Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
National news

অর্ধ শতক ধরে জনমানবহীন ‘রাম সেতু’-র এই শহর

একটা শহরে যা যা থাকে তার সবই ছিল এখানে। অথচ আরও উন্নত হওয়ার পরিবর্তে জাঁকজমকপূর্ণ সেই শহর আজ ভুতুরে। সম্পূর্ণ জনমানবহীন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ১০:৩২
Share: Save:
০১ ১২
এক সময়ে বেশ উন্নত শহর ছিল। রেলওয়ে স্টেশন, চার্চ, পোস্ট অফিস, বাজার, হাসপাতাল— একটা শহরে যা যা থাকে তার সবই ছিল এখানে। অথচ আরও উন্নত হওয়ার পরিবর্তে জাঁকজমকপূর্ণ সেই শহর আজ ভুতুড়ে। সম্পূর্ণ জনমানবহীন।

এক সময়ে বেশ উন্নত শহর ছিল। রেলওয়ে স্টেশন, চার্চ, পোস্ট অফিস, বাজার, হাসপাতাল— একটা শহরে যা যা থাকে তার সবই ছিল এখানে। অথচ আরও উন্নত হওয়ার পরিবর্তে জাঁকজমকপূর্ণ সেই শহর আজ ভুতুড়ে। সম্পূর্ণ জনমানবহীন।

০২ ১২
ভারতের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর ধনুষকোডি। যদিও এখন সে শহর জনমানবহীন। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম জেলার এই দ্বীপ-শহর এমন একটা জায়গা, যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষের বিস্ময়ের মেলবন্ধন ঘটেছে। আর বিস্ময়ের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিশেলের জন্য এই ভুতুড়ে শহরের পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা।

ভারতের সবচেয়ে দক্ষিণের শহর ধনুষকোডি। যদিও এখন সে শহর জনমানবহীন। তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম জেলার এই দ্বীপ-শহর এমন একটা জায়গা, যেখানে প্রকৃতি এবং মানুষের বিস্ময়ের মেলবন্ধন ঘটেছে। আর বিস্ময়ের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিশেলের জন্য এই ভুতুড়ে শহরের পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা।

০৩ ১২
এই শহর থেকে শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এই শহরের উপর দিয়েই ভারত আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে নিত্য যাতায়াত ছিল সাধারণ মানুষজনের। কখনও ব্যবসা, কখনও তীর্থের জন্য সেখানে যেতেন অনেকে। তার জন্য ধনুষকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার শহর তালাইমানারের মধ্যে ফেরি পরিষেবাও ছিল। তখনও দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা গড়ে ওঠেনি। ফলে যাতায়াতে বাধানিষেধও ছিল না।

এই শহর থেকে শ্রীলঙ্কার দূরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এই শহরের উপর দিয়েই ভারত আর শ্রীলঙ্কার মধ্যে নিত্য যাতায়াত ছিল সাধারণ মানুষজনের। কখনও ব্যবসা, কখনও তীর্থের জন্য সেখানে যেতেন অনেকে। তার জন্য ধনুষকোডি থেকে শ্রীলঙ্কার শহর তালাইমানারের মধ্যে ফেরি পরিষেবাও ছিল। তখনও দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা গড়ে ওঠেনি। ফলে যাতায়াতে বাধানিষেধও ছিল না।

০৪ ১২
দু’দেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক জলসীমান্ত চুক্তি হয়। হিসাব মতো এর পরই দু’দেশের মধ্যে এই যাতায়াত বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে তার অন্তত ১০ বছর আগে। একটা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর।

দু’দেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক জলসীমান্ত চুক্তি হয়। হিসাব মতো এর পরই দু’দেশের মধ্যে এই যাতায়াত বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে তার অন্তত ১০ বছর আগে। একটা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর।

০৫ ১২
এই ঘূর্ণিঝড়ই লণ্ডভণ্ড করে দেয় শহরটাকে। ১৯৬৪ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বরের সেই ঘূর্ণিঝড় রামেশ্বরম সাইক্লোন বা ধনুষকোডি সাইক্লোন বলে পরিচিত। যা ২৮০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে গিয়েছিল শহরটার উপর দিয়ে। দ্বীপ শহর ধনুষকোডির ২৩ ফুট উপরে লাফিয়ে উঠেছিল সমুদ্রের জলরাশি।

এই ঘূর্ণিঝড়ই লণ্ডভণ্ড করে দেয় শহরটাকে। ১৯৬৪ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বরের সেই ঘূর্ণিঝড় রামেশ্বরম সাইক্লোন বা ধনুষকোডি সাইক্লোন বলে পরিচিত। যা ২৮০ কিলোমিটার গতিবেগে বয়ে গিয়েছিল শহরটার উপর দিয়ে। দ্বীপ শহর ধনুষকোডির ২৩ ফুট উপরে লাফিয়ে উঠেছিল সমুদ্রের জলরাশি।

০৬ ১২
লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। শহরের বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছিল জলের তলায়। অন্তত ১৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জানা যায়, ১১৫ যাত্রী নিয়ে রামেশ্বরমের পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন যাচ্ছিল সে সময়। ঘূর্ণিঝড়ে ট্রেনের সমস্ত যাত্রীই মারা যান। পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটা রেলব্রিজ ছিল। সেটাও পুরো ধ্বংস হয়ে যায়।

লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। শহরের বেশির ভাগটাই চলে গিয়েছিল জলের তলায়। অন্তত ১৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জানা যায়, ১১৫ যাত্রী নিয়ে রামেশ্বরমের পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন যাচ্ছিল সে সময়। ঘূর্ণিঝড়ে ট্রেনের সমস্ত যাত্রীই মারা যান। পাম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত একটা রেলব্রিজ ছিল। সেটাও পুরো ধ্বংস হয়ে যায়।

০৭ ১২
যে ক’জন মানুষ বেঁচে ছিলেন, তাঁরাও প্রাণভয়ে শহর ছেড়ে চলে আসেন তামিলনাড়ুর মূল ভূখণ্ডে। এর পরই তামিলনাড়ু সরকার শহরটাকে ‘গোস্ট টাউন’ বা ভুতুড়ে শহর হিসাবে ঘোষণা করে দেয়। একই সঙ্গে ছিন্ন হযে যায় ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রানজিট পয়েন্ট।

যে ক’জন মানুষ বেঁচে ছিলেন, তাঁরাও প্রাণভয়ে শহর ছেড়ে চলে আসেন তামিলনাড়ুর মূল ভূখণ্ডে। এর পরই তামিলনাড়ু সরকার শহরটাকে ‘গোস্ট টাউন’ বা ভুতুড়ে শহর হিসাবে ঘোষণা করে দেয়। একই সঙ্গে ছিন্ন হযে যায় ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রানজিট পয়েন্ট।

০৮ ১২
পোস্ট অফিস, রেল স্টেশন ছাড়াও এই শহরে শুল্ক অফিস, দুটো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটা রেলওয়ে হাসপাতাল, পঞ্চায়েত এবং একটা হাইস্কুলও ছিল। ছিল বন্দরের অফিসও। আজও সেগুলোর ভগ্নাবশেষই শুধু রয়ে গিয়েছে।

পোস্ট অফিস, রেল স্টেশন ছাড়াও এই শহরে শুল্ক অফিস, দুটো স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটা রেলওয়ে হাসপাতাল, পঞ্চায়েত এবং একটা হাইস্কুলও ছিল। ছিল বন্দরের অফিসও। আজও সেগুলোর ভগ্নাবশেষই শুধু রয়ে গিয়েছে।

০৯ ১২
ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা থেকে সামলে ওঠার পর পেম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত রেলব্রিজ এবং একটা গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নতুন করে গড়ে দিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। কিন্তু শহরটাকে আর নতুন করে গড়ে তোলা হয়নি। অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে শহরটা আজও ধ্বংসের চিহ্ন নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে। পেম্বান-ধনুষকোডি রেলে পর্যটকেরা এই ভুতুড়ে শহরে গিয়ে ফিরে আসেন। পর্যটকদের জন্যও কোনও হোটেল গড়ে ওঠেনি।

ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা থেকে সামলে ওঠার পর পেম্বান থেকে ধনুষকোডি পর্যন্ত রেলব্রিজ এবং একটা গাড়ি যাওয়ার রাস্তা নতুন করে গড়ে দিয়েছে তামিলনাড়ু সরকার। কিন্তু শহরটাকে আর নতুন করে গড়ে তোলা হয়নি। অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে শহরটা আজও ধ্বংসের চিহ্ন নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে। পেম্বান-ধনুষকোডি রেলে পর্যটকেরা এই ভুতুড়ে শহরে গিয়ে ফিরে আসেন। পর্যটকদের জন্যও কোনও হোটেল গড়ে ওঠেনি।

১০ ১২
এগুলো ছাড়াও আরও একটা কারণে বেশ জনপ্রিয় ধনুষকোডি। আর সেই কারণ হল রাম সেতু। অনেকের ধারণা, এই ধনুষকোডি থেকেই বানর সেনার সাহায্যে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার রাস্তা বানিয়েছিলেন রাম।

এগুলো ছাড়াও আরও একটা কারণে বেশ জনপ্রিয় ধনুষকোডি। আর সেই কারণ হল রাম সেতু। অনেকের ধারণা, এই ধনুষকোডি থেকেই বানর সেনার সাহায্যে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার রাস্তা বানিয়েছিলেন রাম।

১১ ১২
যদিও এর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধনুষকোডির একেবারে শেষ বিন্দু থেকে বালির একটা সরু পথ শ্রীলঙ্কার দিক বরাবর ক্রমশ জলের তলায় চলে গিয়েছে। সেটাই রাম সেতু বলে লোকের কাছে পরিচিত। রামায়ণ বলছে, লঙ্কা থেকে সীতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর তীর-ধনুক দিয়ে এই সেতু ভেঙে দিয়েছিলেন রাম। সে জন্যই নাকি ওই পথ ক্রমশ জলের তলায় চলে গিয়েছে।

যদিও এর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ধনুষকোডির একেবারে শেষ বিন্দু থেকে বালির একটা সরু পথ শ্রীলঙ্কার দিক বরাবর ক্রমশ জলের তলায় চলে গিয়েছে। সেটাই রাম সেতু বলে লোকের কাছে পরিচিত। রামায়ণ বলছে, লঙ্কা থেকে সীতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর তীর-ধনুক দিয়ে এই সেতু ভেঙে দিয়েছিলেন রাম। সে জন্যই নাকি ওই পথ ক্রমশ জলের তলায় চলে গিয়েছে।

১২ ১২
রাম সেতুকে সারা বিশ্ব আবার অন্য নামে চেনে। অ্যাডাম’স ব্রিজ। নাসার উপগ্রহ চিত্রেও অ্যাডাম’স ব্রিজের যে ছবি ধরা পড়েছে, তা দেখে বিজ্ঞানীদের মত, এটা রাম সেতু হোক বা না হোক, ধনুষকোডি এবং শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডের মাঝের এই সেতু মানুষেরই তৈরি।

রাম সেতুকে সারা বিশ্ব আবার অন্য নামে চেনে। অ্যাডাম’স ব্রিজ। নাসার উপগ্রহ চিত্রেও অ্যাডাম’স ব্রিজের যে ছবি ধরা পড়েছে, তা দেখে বিজ্ঞানীদের মত, এটা রাম সেতু হোক বা না হোক, ধনুষকোডি এবং শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডের মাঝের এই সেতু মানুষেরই তৈরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE