তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহার এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজির এই রায়কে ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখার পক্ষে ছিলেন। পাশাপাশি এই বিষয়ে সরকারকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করার কথাও বলেন তাঁরা। তখন বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, আর এফ নরিমান এবং ললিত এই প্রথাকে ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে এই প্রথার বিপক্ষে রায় দেন।
বিচারপতি ললিতের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, ত্রিবাঙ্কুরের রাজপরিবারেরই কেরলের ঐতিহ্যবাহী পদ্মনাভস্বামী মন্দির পরিচালনার অধিকার রয়েছে। একদা দেশীয় রাজ্য ত্রিবাঙ্কুরের ভারতভুক্তির সময় থেকেই ওই মন্দির পরিচালনার ভার ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবার কর্তৃক নিযুক্ত এক আধিকারিকের হাতে ছিল। তবে ২০০৯ সালে পদ্মনাভস্বামী মন্দির পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট গড়ার নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক আইনজীবী।
সমগ্র পরিস্থিতি বিচার করে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের হাতে রাখার পক্ষে রায় দেন বিচারপতি ললিত। রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের প্রয়াত রাজা চিথিরা থিরুনাল বলরাম বর্মার মৃত্যুর পরে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের সেবায়েত হওয়ার অধিকারী তাঁর ভাই মার্তণ্ড বর্মা এবং তাঁর উত্তরাধিকারীরাই।
২০২১-এর জানুয়ারি মাসে বম্বে হাই কোর্টের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালা রায় দিয়েছিলেন, শিশুদের পোশাক খুলে বা জামাকাপড়ের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তাদের বুক বা গোপনাঙ্গ স্পর্শ না করা হলে ‘শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন’ (পকসো) আইনে তাকে যৌন নির্যাতন বলে ধরা হবে না। বোম্বে হাইকোর্টের এই রায় নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। বিচারপতি গানেদিওয়ালার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করা হয় শীর্ষ আদালতে।
এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠলে বিচারপতি ললিত, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট এবং বিচারপতি বেলা ত্রিবেদীর বেঞ্চ বম্বে হাই কোর্টের এই রায় খারিজ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট বম্বে হাই কোর্টের ওই রায়কে ‘অযৌক্তিক’ বলে জানায়, যৌন নিগ্রহের অপরাধের ক্ষেত্রে সরাসরি ত্বকের স্পর্শ জরুরি নয়, যৌন অভিপ্রায় আছে কি না, তা বেশি জরুরি। তিন বিচারপতির বেঞ্চ বম্বে হাই কোর্টের ওই রায়কে ‘সঙ্কীর্ণ পর্যবেক্ষণ’ বলেও উল্লেখ করে।
রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলার জন্য সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি ললিত। এই বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তবে ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি অর্থাৎ যে দিন এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি হওয়ার কথা ছিল, সে দিন শুনানির শুরুতেই নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নেন ললিত।
শুনানির শুরুতেই মসজিদ পক্ষের আইনজীবী রাজীব ধওয়ন বিচারপতি ললিতের বেঞ্চের সদস্য থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আইনজীবী ধওয়ন দাবি করেন, ১৯৯৭ সালে বিচারপতি ললিত নিজেও বিতর্কিত বাবরি মসজিদ মামলার আইনজীবী ছিলেন। সে সময় তিনি এক পক্ষের হয়ে মামলাও লড়েছিলেন। তাই বিচারপতি ললিতের বেঞ্চে থাকা উচিত হবে না, বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর সঙ্গে সহমত হন অন্যান্য বিচারপতিরাও। এর পরই এই সাংবিধানিক বেঞ্চ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বিচারপতি ললিত। ওই একই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি রমণাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy