কফিনে থাকা কিশোরী কোথা থেকে এসেছিল তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। কোনও কোনও গবেষক মনে করেন, সে আদতে জার্মানির বাসিন্দা। কেউ কেউ তার আদি বাড়ি হিসাবে ডেনমার্ককেই চিহ্নিত করেছেন। আবার গবেষকদের একাংশ ব্রোঞ্জ যুগের এক্টভে গ্রামে পাওয়া মেয়েটির বাড়ি হিসাবে স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন। যেহেতু তার কফিন এক্টভে গ্রামে পাওয়া গিয়েছে, তাই তাকে ‘এগ্টভে গার্ল’ নামে ডাকতে শুরু করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
সমাধিস্থ করার সময় কিশোরীকে একটি ষাঁড়ের চামড়ার উপর শুইয়ে একটি রুক্ষ পশমের কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। তার মৃতদেহ যেখানে শোয়ানো ছিল, তার ছাপ কফিনে এখনও দৃশ্যমান। তার পোশাক ছিল, মোটা সুতো দিয়ে তৈরি খাটো স্কার্ট। ঊর্ধ্বাংশে মধ্যম আকৃতির হাতাযুক্ত টপ। কোমরের চারপাশে সর্পিল নকশা দিয়ে সজ্জিত একটি বড়, কাঁটাযুক্ত ব্রোঞ্জের চাকতি পরানো ছিল।
কিশোরীর পোশাক বিংশ শতাব্দীতেও আলোড়ন ফেলেছিল। তার উচ্চতা ছিল প্রায় ১.৬ মিটার। চুল ছিল ছোট, সোনালি রঙের। পোশাক-পরিচ্ছদ ও তার সরঞ্জামগুলি ইঙ্গিত দেয় বেশ অভিজাত পরিবারের কন্যা ছিল সে। নিজের পরিচর্যায় সে বেশ সচেতন ছিল। কিন্তু যা তাকে সবচেয়ে আলাদা করে তোলে, তা হল তার পোশাক, যা সে যুগের হিসাবে ব্যতিক্রমই বলা চলে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, কফিনটি যেখানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল সেখানকার মাটির গঠন একটি ‘মাইক্রোক্লাইমেট’ হিসাবে কাজ করেছে। সেই কারণে কিছু জিনিসপত্র সংরক্ষিত ছিল। আবার কিছু জিনিসপত্র ধ্বংস করেছে কফিনের ভিতরের পরিবেশ। বৃষ্টির জল ফাঁপা ওক কাঠের কাণ্ডের কফিনে ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু অক্সিজেনের অভাব ছিল সেখানে। এই অবস্থার ফলে ওই কিশোরী ও শিশুর হাড়গুলি সম্পূর্ণ ক্ষয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত নখ, চুল, মাথার ত্বক, মস্তিষ্কের একটি ছোট অংশ এবং পোশাক।
ডেনমার্ক জাদুঘরের এক আধিকারিক কারিন মার্গারিটা ফ্রাইয়ের নেতৃত্বে একটি দল তেজস্ক্রিয় উপাদান স্ট্রন্টিয়ামের মাত্রার জন্য মেয়েটির দাঁত বিশ্লেষণ করেন। স্ট্রন্টিয়াম হল ভূত্বকে পাওয়া একটি পদার্থ। জল এবং খাদ্যের মাধ্যমে এটিকে শোষণ করে প্রাণীজগৎ এবং উদ্ভিদকুল। দাঁত, হাড় এবং চুলে শোষিত হয় এই স্ট্রন্টিয়াম। স্ট্রন্টিয়ামের প্রাকৃতিক মাত্রা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়।
গবেষকরা মেয়েটির একটি দাঁতে যে পরিমাণ স্ট্রন্টিয়াম খুঁজে পেয়েছেন, তাতে তাঁরা মনে করছেন, সমাধিস্থল থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’ এলাকায় বেড়ে উঠেছিল সে। জীবনের শেষ কয়েক বছর ধরে সেখান থেকে জুটল্যান্ডের মধ্যে জাহাজে করে ঘন ঘন ভ্রমণ করেছিল বলেও মনে করছেন গবেষকদের একাংশ।
ফ্রাইয়ের গবেষণাপত্রটি ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার কয়েক বছর পর আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিক থমসেন এবং রাসমাস আন্দ্রেসেন দাবি তোলেন, পূর্ববর্তী গবেষণায় সম্ভবত দূষিত স্ট্রন্টিয়াম আইসোটোপ নমুনা ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্রোঞ্জ যুগের নমুনাগুলি কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে দূষিত হয়েছিল। তা ফলাফলকে বিকৃত করে তুলেছিল বলে মনে করেন এই দুই অধ্যাপক।
গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সোফি বার্গারব্র্যান্ট জন্মস্থানের আরও একটি সম্ভাব্য বিকল্পের ইঙ্গিত করেছেন। গবেষণায় তিনি দাবি তুলেছিলেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়া বা জার্মানি থেকে নয়, সম্ভবত সুইডেনের দক্ষিণ-পূর্বে বোর্নহোম দ্বীপ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম নরওয়ের রোগাল্যান্ড থেকে এসেছিল এই ‘এক্টভে গার্ল’। ড্যানিশ দ্বীপ বোর্নহোমকেও তার জন্মের স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে গবেষণাদলের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানিই সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য স্থান।
সম্ভবত দুই অঞ্চলের দু’টি পরিবারের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করার জন্য মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডেনমার্কের কোনও পরিবারে। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণে আমরা অনেক সরাসরি সংযোগ খুঁজে পেয়েছি। আমার অনুমান, ‘এক্টভে গার্ল’ ছিল দক্ষিণ জার্মানির মেয়ে। তাকে ডেনমার্কের জুটল্যান্ডের কোনও পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে কোনও দু’টি শক্তিশালী পরিবারের মধ্যে একটি জোট তৈরি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy