কল্পনা করুন বিয়েবাড়ির সমস্ত আনন্দ-উচ্ছ্বাস চেটেপুটে উপভোগ করছেন কিন্তু সেখানে নেই কোনও বর-কনে! দামি শাড়ি, ডিজ়াইনার লেহঙ্গা, ধোপদুরস্ত পোশাক-আশাকে সজ্জিত হয়ে এমন একটি বিয়ের আসরে উপস্থিত হলেন যেখানে বিয়ের আনন্দ অনুষ্ঠানের সমস্ত রসদ রয়েছে। অথচ সেখানে হচ্ছে না কোনও বিয়ে! পাত্রী-পাত্রী, তাঁদের পরিবার অনুপস্থিত। নেই কোনও নাটকীয়তা। আছে শুধু নিখাদ আনন্দ উদ্যাপন।
বিয়েই নেই, তাই নেই কোনও চাপ। আছে শুধু এক দিনের হইহুল্লোড়। নাচ-গান-খাওয়াদাওয়া। সেই পার্টির থিম হল বিয়ের সঙ্গীত। এক দিনের আয়ু সেই পার্টির। বর-কনে ছাড়া আর সমস্ত কিছুরই বন্দোবস্ত করা হয় পার্টিগুলিতে। সাত পাকে ঘোরার বালাই নেই, নেই ‘কড়া নজরে রাখা’ আত্মীয়স্বজনের ভিড়, বিয়ের পর আবেগপূর্ণ বিদায়ের মুহূর্তও অনুপস্থিত।
নাচ-গান, পানভোজন এবং সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার মতো ছবি তোলার সুযোগ পাওয়া যায় বিয়ের থিম পার্টিতে। দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর মতো বড় শহরগুলিতে ভুয়ো বিয়ের পার্টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সব পার্টিতে অতিথি হিসাবে সাধারণত তরুণ-তরুণীদেরই দেখা যায়। অতিথি, পরিবারের কোনও চাপ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করে বিয়ের আনন্দ এবং মজা উপভোগ করতে এখানে উপস্থিত হন তাঁরা।
তেমনই একটি বিয়ের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে কর্মরত প্রযুক্তিবিদ শ্রীকুমার। আদতে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা মিলে বেঙ্গালুরুতে একটি নকল সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ২৫ বছরের তরুণ।
তিনি জানিয়েছেন, একটি বিলাসবহুল ক্লাবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথিরা সকলেই ভারতীয় পোশাকে সেজে হাজির হয়েছিলেন। মেয়েদের পরনে ছিল জমকালো লেহঙ্গা বা শাড়ি। পুরুষেরা কুর্তা, পাজামা, জ্যাকেট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সকলেই ঢোলের তালে নাচছিলেন, মেহেন্দির স্টলে ভিড় জমিয়েছিলেন। বিভিন্ন খাবারের স্টলে থাকা চাট থেকে শুরু করে ভোজের সমস্ত পদ ছিল বৈচিত্রপূর্ণ।
শ্রীকুমারের মতো বহু জেন জ়ি-র এই ধরনের পার্টিকে আপন করে নেওয়ার অন্যতম কারণ হল বিয়ের অনুষ্ঠানের আনন্দকে নিজের মতো করে উপভোগ করা। পোশাকের বিষয়ে পছন্দ-অপছন্দ থেকে শুরু করে আচার-আচরণ— পারিবারিক বিয়েতে অনেক রকম বিধিনিষেধ থাকে। কিন্তু এই ধরনের থিমের বিয়ের পার্টিতে নাক উঁচু আত্মীয়-পরিজনের অবাঞ্ছিত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না।
জেন জ়িদের একাংশের মতে, ভুয়ো বিয়ের পার্টিতে থাকেন শুধুমাত্র বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত মানুষেরা। তাঁদের সামনে ভান করার প্রয়োজন হয় না। থাকে না কোনও বাধ্যবাধকতা। আসল বিয়ের অনুষ্ঠানে বহু রীতিনীতি মানতে বাধ্য করা হয়। আত্মীয়দের নানা অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে চান।
নকল বিয়ের থিমের অনুষ্ঠান আয়োজনকারী একটি রেস্তরাঁর মালিক শরদ মদন বিবিসিকে জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও আয়োজন করতে তাঁদের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। টিকিট বিক্রির মাধ্যমে এর দ্বিগুণ আয় হওয়ার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে বিলাসবহুল হোটেলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। কারণ ১ হাজার বা ২ হাজার অতিথির জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে টিকিটের বুকিং দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল।
জাঁকজমকের কথা যদি বলা হয়, সে ক্ষেত্রে কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই ভারতীয় বিয়েগুলি। আর আসল বিয়ের খরচ হামেশাই পৌঁছে যায় কোটির ঘরে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলির মতে, প্রতিটি মাঝারি আকারের নকল বিয়ের আয়োজন করতে প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতে ২০২৫ সালে নকল বিয়ের থিম পার্টির বেশির ভাগটাই দেখা গিয়েছে মেট্রো শহরগুলিতে, মূলত উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy