Russia going to import 10 lakh skilled Indian workers by the end of 2025, know the reasons dgtl
Russia Recruits Indian Workers
ইহুদিদের রাস্তায় হেঁটে দিল্লির উপর ভরসা, ১০ লক্ষ ভারতীয়কে মোটা মাইনের চাকরি দেবেন পুতিন?
চলতি বছরের শেষ দিকে ভারত থেকে ১০ লক্ষ দক্ষ শ্রমিক আমদানির পরিকল্পনা করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মোটা বেতনে তাঁদের ‘পুষতে’ রুবল-রুপি লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন তিনি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইজ়রায়েলের পর এ বার রাশিয়া। বিপুল সংখ্যায় ভারতীয়দের চাকরি বা রোজগারের ব্যবস্থা করতে চলেছে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ ‘বন্ধু’। এক-দু’জন নন, মনে করা হচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে কাজ পাবেন প্রায় ১০ লক্ষ ভারতীয়। চলতি বছরের শেষ থেকে যাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এতে দুই দেশের সম্পর্ক যে আরও মজবুত হবে, তা বলাই বাহুল্য। যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
০২১৮
সম্প্রতি, ভারতীয়দের নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে ‘মস্কো টাইম্স’। রুশ গণমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে তাঁদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে পুতিন প্রশাসনের। এ ব্যাপারে ‘উরাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর প্রধান আন্দ্রেই বেসেদিনকে উদ্ধৃত করেছে ওই সংবাদসংস্থা। পূর্ব ইউরোপের দেশটির কোথায় ভারতীয়দের কাজে লাগানো হবে, ‘মস্কো টাইম্স’-এর রিপোর্টে তারও উল্লেখ রয়েছে।
০৩১৮
ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ নিয়ে ঠিক কী বলেছেন বেসেদিন? তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর একটা চুক্তি হয়েছে। ভারতীয় সহকর্মীদের থেকে বিষয়টা জানতে পারি আমি। চলতি বছরের শেষ দিকে ওই দেশের মোট ১০ লক্ষ মানুষকে সভেরদলোভস্ক এলাকায় নিয়ে আসা হবে। শ্রমিক ছাড়া সেই দলে থাকবেন বিশেষজ্ঞেরাও।’’
০৪১৮
বেসেদিনের দাবি, ভারতীয় শ্রমিকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সভেরদলোভস্কের রাজধানী ইয়েকাটেরিনবার্গে নতুন একটি দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের। এ ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে কথাবার্তা বেশ কিছু দূর এগিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ লড়ছে রাশিয়া। এর ফলে দেশের মধ্যে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। সেই ঘাটতি পূরণ করতে ভারতীয়দের কাজে লাগাতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
০৫১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন, রাশিয়া এ দেশের বাসিন্দাদের কাজ দিলে, মস্কোর পাশাপাশি আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে নয়াদিল্লি। তা ছাড়া ১০ লক্ষ ভারতীয় শ্রমিকের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া পুতিনের পক্ষে মোটেই সহজ নয়। এর জন্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে মিলে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ একটি ব্যবস্থা করতে হবে তাঁকে।
০৬১৮
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার আগে পর্যন্ত ‘সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাঙ্ক ফিন্যান্সশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন’ বা সুইফ্ট ব্যবহার করত রাশিয়া। এটি প্রকৃতপক্ষে এক দেশের টাকাকে অন্য দেশের মুদ্রায় বদলে দেওয়ার একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। মস্কো সুইফ্টের সদস্য থাকায় রুশ রুবলকে সহজেই ভারতীয় টাকায় বদলে নেওয়া যেত। কিন্তু, লড়াই বেধে যাওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সুবিধা আর ব্যবহার করতে পারছে না ক্রেমলিন। ভারতীয় শ্রমিকদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এটাই পুতিনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৭১৮
একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। রুশ সংস্থায় চাকরি বা কাজ পেলে এ দেশের শ্রমিকদের রুবলে মিলবে বেতন। সেটা ভারতীয় টাকায় বদলাতে না পারলে বাড়িতে ওই অর্থ পাঠাতে পারবেন না তাঁরা। নিষেধাজ্ঞার কারণে সুইফ্ট ব্যবহারের অনুমতি নেই মস্কোর। ফলে রুবল ভারতীয় টাকায় ভাঙানোর ব্যবস্থা না করে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের কিছুতেই নিজের দেশে কাজ দিতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন।
০৮১৮
তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক রাশিয়ার থেকে সস্তা দরে খনিজ তেল কিনছে নয়াদিল্লি। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে রুপি (ভারতীয় টাকা) ও রুবলে চলছে বাণিজ্য। তাই এই চ্যালেঞ্জ টপকানো ক্রেমলিনের পক্ষে একেবারেই কঠিন নয়। চলতি বছরে ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত নতুন ব্যবস্থা তৈরি করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
০৯১৮
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত ১৪ জুলাই অবিলম্বে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বলে রাশিয়াকে চরম হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই দিন তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৫০ দিনের মধ্যে মস্কোকে শান্তি সমঝোতায় আসতে হবে। না হলে ক্রেমলিনের বাণিজ্যিক বন্ধুদের উপরে ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেব আমরা।’’ ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বে ভারত। সেটা ঠেকাতে ১০ লক্ষ শ্রমিকের রুশ যাত্রা স্থগিত করতে পারে নয়াদিল্লি।
১০১৮
চলতি বছরের জুলাইয়ের গোড়ায় ভারতের নাম করে বিষোদ্গার করেন ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা তথা সেনেটর (মার্কিন পার্লামেন্ট ‘কংগ্রস’-এর উচ্চকক্ষ সেনেটের সদস্য) লিন্ডসে গ্রাহাম। তাঁর দাবি, নতুন একটি ‘কঠিন’ বিলের অনুমোদন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সেখানে রাশিয়ার থেকে খনিজ তেল কেনা দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা রয়েছে। গ্রাহামের অভিযোগ, মস্কোর থেকে ‘তরল সোনা’ কিনে পুতিনের হাত শক্ত করছে নয়াদিল্লি। তবে তাঁর ওই বিল এখনও পাশ করেনি মার্কিন কংগ্রেস।
১১১৮
বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, ট্রাম্প জমানায় আমেরিকার ক্রমাগত ‘ভারত-বিরোধী’ অবস্থানের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে চি়ড় ধরার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এ দেশ থেকে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা, চাকরি এবং ব্যবসার জন্য বহু তরুণ-তরুণী চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটনের সিলিকন ভ্যালির মূল চালিকাশক্তি হিসাবে এ দেশের প্রতিভাবান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদেরই গণ্য করা হয়। সেই অভিমুখ ধীরে ধীরে পূর্ব ইউরোপের দেশটির দিকে ঘুরতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
১২১৮
এ বছর অনাবাসী ভারতীয়দের স্বদেশে পাঠানো অর্থের উপরে এক শতাংশ কর আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই সংখ্যা আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্য দিকে, রাশিয়ায় কাজ করলে এই ধরনের কোনও কর দিতে হবে না তাঁদের। ফলে সহজেই মস্কোর প্রতি বাড়তে পারে আকর্ষণ। আগামী দিনে ভারত থেকে বেশ কয়েক লক্ষ দক্ষ শ্রমিক ও কর্মী পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চাকরি বা কাজ করতে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩১৮
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক এবং পাঁচ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইজ়রায়েল। ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ বা এনসিডিসি-র সূত্র দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ্যে আনে ওই গণমাধ্যম। ইহুদিদের দেশে কাজ করতে গেলে মাসে ১.৯২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন তাঁরা।
১৪১৮
ভারত থেকে যোগ্য শ্রমিকদের নিয়োগের দায়িত্ব রয়েছে ইজ়রায়েলের পপুলেশন, ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার অথরিটির (পিআইবিএ)। সংশ্লিষ্ট দফতরটির একটি দল গত বছর এ দেশে এসে দক্ষ শ্রমিকদের বেছে নিয়েছিল। ফ্রেমওয়ার্ক, আয়রন বেন্ডিং, প্লাস্টারিং, সেরামিক টাইলিং-এর মতো কাজের জন্য মহারাষ্ট্রে শিবির করে তারা।
১৫১৮
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী থেকে নির্মাণ শ্রমিক বা স্বাস্থ্যকর্মী, কাজের বাজারে দুনিয়া জুড়ে রয়েছে ভারতীয়দের চাহিদা। আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিটেন ও ফ্রান্স-সহ ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে রয়েছেন এ দেশের কর্মদক্ষ নাগরিকেরা। পশ্চিম এশিয়ার সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে মূলত রিয়্যাল এস্টেট, বস্ত্র, হোটেল এবং অন্যান্য শিল্পে কাজ করেন তাঁরা।
১৬১৮
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়ে রাশিয়ার থেকে খনিজ তেল কেনা বন্ধ করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। উল্টে মুদ্রাস্ফীতির হার ঠিক রাখতে মস্কোর ‘তরল সোনা’ আমদানির পরিমাণ বাড়াতে পারে নয়াদিল্লি। অতীতে ভ্লাদিভস্তক শহর নির্মাণে এ দেশের একাধিক রিয়্যাল এস্টেট সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘাটতি কিছুটা কমাতে মোদী সরকার সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৭১৮
এই ইস্যুতে অবশ্য ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে রুশ শ্রম মন্ত্রক। তাদের দাবি, এ বছরের শেষ দিকেই ১০ লক্ষ কর্মীকে নিয়োগ করা হবে, এমনটা নয়। তবে বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার উপর ভিত্তি করে ভারতীয়েরা এখানে কাজ পাবেন। এর জন্য এক বছর আগেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সেই নিয়ম মেনে ভারতীয়দের নিয়োগপত্র দিতে পারবে এখানকার বিভিন্ন সংস্থা।
১৮১৮
চলতি বছরে বিদেশি কর্মীদের জন্য ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯০০টি আসন সংরক্ষণ রেখেছে রুশ প্রশাসন। এর মধ্যে ৭১ হাজার ৮১৭ জন ভারতীয় কর্মী নিয়োগ করতে পারবে সেখানকার বিভিন্ন সংস্থা। গত বছর শুধুমাত্র সেন্ট পিটার্সবার্গে চাকরির জন্য আবেদন করেন এ দেশের চার হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়া কালিনিনগ্রাদ এবং মস্কোয় কাজে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।