What is Caste Census and the history behind it dgtl
Caste Census
জাতগণনা কী? কেন করা হয়? কী ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ওবিসিরা? কোন দল পক্ষে, বিরুদ্ধেই বা কারা?
কী এই জাতগণনা? তার আগে জেনে নেওয়া দরকার জনশুমারি বা জনগণনা কী। জনগণনা হল ১০ বছর অন্তর জনসংখ্যা-ভিত্তিক সমীক্ষা। ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৫ বার জনগণনা হয়েছে ভারতে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৫ ১০:৪৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
জনগণনার পাশাপাশি হবে জাতগণনাও। বুধবার তেমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক কমিটি। তবে জাতগণনা সংক্রান্ত তথ্য আলাদা করে প্রকাশ করা হবে না। আগামী জনগণনার সঙ্গেই এই সংক্রান্ত তথ্য সংযোজিত হবে।
০২২১
বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, এ বার জনগণনার সঙ্গে হবে জাতগণনাও (কাস্ট সেনসাস)। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর রাজনৈতিক কমিটির বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় রেল এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ওই ঘোষণা করেন।
০৩২১
কিন্তু কী এই জাতগণনা? তার আগে জেনে নেওয়া দরকার জনশুমারি বা জনগণনা কী। জনগণনা হল ১০ বছর অন্তর জনসংখ্যা-ভিত্তিক সমীক্ষা। ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৫ বার জনগণনা হয়েছে ভারতে।
০৪২১
ভারতে প্রথম সম্পূর্ণ জনশুমারি হয়েছিল ১৮৭২ সালে। ভাইসরয় লর্ড মায়োর অধীনে জনগণনা শুরু হয়। ঠিক হয়েছিল ১০ বছর অন্তর এই সমীক্ষা চালানো হবে জনসংখ্যা নির্ধারণ করতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং জনশুমারি কমিশনার কর্তৃক জনগণনা শুরু হয়।
০৫২১
১৯৫১ সালের পর থেকে সমস্ত জনগণনা ১৯৪৮ সালের ভারত জনশুমারি আইনের অধীনে হয়েছে। কিন্তু গত ১৪ বছর ধরে জনগণনা হয়নি দেশে। ২০১১ সালে শেষ বার ভারতে জনগণনা হয়েছিল।
০৬২১
নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পরে ২০২১ সালে আবার জনশুমারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী জনগণনা কবে হবে তার সঠিক দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি।
০৭২১
বর্ণগণনার অর্থ জনশুমারির সময় বর্ণভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য বর্ণের বণ্টন, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষাগত অবস্থা এবং অন্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির বিশদ বিবরণ প্রদান করবে।
০৮২১
অন্য দিকে, জাতগণনা হল সাধারণ জনগণনার সময় জাতভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করা এবং তালিকাভুক্ত করা। ১৮৮১ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনামলে জাতগণনা নিয়মিত ভাবে জনগণনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম জনশুমারির সময় তৎকালীন সরকার ওই প্রথা বন্ধ করে দেয়।
০৯২১
ভারত স্বাধীনতা পাওয়ার পর, সরকার সামাজিক এবং শিক্ষাগত মানদণ্ডের ভিত্তিতে নাগরিকদের চারটি বৃহৎ গোষ্ঠীতে শ্রেণিবদ্ধ করে— তফসিলি উপজাতি (এসটি), তফসিলি জাতি (এসসি), অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) এবং সাধারণ (জেনারেল)।
১০২১
১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম জনশুমারির সময় সংগৃহীত তথ্যে হিন্দু এবং মুসলিমদের মতো ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের ছাড়াও তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ব্যক্তিদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তফসিলি জাতি ও উপজাতি ব্যতীত অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যদের গণনা আলাদা ভাবে করা হয়নি।
১১২১
অর্থাৎ, সাধারণ জনগণনায় তফসিলি জাতি, উপজাতি অংশের মানুষের সংখ্যা, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক ও জীবনধারণের মান কেমন, এ বিষয়ে সার্বিক একটা ‘ছবি’ পাওয়া যায়। কিন্তু ওবিসির বিষয়টি সাধারণ জনগণনায় থাকে না। সে কারণে গত কয়েক বছর ধরে জাতগণনার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল।
১২২১
তবে ১৯৬১ সালের আগেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে জনগণনা সংক্রান্ত তাদের নিজস্ব সমীক্ষা পরিচালনা করার এবং ইচ্ছা করলে রাজ্যভিত্তিক অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকা সঙ্কলনের অনুমতি দিয়েছিল।
১৩২১
আসন্ন জনগণনার পাশাপাশি জাতগণনা করার মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের আগেই তিনটি রাজ্য— বিহার, তেলঙ্গানা এবং কর্নাটক রাজ্যভিত্তিক জাতগণনা পরিচালনা করেছে।
১৪২১
সেই সমীক্ষা চালানোর পর ২০২৩ সালে সেই তথ্য প্রকাশ করে বিহার সরকার। তখন জেডিইউ-আরজেডি-কংগ্রেসের জোট সরকারের প্রধান ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তেলঙ্গানা এবং কর্নাটক— উভয়ই কংগ্রেসশাসিত রাজ্য।
১৫২১
তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকার গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক এবং জাতভিত্তিক সমীক্ষা প্রকাশ করে। কর্নাটকে প্রথম জাতভিত্তিক সমীক্ষা হয় ২০১৫ সালে। তখনও সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্দারামাইয়া।
১৬২১
তবে জাতগণনার কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। দীর্ঘ দিন ধরে, বিজেপিকে জাতগণনার বিরোধী হিসাবেই দেখা হত। অতীতে জাতগণনার সম্ভাবনা খারিজ করতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। তবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জাতগণনার নামে সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে বিভিন্ন দলের।
১৭২১
২০২৩ সালে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে জাতগণনার দাবি তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। গত বছর লোকসভা ভোটের প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরেই আমরা প্রথম যে কাজটি করব তা হল, দেশের ওবিসিদের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য একটি জাতভিত্তিক গণনা করা। কারণ, তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানেন না।’’
১৮২১
রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি তেজস্বী যাদব, এমকে স্ট্যালিন, অখিলেশ যাদবের মতো নেতারাও জাতগণনার দাবি তুলে এসেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই জাতগণনার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল। তাতেই এ বার সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্র।
১৯২১
জাতগণনায় সম্মত হলেও এই নিয়ে অতীতের কংগ্রেস জমানাকে বিঁধতে ছাড়েনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের দাবি, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন সব সময় জাতিগণনায় আপত্তি জানিয়ে এসেছে।
২০২১
অশ্বিনী বলেন, “প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ২০১০ সালে জানিয়েছিলেন, জাতগণনার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় বিবেচিত হওয়া উচিত। সেইমতো এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য কয়েক জন মন্ত্রীকে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করা হয়। তখন বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই জাতগণনার পক্ষে ছিল। তার পরেও তৎকালীন কংগ্রেস সরকার জাতগণনার বদলে শুধুমাত্র একটি জাতিসমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।” অশ্বিনীর অভিযোগ, কংগ্রেস এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্য দলগুলি জাতগণনাকে সব সময় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে এসেছে।
২১২১
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী আরও বলেন, ‘‘কিছু রাজ্য জাতিগত তথ্য সংগ্রহের জন্য সমীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এক একটি রাজ্যে এক এক ভাবে সমীক্ষা হয়েছে। কোনও অভিন্ন প্রক্রিয়া মানা হয়নি।’’ অশ্বিনীর দাবি, কিছু রাজ্য এই সমীক্ষা ভাল ভাবে করলেও বাকি রাজ্যগুলির সমীক্ষায় ‘অস্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি’ রয়ে গিয়েছে। এর ফলে সমীক্ষাগুলি ঘিরে সমাজে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রাজনীতির কারণে যাতে সমাজের শৃঙ্খলায় কোনও প্রভাব না পড়ে, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।