Advertisement
০১ মে ২০২৪
Bengali Feature

বসন্তে সৌরভের শিখা

দোল উৎসব রঙের সময়। প্রেমের সময়। বাতাসে সুগন্ধি আবিরের কুহক। মনের বারান্দায় গোপন গুঞ্জন। দোলমঞ্চে শ্যামসুন্দর। অন্তঃপুরে রাধারানি। নগর সঙ্কীর্তন, হরির লুট, ভাবোচ্ছ্বাস। রঙিন খামে মুখবন্ধ এক আশ্চর্য সত্য। পূর্ণিমার চাঁদ খুলে দেয় প্রাচীন বন্ধন। রং ধুয়ে যায়, লেগে থাকে মনখারাপ।

picture of holi.

ছবি: কুনাল বর্মণ।

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:৪১
Share: Save:

রতিক্লান্ত জানল, ঋতু-বসন্ত সংক্রামক অসুখ। জানিয়েছিল বিএ সেকেন্ড ইয়ারের একটি মেয়ে। আসলে, নাম রতিকান্ত। কলেজের তৃতীয় বর্ষে তিন বার অকৃতকার্য হওয়া আর ফিজ়িক্স অনার্সের তিন-তিনটি মেয়ের সঙ্গে লটরপটরেও ফেল করার পরে গুমগম্ভীর হয়ে গিয়েছিল সে। সেই হাল-ছাড়া ভাব দেখে এমএন স্যর নাম দেন ‘রতিক্লান্ত’। তবে, সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েটি যখন বাসন্তী জ্ঞানসূচনা দিয়েছিল, তখনও চরিত্র রতিক্লান্ত হয়ে ওঠেনি। তখনও রতিকান্তই। তার এক বছর পরে তার উচ্চ মাধ্যমিক। মেয়েটি তখন কলেজ। ঝাড়খণ্ডের মেয়ে। বাঙালি, আদিবাড়ি কুষ্টিয়া। জামশেদপুরেই তিন প্রজন্ম। বাবা স্টিল প্ল্যান্টের বড়কর্তা। মেয়েটি এসেছিল রতিদের মফস্‌সলের বাড়িতে। রতির বাবার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ে হয়েছে জামশেদপুরেই। এখানে আত্মীয়দের ‘রিসেপশন’। রতিদের বাড়ি থেকেই।

রতির বাবার দুই পুঁচকে মামাতো বোন। বিয়ে বড় জনের। রতির সেই বিয়ে-পিসি দারুণ গায়। ছোট পিসি রিনা তিন বছরের বড় রতির চেয়ে। সেকেন্ড ইয়ার রিনাপিসিরই ছোটবেলার বন্ধু আখ্যানের সেকেন্ড ইয়ার— নাম মাহেশ্বরী।

মামাদাদুও জামশেদপুর স্টিল প্ল্যান্টের। তবে ভূপর্যটকও। ওরা এলেই বাড়ি গমগম। রতিদের পরিবার গোঁড়া। গোঁড়ামির ভরকেন্দ্রে রতির ঠাকুরমা। গিরিবালা ঘোষের প্রতাপে তটস্থ সবাই। এমনিতে গিরিবালা পুজো-রান্না, বড়ি-আচার নিয়েই থাকেন। তবে পুজোটা মহিমময়। পট্টবস্ত্রে যখন অর্চনাসনে উপবিষ্ট, তখন নিরক্ষর প্রবীণার পাশে ছোট চৌকিতে থাকে নানা গ্রন্থ। শ্রাদ্ধবাড়ির গীতা, লক্ষ্মীর পাঁচালি, হলুদ পুরোহিত দর্পণ এবং আরও-আরও। মন্ত্রোচ্চারণকালে দেবদেবী বিবেচনান্তে গ্রন্থাদি স্পর্শান গিরিবালা।

ভাই তাদের বাড়িতেই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গিরিবালা খুশি। ভাই মুক্তহস্ত। গিরিবালার টাকা যাচ্ছে না। উপরি পাওনা, অন্য বোনেদের না বেছে ভাই তাকে বেছেছে। বাড়ি জমজমাট।

উতলা উত্তরীয়

প্রীতিভোজের দু’দিন পরেই দোল। গিরিবালার ইচ্ছে, দোলে পালা কেনার। ভাইকে সাল্টে নিয়েছেন। ভাই রাজি। পালা কেনাটা কী? রতিদের এলাকার শ্যামমন্দির বিখ্যাত। প্রতিদিনের ভোগপর্ব আর-পাঁচটা মন্দিরের মতো হলেও সারা বছর মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত গোসাঁইদের মধ্যে দিন বিলি হয়। সে দিনের ভোগের ভার তাদের। এটাই পালা। এই পালা বিক্রি হত। যে কিনত, আত্মীয়বন্ধুদের নেমন্তন্ন করত। তেমনই পালা কেনার সাধ গিরিবালার। ভাই ছুটল মন্দিরে, ফিরল কালো মুখে। দোলের দিন হবে না, তবে দোলের দু’দিন পরে পালা মিলবে। গিরিবালা উচ্ছ্বসিত। ভাইয়ের শুকনো মুখ। দোলের এক দিন পরেই যে ফেরার টিকিট কাটা!

ঠিক হল, ভাই না থাকলেও ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবে। গিরিবালা মুখে কিঞ্চিৎ দুঃখ আঁকলেন। ভাই বলল, দোলের দিন বাড়িতে মোচ্ছব করলে হয় না? খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা! গিরিবালা আপত্তি করলেন না। তবে পইপই করে বলে দিলেন, দোলে আমিষ ঢুকবে না। মাথায় পাঁঠা ভেঙে পড়ল সবার! ভাই দিদির শ্রীচরণে পড়ল, “মেজদি, যদি উঠোনটায় একটু মাংসটাংস করি! বচ্ছরকার দিন! না, ঘরে ঢোকাব না!” উঠোনে রাজি মেজদি। তবে সতর্কবাতা— নেশা চলবে না। গিরিবালা জানেন, ভাই লোহিত সাগরের সাঁতারু। এবং চেতাবনি— মুরগি ঢুকবে না। ভাই রাজি। যদিও হৃদয়কোণে সচাট তরঙ্গমালার ভিন্ন প্রস্তাবনা। তাই জোর দিয়ে বলা— “মুরগি মানুষে খায়!” মেজদি খুশি। বিধর্মী আর মুরগি সহ্য করতে পারে না গিরিবালা।

গিরিবালার দোললিপি তৈরি। ভোরে মন্দিরে। সেখান থেকে দোলমঞ্চে। ফিরে বাড়িতে রং খেলা। খাওয়াদাওয়ার পর বিকেলে ফের দোলমঞ্চ। কীর্তন মিছিলে হেঁটে শ্যামমন্দিরে ফেরা এবং কৃষ্ণস্নান দেখা। এই স্নানের কথা বলার সময় বাহার খেলে যায় বিরাশির গিরিবালার চোখে। কারণ, দোলেই শ্যাম প্রকাশ্যে স্নান করেন। গোসাঁইরা কাপড়ের আড়ালে বিগ্রহের বস্ত্রবদল সামলালেও ঠিক জায়গায় দাঁড়ালে ‘এ’-মার্কা সত্যম্-শিবম্-সুন্দরম্!

নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল

পাঠক, নিশ্চিত কুপিত হচ্ছেন! শুরুতে সেকেন্ড ইয়ারের মেয়ে ধরিয়ে দিয়ে টানা এতোলবেতোল মেগাস্থিনিস! বিশ্বাস যান, সে মেয়ে এই ঢুকল বলে! মাত্র কয়েকটা লাইনের অপেক্ষা!

আসলে, রতির পরের বছরই উচ্চ মাধ্যমিক। রতির সঙ্গে মাহেশ্বরীর পরিচয় করাল ছোটপিসি রিনা। রতি দেখল, সরস্বতীর পরনে জিনস-টপ। পাপড়ি-ঠোঁট। দু’চোখে মায়া। রিনা বলল, “ও খুব ভাল নাচে, জানিস!” রতি চুপ। মাহেশ্বরী বলল, “ওয়াশরুম কোন দিকে?” রিনা বলল, “আয়।”

রতি দু’টো জিনিস বুঝল। এক, এ তো মেয়ে মেয়ে নয়, চুম্বক নিশ্চয়ই। দুই, ভাব জমাতে হবে। তবে ‘ওয়াশরুম’ বস্তুটি কী, বুঝল না। আর বুঝল না, লাবণ্যের অমন গম্ভীর নাম কেন!

বাড়ি মেতে প্রীতিভোজের আয়োজনে। রতি মগ্ন আপন ভুবনে। তার ডাকটিকিটের সংগ্রহ দেখাল মাহেশ্বরীকে। মাহেশ্বরী বলল— ‘এক্সিলেন্ট’। রতি শুনেছে, মাহেশ্বরী ইংরেজির মারকাটারি ছাত্রী। রতিও তাকে জানাল, সে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছে আর আঁকে। মাহেশ্বরী বলল— ‘এক্সিলেন্ট’। রতি তার আঁকা রবীন্দ্রনাথের একটা কুৎসিত ছবি দেখাল। মাহেশ্বরীর প্রতিক্রিয়া— ‘এক্সিলেন্ট’। এক দিন কাকভোরে তাক থেকে ধূলিলাঞ্ছিত তবলা নামিয়ে বিস্তর পেটাল রতি। বেতাল আওয়াজে পলাশের বাবুই সন্ন্যাসী হল, শিমুলের কাক উড়ে গেল, ঝরে গেল কচি আমের আভাস। মাহেশ্বরী কানে হাত চেপে বলল— ‘এক্সিলেন্ট’।

বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ

প্রীতিভোজ মিটে গেল। পরের দিন সন্ধেবেলা বাড়ির টেপ রেকর্ডারে নাজ়িয়া হাসানের ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ বাজল। সৌজন্যে রিনাদের দাদা শিবু। রতির শিবুকাকা নাচতে শুরু করল আর মাহেশ্বরীকে বলল যোগ দিতে। অরাজি মাহেশ্বরী। কিন্তু শিবু নাছোড় মাহেশ্বরীর প্রতিভা প্রমাণে।

মাহেশ্বরী নীল প্যান্ট, সাদা স্লিভলেস টপে। মাথায় কাপড়ের ব্যান্ড। রতির ফাটাফাটি লাগছিল। এ বাড়িতে হাতকাটা পরি ঢোকেনি তো আগে কখনও! শিবুকাকার সঙ্গে রতিও বলল— “এসো না, মাহেশ্বরী! তুমি নাকি দারুণ নাচো!” ধমক রিনার— “অ্যাই, তোর পিসি হয়! নাম ধরে ডাকছিস!” রতি লাল। হঠাৎই ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে মাথার ব্যান্ড খুলে তালে পা মাহেশ্বরীর। ঝড়! রতি এমন নাচ দেখেনি। তার দৌড় ভাসান-নাচ বা দূরদর্শনের ভরতনাট্যম। ফ্যালফেলিয়ে দেখল— ঘূর্ণিপাকে বিদ্যুৎরেখা! ছাতিমের গন্ধ পেল যেন রতি। না কি মনালিন্দে মদনদেবের উঁকি? নাচ শেষ। হাততালি। রতি দু’টি সিদ্ধান্তে পৌঁছল। এক, এ মেয়ে বড় হয়ে মাধুরী দীক্ষিত হবেই। দুই, মাহেশ্বরী খুবই ঘেমে গিয়েছে। শিবুকাকার গর্বিত মুখ দেখে মনখারাপ হল রতির।

নাচের রাতে রতি প্রীতিভোজের প্রায়-শুকনো গোলাপ দিল মাহেশ্বরীর হাতে। আগেই বলল— “এক্সিলেন্ট বলতে হবে না!” মাহেশ্বরী বলল, “বেশ।” এত গম্ভীর কেন মেয়েটা! ছাদে এক রাতে চাপা চেঁচামেচি শুনল রতি। শিবু বলছে— “অ্যাবসার্ড! আমি কিছুই করিনি!” রিনা— “দাদা! আঠার মতো তো লেগে আছিস! তুই জানিস না, কী যাচ্ছে ওর! তোরই তো বন্ধু! ল্যাজে খেলিয়ে কেটে পড়ল!” রতি বুদ্ধিমান। বুঝল, শিবুকাকার কোনও বন্ধু ব্রেক কষেছে। তাই মাহেশ্বরীর মন খারাপ আর রিনাপিসির আন্দাজ, এই সুযোগে তার বান্ধবীর বন্ধুর পথে ইষ্টকপত্তনে প্রয়াসী দাদা।

রতির কষ্ট হল। দোলের আগের সন্ধ্যায় নেড়াপোড়া দেখাতে নিয়ে গেল, নিজেই বলল— “এক্সিলেন্ট না, বলো!” মাথা নাড়ল প্রতিমা।

খুঁজি কারে অন্তরে মনে

দোলের ভোর। মেজকার নেতৃত্বে দল বেঁধে শ্যামসুন্দর মন্দিরে। মেজকা কলেজে বাংলা পড়ায় আর পৃথিবীকে ক্লাসঘর ভাবে। কিন্তু রতি দেখেছে, মেজকার সঙ্গেই ভাব জমেছে মাহেশ্বরীর।

মেজকার পাশে পাশে সে। কাকা তাকে কখনও ভাগবতপুরাণ শোনাচ্ছে, কখনও ‘গীতগোবিন্দম্‌’— ‘ললিত-লবঙ্গলতা-পরিশীলন-কোমল-মলয়সমীরে/ মধুকর-নিকর-করম্বিত-কোকিল-কূজিত-কুঞ্জকুটীরে/ বিহরতি হরিরিহ সরসবসন্তে/ নৃত্যতি যুবতিজনে ন সমং সখি বিরহিজনস্য দুরন্তে’। “কী মানে এটার?” প্রশ্ন মাহেশ্বরীর। কাকা পুলকিত— “আমি বলব না! রবীন্দ্রনাথ বলবেন— ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে/ মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে’। মানে, বসন্ত এসেছে আজ কী মহা-সমারোহে! আর প্রিয়সঙ্গের প্রতীক্ষায় যিনি, সেই রাধাকে সখীরা উল্টে কষ্ট দিয়ে ফেলছেন। বলছেন— এমন সরস-বসন্তে ব্রজনারীদের সঙ্গে কৃষ্ণ নিশ্চয়ই চুটিয়ে লীলামত্ত! বুঝলে, মা? রবীন্দ্রনাথের গান শোনো? গীতবিতান আছে?”

মা চোখ নামিয়ে নিয়েছে। মাথা নেড়ে বোঝাল, শোনে। অস্ফুটে বলল, “গীতবিতান! থাকবে না!” তার পর চুপ। মাহেশ্বরীরও নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, তাকে ছেড়ে যাওয়া সেই নবীন নিশ্চয়ই নবীন বসন্তে ভিন্ন নবীনার সঙ্গে ‘লিখিছে প্রণয়-কাহিনি’!

মধুকরের গুঞ্জরণে

মেজকা পরের প্রসঙ্গে— “এটাই শ্যামসুন্দরের মন্দির! কী সুন্দর, দেখেছ, মাহি!” কাকা নামটা ছোট করে নিয়েছে। মেজকার কাছে শেখার আছে। কাকা বলল তার মাহিকে, “চলো, গঙ্গার ধার থেকে ঘুরে আসি। দেরি আছে এখানে।” কাকা সটীক দেখিয়ে চলেছে— “এটা শিবনাথ স্কুল। পাশেরটা প্রিয়নাথ। বুঝলে, শরৎচন্দ্র যখন খড়দায় এলেন, স্কুল ছুটি হয়েছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ক’খেপে থাকলেন এখানে, স্কুল ছুটি হয়নি! আর এটা শ্রীগুরু গ্রন্থাশ্রম! পাশে বড়াল-বাগানে আসর বসত। ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের নাম শুনেছ তো? বড় নাট্যকার। খড়দার লোক! এইটা দোলমঞ্চ! জিউ এখানেই আসবেন!” জিউ কে? সবার অবাক চোখ দেখে কাকা বলল, “রাধাকৃষ্ণ। জিউ বলা হয়।” গঙ্গার ধারে একটা ভাঙা ফটক দেখিয়ে কাকা বলল, “এটাই রবীন্দ্রনাথের বাড়ি শিবালয়, বুঝলে! ভূতের বাড়ির বদনাম ছিল। সস্তায় ভাড়া পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ!” কোথাও কোনও বাড়ি অবশ্য দেখা যাচ্ছে না! কাকা কথার তোড়ে বাড়ি-সন্দর্ভ সেরে ফেলেছে। পরে বলল, “বাড়িটা গঙ্গা খেয়ে ফেলেছে। গেটটা আছে।”

মন্দিরে ফেরার পথেও কাকা অনর্গল— রবীন্দ্রনাথের বোটের দড়ি কেটে নিয়েছিল ছেলেরা শরীরচর্চায় কাজে লাগাবে বলে। আর স্রোতে সে বোট গিয়ে ঠেকেছিল বালি ব্রিজে। রবীন্দ্রনাথ জানতে পেরে দড়ি কিনে দিয়েছিলেন তাদের। “আচ্ছা, আপনি বলছিলেন, রবীন্দ্রনাথ এত দিন থাকলেও স্কুল ছুটি হয়নি। কেন?” মাহির প্রশ্ন। স্বাভাবিক হয়েছে মেয়েটা। রতির ভাল লাগল। কাকা বলল, “অনেক ব্যাপার! একে তো রবীন্দ্রনাথেরা ব্রাহ্ম। আর এখানে তখন গোসাঁইদের রমরমা। তারা রবীন্দ্রনাথকে নিতে পারল না। শোনা যায়, এক বার শ্যামের প্রসাদ পাঠানো হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ নাকি নেননি। সত্যি-মিথ্যে জানি নে, জানি নে, জানি নে!”

রতির রাগই হল রবীন্দ্রনাথের উপর। মাহি বলল, “কিন্তু রাধাকৃষ্ণ তো ওঁরও খুব প্রিয়! ভানুসিংহের...”— “অবশ্যই! একশো বার!” কথা কাড়ল কাকা— “আরে, এটা ঘটলেও রাধাকৃষ্ণকে অবজ্ঞার জন্য নয়। কবি সবর্ধর্মে শ্রদ্ধাশীল। তবে ধর্মের প্রতিষ্ঠান নিতে পারতেন না।” রতির কাকার উপর রাগ হল। কাকা হালকা কমিউনিস্ট। বাড়িতে অশান্তিও হয় তা নিয়ে। কিন্তু ধর্ম নিয়ে রঙ্গ অসহ্য! ঠিক করল, ঠাম্মার কানে তুলবেই!

রং যেন মোর মর্মে লাগে

মন্দিরে এল ওরা। কীর্তন শুরু। পালকিতে রাধাকৃষ্ণ। উড়ছে আবির। রিনা আর মাহির মাঝখানে হাঁটছে রতি। পৌঁছে গেল দোলমঞ্চে। দোলমঞ্চের বাইরে বিক্রি হচ্ছে আবির-মঠ-ফুটকড়াই। সে-সব কিনে রিনা-মাহি পুজো দিতে মন্দিরে ঢুকল। আবিরের ছাপতিলক নিয়ে ফিরল। রতি বলল, “আমার?” আবির নিয়ে রতির কপালে আগুন এঁকে দিল মাহি।

বাড়ি ফিরে লুচি-বোঁদে। রতির মা পুরনো জামা-প্যান্ট বেছে রেখেছে। ফি-বার পুরনো বা ছেঁড়া পোশাকেই দোল খেলা হয়। কিন্তু পায়রা-সাদা জামায় ঘর থেকে বেরল রিনাপিসি। মাহিও। সবাই অবাক! ওরা বলল, এ ভাবেই রং খেলে জামশেদপুরে! ছোটকা ফুট কাটল, “সিলসিলা সিনেমার পরে এই প্রথম!” দোল রতিদের ভালই খেলা হয়। এ বার মামাদাদুর দৌলতে ব্যবস্থা দুরন্ত! রতি তৈরি। পাড়ার বন্ধুরাও হাজির। রতি গিয়ে রিনাকে বলল, “আমাদের সঙ্গে যাবে? অম্লান জেঠুদের বাড়িতে ফাটিয়ে খেলা হয়! মিষ্টি দেয়! চলো চলো!” রতির রিনাপিসি রাজি। মাহিকে বলল, “চল, রতিদের সঙ্গে যাই!” বড়দের পায়ে আবির ছুঁইয়ে লীলামাধুর্যে ক্লান্ত হতে রাস্তায় বেরোল চরিত্র-রতি।

অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে

অম্লান সাহারা বড়লোক। বিশাল বাড়ি। ষাট ছুঁই-ছুঁই অম্লান বাতে ম্লান। বাড়িতে অতি-বৃদ্ধ বাবা আর অম্লানেরা চার ভাই। কোনও মেয়ে নেই বাড়িতে। বিয়ে-থা করেনি কোনও ভাই। রতিরা যখন পৌঁছল, রং খেলা চলছে। লম্বা-লম্বা পিচকিরি। বিশাল পেতলের থালায় সন্দেশ-চন্দ্রপুলি। রিনা আর মাহিকে অম্লানজেঠুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল রতি। তার পর মেতে উঠল রঙে।

খানিক পরেই রতির আঁশটে ঠেকল। লক্ষ করল, অম্লানজেঠু আর তার ভাইয়েরা কেমন ভাবে তাকিয়ে মাহি আর রিনাপিসির দিকে। খেয়াল করল, পিসির বন্ধু, পিসি রঙে চুবুচুবু। এতটাই যে, সাদা পোশাকের দিগন্তরাল ভিজিয়ে শরীরের সূর্যোদয় ঘটে গিয়েছে। সে উন্মেষবিভায় আচ্ছন্ন নারীবর্জিত বাড়ি। অচেনার আনন্দে বিহ্বল। বাড়ির মেজ ছেলে মাহিকে জাপটে আবির মাখিয়েও দিল। মাহি ভয় পেয়ে গেল। রিনা বলল, “রতি, চল এখান থেকে!” গা ঘেঁষে মাহিকে আড়াল করতে করতে রতি বেরিয়ে এল। তার মাহিকে যেন কেউ না দেখে এ অবস্থায়!

বাড়িতে ফিরে আর এক প্রস্থ। “ছি! ছি! কেমনধারা কাণ্ড বাপু! সোমত্ত মেয়ে, মিহি পোশাকে পাড়ায় দোল খেলতে বেরোয়! বলি, লাজলজ্জা নেই গা! সব তো ফুটে বেরুচ্ছে! খুলে ফেললেই পারতিস!”— বাহুল্যের বলা, বক্তা রতিঠাম্মা। সে পর্ব সামাল দিল রতির মা-বাবা-মেজকা।

রঙে রঙে রঙিল আকাশ

এলাহি খ্যাঁটনের পরে বিকেলে ফের দোলমঞ্চ থেকে রং-মিছিলে মন্দিরে ফেরা। পিসি-পিসিবন্ধু দু’জনেই রঙিন পরেছে। শ্রীখোল-করতালের ধারাবাদন। আবিরের কুয়াশা-আস্তর। থেকে থেকে গায়ে ঝরছে গোলাপজল। বড় পিচকিরিতে গন্ধজল ছোড়া হচ্ছে আবির-বীরত্ব কমাতে। কীর্তন তুঙ্গে। কিছু গান রতিও জানে— ‘ওই কালো পূর্ণশশী চল না মোরা দেখে আসি’। তবে এ গান রাসের না দোলের, মনে নেই তার। হঠাৎ নাচতে নাচতে এক জন অজ্ঞান! রিনা-মাহি ‘এই রে’ করে উঠল। রতি বলল, “আরে ওটা অজ্ঞানদাদু! মানে, প্রতিবারই নাচতে নাচতে অজ্ঞান হয়ে যায়। জল ছেটালেই উঠে বসে।” জলসিঞ্চনেই জ্ঞানযোগে এল অজ্ঞানদাদু। বলল, “ভাব এসেছিল! ঠিক আছি!” রতি ফিসফিসিয়ে বলল মাহিকে, “প্রতিবারই বলে!” হালকা ধাক্কা মেরে মাহি হাসল রতির দিকে চেয়ে। রতির মনে হল, অজ্ঞান হয়ে যাবে!

মেজকা বলল, ফিরতে হবে। রাতের গানের অনুষ্ঠানের জোগাড় আছে। মাহি মন্দিরে ঢুকতে চায়। পালকি থেকে রাধাকৃষ্ণের নামা দেখবে। মেজকা বলল, “ঢুকলে বেরনো মুশকিল! বেশ চলো, পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যাব।”

নাটমন্দির ভিড়ে ঠাসা। আশপাশের বাড়ির ছাদও কানায় কানায়। পালকি থেকে নামানো হল আবিরে মোড়া যুগলমূর্তি। চাতালে সারি সারি ঘড়ায় স্নানজল। রাধারানি গেলেন ভিতরে। তিনি প্রকাশ্য স্নানে নেই। চাতালে বঙ্কিম ঠাম শ্যামসুন্দর। এখানেই তাঁর স্নান হবে, হবে পোশাকবদল। ধুতিকাপড়ের পাঁচিল টানা হল। তার মধ্যেই তুঙ্গে উঁকিঝুঁকি। মাহি বলল, “রিনা, চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে।” রতি বলে ফেলল— “বাব্বা! হেব্বি লজ্জা!” পিসি হাসল।

বাড়ি ফিরে ঠাম্মার হাতে বাতাসা দিল মাহি। হরির লুট থেকে কুড়িয়েছে। ঠাম্মা কপালে ঠেকিয়ে বলল, “সোনা মেয়ে! এখন পেরে উঠি না! আগে কত কুড়োতাম জানিস!”

তখনও কুহেলি-জালে

খোলা উঠোনে অনুষ্ঠান। শতরঞ্চি। মাইক্রোফোন। হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরা। মূল শিল্পী রতির বড়পিসি মিনি। হাজির এলাকার দেবব্রত বিশ্বাস, সবিদা। সবিতাব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রবীণ মানুষ।

সবিদা শেষে। শুরুতে মেজকার দুই ছাত্রী। মাঝে আরও কয়েক জন। তার পরে মিনিপিসি। অনুষ্ঠানের আগে রতির বাবা মেজকাকে বলে দিল, “নান্টু, বেশি কথা বলবি না। অনেকে গাইবে।” মেজকা ‘অবশ্যই’ বলে অনুষ্ঠানের সূচনায় ঝাড়া পৌনে এক ঘণ্টার ভাষণে জীবন দুর্বিষহ করে তুলল! কী নেই তার মধ্যে! এমনই এক দোলপূর্ণিমায় শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব কেন ইতিহাস বদলে দিয়েছিল, কেন চৈতন্যের আবির্ভাব আর মুখেভাত-পর্বে সানাই বাজে বৃন্দাবনী সারংয়ে, কী ভাবে দোলপূর্ণিমা হয়ে উঠল গৌরপূর্ণিমা। রতি দেখল, প্রায়-সবাই অস্থির হয়ে উঠলেও মাহি আর সবিদা বুঁদ। মাঝে-মাঝে সবিদাও যোগ করছে— “ওটা বলো, নান্টু। ওখান থেকেই তো কবি শান্তিনিকেতনে গৌরপ্রাঙ্গণ নামটা নিলেন, গৌরাঙ্গ-সূত্রেই,” কিংবা “নান্টু, ‘আমার প্রাণে গভীর গোপন মহা-আপন’? গানটা কিন্তু বৃন্দাবনী সারংয়েই! বসন্তকালেই বাঁধা, বুঝলে! চৈত্রে!” আর প্রতিবারই মেজকা— ‘হ্যাঁ, সবিদা!’ ‘একদম, সবিদা!’

এ বার মেজকার দুই ছাত্রীর গান। কোরাস। ‘ও আমার চাঁদের আলো’। কিন্তু গাইবে কী! শুরু সবে হয়েছে, মাইক হাতে পুনরাবির্ভাব মেজকার। “একটা কথা। মিতা আর ছন্দা যেটা গাইছে, এটা ‘বসন্ত’ নাট্যের গান। রাজা আর কবির সংলাপের মধ্যে গানটা, বুঝলেন! ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ১০ ফাল্গুন এই নাটকটা রবীন্দ্রনাথ উৎসর্গ করেছিলেন নজরুল ইসলামকে। কারণ...” মেজকা বলে চলল। মিতা-ছন্দা চুপ। মেজকাকে থামাল ঠাম্মা— “মরণ! বাচ্চাগুলোকে গাইতে দে না রে, নান্টু!” নান্টু থামল। গান ফের শুরু। সুন্দর গলা। আরও কয়েক জনের গান, আবৃত্তি। এই বারে রতির মিনিপিসি! মিনির কোলে তানপুরা। সবাইকে অবাক করে হারমোনিয়ামে পটনা-নিবাসী হিন্দিভাষী বর। তবলায় দেওর। মামাদাদুর মুখে হাসির পূর্ণিমা।

গান যে তোমার গন্ধে মিশে

কানে হাত ঠেকিয়ে মিনি বলল, “আমির খসরুর গান।” গান শুরু— ‘আজ রং হ্যায় রি মা, রং হ্যায় রি/ মোরে খাজা কে ঘর রং হ্যায় রি’। রতির মাথায় ঘুরছে, কী ভাবে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’টা চালিয়ে মাহিকে নাচানো যায়। মাহিকে বলতেও গেল। মাহি থামিয়ে বলল, “এটা শোনো, রতি! মিনিদি এটা যা গায় না! কাঁদিয়ে ছাড়ে!” যাব্বাবা! কান্নাকাটি কেন! একে তো ভাষাই বোঝা যাচ্ছে না! রতি মেজকার কাছে গেল। ঠাম্মার বকুনিতে মেজকা গুম। “কী গান, মেজকা? হিন্দি?” মেজকা চুপ। ফিসফিসিয়ে বলল, “ঠাম্মাকে বল— এটা মুসলমানি গান, সুফি!” সে কী! চোখ কপালে রতির! “বলছি ঠাম্মাকে!” হাত খামচে ধরল মেজকা! “চুপ! এমনি বললাম। কী গাইছে মিনি! এ কি শুধু গান রে, এ একটা ইতিহাস...!” মহাভাষণের শঙ্কাভাসে রতি ছিটকে এসে আগের জায়গায়।

গান এগিয়ে চলল। গানের ভাষা ঠাম্মা বুঝছে না। মাথা নাড়াচ্ছে তালে তালে। এরই মধ্যে মামাদাদু ঠাম্মার কাছে গিয়ে বলল, “খামটা রাখো। পালা হয়ে গেলে খুলবে।” গিরিবালা বুঝেছে, পালার টাকা। মুখে বলল, “কী যে করিস!” দাদু বলল, “পালার আগে খুলো না কিন্তু!” ঠাম্মা— “কেন?” দাদু— “তুক আছে। জানোই তো!” ঠাম্মা— “বেশ। এখন শুনতে দে!” গান গড়াচ্ছে— ‘মোহে পির পায়ো নিজামউদ্দিন আউলিয়া/ নিজামউদ্দিন আউলিয়া আলাউদ্দিন আউলিয়া’। আউলিয়ার নাম এলেই কানে হাত ঠেকাচ্ছে মিনি। পিসি এত সুন্দর, খেয়াল করেনি রতি আগে। তারও ভাল লাগছে গানটা। হঠাৎ রতি লক্ষ করল, পিসির বন্ধ চোখ কাঁদছে। সঙ্গে সঙ্গে বাঁ-দিকে দেখল রতি। মাহির গালও ভেসে যাচ্ছে। চোখ মুছছে রিনাপিসি আর হারমোনিয়ামের নতুন বর। মাথা নিচু করে বসে সবিদা।

উদ্বাহু চৈতন্যচাঁদ শুনছে সেই গান। উঠোনের জবাগাছও শুনছে। ঠাকুরঘরের রাধাকৃষ্ণের মূর্তি কি কাঁদছে ওদেরই মতো? রতি মাহির কাছে এল। “কাঁদছ?” মাহি না তাকিয়ে বলল, “ধুস! কাঁদব কেন!” রতি বলল, “দারুণ লাগছে। কিন্তু মানে বুঝছি না!” মাহি বলল, “গানে বলছে, আজ যে দিকে তাকাচ্ছি, মা, রং আর রং! অঙ্গনে আজ প্রিয়তম! আমি পেয়েছি আমার রঙিন আউলিয়াদের! বুঝলে? পরে পুরোটা বুঝিয়ে দেব। এখন শোনো।” রতি চুপ। শুধু বলল, “তুমি খুব ভাল!” মাহি হাসল।

গান শেষ। পিনপতন নীরবতা। গলা খাঁকারি সবিদার— “নান্টু, এর পরে আর গান হয় না! বেঁচে থাকো, মা! সুরে বেঁচো! আজ আর গাইব না!” মিনি বলল, “স্যর, আপনার কথা অনেক শুনেছি। গান শুনিনি! আপনার কণ্ঠে রবিঠাকুরের গান! প্লিজ়!”

সবিদা হারমোনিয়ামে। বলল, “এমন কণ্ঠ আর আদায়কারি বহু দিন শুনিনি। ভরিয়ে দিলে! শ্রীমণ্ডিত হও! তোমার বর-দেওরকেও বলছি! বাউলের মেয়ে আউলে মিশল! গাইছি একটা।” সবিদা একটা গাইল না, ঘোরে গেয়ে চলল— ‘ঝরা পাতা গো’, ‘যদি তারে নাই চিনি গো’, ‘আহা আজি এ বসন্তে’, শেষে ‘দিয়ে গেনু বসন্তের এ গানখানি’। আবারও আচ্ছন্ন সবাই। মিনিপিসি, মাহির চোখে জল। সমাপ্তি ঘোষণায় পাওয়া গেল না মেজকাকে।

রূপসাগরের পারের পানে

রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে আসর-ভাঙা উঠোনে এসে রতি দেখল, শিউলি গাছের তলায় মাহি। রতি গিয়ে বলল, “এখানে খুব শুঁয়োপোকা!” সরে এল মাহি। মাহির চোখের জলে জ্যোৎস্না ঠিকরে পড়ছে। “কী হয়েছে?” মাহি চোখ মুছল। হেসে বলল, “খুব ভাল কাটালাম, রতি, তোমাদের সঙ্গে! কিছু হয়নি! ও আমার থেকে-থেকেই হয়!” রতি নাছোড়বান্দা। কিছু ক্ষণ নীরব থেকে মাহি বলল, “বড় হলে বুঝবে। এই বসন্তকালটা মারাত্মক! রোগ! আগে কান্না পেত না! বসন্তে আলাদা টেরও পেতাম না কিছু। সব বদলে গিয়েছে! একটু একা লাগে!” রতি বলল, “খুব কষ্ট দিয়েছে না তোমায় শিবুকাকার বাজে বন্ধুটা!” মাহি চমকে গেল। বলল, “ওহ, সব খবরই আছে! না না! বাজে কেন হবে! ভাল ছেলে! আমায় আর ভাল লাগেনি তো কী করবে! খুব ভাল বাঁশি বাজায় জানো, কৃষ্ণ!” রতি দু’টো সিদ্ধান্ত নিল। এক, কখনও বাঁশি বাজাবে না। দুই, কৃষ্ণকে খুন করবে।

ওরা চলে গিয়েছে। বাড়ি খাঁ-খাঁ। রতি বার বার মাহির গন্ধ পাচ্ছে। পালার দিনটা ভালই কাটল। রাতে মন্দিরে কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরে দেখে— থমথম করছে। কী হয়েছে? ঠাকুরঘরে দোর দিয়েছে ঠাম্মা। সবাই চুপ। একমাত্র মেজকাই একটা কাগজ হাতে ধরে মাঝেমধ্যে হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠছে। তাতে বিরক্ত সবাই। কিছু পরে দরজা খুলল ঠাম্মা। গম্ভীর। ধীরে বলল, “আমার ছেঁড়া গীতাটায় মলাট পরিয়ে দিয়ে গিয়েছে!” চোখ মুছল ঠাম্মা— “সব ওলটপালট করে দিয়ে গেল! বড় মায়া! ছুঁড়িটা যেন আবার আসে! নান্টু, লিখে দিস!”

সেই যে দাদুমামা খাম দিয়ে গিয়েছিল ঠাম্মাকে? হ্যাঁ, টাকা ছিল। সঙ্গে চিঠিও। সে চিঠিটাই মেজকার হাতে। লেখা ছিল— ‘মাহেশ্বরীকে কেমন লাগল? কষ্টে আছে। ভাল মেয়ে। তবে মাহেশ্বরী নয় ওর নাম। ক্ষমা কোরো! মিথ্যে বলেছি! এখানে আসার আগে তোমার ভয়েই নামটা দিয়েছিলাম। ও আসতে চেয়েছিল! ওর নাম মেহেক রুবাইয়া।’

মেহেক রুবাইয়া। সৌরভ বসন্তবাতাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Feature Holi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE