PM Narendra Modi tops while US President Donald Trump in 8th position in global leaders list, 2025 dgtl
Global Leaders Ranking
হু-হু করে জনপ্রিয়তা কমছে ‘টকেটিভ’ ট্রাম্পের, সেরা ১০-এ নেই পুতিন-শি! বিশ্বনেতাদের তালিকায় কত নম্বরে মোদী?
বিশ্বের জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন ব্যবসায়িক গোয়েন্দা সংস্থা ‘মর্নিং কনসাল্ট’। তাঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে ৫০ শতাংশ আমেরিকাবাসীর কাছে ‘চক্ষুশূল’ হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্য দিকে, নিজের জায়গা ধরে রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১১:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
কখনও শুল্ক চাপানোর হুমকি। কখনও আবার পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতবিরোধী মন্তব্য। প্রায় প্রতি দিনই ‘বিতর্কিত’ বিবৃতি দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হু-হু করে কমছে জনপ্রিয়তা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন ইসলামাবাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের অবস্থাও তথৈবচ। অন্য দিকে, নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জনপ্রিয়তার নিরিখে বিশ্বনেতাদের তালিকায় প্রথম ১০-এ জায়গাই পাননি চিনের শি জিনপিং।
০২২০
চলতি বছরের ২৫ জুলাই ‘ডেমোক্র্যাটিক লিডার অ্যাপ্রুভাল রেটিং’ শীর্ষক একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন ব্যবসায়িক গোয়েন্দা সংস্থা ‘মর্নিং কনসাল্ট’। তাদের তৈরি জনপ্রিয়তম বিশ্বনেতাদের তালিকায় এক নম্বরে নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মাত্র সাত মাসে আমেরিকার আমজনতার মধ্যে কী হারে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে, তা স্পষ্ট করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতির ক্ষেত্রে একে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৩২০
‘মর্নিং কনসাল্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও ৭৫ শতাংশ ভারতীয়ের কাছে পছন্দের রাজনৈতিক নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ দেশের ১৮ শতাংশ বাসিন্দা তাঁর প্রবল বিরোধী। আর মাত্র সাত শতাংশ ভারতীয় এ ব্যাপারে কোনও মতামত দিতে চাননি। তালিকায় অষ্টম স্থানে জায়গা পেয়েছেন ট্রাম্প। ৫০ শতাংশ আমেরিকাবাসী তাঁদের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে একেবারেই খুশি নন বলে সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
০৪২০
গত বছরের নভেম্বরে হওয়া ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। ওই সময়ে ‘আমেরিকাকে ফের মহান করো’-র (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বা মাগা) স্লোগানে প্রচারে ঝড় তোলেন তিনি। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বারের জন্য শপথ নেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। এই পর্বে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। কিন্তু মাত্র সাত মাসের মধ্যেই সেটা কমতে কমতে ৪৪ শতাংশে এসে ঠেকেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় আরও ভাটার টান লক্ষ করা যেতে পারে।
০৫২০
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের কথা বলে সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করেছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয়ত, তাঁর শুল্কনীতির জেরে ক্ষতি হচ্ছে দেশের তাবড় বড় শিল্পপতিদের। তা ছাড়া বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতার বিদেশনীতি নিয়েও সেখানকার আমজনতার মধ্যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাঁদের একাংশের দাবি, ‘বন্ধু’দের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি করছেন ট্রাম্প। আর ‘সুপার পাওয়ার’ থাকার গর্বে আন্তর্জাতিক স্তরে ধীরে ধীরে একা হচ্ছে আমেরিকা।
০৬২০
কুর্সিতে বসার পরই নতুন শুল্কনীতির কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মাত্র চার মাসের মাথায় (পড়ুন ২ এপ্রিল) চালু হয় সেই নিয়ম। বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, আগুপিছু না ভেবে ওই পদক্ষেপ করায় আমেরিকার শেয়ার বাজারে নামে ধস। এর পর কিছুটা ‘জেদ’ করে চিনের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে জড়ান ট্রাম্প। ফলে বেজিঙের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ কর চাপিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। পাল্টা চাপ তৈরি করতে প্রায় সমপরিমাণ শুল্ক আরোপ করে ড্রাগনও।
০৭২০
আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, এর জেরে আমেরিকার বাজারে কমে যায় চিনা পণ্যের আমদানি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ঊর্ধ্বমুখী হয় মুদ্রাস্ফীতির সূচক। এর পর পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি বেজিঙের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেন ট্রাম্প। তাতে আর্থিক ভাবে আমেরিকা কতটা লাভবান হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্টের এ-হেন পদক্ষেপকে অনেকেই শুল্কযুদ্ধে ড্রাগনের কাছে হার বলে মনে করছেন, যা তাঁর জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
০৮২০
নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নেন ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতি ইলন মাস্ক। ভোটের সময়ে প্রচার থেকে শুরু করে আর্থিক অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হয়ে মাস্ককে নিজের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্য করে নেন ট্রাম্প। তাঁর জন্য ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ডজ় নামের একটি পৃথক দফতরও তৈরি করেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। কিন্তু অচিরেই মোহভঙ্গ হয় ধনকুবের মাস্কের। আর তাই কিছু দিনের মধ্যেই সেখান থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
০৯২০
এ বছরের জুলাইয়ের গোড়ায় ‘বড় ও সুন্দর’ বিলে সই করেন ট্রাম্প। ফলে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ কর ব্যবস্থায় এসেছে বড় বদল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একে ‘কর ও খরচ কাটছাঁট’-এর আইন বলে উল্লেখ করেছেন। মাস্কের যুক্তি, মার্কিন অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে এই আইন। কাজ হারাবেন বহু মানুষ। এই নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন তিনি। বিশ্লেষকদের অনুমান, ট্রাম্পের নতুন বিলকে অপছন্দ করছেন দেশের তাবড় শিল্পপতিদের বড় অংশই।
১০২০
‘কর এবং খরচ কাটছাঁট’ আইন অনুযায়ী, আগামী দিনে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকেরা আর বিপুল অর্থ নিজেদের বাড়িতে পাঠাতে পারবেন না। উল্টে কর দিতে হবে তাঁদের। ফলে আমেরিকায় চাকরি করার ব্যাপারে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদারদের কমছে আগ্রহ। এতে লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে একাধিক বহুজাতিক মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থাকে, যা ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলেছে।
১১২০
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর সেখানকার আমজনতার ক্ষোভ বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল বিদেশনীতিতে ব্যর্থতা। ক্ষমতায় আসার আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। কিন্তু, বাস্তবে সেই লক্ষ্যে সফল হননি তিনি। উল্টে বর্তমানে নতুন করে কিভকে হাতিয়ার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট। এই ইস্যুতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে ১৮০ ডিগ্রি বেঁকে যেতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
১২২০
গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চার দিনের ভারত-পাকিস্তানের ‘যুদ্ধ’ বন্ধ করার ব্যাপারে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তুলে ধরেন ট্রাম্প। কিন্তু, নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে এই ইস্যুতে কোনও ভূমিকাই ছিল না তাঁর। মোদী সরকারের ওই বিবৃতির পরেও চুপ করে থাকেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আমেরিকাবাসীদের অনুমান, এর জেরে দু’দেশের কৌশলগত সম্পর্কে পড়েছে প্রভাব। চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে ভারত।
১৩২০
একই কথা ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ওই সংঘাত থামাতে অবশ্য বড় ভূমিকা নেন ট্রাম্প। লড়াই থামলেও পরমাণু হাতিয়ার তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি তেহরান। এ ছাড়া, পশ্চিম এশিয়া সফরে গিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ-আল-শারার সঙ্গে করমর্দন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একটা সময়ে আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিনেতাদের তালিকায় নাম ছিল তাঁর। পাশাপাশি, পাক সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এগুলি তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাসের অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
১৪২০
‘মর্নিং কনসাল্ট’-এর প্রকাশ করা তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নাম রয়েছে ‘রিপাবলিক অফ কোরিয়া’ বা আরওকে-র (পড়ুন দক্ষিণ কোরিয়া) প্রেসিডেন্ট লি জ়ে মিয়ঙের। ৫৯ শতাংশ দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে। লি জ়ে-কে পছন্দ করেন না মাত্র ২৯ শতাংশ কোরিয়াবাসী। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর জনপ্রিয়তা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৫২০
আর ৫৭ শতাংশে সমর্থন পেয়ে তৃতীয় স্থানে জায়গা পেয়েছেন আর্জেন্টিনীয় প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি। চার নম্বরে জায়গা পেয়েছেন কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার মুখে উত্তরের প্রতিবেশী দেশটিকে আমেরিকার সঙ্গে মেশাতে হুমকি দেন ট্রাম্প। কুর্সি পেয়েই তার তীব্র প্রতিবাদ জানান কার্নি। এতে রাতারাতি খবরের শিরোনামে চলে আসেন তিনি। বর্তমানে তাঁর দিকে রয়েছে ৫৬ শতাংশের সমর্থন।
১৬২০
এই তালিকায় পাঁচ এবং ছ’নম্বরে নাম রয়েছে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনিও অ্যালবানিজ় এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শিনবাউম পারডো। দেশের ভিতরে তাঁদের জনপ্রিয়তা যথাক্রমে ৫৪ এবং ৫৩ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অ্যালবানিজ়কে পছন্দ করেন না ৩৫ শতাংশ অস্ট্রেলীয়। পারডোর ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৪০ শতাংশ।
১৭২০
সুইৎজ়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সাটার এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন সাত নম্বরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঠিক পরেই রয়েছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক। তালিকায় তাঁর স্থান নবম। ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রয়েছেন ১০ নম্বরে। দেশের ভিতরে এই তিন জনের দিকে জনসমর্থন রয়েছে যথাক্রমে ৪৮, ৪১ এবং ৪০ শতাংশ।
১৮২০
মার্কিন ব্যবসায়িক গোয়েন্দা সংস্থার সমীক্ষকদের দাবি, ঘরের মাটিতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা কমেছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের। মধ্য এশিয়া লাগোয়া দক্ষিণ ইউরোপের দেশটির আমজনতার মাত্র ৩৩ শতাংশের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে। আর তাই তালিকায় ১৬ নম্বরে ঠাঁই হয়েছে তাঁর।
১৯২০
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক ফ্রিডরিখ মেয়ার্ৎজ় এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ১৩ নম্বরে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল প্রথম ২০তে ঠাঁই হয়নি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরেঁর।
২০২০
সমীক্ষক সংস্থা ‘মর্নিং কনসাল্ট’ জানিয়েছে যে, ৪ থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলির প্রাপ্তবয়স্কদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে অনুমানের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।