Pakistan turning to the Asian Development Bank for fund after China exits one of the biggest Pakistani project dgtl
China-Pakistan Relationship
চিন-পাকিস্তানের ‘জয়-বীরু’ বন্ধুত্বের মৃত্যুঘণ্টা? সঙ্কটে থাকা ইসলামাবাদের ভাঁড়ার ভরানো প্রকল্প থেকে সরল বেজিং
২০২২ সালের পর থেকে সিপিইসি প্রকল্পের গতি কমেছে। পাকিস্তানের থেকে বকেয়া পাওনা এখন চিনের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
‘বন্ধুত্ব’ ছিল। বিগত কয়েক বছরে তার প্রমাণও মিলেছে বহু বার। অর্থসাহায্য যেমন পেয়েছে, তেমনই পাকিস্তানের হাতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রও তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানে তাদের অন্যতম বড় প্রকল্প থেকে সরে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ইসলামাবাদের মাথা থেকে হাত তুলে নিচ্ছে চিন? ছেদ পড়ছে পুরনো বন্ধুত্বে?
০২২৬
অবিশ্বাস্য মনে হলেও খবর, পাকিস্তানে রেল নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে অর্থায়ন করার প্রকল্প ‘মেন লাইন-১’ (এমএল-১) থেকে নিজেদের সরিয়ে এনেছে চিন। মূলত দুই ‘বন্ধু’র স্বপ্নের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা ছিল রেল নেটওয়ার্ক প্রকল্পটি।
০৩২৬
কিন্তু পাকিস্তানের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রকল্পে এখন আর টাকা ঢালতে রাজি নয় চিন। ইসলামাবাদকে নিজেদের ব্যবস্থা আপাতত নিজেদেরই করে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে শি জিনপিং সরকার। সূত্র মারফত উঠে এসেছে তেমনটাই।
০৪২৬
পাশাপাশি খবর, এমএল-১ প্রকল্প থেকে চিন সরে আসার পর এখন ওই প্রকল্পে টাকা ঢালার জন্য ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)’-এর দ্বারস্থ হয়েছে ইসলামাবাদ। এমএল-১ প্রকল্পের করাচি-রোহরি রেল যোগাযোগ উন্নত করতে এডিবি-র থেকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে অর্থনৈতিক ভাবে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান।
০৫২৬
সিপিইসি প্রকল্পের অধীনে পাকিস্তান জুড়ে জ্বালানি এবং পরিবহণ পরিকাঠামোর জন্য প্রায় ৬০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চিন। করাচি থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এমএল-১ রেলপথকে এই প্রকল্পগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে চর্চিত প্রকল্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
০৬২৬
কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে কূটনৈতিক টানাপড়েনের পর দু’পক্ষ একই সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে না পারায় এখন এডিবি-র দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তানের শাহবাজ় শরিফের সরকার।
০৭২৬
এমএল-১ প্রকল্পে এডিবি হস্তক্ষেপ করার অর্থ পাকিস্তান প্রথম বারের জন্য একটি বহুপাক্ষিক ঋণদাতাকে এমন একটি প্রকল্পে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে, যা একসময় চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’-এর প্রধান প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হত।
০৮২৬
শোনা যাচ্ছে, এমএল-১ প্রকল্পটি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত এমনি এমনি নেয়নি পাকিস্তান। এই নিয়ে বছরের পর বছর দু’পক্ষের মধ্যে একাধিক বার আলোচনা হয়েছে বলেও খবর। কিন্তু সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণেই নাকি এখন সেখান থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং।
০৯২৬
পাকিস্তানের উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিদ্যুৎখাতে ইতিমধ্যেই কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চিন। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলির আর্থিক কার্যকারিতা নিয়ে বেজিঙের উদ্বেগ নাকি বেড়েই চলেছে।
১০২৬
পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান আর্থিক সঙ্কট এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের অনীহা দেখেও নাকি এমএল-১ প্রকল্পে এখন আর টাকা ঢালতে চাইছে না ড্রাগন।
১১২৬
বিশেষজ্ঞদের অনেকের আবার মত, দেশের বাইরে বিনিয়োগ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে চিন। কারণ, কিছু ক্ষেত্রে চিন নাকি নিজেই অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে। পকেট বাঁচাতে তাই আপাতত প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে থাকা বিদেশি প্রকল্পগুলির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বেজিং।
১২২৬
ঋণ পরিশোধে অপারগ, এমন দেশগুলিতে মোটা টাকা বিনিয়োগ থেকেও নাকি সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে জিনপিং সরকার। আর সে ক্ষেত্রে ‘ভিখারি’ পাকিস্তানকে যে সাহায্য না করার তালিকায় চিন প্রথমে রাখবে তা বলাই বাহুল্য। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
১৩২৬
বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ-ও মনে করছেন, এমএল-১ প্রকল্প থেকে চিনের সরে আসার সিদ্ধান্তের প্রভাব আর্থিক এবং ভূ-রাজনৈতিক— উভয় ক্ষেত্রেই পড়বে। বেজিং তার সিপিইসি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এলে এ-ও প্রমাণ হবে, চিন-পাকিস্তানের ‘লোহার মতো শক্ত’ বন্ধুত্বও সাময়িক এবং শর্তসাপেক্ষ হতে পারে।
১৪২৬
যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকে আবার মনে করছেন, এমএল-১ প্রকল্প থেকে চিনের প্রস্থানের অর্থ সিপিইসির মৃত্যুঘণ্টা না-ও হতে পারে। তবে সেই প্রকল্পের গতি যে মন্থর হবে, তা স্পষ্ট। ২০১৫ থেকে শুরু হওয়া সিপিইসি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই অনেকটা এগিয়েছে। মহাসড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি অন্যতম প্রধান প্রকল্প ‘গ্বদর ইস্ট বে এক্সপ্রেসওয়ে’-র কাজও শেষ হয়েছে ২০২২ সালে।
১৫২৬
২০২২ সালের পর থেকে সিপিইসি প্রকল্পের গতি কমেছে। পাকিস্তানের থেকে বকেয়া পাওনা এখন চিনের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সব মিলিয়েই পাকিস্তানে নতুন করে টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে চিন।
১৬২৬
যদিও আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ বিষয়টিকে চিন-পাকিস্তানের সম্পর্কের ফাটল হিসাবেই দেখছে। একে মূল সিপিইসি প্রকল্পের বড় বিচ্যুতি হিসাবেও চিহ্নিত করছেন অনেকে।
১৭২৬
এমএল-১ প্রকল্পে বেজিং থেকে অর্থসাহায্যের আশা না দেখে হাত গুটিয়ে বসে নেই পাকিস্তানও। খবর, পুরো বিষয়টি নিয়ে শাহবাজ় সরকারের উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা বাড়লেও টাকা চেয়ে এখন এডিবি-র দ্বারস্থ হয়েছে ইসলামাবাদ।
১৮২৬
এডিবি যদি এখন সেই প্রকল্পে টাকা ঢালে তা হলে পাকিস্তানের ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলির জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
১৯২৬
কিন্তু কেন এমএল-১ প্রকল্প নিয়ে এত তৎপর হয়ে উঠেছে পাকিস্তান? বালোচিস্তানের রেকো ডিকে তামা এবং সোনার খনির উন্নয়নের ফলে এমএল-১ প্রকল্পের উন্নয়ন ইসলামাবাদের কাছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
২০২৬
কানাডার খনি সংস্থা ‘ব্যারিক গোল্ড’-এর অধীনে থাকা খনিটি বিশ্বের বৃহত্তম অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের মধ্যে একটি বলে মনে করা হচ্ছে। এ-ও মনে করা হচ্ছে, পরবর্তী কালে পাকিস্তানের রফতানি রাজস্বে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে ওই খনি।
২১২৬
বর্তমানে খনি থেকে বন্দরে আকরিক স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। এখন ওই এলাকায় যে রেল পরিকাঠামো রয়েছে তা অতি পুরনো এবং ভগ্নপ্রায়। রেকো ডিক থেকে প্রত্যাশিত ভারী পণ্যসম্ভারের পরিমাণ এবং ওজন বহন করতেও অক্ষম। ফলে এমএল-১ প্রকল্পের মাধ্যমে রেলব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা ছাড়া পাকিস্তানের ভাঁড়ার ভরার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। আর সে কারণেই এমএল-১ প্রকল্পের জন্য টাকা জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান।
২২২৬
একই সঙ্গে খবর, এমএল-১ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা নিয়ে ইতিমধ্যেই ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে এডিবি। পাশাপাশি, রেকো ডিক প্রকল্পের জন্যও নাকি ৪১ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
২৩২৬
অন্য দিকে খবর, সিপিইসি প্রকল্পের জন্য এডিবি এবং পশ্চিমি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগের সিদ্ধান্ত ভাল চোখে নিচ্ছে না চিন।
২৪২৬
ওয়াকিবহাল মহলের এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, পুরো পরিকল্পনাটি আগে থেকেই বেজিংকে শুনিয়ে রেখেছিল ইসলামাবাদ, যাতে অর্থনৈতিক বিকল্পগুলি খোলা রেখে চিনের সঙ্গেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা যায়। কিন্তু তা-ও বিষয়টিকে বাঁকা ভাবেই দেখছে চিন।
২৫২৬
এমএল-১ প্রকল্প থেকে চিনের হাত গুটিয়ে নেওয়ার সময়ের দিকেও নজর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। সম্প্রতি তিয়ানজ়িনে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজ়েশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন একাধিক বিশ্বনেতা।
২৬২৬
সেই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পার্শ্ববৈঠক করেছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খানিকটা উপেক্ষিতই হন পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফ। সেই আবহে চিনের এমএল-১ প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।