Advertisement
১২ জুলাই ২০২৫
India-Pak War Fact Check

‘১২০টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে ভারত’! ভুয়ো খবর আগেও ছড়িয়েছে পাকিস্তান, জোড়া যুদ্ধও ‘জেতে’ এই উপায়ে

১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে হেরে গিয়েও ব্যাপক মিথ্যা প্রচার চালিয়েছিল পাকিস্তান। চলতি বছর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ফের দেখা গেল সেই প্রবণতা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ১৪:১৬
Share: Save:
০১ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ‘যুদ্ধে’ ভারতের হাতে মার খেয়েও লজ্জা নেই পাকিস্তানের। লড়াই থামতেই ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান সংক্রান্ত ডসিয়ার তৈরি করে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইসলামাবাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। সেই সঙ্গে চলছে লাগাতার ভুয়ো খবরের প্রচার। ফলে পাক ফৌজ নয়াদিল্লিকে হারাতে সক্ষম হয়েছে বলে বিশ্বাস জন্মেছে সে দেশের আমজনতার মনে।

০২ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

ইসলামাবাদের এ হেন মিথ্যাচার কিন্তু নতুন নয়। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। ওই সময়ে পাক সেনা ‘অজেয়’ বলে ভ্রান্ত ধারণা দেশবাসীর মনে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তাঁরা। পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনীর জওয়ান ও অফিসারেরা শারীরিক ভাবে ‘অত্যন্ত দুর্বল’ বলেও ব্যাপক প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু, এতে বাস্তবের যুদ্ধে বিপাকে পড়ে ইসলামাবাদের ফৌজ।

০৩ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

১৯৬৫ সালের জুন মাসে পাক সেনার এক পদস্থ কর্তা সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এ একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ভারতকে হারাতে আমাদের কৌশল হবে মার্কিন বক্সার মহম্মদ আলির মতো। সরাসরি নকআউটে চলে যাব আমরা। সেই চাপ সহ্য করা নয়াদিল্লির পক্ষে সম্ভব নয়।’’ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কথায়, তাঁর ওই তত্ত্বের ছিল না কোনও সারবত্তা। যুক্তি-বুদ্ধি শিকেয় তুলে এমন মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

০৪ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

’৬৫ সালের যুদ্ধে ইসলামাবাদের মনোভাব ‘এ হিস্ট্রি অফ দ্য পাকিস্তান আর্মি: ওয়ার্স অ্যান্ড ইনসার্কেশনস’ বইয়ে তুলে ধরেন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ব্রায়ান ক্লাউলি। তাঁর দাবি, লড়াইয়ের সময়ে পাক সরকারের জারি করা একটা নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘‘স্বাভাবিক ভাবে ভারতের মনোবল সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে কয়েকটা কঠোর আঘাতে ভেঙে পড়বে।’’ সেনাশাসনের আওতায় থাকা ওই সময়ে ইসলামাবাদের গদিতে ছিলেন প্রেসিডেন্ট তথা ফিল্ড মার্শাল আয়ুব খান।

০৫ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

ওই যুদ্ধে আয়ুবের নির্দেশে পাক সেনা যে সামরিক অভিযান শুরু করে তার পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’। মধ্যযুগের স্পেনে মুরাদের যুদ্ধ জয়কে মনে রেখে এর নামকরণ করেন ইসলামাবাদের তৎকালীন ফৌজি শাসক। শুধু তা-ই নয়, পাক সেনার ইউনিটগুলির নামও ইসলামীয় কিংবদন্তি যোদ্ধাদের নামানুসারে রাখা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সুলেমান এবং সালাউদ্দিন।

০৬ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

কিন্তু, ‘অপারেশন জিব্রাল্টার’-এ আয়ুবের কোনও পরিকল্পনাই কাজে লাগেনি। ইসলামাবাদের থেকে চার গুণ বেশি জমি দখল করতে সক্ষম হয় নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের ১,৯২০ বর্গমাইল জমি ছিল ভারতের দখলে, যার বেশির ভাগটাই পশ্চিম পঞ্জাবের উর্বর সমতলভূমি। এ ছাড়া মেজর রঞ্জিৎ সিংহ দয়ালের নেতৃত্বে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর বা পিওকের (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর) হাজি পীর পাসও দখল করে নেয় এ দেশের বাহিনী।

০৭ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

অন্য দিকে, ওই যুদ্ধে ৫৪০ বর্গমাইল ভারতীয় ভূখণ্ড কব্জা করতে পেরেছিল পাকিস্তান। এর বেশির ভাগটাই রাজস্থানের অনুর্বর ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। একমাত্র চুম্ব সেক্টরেই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল ইসলামাবাদ। পরবর্তী কালে অবশ্য ’৬৫-র লড়াইয়ে ভারত পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয় বলে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেন পাকিস্তানের ফৌজি শাসকেরা। আমজনতা ও বাহিনীর মনোবল বজায় রাখতে এই মিথ্যার আশ্রয় নেন তাঁরা, মত বিশ্লেষকদের।

০৮ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়ানোর মাত্রা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন তৎকালীন সেনাশাসক জেনারেল ইয়া হিয়া খান। ৪ ডিসেম্বর ‘ডন’ পত্রিকা লিখেছিল, ভারত নাকি একাধিক জায়গায় হামলা করেছে। তার জবাব দিতে আগরা-সহ সাতটি জায়গায় প্রত্যাঘাত হেনেছে পাক বায়ুসেনা। পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমটির শিরোনাম ছিল, ‘এ বার সর্বাত্মক যুদ্ধ’। কিন্তু, আসল সত্যি হল ৩ ডিসেম্বর ভারতের ১১টি বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধের সূচনা করে ইসলামাবাদ।

০৯ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

’৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর ‘ডন’-এর খবরে বলা হয়, এক দিনে ভারতের ৪৯টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে পাক বায়ুসেনা। এই পরিসংখ্যান ছিল অতিরঞ্জিত। কারণ, ১৩ দিনের যুদ্ধে মোট ৪৫টি লড়াকু জেট হারিয়েছিল নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, ইসলামাবাদের বাহিনী একের পর এক পোস্ট দখল করে এগোচ্ছে বলেও দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রচার করেছিল ইয়া হিয়ার সরকার।

১০ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

ওই যুদ্ধে দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি বন্দরকে নিশানা করে ভারতীয় নৌবাহিনী। এই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’। ৪ ডিসেম্বরের সেই হামলায় পিএনএস খাইবার ও পিএনএস মুহাফিজ নামের দু’টি রণতরী এবং একটি মালবাহী জাহাজ হারায় ইসলামাবাদের নৌসেনা। এ ছাড়া করাচির তেলের ডিপোয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল নয়াদিল্লি।

১১ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

‘ডন’-সহ পাকিস্তানের কোনও সংবাদমাধ্যমই কিন্তু এ সম্পর্কে একটা শব্দও লেখেনি। উল্টে ৬ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ অন্য খবর প্রকাশ করে তারা। সেখানে বলা হয়, ভারতের মোট ৭৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানের বায়ুসেনা। ফলে লড়াইয়ে জয় এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

১২ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

পরের কয়েক দিনে ভারতের মোট ১২০টা যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে রটিয়ে দেয় পাকিস্তান। এ ছাড়া ছাম্বা-সহ জম্মু-কাশ্মীরের বিরাট এলাকা দখলে এসেছে বলে দাবি করেছিল ইসলামাবাদ। ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার দু’দিন আগে ‘ডন’-এর শিরোনাম ছিল, ‘‘পূর্ব ও পশ্চিম দুই রণাঙ্গনেই অভূতপূর্ব সাফল্য।’’ সেখানে বলা হয়েছিল মোট ১৪১টা যুদ্ধবিমান হারিয়েছে ভারত।

১৩ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

কিন্তু, যুদ্ধের বাস্তব পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। পূর্ব রণাঙ্গনে সে ভাবে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েই তুলতে পারেনি পাক সেনা। পশ্চিম রণাঙ্গনেও তাঁদের অবস্থা ছিল তথৈবচ। এই যুদ্ধে ইসলামাবাদের হাতে থাকা একমাত্র ডুবোজাহাজটিকেও ধ্বংস করে নয়াদিল্লির নৌবাহিনী।

১৪ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

ফলে, ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা। পাকিস্তানের এই অংশে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। জেনারেল ইয়া হিয়া অবশ্য এই আত্মসমর্পণের সত্যিটা স্বীকার করেননি। তাঁর সরকারের বক্তব্য ছিল যুদ্ধ এখনও জারি রয়েছে।

১৫ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

চলতি বছরের ‘যুদ্ধে’ও এই মিথ্যাচার জারি রেখেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সংসদ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ বলেন, ‘‘ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে পাক বায়ুসেনা।’’ কিন্তু, বাস্তবে তা হয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, লড়াকু জেট ধ্বংসের সঠিক সংখ্যা এখনও প্রকাশ করেনি নয়াদিল্লি।

১৬ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

দ্বিতীয়ত, ভারতীয় সেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের ১১টি বায়ুসেনা ঘাঁটি। তার মধ্যে নুর খান, মুরিদকে এবং রহিম ইয়ার খান বায়ুসেনা ছাউনিগুলি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ভাবে এই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেনি ইসলামাবাদ। পরে ডসিয়ার তৈরি করে আরও একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নয়াদিল্লি ইচ্ছাকৃত ভাবে আক্রমণ শানিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে শরিফ সরকার।

১৭ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

গত ১০ মে যুদ্ধবিরতির জন্য ভারতীয় সেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্‌স বা ডিজিএমও-র সঙ্গে কথা বলেন পাক ফৌজের ডিজিএমও। কিন্তু সংঘর্ষবিরতি হতেই উল্টো সুর গাইতে থাকে ইসলামাবাদ। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে পাক সেনার জনসংযোগ শাখা বা আইএসপিআরের (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্‌স) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি বলেন, ‘‘লিখে রাখুন আমাদের তরফ থেকে কেউ কোনও অনুরোধ করেনি।’’

১৮ ১৮
Pakistan is following same tradition of fake news after Operation Sindoor as they did 1965 and 1971 war

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, এ ব্যাপারে নাৎসি জার্মানির নীতি অনুসরণ করছে পাকিস্তান। বার বার মিথ্যা বলে সত্যকে চাপা দিয়ে রাখতে চায় তারা। আধুনিক যুদ্ধে এই ধরনের ভুয়ো খবরগুলির দিকে নজর রাখাও জরুরি। নইলে বাহিনী বা দেশবাসীর মনে চিড় ধরার আশঙ্কা থাকবে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy