Why US President Donald Trump orders Pentagon to plan military action in Nigeria dgtl
Donald Trump on Nigeria
‘ধর্মযুদ্ধে’ ট্রাম্প! ‘আফ্রিকার দানব’কে শায়েস্তা করতে হামলার হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্টের, তৈরি থাকতে বললেন পেন্টাগনকে
প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি নাগরিকের দেশ নাইজিরিয়া। বিশাল জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির কারণে ‘আফ্রিকার দানব’ নামে পরিচিত এই দেশ। নাইজিরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সমান ভাবে খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যে বিভক্ত।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখরাঙানির মুখে এ বার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ। নাইজিরিয়ায় ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার বার্তা দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তিনি আমেরিকার যুদ্ধ দফতরের মূল কার্যালয় পেন্টাগনকে নাইজিরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও ট্রাম্প জানিয়েছেন।
০২২০
এই নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে। আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজিরিয়াকে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী’ দেশ হিসাবে চিহ্নিত করে মার্কিন সেনেটর টেড ক্রুজ় দাবি করেন, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ‘গণহত্যা’ করা হচ্ছে সেখানে।
০৩২০
এর পর গত শুক্রবার একই দাবি করেন ট্রাম্প। ওই দিন সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, নাইজিরিয়ায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে সে দেশের ইসলামপন্থী জঙ্গিরা। গণহত্যা করা হচ্ছে। আর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির সরকার।
০৪২০
সমাজমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘নাইজিরিয়ায় খ্রিস্ট ধর্ম অস্তিত্বগত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মের মানুষদের। এই গণহত্যার জন্য ইসলামপন্থী জঙ্গিরাই দায়ী।’’
০৫২০
এর পর শনিবার বিষয়টি নিয়ে ফের সমালোচনা করে নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে পেন্টাগনকে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন ট্রাম্প। ওই দিনও সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘‘যদি নাইজিরিয়ার সরকার খ্রিস্টানদের হত্যার অনুমতি দিতে থাকে, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে নাইজিরিয়ায় সমস্ত সাহায্য এবং সহায়তা বন্ধ করে দেবে। একই সঙ্গে ভয়াবহ নৃশংসতা চালানো জঙ্গিদের সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন করাও হতে পারে।’’
০৬২০
সেই পোস্টে ট্রাম্প আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমি আমাদের সামরিক দফতরকে সম্ভাব্য পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। যদি আমরা আক্রমণ করি তা হলে তা দ্রুত এবং ভয়ঙ্কর হবে, ঠিক যেমন জঙ্গিরা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উপর আক্রমণ করছে।”
০৭২০
সার্বিক ভাবে নাইজিরিয়ায় হত্যাকণ্ডের কথা বললেও কোনও নির্দিষ্ট ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি ট্রাম্প। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন দক্ষিণপন্থী মহলে নাইজিরিয়ার খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার দাবি প্রচারিত হচ্ছে।
০৮২০
খ্রিস্টানদের প্রতি নির্যাতনের অভিযোগে ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপের হুমকির জবাব ইতিমধ্যেই দিয়েছে নাইজিরিয়া।
০৯২০
রবিবার নাইজিরিয়াকে ‘সার্বভৌম’ দেশ হিসাবে উল্লেখ করে সে দেশের সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকাকে স্বাগত জানাবে তারা। তবে আঞ্চলিক অখণ্ডতা যাতে অসম্মানিত না হয়, তা-ও নিশ্চিত করা হবে।
১০২০
নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবুর উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বোয়ালা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমরা মার্কিন সহায়তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এর জন্য যেন আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা অসম্মানিত না হয়।’’
১১২০
পাশাপাশি বোয়ালা এ-ও দাবি করেছেন, কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের সদস্যদের বেছে বেছে মারছে না জঙ্গিরা। সকল ধর্মের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে।
১২২০
সে দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে যে কোনও সামরিক পদক্ষেপ আমেরিকা এবং নাইজিরিয়ার যৌথ ভাবে নেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন বোয়ালা।
১৩২০
নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট খোদ তিনুবুও জোর দিয়ে দাবি করেছেন, ধর্মীয় সহনশীলতা রয়েছে নাইজিরিয়ায়। নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলি ধর্ম এবং এলাকা নির্বিশেষে সে দেশের মানুষকে প্রভাবিত করছে। তাই নাইজিরিয়াকে ধর্মীয় ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না বলেও দাবি তিনুবুর।
১৪২০
তিনুবু বলেন, ‘‘ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল নীতি এবং সর্বদা তা-ই থাকবে। নাইজিরিয়া ধর্মীয় নির্যাতনের বিরোধিতা করে এবং একে কোনও ভাবে উৎসাহিত করে না। নাইজিরিয়া এমন একটি দেশ যেখানে সকল ধর্মের নাগরিকের সুরক্ষার জন্য সাংবিধানিক গ্যারান্টি রয়েছে।’’
১৫২০
প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি নাগরিকের দেশ নাইজিরিয়া। বিশাল জনসংখ্যা এবং অর্থনীতির কারণে ‘আফ্রিকার দানব’ নামে পরিচিত এই দেশ। নাইজিরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সমান ভাবে খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের মধ্যে বিভক্ত।
১৬২০
তবে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন দিক থেকে নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি নাইজিরিয়া। এর মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় বোকো হারামের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর রমরমা।
১৭২০
দীর্ঘ দিন ধরেই মধ্য নাইজিরিয়া ‘সাম্প্রদায়িক স্পর্শকাতর অঞ্চল’ বলে গণ্য। অতীতেও ওই অঞ্চলে খ্রিস্টান এবং আদিবাসীরা হামলার শিকার হয়েছেন। রিপোর্ট বলছে, গত দু’দশকে ইসলামি জিহাদিদের হামলায় ৬২ হাজারেরও বেশি অমুসলিম নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। ঘরছাড়া হয়েছেন, ৫০ লক্ষেরও বেশি।
১৮২০
তবে অনেকের দাবি, নাইজিরিয়ায় মুসলিমদের তুলনায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বেশি হত্যা করা হচ্ছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। নাইজিরিয়ায় হামলার বিভিন্ন উদ্দেশ্যও রয়েছে।
১৯২০
নাইজিরিয়া সরকারের দাবি, হামলাগুলি খ্রিস্টান এবং মুসলিম— উভয়কে লক্ষ্য করেই সংগঠিত হচ্ছে। খ্রিস্টানদের যেমন নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তেমনই সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির হাতে, বিশেষ করে উত্তর নাইজিরিয়ায় প্রাণ হারানো মানুষদের বেশির ভাগই আবার মুসলিম।
২০২০
উল্লেখ্য, নাইজিরিয়ায় ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার নিয়মতান্ত্রিক লঙ্ঘন’ হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ২০২০ সালে আমেরিকা প্রথম বারের মতো পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিকে বিশেষ উদ্বেগের দেশের তালিকায় রাখে। যদিও ২০২৩ সালে আমেরিকার তৎকালীন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের নাইজিরিয়ার সফরের আগে সেই তকমা সরিয়ে নেওয়া হয়।