জিএমভির তৈরি ওই প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি পরীক্ষা করে দেখেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দল। তবে এর কর্মপদ্ধতিতে বেশ খুশি ‘ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা’। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে মুখ খুলেছেন লুপিনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর স্টিভেন কে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সফ্টঅয়্যারের সাহায্যে আমরা ইউরোপকে চাঁদে মানুষের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠার কাছাকাছি নিয়ে এসেছি।’’
পৃথিবীর বাইরে চাঁদের বুকে মানুষের পা পড়লেও মঙ্গল জয় এখনও অধরা রয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে অবশ্য লালগ্রহে বহু বার মহাকাশযান নামিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাধিক সংস্থা। আগামী দিনে সেখানে নভশ্চর পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), রাশিয়ার রসকসমস বা ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মতো মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রগুলির।
এই ধরনের অভিযানগুলিতে জিএমভির তৈরি প্রযুক্তি কী ভাবে কাজ করবে, তার একটা নমুনা অবশ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এর জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা স্পেনে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে চন্দ্রপৃষ্ঠের অনুরূপ পরিবেশ তৈরি করেন। এর পর সেখানে নিয়ে গিয়ে জিএমভির নতুন প্রযুক্তিটি পরীক্ষা করা হয়। সূত্রের খবর, এতে ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে ‘চন্দ্র জিপিএস’।
একটি বিবৃতিতে প্রযুক্তিটি কী ভাবে কাজ করবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছে স্পেনীয় সংস্থা জিএমভি। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে চাঁদ প্রদক্ষিণকারী কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে জিপিএসের মতো সঙ্কেত পাঠানো যাবে। ওই সঙ্কেতের উপর নির্ভর করে চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘোরাফেরা করবেন নভশ্চর বা মহাকাশযানের রোভার। এতে সঠিক অবস্থান বুঝতে পারা অনেক বেশি সহজ হবে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে চাঁদের বুকে ধুলোর চলাচল এবং চন্দ্র ভূখণ্ডের পরিবর্তন সম্পর্কে রিয়্যাল টাইম তথ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সেই কারণে পৃথিবীর উপগ্রহটিতে লাগাতার অভিযান পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। স্পেনীয় সংস্থাটির তৈরি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চন্দ্রপৃষ্ঠের মানচিত্র তৈরি করা যেতে পারে বলে আশাবাদী তারা।
এ বিষয়ে জিএমভির হেড অফ স্ট্র্যাটেজি মারিয়েলা গ্রাজ়িয়ানো বলেছেন, ‘‘আমরা রোভারগুলোর সাহায্যে দ্রুত চাঁদের বুকের মানচিত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছি। আগামী দিনে এর উপর ভিত্তি করে মহাকাশচারীদের সেখানে পাঠানো হবে, যাতে মিশন শেষ করে পৃথিবীতে ফিরতে কোনও সমস্যা না হয় তাঁদের। আমাদের প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে স্থায়ী ঘাঁটি বা গবেষণাকেন্দ্র তৈরিতেও সাহায্য করবে।’’
অন্য দিকে চাঁদ দখলে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে চিন ও রাশিয়া। পৃথিবীর উপগ্রহে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নীল নকশা ছকে ফেলেছে মস্কো ও বেজিং। সব কিছু ঠিক থাকলে এই লক্ষ্যে পৌঁছোতে লেগে যাবে আরও ১০ বছর। তবে প্রকল্প সফল হলে চাঁদের একাংশ যে ওই দুই দেশের দখলে চলে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। শুধু তা-ই নয়, মহাকাশের দৌড়ে রুশ-চিন যুগলবন্দির কাছে হার মানতে হতে পারে আমেরিকাকে।
চলতি বছরের মে মাসের গোড়ায় একটি সমঝোতাপত্র বা মউ (মেমোর্যান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) সই করে রাশিয়া ও চিন। এর এক দিকে ছিল মস্কোর জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা রসকসমস এবং অপর দিকে বেজিঙের চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ)। তখনই চাঁদে একটি স্বয়ংক্রিয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির উদ্দেশ্যে দুই শক্তিধর দেশ এক ছাতার তলায় এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, ২০৩৫ সালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া ও চিন। এটি প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণাকেন্দ্রের (ইন্টারন্যাশনাল লুনার রিসার্চ স্টেশন বা আইএলআরএস) অংশ হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে স্বয়ংক্রিয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে শুধুমাত্র চাঁদে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
গত ৮ মে সংশ্লিষ্ট সমঝোতাপত্রটি নিয়ে বিবৃতি দেয় রুশ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংস্থা রসকসমস। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘মৌলিক মহাকাশ গবেষণা এবং লম্বা সময়ের জন্য চাঁদে মানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি পরিচালনা করতে প্রস্তাবিত আইএলআরএস নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’ সেখানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কী ভূমিকা হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি।
গত বছর প্রথম বার চাঁদে পরমাণুকেন্দ্র তৈরির কথা বলেন রসকসমসের প্রধান ইউরি বোরিসভ। এ ব্যাপারে মস্কো যে বেজিঙের সাহায্য নিতে চলেছে, তখনই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বোরিসভের দাবি, পৃথিবীর উপগ্রহে পরমাণু চুল্লি ছাড়াও আণবিক শক্তির মালবাহী মহাকাশযান তৈরি করা হবে। সেই প্রকল্পটিতেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে সিএনএসএ।
তবে চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি যে মোটেই সহজ নয়, তা স্পষ্ট করেছেন রুশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইউরি। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় আণবিক চুল্লিকে ঠান্ডা করার প্রয়োজন রয়েছে। চাঁদে সেটা কী ভাবে করা হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও আমাদের কাছে নেই। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy