতে হবে তাদের। আর তখনই অ্যাওয়াক্সের বহর উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ চলে আসবে এ দেশের বিমানবাহিনীর কাছে। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লির হাতে বর্তমানে মোট পাঁচটি অ্যাওয়াক্স বিমান রয়েছে।