The IMF has rejected Pakistan's plea to cut the GST on condoms and other contraceptives dgtl
No cheaper condom in Pakistan
সস্তা হোক কন্ডোম, জনসংখ্যা লাগামে আর্জি শাহবাজের! আসন্ন ক্ষতি আন্দাজ করে ‘আবদার’ খারিজ করল আইএমএফ
ইসলামাবাদের সঙ্গে একাধিক বার ইমেল ও ভার্চুয়াল বৈঠকের পরেও মন গলেনি ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) কর্তাদের। পাকিস্তানের করছাড়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন আইএমএফ কর্তারা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়ল পাকিস্তানের। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার বা আইএমএফের (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) কাছে জিএসটি কমানোর ‘দরবার’ করতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হল শাহবাজ় শরিফ সরকারকে। দেশে জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে কন্ডোম ও গর্ভনিরোধক পণ্যের উপর থেকে ১৮ শতাংশ জিএসটি বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছিল পাকিস্তান।
০২১৭
সূত্রের খবর, ইসলামাবাদের সঙ্গে একাধিক বার ইমেল ও ভার্চুয়াল বৈঠকের পরেও মন গলেনি আইএমএফ কর্তাদের। ওয়াশিংটনে আইএমএফ সদর দফতরে পাকিস্তানের করছাড়ের প্রস্তাব পেতেই পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেয় আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার। শাহবাজ় সরকারের জিএসটি কমানোর অনুরোধ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ওই আন্তর্জাতিক সংস্থা। আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, এই ধরনের ছাড় করপ্রয়োগকে জটিল করে তুলতে পারে। চোরাচালানকে উৎসাহিত করতে পারে।
০৩১৭
আইএমএফ-এর কার্যনির্বাহী বোর্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) মাঝপথে এই ধরনের কর বাতিলের অনুমোদন দেওয়া হবে না ইসলামাবাদকে। ২০২৬-’২৭ অর্থবর্ষের বাজেট তৈরির সময় পাকিস্তানের আর্জি খতিয়ে দেখার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসলামাবাদকে সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় করতে সঠিক নীতি বজায় রাখতে হবে।
০৪১৭
আইএমএফ-এর অনুমতি না পাওয়ার ফলে পাকিস্তানে চড়া দামে বিকোবে গর্ভনিরোধক পণ্য ও কন্ডোম। আইএমএফ পাকিস্তানের ফেডারেল বোর্ড অফ রেভিনিউয়ের করছাড়ের সাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ফলে পূর্ববর্তী ১৮ শতাংশ করই আপাতত বহাল থাকল জন্মনিয়ন্ত্রণ ও গর্ভনিরোধক পণ্যে।
০৫১৭
যদিও জিএসটি কমানোর প্রস্তাবে পাকিস্তান সরকারের আখেরে ক্ষতিই হত বলে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এই ধরনের পণ্যে আরোপিত ১৮ শতাংশ জিএসটি বাতিল হলে সরকারি রাজকোষ ৪ থেকে ৬ কোটি পাকিস্তানি মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে। সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং শিশুদের ডায়পারের উপর জিএসটি কমানোর প্রস্তাবও আইএমএফ প্রত্যাখ্যান করেছে।
০৬১৭
আইএমএফের দাবি, আপাতত রাজস্ব কমানোর পথে হাঁটার দরকার নেই শাহবাজ় শরিফ সরকারের। কারণ ইতিমধ্যেই দেশটিকে আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট লড়াই করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় রাজস্ব কমালে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে খাদের কিনারায় থাকা দেশটি। পুরনো পরিসংখ্যান বলছে পাকিস্তানের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধির হার স্বাস্থ্য বা শিক্ষাখাতের প্রয়োজনীয়তা পূরণের পক্ষে পর্যাপ্ত নয়।
০৭১৭
এই অবস্থায় কোমর ভেঙে যাওয়া পাকিস্তানের আর্থিক মেরুদণ্ড মজুবত করতে ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশীর উপর কৃপাদৃষ্টি দিয়েছে আইএমএফ। ‘ডলার-বৃষ্টি’ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড)। ফলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সে দেশের অর্থনীতি। একের পর এক আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে ‘মৃতসঞ্জীবনী’ জোগান দিয়ে চলেছে আইএমএফ।
০৮১৭
গত ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের কার্যনির্বাহী বোর্ড। ভারতীয় মুদ্রায় সেটা প্রায় ১০ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় ওই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বলা হয়েছে, অনিশ্চিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদকে সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় করতে সঠিক নীতি বজায় রাখতে হবে।
০৯১৭
আন্তর্জাতিক মুদ্রাভান্ডার থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ২০ বার ঋণ নিয়েছে। মোট ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে পঞ্চম বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা দেশটির। বার বারই শাহবাজ় সরকারের উপর উপুড়হস্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার। যদিও ইসলামাবাদকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আইএমএফের নীতির প্রবল বিরোধিতা করেছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু, সাউথ ব্লকের যাবতীয় প্রচেষ্টা যে জলে গিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
১০১৭
পহেলগাঁও-কাণ্ডের পর পাকিস্তানকে অর্থসাহায্য দেওয়া থেকে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারকে (আইএমএফ) বিরত করতে পারেনি নয়াদিল্লি। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার থেকে উন্নয়নের নাম করে ঋণ নিয়ে সেই অর্থ সন্ত্রাসবাদে মদত দিতে খরচ করছে পাকিস্তান— এই মর্মে রাষ্ট্রপুঞ্জেও নালিশ ঠুকেছে ভারত। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে পাকিস্তানের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটির ঋণ মঞ্জুর করেছিল আইএমএফ, এমনটাই দাবি ভারতের।
১১১৭
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের থেকে ঋণ নিলে গ্রহীতা দেশকে কিছু শর্তে বেঁধে ফেলে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ)-এর ঋণ পাওয়া অব্যাহত রাখতে ১৮ মাসে ৬৪টি শর্ত মানতে হবে পাকিস্তানকে। পরবর্তী কিস্তির ঋণ পেতে আরও ১১টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে পাকিস্তানের উপর। মোট ৬৪টি শর্ত মানলে তবেই পরবর্তী কিস্তির ঋণ পাবে পাকিস্তান।
১২১৭
নতুন ১১টি শর্তের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ। ১০টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকে দুর্নীতি রুখতে কী পদক্ষেপ করা সম্ভব, তা সময়ে সময়ে আইএমএফের বোর্ডকে জানাতে হবে ইসলামাবাদকে। সেই রিপোর্ট দেখে পরবর্তী ঋণের কিস্তিতে সবুজ সঙ্কেত দেবে আইএমএফ। ‘এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফেসিলিটি’ (ইএফএফ) এবং ‘রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেনেবিলিটি ফেসিলিটি’ (আরএসএফ) এই দুই প্রকল্পের আওতায় ৩৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ হয়েছে পাকিস্তানের জন্য।
১৩১৭
জনবিস্ফোরণের ধাক্কায় ইতিমধ্যেই বেসামাল ভারতের পড়শি দেশ। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বর্তমানে বার্ষিক ২.৫৫ শতাংশ। জন্মহারের নিরিখে আফগানিস্তানের পরেই পাকিস্তান। পাকিস্তানের জনসংখ্যা এখন ২৫ কোটির বেশি। এক জন মা গড়ে তিনটিরও বেশি সন্তানের জন্ম (৩.৬) দিচ্ছেন পাকিস্তানে। উপজাতিদের মধ্যে সেই হারটা আরও বেশি।
১৪১৭
প্রতি বছর প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ বাড়ছে পাকভূমে। জনসংখ্যা এই ভাবে বাড়লে পাকিস্তানের অর্থনীতির স্বাস্থ্য কী ভাবে ফেরানো যাবে, তা নিয়ে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞেরা। জনগণনা বলছে, পাকিস্তানে ৬ কোটিরও বেশি মানুষ রয়েছেন দারিদ্রসীমার নীচে। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শাহবাজ শরিফের।
১৫১৭
আইএমএফের নিষেধাজ্ঞার কারণে পাকিস্তান সরকার জন্মনিয়ন্ত্রণ সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আইএমএফ-এর কঠোর শর্ত ও ঋণ নীতির কারণে পাকিস্তানের সামাজিক সংস্কার পদে পদে হোঁচট খেতে পারে বলে মনে করছেন সমাজবিদদের একাংশ। জন্মনিয়ন্ত্রক পণ্য ও কন্ডোমের দাম বেশি হলে পাকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা সফল হবে না। সীমিত সম্পদ নিয়ে লড়াই করা দেশটিতে জনসেবা, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা অনেকেরই।
১৬১৭
আইএমএফের ‘বেলআউট’-এর শর্ত পূরণ করতে এবং রাষ্ট্রের আর্থিক বোঝা কমাতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান তার জাতীয় বিমান সংস্থা, পিআইএ-র বেসরকারিকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পিআইএ-কে নিলামে চড়ানোর জন্য দরপত্র ডাকা হবে ২৩ ডিসেম্বর। প্রাথমিক প্রস্তাবে ৭৫ শতাংশ মালিকানা বেসরকারিকরণের উপর জোর দিয়েছিল সরকার।
১৭১৭
পাকিস্তানের একাধিক সংবাদসংস্থার দাবি, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের নতুন অর্থনৈতিক প্যাকেজ পাওয়া সুনিশ্চিত করতে লোকসানে চলা পিআইএ-র ৫১ থেকে ১০০ শতাংশই বিক্রি করে দিতে পারে ইসলামাবাদ। বিমানসংস্থা কেনার বিষয়ে যে সংস্থাগুলি আগ্রহ দেখিয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে চারটি সংস্থা। এই চারটি সংস্থার মধ্যে রয়েছে পাক সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ‘ফৌজি ফাউন্ডেশন’। অর্থাৎ, ঘুরপথে বিমান সংস্থার নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে সেনার হাতেই।