‘বুড়ো ঘোড়া’র ধাক্কায় সাময়িক ভাবে সিংহাসনচ্যুত মাস্ক! ওরাকলের শেয়ারের দাপটে বিশ্বসেরা ধনকুবের অশীতিপর ল্যারি

১৫ বছর আগে ওরাকলে এলিসনের মাত্র ২২ শতাংশ শেয়ার ছিল। ২০১১ সাল থেকে ওরাকলের স্টক পুনরায় কিনতে থাকেন তিনি। একে স্টক বাইব্যাক বা সংস্থার নিজস্ব শেয়ার পুনঃঅধিগ্রহণ বলা হয়ে থাকে। এর জন্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলায় ব্যয় করেন তিনি।

আজ এলিসনের শেয়ারের মালিকানা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৪১ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। এই বাইব্যাকের সময় এলিসন তাঁর বেশির ভাগ শেয়ার ধরে রেখেছিলেন। সেগুলি বিক্রি না করেই তাঁর শেয়ারের মালিকানা বৃদ্ধি করেছিলেন। ফলে যখন ওরাকলের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায়, তখন তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদও বেড়ে যায়।

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের বাজারে ওরাকলের ক্রমবর্ধমান লাভের কারণে সংস্থাটির প্রথম ত্রৈমাসিকের আয় বৃদ্ধি হয়েছে। অ্যামাজ়ন ওয়েব সার্ভিসেস এবং মাইক্রোসফ্‌ট অ্যাজুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে ওরাকেল। প্রত্যাশার চেয়েও ভাল লাভ করেছে সংস্থাটি। ফলে শেয়ার বাজারে তার প্রতিফলন পড়েছে।

ওরাকলের আয় প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গিয়েছে, এই খবরেই সংস্থার শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওরাকলের এই সাফল্য এসেছে বলে সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। ওরাকল আশা করছে যে, আগামী ত্রৈমাসিকে ওরাকল ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ওসিআই) থেকে তাদের আয় ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

অন্য দিকে টেসলার বৈদ্যুতিন গাড়ির শেয়ারে ১৩ শতাংশ পতন হওয়ার কারণে টলমল করে উঠেছিল মাস্কের সিংহাসন। তাঁর মোট সম্পদ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। শেষ মুহূর্তে অবশ্য নিজের হৃত আসন ফিরে পান টেসলা কর্ণধার।

২০২৪ সালে ফোর্বস পত্রিকার বিচারে বিশ্বে ধনকুবেরদের তালিকায় দু’নম্বরে উঠে আসে ল্যারির নাম। তিনি পিছনে ফেলেন অ্যামাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা জ়েফ বেজ়োসকে। তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে আছেন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক। টেসলার চিফ এক্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) পদে রয়েছেন মাস্ক। সংস্থার বিপুল পরিমাণ শেয়ারও রয়েছে তাঁর হাতে।

পারিবারিক কারণে এলিসন শেষ করতে পারেননি কলেজের পাঠ। তার পরেও তাঁর হাতে মালিকানা রয়েছে এমন একটি সংস্থার, যার দৌলতে আজ বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি তিনি। ১৯৬২ সালে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন ল্যারি। সেই পড়া শেষ করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। পরে ১৯৬৬ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।

ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, এলিসন ২০১৮ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার পরিচালক হিসাবে যোগদান করেন। ২০২২ সালে তিনি এই পদ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি সংস্থার প্রায় দেড় কোটি শেয়ারের মালিক।

ওরাকল ও টেসলার শেয়ার ছাড়াও একটি গোটা দ্বীপের মালিক মার্কিন টেক জায়ান্ট কর্তা। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে লানাই নামের একটি দ্বীপ রয়েছে তাঁর। ২০১২ সালে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিময়ে দ্বীপটির মালিকানা হাতে পান তিনি। লানাই কেনার পর রাতারাতি সেই জায়গার ভোল বদলে ফেলেন ল্যারি।

লানাইয়ে বহু বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করিয়েছেন তিনি। তৈরি করিয়েছেন বিলাসবহুল রিসর্টও। নিজের জন্য ল্যারি পাঁচটি বাড়ির একটি কমপ্লেক্সও তৈরি করিয়েছেন লানাই দ্বীপপুঞ্জে। এ ছাড়া ২০২২ সালে এলিসন ১৪০০ কোটি টাকা গিয়ে ফ্লরিডায় একটি বিশাল সম্পত্তি কিনে নেন।

কানাঘুষো শোনা যায়, আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের এলিসনের ষষ্ঠ স্ত্রী সেখানে থাকেন। ৪৭ বছরের ছোট তরুণীর সঙ্গে ২০২৩ সালে ল্যারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে দাবি করে আমেরিকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ও চিনের বাসিন্দা জোলিন ঝু হলেন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনকুবেরের ঘরনি।