Titanic builder company declared bankrupt after 163 years of massacres dgtl
Titanic History
টাইটানিক বিপর্যয়ের ১৬৩ বছর পার, নিজেদের দেউলিয়া বলে জানাল অভিশপ্ত জাহাজ নির্মাণ সংস্থা
অভিশপ্ত টাইটানিক নির্মাণকারী ব্রিটিশ সংস্থা হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ দেউলিয়া ঘোষণা করায় শোরগোল। এ বার ওই সংস্থায় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
মাত্র এক বছর আগের ঘটনা। আটলান্টিকের গভীরে অভিশপ্ত টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায় ডুবোযান টাইটান। প্রাণ হারান এর ভিতরে থাকা পাঁচ জন যাত্রী। সেই স্মৃতি মুছে যেতে না যেতেই এ বার ‘ডুবল’ টাইটানিক নির্মাণকারী জাহাজ সংস্থা।
০২২১
চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্রিটিশ জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ। আটলান্টিকের বুকে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ১৬৩ বছর পর এতে লালবাতি জ্বলায় আমজনতা থেকে শুরু করে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
০৩২১
এই বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফের অন্তর্বর্তিকালীন এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর রাসেল ডাউন্স। তিনি জানিয়েছেন, “সংস্থার নিত্যদিনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে নেই। এই অবস্থায় দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও বিকল্প খোলা ছিল না।”
০৪২১
সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের দাবি, আগামী দিনে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। ফলে আপাতত হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফের বিক্রি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে সংস্থার পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে সরকার। কোনও সংস্থা বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে গেলে এবং তা পরিশোধ করতে না পারলে এই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চালু করার নিয়ম রয়েছে।
০৫২১
রাসেল ডাউন্সের দাবি, সংস্থার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সরকারের কাছে ২৬ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার তা দিতে অস্বীকার করে। ফলে আর্থিক সঙ্কট সামলানো যায়নি।
০৬২১
“আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা কোনও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাচ্ছি না। ফলে আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” দেউলিয়া ঘোষণার পর একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে এই ব্রিটিশ জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা।
০৭২১
১৮৬১ সালে শুরু হয় হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফের পথচলা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলে এডোয়ার্ড জেমস হারল্যান্ড ও গুস্তাফ উইলহেল্ম উল্ফ। দ্বিতীয় জন ছিলেন জার্মানির হামবুর্গের বাসিন্দা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ব্রিটেনে চলে আসেন তিনি।
০৮২১
প্রথম জীবনে ইংল্যান্ডের কুইন্স আইল্যান্ডে একটি ছোট জাহাজ কারখানায় জেনারেল ম্যানেজারের চাকরি করতেন হারল্যান্ড। তাঁর মালিকের নাম ছিল রবার্ট হিকসন। পরবর্তী কালে তাঁর কারখানা কিনে নেন হারল্যান্ড। সালটা ছিল ১৮৫৮।
০৯২১
মালিকের সংস্থা কিনে নিয়ে সেখানেই বড় জাহাজ নির্মাণ শুরু করেন হারল্যান্ড। সহকারী হিসাবে সঙ্গে নেন উল্ফকে। তিনি আবার ছিলেন সম্পর্কে হামবুর্গের ধনকুবের গুস্তাভ সোয়াবের ভাগ্নে। যিনি বিবলি লাইন নামের জাহাজ কোম্পানিতে লগ্নি করেছিলেন।
১০২১
ফলে মামার সাহায্যে বিবলি লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে উল্ফের খুব একটা সমস্যা হয়নি। এর পর ওই সংস্থার প্রথম তিনটি জাহাজ তৈরির বরাত পান হারল্যান্ডরা। ফলে ঘুরে যায় দুই বন্ধুর ভাগ্যের চাকা।
১১২১
১৯০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হারল্যান্ড ও উল্ফ হোয়াইট স্টার লাইন সংস্থার থেকে বিলাসবহুল প্রমোদতরী আরএমএস টাইটানিক তৈরির বরাত পেয়েছিলেন। সে যুগে জাহাজটি তৈরি করতে ভারতীয় মুদ্রায় খরচ হয়েছিল ১৬ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকারও বেশি।
১২২১
টাইটানিক নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর সংস্থার তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, স্বয়ং ঈশ্বরও এই জাহাজটিকে ডোবাতে পারবে না। ভাগ্যদেবী তখনই হয়তো অলক্ষে হেসেছিলেন। ১৯১২ সালের ২ এপ্রিল শেষ হয় জাহাজটির নির্মাণকাজ। ইংল্যান্ডের বেলফাস্টে তৈরি হয়েছিল টাইটানিক।
১৩২১
১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল লিভারপুল থেকে যাত্রা শুরু করে এই বিলাসবহুল প্রমোদতরী। নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীর মুখে সাউদাম্পটন পর্যন্ত এর যাওয়ার কথা ছিল। জাহাজটি লম্বায় ৮৮২ ফুট ও চওড়ায় ছিল ৯২ ফুট। সুবিশাল এই প্রমোদতরীতে যাত্রীরা যাতে পথ হারিয়ে না ফেলেন তার জন্য টিকিটের সঙ্গে একটি ম্যাপও দেওয়া হয়েছিল।
১৪২১
টাইটানিকের ক্যাপ্টেন ছিলেন অভিজ্ঞ নাবিক এডওয়ার্ড জন স্মিথ। কিন্তু জাহাজ নিয়ে নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছতে পারেননি তিনি। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল আটলান্টিকের একটি হিমশৈলে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় টাইটানিক।
১৫২১
এই দুর্ঘটনায় জাহাজের কর্মী ও যাত্রী মিলিয়ে ২ হাজার ২২৪ জনের মধ্যে ১ হাজার ৪৯৬ জনের মৃত্যু হয়। প্রাণ হারান জাহাজের ক্যাপ্টেনও। টাইটানিকে পর্যাপ্ত লাইফবোট ছিল না। জাহাজটিতে মাত্র ২০টি লাইফবোট থাকায় অনেককেই বাঁচানো যায়নি।
১৬২১
এ হেন টাইটানিক নির্মাণকারী জাহাজ সংস্থা বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারকে তিনটি যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে সাহায্য করছে। সংস্থা দেউলিয়া হয়ে গেলেও ওই প্রকল্পে কোনও সমস্যা হবে না বলে সংস্থার তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে।
১৭২১
তবে হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ এ বারই প্রথম আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ল এমনটা নয়। ২০১৯ সালেও সংস্থায় লালবাতি জ্বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় প্রশাসক নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার।
১৮২১
কিন্তু প্রশাসক নিয়োগের এক মাসের মাথায় হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফকে কিনে নেয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাটা। তার পর কিছুটা হালে পানি পেয়েছিল এই জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা।
১৯২১
গত দু’দশকে একটি মাত্র জাহাজ তৈরি করেছে হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফ। গত বছর যা জলে নামে বলে জানা গিয়েছে।
২০২১
টাইটানিক ডুবে গেলেও একাধিক বড় জাহাজ তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফের নাম। সেই তালিকায় রয়েছে, আরএমএস অলিম্পিক এবং এইচএমএইচএস ব্রিটানিক। ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির জন্য এইচএমএস বেলফাস্টও তৈরি করেছিল এই সংস্থা।
২১২১
যদিও গত ২০ বছর ধরে জাহাজ সংস্থাগুলি হারল্যান্ড অ্যান্ড উল্ফের থেকে একরকম মুখ ফিরিয়েই রেখেছে। ফলে সংস্থায় দেখা গিয়েছে আর্থিক সঙ্কট। সেখান থেকে বেরোতে মোটা টাকা ঋণ নিয়েছেন তাঁরা। যা সংস্থার দেউলিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।