State Minister Chandrima Bhattacharya announces various new schemes and facilities in the 2024-25 state budget dgtl
West Bengal Budget 2024-25
ভোটের আগে কোন কোন অস্ত্রে শান মমতার? এক নজরে রাজ্য বাজেট ২০২৪-২৫
লোকসভা ভোটের আগেই ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ অস্ত্রে শান তৃণমূলের। বাড়ানো হল লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ। সাধারণ মহিলাদের ১০০০ টাকা করে ও তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্তদের ১২০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্য বাজেট ২০২৪-২৫ পেশ করেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বিরোধীদের প্রতিবাদ থেকে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তরজা! কেমন হল রাজ্য বাজেট? কী পেল আর কী পেল না রইল খতিয়ান।
০২২৬
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় দুপুর ৩টে নাগাদ রাজ্য বাজেট পেশ করেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে বিধানসভায় শুরু হয় বাজেট অধিবেশন।
০৩২৬
পাল্টা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন বিজেপি বিধায়কেরা। বাজেট পেশের আগেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা। অধিবেশনের শুরুতেই সঙ্গীত নিয়ে তরজা। বিজেপির কোলাহল প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত হয় শেষে। এরা নোংরা করল।’’
০৪২৬
২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার, পড়ুয়া ঋণ-কার্ডের পাশাপাশি নতুন রূপে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। ভোট পরবর্তী বাজেটে তার প্রতিফলনও দেখা গিয়েছিল। এ বার কেমন হল মমতা সরকারের বাজেট? কারা কী পেলেন আর কী পেলেন না? রইল এই প্রতিবেদনে।
০৫২৬
লোকসভা ভোটের আগেই ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ অস্ত্রে শান তৃণমূলের। বাড়ানো হল লক্ষ্মীর ভান্ডারের বরাদ্দ। সাধারণ মহিলাদের ১০০০ টাকা করে ও তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্তদের ১২০০ টাকা করে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান চন্দ্রিমা।
০৬২৬
সংশ্লিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে দু’কোটি ১১ লক্ষ মহিলা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সরকার। বাজেট পেশের সময় চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘আমাদের মা-বোনেদের হাত শক্ত করার জন্য এই মা-মাটি-মানুষের সরকার আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছে যে, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে তফসিলি জাতি এবং জনজাতির শ্রেণির জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করে মাসিক ১,২০০ টাকা এবং অন্যদের জন্য এই সহায়তা বৃদ্ধি করে মাসিক ১০০০ টাকা হবে।’’
০৭২৬
১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের বকেয়া বাবদ ৩৭০০ কোটি বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২১ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজের টাকা হিসাবে ওই অর্থ দেওয়া হবে।
০৮২৬
প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার টাকাও দেবে রাজ্য সরকার। ঘোষণা বাজেটে এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা না দেওয়া হলে, মে মাসে রাজ্য ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির টাকা দিয়ে দেবে বলেও ঘোষণা সরকারের।
০৯২৬
রাজ্য বাজেটে বঞ্চিত নন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরাও। বাজেট অধিবেশনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা জানান, আরও চার শতাংশ হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধি করা হবে। গত জানুয়ারি মাসেও ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সে বারও চার শতাংশ ডিএ বেড়েছিল।
১০২৬
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৪৬ শতাংশ হারে ডিএ পান। বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বেড়ে হল ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এখনও ডিএ-র ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য ফারাক থাকছে ৩২ শতাংশ।
১১২৬
রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ২,৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান চন্দ্রিমা। এতে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মী।
১২২৬
অবহেলা নয় মৎস্যজীবীদেরও। নতুন প্রকল্প আনল রাজ্য সরকার। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীদের জন্য বাজেটে সমুদ্রসাথী প্রকল্পের ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। সেই প্রকল্পে বর্ষার দু’মাস ভাতা বাবদ মৎসজীবীদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বরাদ্দ করা হবে ২০০ কোটি টাকা। উপকৃত হবেন দু’লক্ষ মৎস্যজীবী। ঘোষণা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমার।
১৩২৬
বাজেটে, পথশ্রী প্রকল্পের জন্যও অর্থ বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। ১২ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাকে উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রিমা।
১৪২৬
বিশেষ ঘোষণা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যও। স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হল পরিযায়ী শ্রমিকদের। রাজ্যের যে শ্রমিকরা বাইরে আছেন, তাঁরা সেখানকার হাসপাতালেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন বলে ঘোষণা করা হয় বাজেটে।
১৫২৬
বাজেটে নতুন কর্মশ্রী প্রকল্পে ৫০ দিন করে কাজ দেওয়ার ঘোষণা করেছে রাজ্য। ১০০ দিনের প্রকল্পের পাল্টা এই প্রকল্পের ঘোষণা। চলতি বছরের মে মাস থেকে কার্যকর হবে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প। রাজ্যের প্রতিটি জব কার্ড হোল্ডার এই প্রকল্পের আওতায় কাজের সুযোগ পাবেন।
১৬২৬
সুখবর সিভিক ভলিন্টিয়ারদের জন্যও। বাজেটে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ এবং গ্রিন পুলিশদের ভাতা বাড়ল ১০০০ টাকা। এর জন্য ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন থেকে রাজ্য পুলিশের ২০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত থাকবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য, বলেও জানান অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। যা এত দিন ১০ শতাংশ ছিল।
১৭২৬
বাজেটে রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য নতুন ঘোষণা তৃণমূল সরকারের। মাধ্যমিক পাশের পরে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে ভর্তি হলেই স্মার্টফোন পাবে বলে জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা। এর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা।
১৮২৬
বাজেটে চারটি নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (সুপার ক্রিটিকাল থার্মাল পাওয়ার ইউনিট) তৈরির কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। বরাদ্দ ১০০ কোটি।
১৯২৬
সেতু তৈরি হবে গঙ্গা নদীর উপর। মুড়িগঙ্গা থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ৩.১ কিলোমিটারের সেতু তৈরি করা হবে। নাম দেওয়া হবে ‘গঙ্গাসাগর সেতু’। দামোদরের উপর তৈরি হবে ‘শিল্পসেতু’।
২০২৬
নিউ টাউন ও বিমানবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে ইএম বাইপাসে সাত কিলোমিটারের উড়ালপুল তৈরির ঘোষণা। তিন বছরের মধ্যে সেই প্রকল্প শেষ করা হবে। প্রথম বছরের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১৫০ কোটি টাকা।
২১২৬
রাজ্যের পাঁচ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে।
২২২৬
বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের সুবিধা পাবেন যুবক-যুবতীরা। প্রশিক্ষণের জন্য মাসে মাসিক দেড়-দু’হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রতি বছর ১ লক্ষ যুবক-যুবতী এতে লাভবান হবেন। এর জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে বলেও ঘোষণা রাজ্য বাজেটে।
২৩২৬
রাজ্যের দারিদ্রের হার কমছে বলে বাজেট পেশ করার সময় জানান চন্দ্রিমা। তাঁর দাবি, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক বছর আগে, ৫৭.৬০ শতাংশ রাজ্যবাসী দারিদ্রসীমার নীচে ছিলেন। তৃণমূল সরকার আসার পর দু’কোটির বেশি মানুষের জীবিকা সংস্থান হয়েছে। ফলে দারিদ্রসীমার নীচের মানুষের সংখ্যা কমে ৮.৬০ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন বাংলায় বেকারত্বের হার দেশের তুলনায় ৩ শতাংশ কম।
২৪২৬
প্রসঙ্গত, বাজেট শেষেই ময়দানে নেমেছে বিজেপি। বিধানসভা অধিবেশন শেষ হতেই কারা কী পেলেন না তার খতিয়ান তুলে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন ‘‘শূন্যপদে নিয়োগের কোনও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই এই বাজেটে। এখানে পাহাড়, জঙ্গলমহল, সুন্দরবন উপেক্ষিত। কৃষকদের জন্যেও তেমন কোনও ঘোষণা করা হয়নি বাজেটে। আশাকর্মী, পঞ্চায়েতে কর আদায়কারী, যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আংশিক সময়ের জন্য কাজ করেন, তাঁদের জন্য বাজেটে কোনও বৃদ্ধির ঘোষণা নেই। শিল্পের কোনও দিশাও বাজেটে দেখাতে পারেনি সরকার।’’
২৫২৬
জাতপাত প্রসঙ্গেও মমতা সরকারের এই বাজেটকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চেয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘যে সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়ে ওঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছেন, বাজেটে তাঁদের উন্নয়নের জন্য কোনও ঘোষণা নেই। তাঁদের বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে। এমনকি, আদিবাসী, লেপচা, ভুটিয়ারাও এই বাজেটে উপেক্ষিত। হাসপাতাল, শিক্ষার খাতেও বাজেটে কোনও বরাদ্দ করা হয়নি।’’
২৬২৬
পেট্রোপণ্য নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেছেন, ‘‘পেট্রল, ডিজেলে কোনও ছাড়ের উল্লেখ নেই বাজেটে। এলপিজি সিলিন্ডারে রাজ্য ৩০০ টাকা করে কর নেয়। রাজস্থান ৪০০ টাকা ছাড় দিয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, রাজস্থানের মতো না হলেও কিছুটা ছাড় সিলিন্ডারে দেবে রাজ্য সরকার। কিছুই দেওয়া হয়নি।“