Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
North Korea remote-work scam

পরমাণু অস্ত্রভান্ডারে শান দিতে আমেরিকায় বসে কোটি কোটি ডলারের ভয়ঙ্কর প্রতারণা! রাষ্ট্রপুঞ্জের নিশানায় কিমের দেশ

রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অর্থায়নের জন্য উত্তর কোরিয়া থেকে হাজার হাজার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে পিয়ংইয়ং। ভুয়ো পরিচয় ও জাল নথি দেখিয়ে একাধিক সংস্থায় চাকরিতে বহাল হয়েছেন বহু কোরীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৬
Share: Save:
০১ ২০
North Korea remote-work scam

ভার্চুয়াল ছদ্মবেশ। পরিচয় চুরি করে হাজার হাজার নিয়োগ। নাম, লিঙ্কডইন প্রোফাইল, পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা সবই ভুয়ো। সঙ্গে সাক্ষাৎকারের নকল চিত্রনাট্যও। পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অর্থায়নের জন্য প্রয়োজন লক্ষ লক্ষ ডলার। সেই অর্থ জোগার করতে সূচ হয়ে ঢুকছে কিম সরকারের ভাড়াটে কর্মীরা। হু হু করে বেনোজল ঢুকেছে আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তির চাকরির বাজারে।

০২ ২০
North Korea remote-work scam

ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার (ডেমোক্র্যাটিক পিপল্‌স রিপাবলিক অফ কোরিয়া) বাড়াবাড়ি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই সরব আমেরিকা। রাশিয়াকে ‘বন্ধু’ বলে কাছে টেনে নেওয়ার পর থেকে আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সুনজরে দেখেনি ওয়াশিংটন। আর তা থেকে কূটনৈতিক স্তরে সম্পর্কের এই পতন।

০৩ ২০
North Korea remote-work scam

সেই সম্পর্কের আকচা-আকচি থেকে আমেরিকার বুকে বসে তারই দা়ড়ি উপড়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় কোমর বেঁধে লেগেছে কিম জং উনের সরকার। হাজার হাজার উত্তর কোরীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদকে সিঁধ কেটে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে ‘চাকরি চুরি’ করতে পাঠিয়েছে কিমের দেশ। আমেরিকা ও ইউরোপ জুড়ে একাধিক চাকরিতে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ঢুকে পড়ছেন উত্তর কোরীয়রা।

০৪ ২০
North Korea remote-work scam

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে এসেছে এক বিস্ফোরক তথ্য। এক সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক জিন সু (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে তিনি নিজে আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্থাগুলিতে দূরবর্তী কাজের (রিমোট ওয়ার্ক) জন্য আবেদন করেছেন। এর জন্য শত শত জাল আইডিও ব্যবহার করতে হয়েছে তাঁকে। জিন ও তাঁর সহকর্মীরা ভুয়ো পরিচয় ও জাল নথি দেখিয়ে একাধিক সংস্থায় চাকরিতে বহাল হয়েছিলেন।

০৫ ২০
North Korea remote-work scam

জিনের মতো হাজার হাজার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী এই কারচুপিতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ এই জালিয়াতিটি আসলে উত্তর কোরিয়ার সরকারি ভাঁড়ারে ডলার সংগ্রহের একটি বিশাল গোপন পরিকল্পনার অংশ ছিল। এই পরিকল্পনায় এই চাকরিপ্রার্থী তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা বোড়ে হিসাবে কাজ করতেন। তাঁদের বেতন দিয়ে ভরানো হত সরকারি কোষাগার!

০৬ ২০
North Korea remote-work scam

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমেরিকা ও ইউরোপ জুড়ে একাধিক চাকরি করলে মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা) আয় করা সম্ভব ছিল। তাঁর কিছু সহকর্মী এর থেকে আরও অনেক বেশি আয় করতেন। মজার বিষয় হল তাঁদের এই বেতনে সম্পূর্ণ অধিকার ছিল না। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা যা উপার্জন করেছিলেন তার ৮৫ শতাংশ সরকারের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা।

০৭ ২০
North Korea remote-work scam

তাঁদের পরিচয় গোপন রাখতে চিন, রাশিয়া-সহ অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁরা ভুয়ো পরিচয়ে মূলত আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করা শুরু করেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অর্থায়নের জন্য উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। একই দাবি আমেরিকারও।

০৮ ২০
North Korea remote-work scam

২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড অতিমারির পর বাড়ি থেকে দূরবর্তী দেশের হয়ে কাজ করার (রিমোট ওয়ার্ক) প্রবণতা বাড়তে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগায় কিম জংয়ের সরকার। পরিকল্পনামাফিক উত্তর কোরীয়রা দূরবর্তী তথ্যপ্রযুক্তি পদের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে মিল রেখে ভুয়ো অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল চাকরি প্রদানকারী এজেন্সিগুলি।

০৯ ২০
North Korea remote-work scam

২০২৩ সালে এফবিআইয়ের একটি তদন্তে ক্রিস্টিনা চ্যাপম্যান নামে এক মহিলার নাম উঠে আসে। তদন্তে জানা যায় লিঙ্কডইনে তিনি একটি বার্তা পেয়েছিলেন যেখানে তাঁকে একটি সংস্থার ‘মার্কিন মুখ’ হয়ে ওঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিদেশের কর্মীদের দূরবর্তী কর্মসংস্থান পেতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

১০ ২০
North Korea remote-work scam

ক্রিস্টিনা উত্তর কোরিয়ার সরকারের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করছিলেন। সেই চুক্তির ফলে ক্রিস্টিনা কয়েকশো মার্কিন সংস্থায় ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বিদেশি কর্মীদের জন্য চাকরি খুঁজে দিতে সক্ষম হন। নিয়োগকর্তারা ভেবেছিলেন তাঁরা আমেরিকা নাগরিকদের নিয়োগ করছেন। সেই চাকরি আসলে চলে যাচ্ছিল উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দাদের কাছে।

১১ ২০
North Korea remote-work scam

বর্তমানে ‘নিষিদ্ধ অস্ত্র কর্মসূচি’র জন্য কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে মজে থাকা উত্তর কোরিয়াকে অনেক আগেই একঘরে করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিমের নেতৃত্বাধীন উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বিরত রাখতে তার উপর জারি করা হয়েছে বহু নিষেধাজ্ঞা।

১২ ২০
North Korea remote-work scam

কোভিড অতিমারির আবহেও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছিল কিমের দেশ। সীমান্ত এলাকায় বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চরম খাদ্যসঙ্কটের মুখেও পড়তে হয়েছিল কিম জং উনের দেশকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নতুন নতুন উপায় খুঁজে বার করার চেষ্টা করতে শুরু করেন কিম।

১৩ ২০
North Korea remote-work scam

২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদন অনুসারে, গোপনীয় এই পরিকল্পনার অংশীদার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা উত্তর কোরিয়ার নানা প্রকল্পের (বিশেষত পারমাণবিক প্রকল্পের) জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি থেকে ৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা এনে সরকারি তহবিল ভরিয়েছেন।

১৪ ২০
North Korea remote-work scam

কোভিড অতিমারির সময়ে এই পরিকল্পনাটি পশ্চিমি দেশগুলিতে ডালপালা ছড়িয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করে। কোভিড আঘাত হানার পর অধিকাংশ সংস্থাই ভার্চুয়াল হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা যে কোনও জায়গা থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের দিকে ঝুঁকেছিল। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়া।

১৫ ২০
North Korea remote-work scam

এই প্রকল্পগুলি পরিচালনা করার জন্য উত্তর কোরীয়দের প্রয়োজন ছিল আমেরিকার সহায়তাকারীদের। কারণ সংস্থাগুলি উত্তর কোরিয়া এমনকি চিনেও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ পাঠাতে চাইত না। সে কারণে ক্রিস্টিনার মতো আমেরিকার বাসিন্দাদের টাকার টোপ দিয়ে দলে টানা হয়। তিনি ল্যাপটপগুলি নিজের ঠিকানায় নিতে শুরু করেন। তাঁকে গ্রেফতারের সময় ৯০টি ল্যাপটপ উদ্ধার করে এফবিআই।

১৬ ২০
North Korea remote-work scam

দেশীয় এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দিয়ে কম্পিউটার রাখার পাশাপাশি, ভুয়ো পরিচয় দেখিয়ে উত্তর কোরীয়দের মার্কিন নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতেও সাহায্য করেছিলেন ক্রিস্টিন। তিনি বিদেশে কিছু ল্যাপটপ পাঠিয়েছিলেন। কম্পিউটারে লগ ইন করেছিলেন যাতে বিদেশি কর্মীরা দূর থেকে যোগাযোগ করতে পারেন। এবং কর্মীদের বেতন গ্রহণ করেছিলেন। সেই টাকা তিনি উত্তর কোরিয়ার অ্যাকাউন্টে পাঠাতেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

১৭ ২০
North Korea remote-work scam

এ ছাড়াও ক্রিপ্টোমুদ্রার ওয়ালেটে ঢুকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে সামরিক অস্ত্রভান্ডার মজবুত করার অভিযোগ উঠেছে কিমের সরকারের বিরুদ্ধে। একটি চেন অ্যানালিসিস রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে গত বছর বেশ কয়েকটি বড়সড় হ্যাকের পিছনে হাত ছিল উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের। ব্রিটিশ ও মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সেই রিপোর্ট।

১৮ ২০
North Korea remote-work scam

গত বছরের ডিসেম্বরে এফবিআই এবং জাপানের জাতীয় পুলিশ সংস্থা একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে জাপানের একটি ক্রিপ্টো সংস্থা থেকে ৩০ কোটি ডলার চুরির জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের দায়ী করেছিল। এই চুরির পিছনে সরকারি মদতপুষ্ট হ্যাকিং সংস্থা ‘ল্যাজারাস গ্রুপ’-এর সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করেছেন তাঁরা।

১৯ ২০
North Korea remote-work scam

সরকারি তহবিলে যাতে অর্থাগম হয় সে কারণে নিরাপত্তার ফাঁক খুঁজে ক্রিপ্টোদুনিয়া থেকে কোটি কোটি টাকা হাপিস করে দেয় হ্যাকারেরা।

২০ ২০
North Korea remote-work scam

২০২৪ সালে একটি মার্কিন আদালত ১৪ জন কোরীয়কে অভিযুক্ত করে। এঁরা ছদ্মবেশে কাজ করে ছ’বছর ধরে মার্কিন সংস্থাগুলি থেকে আট কোটি ৮০ লক্ষ ডলার আয় করেছেন বলে অভিযোগ। চলতি বছরের গত মাসে আরও চার জন কোরীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁরা সকলেই আমেরিকার একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি সংস্থার হয়ে দূরবর্তী কাজ পাওয়ার জন্য জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy