Advertisement
১৭ জুন ২০২৫
Lead turn into gold

চোখের নিমেষে সিসা বদলে গেল সোনায়! সার্নের গবেষণাগারের সুড়ঙ্গে ‘পরশ পাথর’-এর হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা

পদার্থবিজ্ঞানীদের হাত ধরে হাজার হাজার বছরের ‘মিথ’ কি এ বার সত্যি হতে চলেছে? সিসা থেকে সোনা তৈরির সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে? খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও বাস্তবে সিসা থেকে সোনা প্রস্তুত করতে পেরেছেন ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন বা ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ১০:১২
Share: Save:
০১ ১৫
lead turn into gold

ছাপোষা কেরানি পরেশচন্দ্র দত্তের হাতে আচমকাই পাথরটা এসে পড়েছিল। সাধারণ পাথর ভেবে প্রথমে সেটিকে হেলাফেলা করলেও পরে বুঝতে পারেন সেটি অমূল্য এক ধন। এর ছোঁয়া পাওয়ামাত্রই যে কোনও ধাতু চোখের পলকে হলুদ ধাতুতে পরিণত হয়। তবে সে তো গল্প কিংবা চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা কাল্পনিক মনগড়া এক কাহিনি।

০২ ১৫
lead turn into gold

মধ্য যুগ থেকেই ধাতু থেকে সোনা তৈরি করা সম্ভব কি না তা নিয়ে অ্যালকেমিস্টদের গবেষণার অন্ত ছিল না। রসায়নবিদ্যার জন্ম নাকি এই অ্যালকেমি থেকেই। সেই অ্যালকেমি, যা মানুষকে স্বপ্ন দেখাত অমরত্বের কিংবা লোহাকে সোনা বানিয়ে ফেলার। অ্যালকেমি বা রসায়নের প্রাথমিক এই ধারায় দাবি করা হয়, বিভিন্ন ধাতু, বিশেষ করে সিসাকে সোনায় রূপান্তরিত করা সম্ভব। নিজেদের দাবি প্রমাণে অ্যালকেমিস্টেরা এক অজানা উপাদান তৈরির জন্য বিস্তর অনুসন্ধান চালিয়ে গিয়েছেন।

০৩ ১৫
lead turn into gold

সেই উপাদান, যার ছোঁয়ায় সিসা বা তামার মতো সাধারণ ধাতুও সোনায় পরিণত হয়। সমস্ত রোগেরও প্রতিরোধক সেটি। অর্থাৎ, দীর্ঘ জীবন লাভের রাস্তা পাকা! পশ্চিমি দেশগুলি একে ‘ফিলোজ়ফার’স স্টোন’-এর তকমা দিয়েছে। সেই ‘পরশ পাথর’ নিয়ে মাতামাতির শেষ ছিল না গোটা দুনিয়ার। সাধারণ ধাতু থেকে সোনা পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন অ্যালকেমি পদ্ধতির অনুসরণকারীরা।

০৪ ১৫
lead turn into gold

ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে রসায়ন পরিণত হয় বিক্রিয়ার বিজ্ঞানে। নানা পদার্থের পরমাণু থেকে অণু, সেই সব অণুর মধ্যে বিক্রিয়া। বিক্রিয়া মানে অণু-পরমাণু জুড়ে জুড়ে নতুন পদার্থ তৈরি। অণু-পরমাণুর মধ্যে হেরফের করিয়ে সোনা তৈরির চেষ্টায় পিছিয়ে ছিলেন না বিজ্ঞানীরাও। তাঁরাও কৃত্রিম ভাবে সোনা ‘ফলানোর’ চেষ্টা করে গিয়েছেন।

০৫ ১৫
lead turn into gold

পদার্থবিজ্ঞানীদের হাত ধরে হাজার হাজার বছরের ‘মিথ’ কি এ বার সত্যি হতে চলেছে? সিসা থেকে সোনা তৈরির সেই স্বপ্ন কি বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে? খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও বাস্তবে সিসা থেকে সোনা প্রস্তুত করতে পেরেছেন ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন বা ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরা। সিসা থেকে সোনা তৈরি হয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ডের রাজধানী জেনিভার অদূরে ‘সার্ন’-এর ভূগর্ভস্থ গবেষণাগার ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’-এ।

০৬ ১৫
lead turn into gold

কোলাইডার হল, কণায় কণায় ঠোকাঠুকি করানোর যন্ত্র। প্রায় আলোর বেগে (সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার) ছুটন্ত বিপরীতমুখী কণার স্রোত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর ফলে তৈরি হয় প্রচণ্ড শক্তি। এ ভাবে জানা যায় মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া কণাদের উপাদান।

০৭ ১৫
lead turn into gold

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কোলাইডার সার্ন-এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি)। ১৯৯৮ সালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭৫ মিটার নীচে থাকা ২৭ কিলোমিটার লম্বা একটি উপবৃত্তাকার সুড়ঙ্গ।

০৮ ১৫
lead turn into gold

লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের গবেষকেরা সিসাকে সোনায় পরিণত করে অ্যালকেমিস্টদের একসময়ের অসম্ভব স্বপ্নকে পূর্ণ করেছেন। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য হলেও সিসা থেকে সোনা তৈরির এই বিরল মুহূর্তটি স্থায়ী হয়েছিল। দু’টি সিসার পরমাণুর সংঘর্ষ দেখা হয় কোলাইডারে। দেখা গিয়েছে, যখন সিসার নিউক্লিয়াস সরাসরি সংঘর্ষ না করে খুব কাছাকাছি চলে যায়, তখন সেটি কিছু প্রোটন হারিয়ে ফেলে।

০৯ ১৫
lead turn into gold

সিসার নিউক্লিয়াসগুলিকে প্রায় আলোর গতিতে ছোটানো হয় গবেষণাগারে। পরমাণুগুলির মধ্যে সংঘর্ষ না হলেও তারা একে অপরের খুব কাছাকাছি হয়ে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। একটি সিসার নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত তড়িৎ চৌম্বক ক্ষেত্র বিশেষ ভাবে শক্তিশালী, কারণ এর নিউক্লিয়াসে ৮২টি প্রোটন থাকে।

১০ ১৫
lead turn into gold

মুখোমুখি সংঘর্ষে না হলেও দু’টি কণা খুব কাছাকাছি চলে গেলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে প্রোটন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিসার নিউক্লিয়াসে সোনার চেয়ে মাত্র ৩টি প্রোটন বেশি থাকে। সোনার নিউক্লিয়াসে ৭৯টি প্রোটন থাকে। তাই এমন পরিস্থিতিতে সিসা থেকে ৩টি প্রোটন সরে যেতে ক্ষণিকের জন্য তা সোনায় পরিণত হয়ে যায়।

১১ ১৫
lead turn into gold

সিসা সোনার পরমাণুতে পরিণত হওয়া কেবল এক মুহূর্তের জন্য। কারণ এর পরই সেটি ভেঙে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে যায়। আর এই অবস্থাটি স্থায়ী হয়েছে সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ সময়ের জন্য। তাতেই বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বসিত। শুধুমাত্র সিসাকে সোনায় বদলে ফেলা নয়, বরং এই গবেষণাকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি বড় সাফল্য হিসাবে ধরা হচ্ছে।

১২ ১৫
lead turn into gold

সার্ন জানিয়েছে, সাধারণ ধাতুকে সোনায় বদলে দেওয়া অ্যালকেমিস্টদের স্বপ্ন ছিল। সোনা তৈরির এই আকাঙ্ক্ষাকে ‘ক্রাইসোপোইয়া’ বলে। সাধারণ ধূসর ধাতু সিসার ঘনত্ব এবং উজ্জ্বল মূল্যবান হলুদ ধাতু সোনার ঘনত্ব প্রায় একই। তাই সিসাকে রাসায়নিক উপায়ে সোনায় পরিণত করা যায় বলে মধ্যযুগীয় ধারণা ছিল। অনেক পরে এই ধারণার পরিবর্তন হয়।

১৩ ১৫
lead turn into gold

সিসা এবং সোনার রাসায়নিক উপাদান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। রাসায়নিক পদ্ধতি মেনে এক ধাতুকে অন্য ধাতুতে রূপান্তরিত করা কার্যত অসম্ভব। বিংশ শতাব্দীতে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার সূচনার পরই এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল যে, ভারী মৌলগুলি প্রাকৃতিক ভাবে, তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে, অথবা পরীক্ষাগারে নিউট্রন বা প্রোটনের সংঘর্ষের মাধ্যমে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হতে পারে।

১৪ ১৫
lead turn into gold

সোনা কেবল বিরল বলেই মূল্যবান নয়। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি সৌন্দর্য, শক্তি এবং স্থায়িত্বের প্রতীক। বিয়ের গয়না থেকে শুরু করে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবেও সোনা প্রায় সমস্ত মানুষের কাছে ভরসার জায়গা। তবে কি ভবিষ্যতে ইচ্ছামতো সিসাকে সোনায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে? গয়নার দোকান, ব্যাঙ্ক, অর্থনীতি থেকে সোনা তার কৌলীন্য হারাতে শুরু করবে?

১৫ ১৫
lead turn into gold

সার্ন জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চালানো পরীক্ষায় কেবল ২৯ পিকোগ্রাম সোনা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের উন্নত সংস্করণ ব্যবহার করে সাম্প্রতিক গবেষণায় আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ সোনা উৎপন্ন করা সম্ভব। সেই পরিমাণ এতই নগণ্য যে একটি গয়না তৈরি করতে গেলে কয়েক লক্ষ কোটি বার এই পরীক্ষা চালাতে হবে।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy