Maldives is facing debt crisis, huge payment due in 2025 and 2026, claims report dgtl
Maldives
দু’বছরে শোধ করতে হবে অনেক টাকা, চেয়েও মিলছে না ধার! মলদ্বীপের বিপদে মুখ ফেরাচ্ছে ‘বন্ধু’ চিনও
কেন মলদ্বীপের অর্থনৈতিক হাল বেহাল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা? মলদ্বীপের মাথায় ঋণের বোঝা প্রবল। ২০২৫ এবং ’২৬-এর মধ্যে অনেক টাকার ঋণ শোধ করতে হবে মলদ্বীপকে। পাশাপাশি, সে দেশের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও তলানিতে ঠেকেছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
তীব্র ঋণ সঙ্কটের মুখে মলদ্বীপ! বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ রকম ভাবে চলতে থাকলে দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। শ্রীলঙ্কার মতো হাল হতে পারে মলদ্বীপের।
০২২৩
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারও (আইএমএফ) আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল, বড়সড় বিপদের মুখে পড়তে পারে মলদ্বীপ। চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র। মলদ্বীপের ঋণসঙ্কট দেখে মনে হচ্ছে আইএমএফ-এর সেই ইঙ্গিত ছিল যথেষ্ট অর্থপূর্ণ।
০৩২৩
কিন্তু কেন মলদ্বীপের অর্থনৈতিক হাল বেহাল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা? মলদ্বীপের মাথায় ঋণের বোঝা প্রবল। ২০২৫ এবং ’২৬-এর মধ্যে অনেক টাকার ঋণ শোধ করতে হবে মলদ্বীপকে। পাশাপাশি, সে দেশের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও তলানিতে ঠেকেছে।
০৪২৩
এই নিয়ে বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও, অর্থনীতির হাল ফেরাতে পারছে না দ্বীপরাষ্ট্রটি।
০৫২৩
‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মলদ্বীপের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৩৪০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর সিংহভাগই মূলত চিন এবং ভারতের কাছ থেকে নেওয়া।
০৬২৩
তবে মলদ্বীপের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হল ২০২৫ সালে ৬০ কোটি ডলার এবং ২০২৬ সালে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করা।
০৭২৩
সঙ্কট মোকাবিলায় মলদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার পর্যটকদের উপর কর বৃদ্ধি, সরকারি কর্মীদের বেতন কমানো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। মলদ্বীপ সরকার সম্প্রতি সে দেশে একটি বিমানবন্দরের এলাকা বৃদ্ধি এবং হোটেলের সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছে।
০৮২৩
এর পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছে মলদ্বীপ। কিন্তু সেই আবেদনে দ্বীপরাষ্ট্র এখনও ইতিবাচক সাড়া পায়নি বলেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯২৩
চিনের ‘চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক’-এর কাছ থেকেও ২০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে মলদ্বীপ। চিনের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা এবং ঋণ শোধ সহজ করার জন্য ঋণ পুনঃঅর্থায়নের বিকল্পগুলির জন্যও অনুরোধ করেছে।
১০২৩
তবে বেজিংও ওই আবেদনগুলিতে কোনও সাড়া দেয়নি বলে খবর। উল্লেখ্য, মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর বেজিং এবং মালের বন্ধুত্ব গভীর হতে দেখা গিয়েছিল। মুইজ্জু সরকার গঠনের পর ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ মলদ্বীপকে তহবিল দিয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল চিনের শি জিনপিং সরকার।
১১২৩
বেজিং সফরেও গিয়েছিলেন মুইজ্জু। ফিরে আসার পরেই উন্নয়নের জন্য ‘নিঃস্বার্থ সহায়তা’ করার জন্য চিনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিভিন্ন সূত্রে খবর, চিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ধার করেছে মলদ্বীপ। কিন্তু ঋণ নিয়ে সঙ্কটের সময় ‘বন্ধু’ চিনের থেকে মলদ্বীপ সাহায্য সংক্রান্ত কোনও স্পষ্ট বার্তা পায়নি। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি বিপদের সময় মলদ্বীপের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বেজিং?
১২২৩
অন্য দিকে, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাতেও এখনও কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত পায়নি মলদ্বীপ। ইতিমধ্যে, ‘শারজা ইসলামিক ব্যাঙ্ক’ ২০ কোটি ডলারের সুকুক বন্ড (সুকুক পরিচিত ইসলামিক বন্ড নামেও। শরিয়া মেনে তৈরি এই সরকারি বন্ড প্রচলিত মূলত ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে। গত এক দশকে বিশ্ব বাজারে সুকুকের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।) বিক্রি করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
১৩২৩
এত কিছুর মধ্যেও মলদ্বীপে শাপে বর হয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রে আবার পর্যটকদের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং ভারত থেকে ৭৫ কোটি ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তির পর। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দু’টি বিষয় মলদ্বীপ সরকারকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা একেবারে কমাতে পারবে না।
১৪২৩
কিন্তু কেন পর্যটকদের ‘স্বর্গরাজ্য’ মলদ্বীপের এমন হাল হল? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কাঠামোগত দুর্বলতা, স্বল্প উৎপাদন, আমদানির উপর অত্যাধিক নির্ভরতা, কম অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য এবং কোভিডের কারণে চাপ পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্রের উপর। ভঙ্গুর হয়েছে মলদ্বীপের অর্থনীতি।
১৫২৩
মলদ্বীপের মূল আকর্ষণ অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। নীল জলরাশি, ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির সৈকত, প্রচুর প্রবাল— মলদ্বীপে গেলে মন ভাল করার মতো জিনিসের অভাব নেই। দ্বীপরাষ্ট্রটির আয়ের মূল উৎসই পর্যটন। সে দেশের অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ আসে পর্যটন থেকে। কিন্তু গত বছর সেই পর্যটন থেকেও বিশেষ আয় হয়নি।
১৬২৩
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় মলদ্বীপের ঘাড়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে মলদ্বীপের উপর ঋণের বোঝা ছিল ৩০০ কোটি ডলার। তবে বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক ঋণ এবং অনুদান নিশ্চিত করা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের মার্চে সেই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮২০ কোটি ডলারে।
১৭২৩
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে ২০২৯ সালের মধ্যে দ্বীপরাষ্ট্রেরর উপর ঋণের বোঝা ১১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা সে দেশের আর্থিক পতনের আশঙ্কা আরও তীব্র করে তুলেছে।
১৮২৩
উল্লেখ্য, ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মুইজ্জু ২০২৩ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসার পরেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হয় দ্বীপরাষ্ট্রের। ভারতকে সে দেশ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বলে মুইজ্জু সরকার।
১৯২৩
অভিযোগ, ভারত-বিরোধী প্রচার করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন মুইজ্জু। এই আবহে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে লক্ষদ্বীপ গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সে সময় মুইজ্জু সরকারের তিন মন্ত্রী কুমন্তব্য করেছিলেন। তার পরে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন বৃদ্ধি পায়।
২০২৩
এই আবহে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে মলদ্বীপের বরাদ্দে কাটছাঁট করেছিল মোদী সরকার। মলদ্বীপের ওই মন্ত্রীদের কুমন্তব্যের পরে বহু ভারতীয় পর্যটক সে দেশে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। বিমানের টিকিট বাতিল করে দেন। ‘মলদ্বীপ বয়কট’ ডাক দেওয়া হয়। এর ফলে ধাক্কা খায় দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
২১২৩
তবে তার পরে সুর নরম করেন মুইজ্জু। গত অক্টোবর মাসে দিল্লিতে আসেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, ভারতের নিরাপত্তা কখনও বিঘ্নিত হতে দেবে না মলদ্বীপ।
২২২৩
এর পর ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময় মলদ্বীপেকে সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ভারত। ২০২৪ সালে মলদ্বীপের উন্নয়নে সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার সেই বরাদ্দ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।
২৩২৩
বাজেটের নথি অনুযায়ী, ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষে মলদ্বীপের উন্নয়নের জন্য ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মলদ্বীপকে ৪৭০ কোটি টাকা সাহায্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও ২০২৪ সালের অন্তবর্তী বাজেটেও ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রকে।