জাপানিদের খাবার টেবিলে ভাত, নুড্লস, সুশি এবং টেম্পুরার পাশাপাশি জায়গা করে নিচ্ছে খাঁটি ভারতীয় মশলাযুক্ত স্বাদের নিরামিষ তরকারিগুলি। তাই জিমনি বা সুইফ্ট নয়, আপাতত জাপানে সুজুকির ‘বেস্টসেলার’ হয়ে উঠছে একটি রেডি-টু-ইট ভারতীয় তরকারিই!
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৫০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
গাড়ির ব্যবসার জগৎ ছেড়ে এ বার আমজনতার হেঁশেলে ঢুকে পড়ল সুজ়ুকি মোটর কর্পোরেশন! গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাটি মূল পণ্য তৈরির পাশাপাশি পা রাখল খাবারের ব্যবসায়। অবাক করা বিষয়টি হল তাদের নতুন উদ্যোগটির নেপথ্যে রয়েছেন ভারতীয়েরা। প্রশ্ন উঠতেই পারে জাপানি সংস্থাটির খাদ্যব্যবসায় যুক্ত হওয়ার সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র কোথায়?
০২১৪
উত্তরটি হল সুজ়ুকির জিমনি, সুইফ্ট গাড়ির মতোই জাপানে রেডি-টু-ইট খাবারের দুনিয়ায় প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভারতীয় নিরামিষ তরকারি! জাপানের প্যাকেজড খাবারের বাজারে নীরবে প্রবেশ করে জাঁকিয়ে বসেছে ভারতীয় স্বাদের চারটি নিরামিষ তরকারি। জাপানের খাবারের বাজারে আত্মপ্রকাশের কিছু দিনের মধ্যে অপ্রত্যাশিত ভাবেই তার চাহিদা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।
০৩১৪
জাপানিদের খাবার টেবিলে ভাত, নুড্লস, সুশি এবং টেম্পুরার পাশাপাশি জায়গা করে নিচ্ছে খাঁটি ভারতীয় মশলাযুক্ত স্বাদের নিরামিষ তরকারিগুলি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটির বাসিন্দাদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারতীয় রান্নার স্বাদ। তাই জিমনি বা সুইফ্ট নয়, আপাতত জাপানে সুজুকির ‘বেস্টসেলার’ হয়ে উঠছে একটি রেডি-টু-ইট ভারতীয় তরকারিই!
০৪১৪
২০২৫ সালের জুন মাসে বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয়েছিল সুজ়ুকির এই চারটি খাদ্যপণ্য। সংস্থাটির ‘ক্যাফেটেরিয়া ইন্ডিয়ান ভেজিটেরিয়ান কারি’ মাত্র তিন মাসেই ১ লক্ষেরও বেশি প্যাকেট বিক্রি করেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গাড়ি নির্মাতা সংস্থাটি।
০৫১৪
চটজলদি কোনও হ্যাপা ছাড়া তৈরি করা যায় ও খাওয়া যায় এমন খাবারগুলিই সাধারণত রেডি-টু-ইটের পর্যায়ে পড়ে। শুধুমাত্র গরম জল মেশালেই তৈরি হয়ে যায় খাবার। এই ধরনের খাবারগুলি সাধারণত কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের সময় বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অফিসের তাড়াহুড়োয় খাবার তৈরি করতে ভুল হয়ে গেলে বিপদ থেকে উদ্ধার করে এই রেডি-টু-ইট খাবারগুলিই।
০৬১৪
সুস্বাদু এই খাবারগুলি প্রথমে জাপানে কর্মরত ভারতীয় কর্মীদের কথা ভেবে তৈরি করেছিল ‘জায়ান্ট’ গাড়িনির্মাতা সংস্থাটি। হামামাতসুতে অবস্থিত সুজ়ুকির অফিসে কর্মরত ২০০ জন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারের কথা মাথায় রেখে ক্যাফেটেরিয়ায় চালু হয় ‘ইন্ডিয়ান ভেজিটেরিয়ান কারি’।
০৭১৪
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে ১৫০ বছরের পুরনো স্থানীয় রেস্তরাঁ টোরিজ়নের সঙ্গে চুক্তি করে সুজ়ুকি। ভারতীয় কর্মীদের জন্য নিরামিষ তরকারি তৈরির বরাত দেওয়া হয় রেস্তরাঁকে। রেস্তরাঁটি এমন একটি রেসিপি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল যা জাপানি স্বাদের পছন্দের সঙ্গে খাঁটি ভারতীয় মশলার ভারসাম্য বজায় রাখে।
০৮১৪
মাসের পর মাস ধরে স্বাদ পরীক্ষার ফলে এমন একটি রেসিপি তৈরি হয়েছিল যা জাপানি জিভের স্বাদের সঙ্গে খাঁটি ভারতীয় স্বাদের মিশ্রণ ঘটিয়েছিল। খাবারগুলি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে জাপানি কর্মীরাও সেই খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন।
০৯১৪
ক্যাফেটেরিয়ার একটি সাধারণ খাবার হিসাবে জন্ম। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গেল দেশব্যাপী প্যাকেটজাত খাবারের দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ভারতীয় তরকারির স্বাদ। এই চারটি ভারতীয় স্বাদের তরকারি দ্রুত সংস্থার সমস্ত কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলে। যে সব ভারতীয় এই তরকারিগুলি খেয়েছেন তাঁরা বলেছেন এটির স্বাদে দেশীয় রান্নার মতোই মিল খুঁজে পেয়েছেন।
১০১৪
কর্মীদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া দেখে, সুজ়ুকি তার সংস্থার অভ্যন্তরীণ পণ্যটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পণ্যে রূপান্তরিত করে। টোরিজ়েনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ভারতীয় স্বাদকে প্যাকেটবন্দি করে ফেলে। যেগুলি ফুটন্ত জলে কয়েক মিনিট ফোটালেই কিংবা মাইক্রোঅয়েভে রান্না করে সরাসরি পরিবেশন করা যেতে পারে।
১১১৪
২০২৫ সালের জুলাই মাসে ‘ক্যাফেটেরিয়া ইন্ডিয়ান ভেজিটেরিয়ান কারি’ এই নামে একটি ব্র্যান্ডের আওতায় জাপানের বাজারে আত্মপ্রকাশ করে চারটি ভিন্ন স্বাদের খাবার। ১৮০ গ্রামের প্রতিটি প্যাকেটের দাম ৯১৮ ইয়েন (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ টাকা)। প্রতিটি প্যাকেজের নামেও রয়েছে বিশেষত্ব।
১২১৪
প্রতিটি প্যাকেটেই রয়েছে সুজ়ুকির প্রধান ব্যবসার গাড়ি ও বাইকের বৈগ্রহিক ছবি। এর মধ্যে রয়েছে জিমনি এসইউভি, সুইফ্ট হ্যাচব্যাক, হায়াবুসা সুপারবাইক এবং ভি-স্ট্রম বাইকের ছবি। ডাইকন মূলা সাম্বার, টম্যাটো মুসুর ডাল, বাদামি ছোলা মশলা এবং সবুজ মুগ ডালের তরকারি। এই চারটি স্বাদে প্রাথমিক ভাবে ভারতীয় তরকারির স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন জাপানের আমজনতা।
১৩১৪
বাদামি ছোলার মশলার প্যাকে রয়েছে জিমনির ছবি, টম্যাটো মুসুর ডালে সুইফ্টের ছবি দিয়ে সাজানো, হায়াবুসার ছবি দেওয়া প্যাকেটে থাকবে ডাইকন মুলো সম্বর স্বাদের তরকারিটি। আর সবুজ মুগের তরকারিতে ভি-স্ট্রম ১০৫০ ডিই ছবি দেওয়া হয়েছে। সুজ়ুকির অনলাইন স্টোরেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যগুলি। অর্থাৎ, বাড়িতে বসেই ভারতীয় খাবারের স্বাদ পেতে পারেন জাপানিরা।
১৪১৪
সংস্থার সূত্রে খবর, সুজ়ুকি শীঘ্রই আরও ১৪টি স্বাদের পণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে। অতি উৎসাহী খাদ্যরসিকদের মধ্যে এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ফ্রনক্সের ছবি দেওয়া বিরিয়ানি এবং সুইফ্ট স্পোর্ট সাম্বারের মতো স্বাদও নাকি সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বলে চর্চা শুরু হয়েছে জাপান জুড়ে।