Son discovers how his Parents fell in love during World War 2 through 500 letters dgtl
World War II
একে অপরকে দেন ৫০০ চিঠি, প্রেমের ফুল ফোটে গোলাগুলির মধ্যেই! বিশ্বযুদ্ধের ৬০ বছর পর লুকোনো বাক্সে খোঁজ মেলে দুর্দান্ত প্রেমকাহিনির
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব জুড়ে যেখানে মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠেছিল, সেখানে আর যাই হোক প্রেম-ভালবাসার কথা মাথায় আসবে না। তবে শত যুদ্ধের মধ্যেও প্রেমের ফুল ফুটেছিল। ফুটিয়েছিলেন লন্ডনের ক্রিস বার্কার এবং বেসি মুর।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
পৃথিবী জুড়ে তখন যুদ্ধের দামামা বেজেছে। বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের লড়াইয়ের আঁচ পড়েছে ছোট দেশগুলিতেও। চারিদিকে গোলাগুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ, রক্তারক্তি! সময়কাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
০২২১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব জুড়ে যেখানে মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে উঠেছিল, সেখানে আর যাই হোক প্রেম-ভালবাসার কথা মাথায় আসবে না। তবে শত যুদ্ধের মধ্যেও প্রেমের ফুল ফুটেছিল। ফুটিয়েছিলেন লন্ডনের ক্রিস বার্কার এবং বেসি মুর।
০৩২১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছিল ইংল্যান্ড। যুদ্ধ শুরুর আগে লন্ডনের ডাকঘরে কাজ করতেন ক্রিস এবং বেসি। দু’জনেই যুবা, চঞ্চল, উদ্দীপনায় ভরা। সহকর্মী হিসাবে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিল দু’জনের মধ্যে।
০৪২১
ক্রিস ছিলেন উত্তর লন্ডনের হলোওয়ের বাসিন্দা। ১৯৩০-এর দশকে ডাকঘরে চাকরি পান তিনি। সেখানেই তাঁর বেসির সঙ্গে প্রথম দেখা। মনের মিল থাকায় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁদের মধ্যে।
০৫২১
সে সময় লন্ডনে একই অফিসে থাকা পুরুষ এবং মহিলা কর্মীরা অত ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করতেন না। ক্রিস এবং বেসি যেখানে কাজ করতেন, সেখানেও একই নিয়ম ছিল। ফলে যাবতীয় কথাবার্তা, আলাপ-পরিচয়ের জায়গা ছিল অফিস ইউনিয়নের সভা এবং অফিস আয়োজিত অনুষ্ঠান।
০৬২১
বেসিকে মনে মনে পছন্দ করতেন ক্রিস। কিন্তু মুখ ফুটে বলার সাহস ছিল না। কারণ, নিক নামে এক যুবককে ভালবাসতেন বেসি। ফলে ক্রিস এবং বেসির সম্পর্ক বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরোয়নি।
০৭২১
এর মধ্যেই ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডঙ্কা বাজে। টেলিগ্রাফ সিগন্যাল বোঝার বিষয়ে দক্ষতা ছিল ক্রিসের। প্রাথমিক ভাবে সেনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেও ১৯৪২ সালে তাঁকে ব্রিটেনের সেনায় যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
০৮২১
নির্দেশ মেনে ডাকঘরের চাকরি ছেড়ে ‘রয়্যাল কোর অফ সিগন্যাল’-এ যোগ দেন ক্রিস। উত্তর আফ্রিকার টোব্রুকের কাছে ‘সিগন্যালম্যান’ হিসাবে পাঠানো হয় তাঁকে। ভিন্দেশে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই একা হয়ে পড়েছিলেন ক্রিস।
০৯২১
সে সময় সেনাবাহিনী বা সরকারি কাজে দেশের বাইরে থাকা মানুষদের জন্য বন্ধু, পরিবার এবং প্রেমিক-প্রেমিকাদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল চিঠি। ক্রিসও উত্তর আফ্রিকা থেকে বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের চিঠি লেখার কথা ভাবেন।
১০২১
ক্রিসের সেই বন্ধুবান্ধবের তালিকায় ছিল বেসির নামও। ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সকল প্রিয়জনকে চিঠি লেখেন ক্রিস। ক্রিস যাঁদের চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের সকলে তাঁকে জবাব না দিলেও বেসি দিয়েছিলেন। বেসির থেকে পাল্টা চিঠি পেয়েছিলেন ক্রিস। আর সেই চিঠিই বদলে দেয় দুই বন্ধুর সম্পর্কের সমীকরণ। বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে।
১১২১
ক্রিস তাঁর প্রথম চিঠিতে বেসিকে লিখেছিলেন, ‘‘কেমন আছো? তুমি জানো, আমি এখানে একা আছি। উত্তর আফ্রিকায় আমার সময় ভালই কাটছে।’’ জবাবে বেসি তাঁকে লিখেছিলেন, ‘‘আমি ভাল আছি। তোমার সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি। তোমাকে জানাই যে, নিকের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা টেকেনি। সে এখন আমার প্রাক্তন।’’
১২২১
বেসিকে আগে থেকেই পছন্দ করতেন ক্রিস। বেসির সম্পর্ক ভাঙার বিষয়ে জেনে তাঁর মন খুশিতে নেচে উঠেছিল। শীঘ্রই চিঠির সুর বদলে ফেলেন তিনি। চিঠির মাধ্যমেই বেসিকে প্রেম নিবেদন করেন। সেই প্রেমপ্রস্তাব গৃহীতও হয়। একে অপরের থেকে দূরে থাকলেও তাঁদের সম্পর্ক গড়াতে থাকে নিজস্ব লয়ে।
১৩২১
ক্রিস এবং বেসির সম্পর্কে বড় ভূমিকা ছিল যুদ্ধের। যুদ্ধের কারণে ক্রিস এবং বেসিকে একে অপরের থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল দীর্ঘ দিন। যুদ্ধকালীন প্রেম টিকিয়ে রাখতে একে অপরকে ৫০০ চিঠি দেন তাঁরা। চিঠির বিষয়বস্তু যেমন ছিল প্রেম, তেমনই ছিল যুদ্ধ।
১৪২১
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বেসিকে জানাতেন ক্রিস। কেমন করে তাঁর দিন কাটছে, যুদ্ধক্ষেত্রের হাল হকিকত— সবই লিখতেন। এর পর যুদ্ধের পরিবেশ খানিক শান্ত হলে লন্ডনে ফেরেন ক্রিস।
১৫২১
ক্রিস এবং বেসি— দু’জনেই চাইতেন না যে তাঁদের চিঠি আদানপ্রদানের কথা পাঁচকান হোক। বিশেষ করে সেগুলি যেন কোনও ভাবেই সেনার কানে না পৌঁছোয়, চাইতেন তাঁরা। ফলে চিঠিগুলি লুকিয়ে ফেলেন ক্রিস এবং বেসি।
১৬২১
এর মধ্যেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ক্রিস এবং বেসি। ছোট অনুষ্ঠান করে বিয়ে সারেন তাঁরা। একটি পাবে স্যান্ডউইচ খেয়ে হয় বিয়ের উদ্যাপন। এর পর তাঁরা মধুচন্দ্রিমায় চলে যান।
১৭২১
মধুচন্দ্রিমা থেকে ফিরে আবার কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিতে হয় ক্রিসকে। লন্ডন ছাড়েন তিনি। তবে সে বার আর বেশি দিন ঘর ছেড়ে থাকতে হয়নি তাঁকে। ধীরে ধীরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আঁচ কমে। লড়াই থামে। শান্তিপ্রতিষ্ঠা হয়।
১৮২১
লন্ডনে ফিরে আবার ডাকঘরের কাজে যোগ দেন ক্রিস। পরে লন্ডনের প্রধান কার্যালয়ের প্রধানও হন। দুই সন্তানকে নিয়ে লন্ডনে সুখের সংসার গড়ে তোলেন ক্রিস এবং মুর। যুগলের মধ্যে চিঠি আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পুরনো চিঠিগুলো যত্ন করে বাক্সবন্দি করেছিলেন তাঁরা।
১৯২১
২০০৭ সালে ক্রিসের মৃত্যু হয়। বেসির মৃত্যু হয়েছিল আরও আগে। মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগে পুত্র বার্নার্ডের হাতে একটি ছোট বাক্স দিয়েছিলেন ক্রিস। বাক্স খুলে সেই ৫০০টি চিঠি পান বার্নার্ড। জানতে পারেন বাবা-মায়ের যুদ্ধকালীন প্রেমের গল্প। প্রায় ৬০ বছর চিঠিগুলি লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিলেন ক্রিস এবং বেসি।
২০২১
বার্নার্ড জানান, মূলত যুদ্ধ সংক্রান্ত একাধিক তথ্য থাকার কারণেই চিঠিগুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁর বাবা-মা। পরে চিঠিগুলি ‘মাই ডিয়ার বেসি: আ লাভ স্টোরি ইন লেটারস’ নামে বইয়ের আকারে প্রকাশ করেন বার্নার্ড।
২১২১
বিশ্বযুদ্ধের আবহে প্রেম! কিন্তু বারণ করলেই বা শুনছিল কে? কারণে হোক কিংবা অকারণে মন জুড়েছিল ক্রিস এবং বেসির। ভৌগোলিক দূরত্বকে বাধা হতে দেননি তাঁরা। দেশে-দেশে ভয়াবহ যুদ্ধ, গোলাগুলি, বারুদের গন্ধ, রক্তারক্তির মধ্যেই প্রেমের ফুল ফুটিয়েছিলেন যুগল।