Rare Genetic Disorder SPOAN Syndrome Afflicts Brazilian Village Where Many Couples Are Cousins dgtl
Village where Everyone is a cousin
পরিবারের মধ্যেই সঙ্গম! প্রজন্মের পর প্রজন্মে ছড়িয়েছে বিরল রোগ, যে শহরে সকলেই সকলের ভাই-বোন
২০ বছর আগেও এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি স্থানীয়েরা। তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা বৈবাহিক প্রথার কারণে শিশুদের মধ্যে সংক্রামিত হচ্ছে বিরল এক ব্যাধি। ব্রাজ়িলের এই ছোট্ট শহরের শিশুরা ‘স্পোয়ান সিনড্রোমে’ আক্রান্ত।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ১৪:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ব্রাজ়িলের একদা অখ্যাত শহর। বাসিন্দার সংখ্যা সাকুল্যে পাঁচ হাজার। সেই শহরের শিশুরা জন্মানোর পর পরই দুর্বল হয়ে পড়ত। শৈশব থেকেই তাদের চোখ অনিচ্ছাকৃত ভাবে নড়তে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে এই সমস্ত শিশুর জীবন বন্দি হয়ে যায় হুইলচেয়ারে। এমনকি সহজতম কাজেও সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাদের।
০২১৫
২০ বছর আগেও এই বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি স্থানীয়েরা। তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা বৈবাহিক প্রথার কারণে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে বিরল এক সংক্রামক ব্যাধি। ব্রাজ়িলের এই ছোট্ট শহরের শিশুরা ‘স্পোয়ান সিনড্রোমে’ আক্রান্ত। এটি একটি বিরল বংশগত রোগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে শরীরকে দুর্বল করে দেয় এই রোগ।
০৩১৫
উত্তর-পূর্ব ব্রাজ়িলের সেরিনা ডস পিন্টোসে ২০০৫ সালে পা রাখেন জিনতত্ত্ব গবেষক ও জীববিজ্ঞানী সিলভানা সান্তোস। দীর্ঘ গবেষণার পর তিনি এই অজানা রোগ শনাক্ত করেন এবং নামকরণ করেন ‘স্পোয়ান সিনড্রোম’। এই রোগ তখনই ঘটে যখন বাবা-মা উভয়েই পরিবর্তিত জিন বহন করেন।
০৪১৫
সান্তোস শহরে এসে দেখেন, শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে অনেক পরিবারই দীর্ঘ দিন ধরে একটি জটিল রোগের ধাঁধার সঙ্গে লড়াই করছে। বেশ কিছু শিশু হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। পরিবারগুলির কেউই এই রোগের কারণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। সান্তোসকে প্রথমে তাঁর ব্রাজ়িলিয়ান প্রতিবেশীরা এই শহরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
০৫১৫
সান্তোসের বেশ কয়েক জন প্রতিবেশীই সেরিনা থেকে এসেছিলেন। তাঁরা গবেষককে জানিয়েছিলেন যে, তাঁদের জন্মভূমির অনেকেই হাঁটতে পারেন না। এর কারণ নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন সেরিনার স্থানীয়েরা। পরিবারগুলির কাছে তাদের শিশুদের এই অসুস্থতার কোনও ব্যাখ্যা ছিল না।
০৬১৫
সাও পাওলো থেকে আসার পর সেরিনা চষে ফেলেন সান্তোস। প্রত্যেক দরজায় ঘুরে ঘুরে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সেই ডিএনএর পরীক্ষা করে যে ফলাফল হাতে এসেছে তা দেখে চমকে উঠেছেন জিনতত্ত্ব গবেষক। অক্লান্ত গবেষণায় উঠে আসে বাসিন্দাদের বংশপরম্পরায় এই রোগের শিকার হওয়ার নেপথ্যকারণ।
০৭১৫
পরীক্ষায় উঠে এসেছে, এই শহরের দম্পতিদের ৩০ শতাংশই সম্পর্কে ভাই-বোন। পরিবারের মধ্যে বিবাহ ও যৌনতার ফলেই ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। পারস্পরিক যৌন সম্পর্ক বা অন্তঃপ্রজননের (ইনব্রিডিং) ফলে দেখা দেয় জিনগত ত্রুটি। অন্তঃপ্রজননের ফলে জিন বৈচিত্রের অভাব এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই ব্যাধিটি অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
০৮১৫
সাধারণ ভাবে গোষ্ঠী বা পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক যৌন সম্পর্কের ফলে যে সন্তান জন্মায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্রমাগত অন্তঃপ্রজনন ঘটলে দুর্বল বংশধরদের জন্মানোর আশঙ্কাও থাকে। এর ফলে প্রথম প্রজন্মের সবাই ভাই এবং বোন হবে। এই প্রজন্মের পর থেকে অন্তঃপ্রজনন শুরু হবে।
০৯১৫
বাবার থেকে জিনের দু’টি সংস্করণ পায় তাঁদের সন্তান। সেই দু’টি জিনই ত্রুটিপূর্ণ হলে সন্তানের মধ্যে সেই ত্রুটি প্রবল মাত্রায় থাকার আশঙ্কা থাকে। এমনকি সেই সন্তান মারাও যেতে পারে। এই ধারণাতেও অবশ্য পুরোপুরি সহমত হতে পারেননি অনেক জীববিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, অন্তঃপ্রজননের ফলে জন্মানো নবজাতকদের ৭৫ শতাংশ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।
১০১৫
বিশ্বব্যাপী বিবাহের মধ্যে ১০ শতাংশ বিবাহ তুতো ভাই-বোনেদের মধ্যে হয়ে থাকে। ব্রাজ়িলে এই সংখ্যা ১ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে কমপক্ষে একটি শিশু ‘স্পোয়ান সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত।
১১১৫
গত দশকের গোড়ার দিকে আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহের হার প্রায় ১০ শতাংশ ছিল বলে অনুমান করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে এই হার ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পাকিস্তানের মতো দেশে ৫০ শতাংশ বিয়েই হয় আত্মীয়দের মধ্যে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায় তা ১ শতাংশেরও কম।
১২১৫
ব্রাজ়িলের ফেডেরাল ইউনিভার্সিটি অফ রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলের জিনতত্ত্ব গবেষক লুজ়িভান কোস্টা রেইসের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, কোনও দম্পতির মধ্যে রক্তের বা পারিবারিক সম্পর্ক না থাকলে বিরল জিনগত ব্যাধি বা অক্ষমতা-সহ সন্তান হওয়ার আশঙ্কা ২-৩ শতাংশ। পরিবারের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলে গর্ভাবস্থায় এই ঝুঁকি ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
১৩১৫
‘স্পোয়ান সিনড্রোম’-এর উপর প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা ২০০৫ সালে সান্তোস ও তাঁর সহযোগী দলের দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। এই অবস্থাটি একটি ছোট ক্রোমোজ়োমাল ত্রুটির কারণে ঘটে। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন অতিরিক্ত উৎপাদন করে।
১৪১৫
গবেষকদের ধারণা ‘স্পোয়ান সিনড্রোমে’র জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিনটি ৫০০ বছরেরও আগে ব্রাজ়িলের উত্তর-পূর্বে প্রাথমিক ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে এসেছিল। রোগীদের জিন ঘেঁটে এই অঞ্চলে একদা পর্তুগিজ, ডাচ এবং ইহুদিদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। মিশরে দু’টি স্পোয়ান রোগী পাওয়ার পর এই তত্ত্বটি আরও জোরদার হয়। আরও গবেষণায় দেখা গিয়েছে মিশরীয় রোগাক্রান্তেরা ইউরোপীয় বংশধরদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
১৫১৫
‘স্পোয়ান সিনড্রোম’-এর কোনও প্রতিকার নেই। সান্তোসের প্রচেষ্টায় এখানকার জনসাধারণের মনে এই অবস্থা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা জানতেন, যে পরিবারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হতে যাচ্ছে তাঁরা তুতো ভাই-বোন। কিন্তু তার আগের বহু প্রজন্ম ধরে যে এই বিষয়টি চলে আসছে, সে সম্পর্কে তাঁরা জানতে পেরেছেন সান্তোসের মাধ্যমেই।