Advertisement
E-Paper

সান্তা ক্লজের হাড়

যা নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জোরদার গবেষণা। সান্তার ঝোলায় এঁদের জন্য কী উপহার আছে, কেউ জানে না!যা নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জোরদার গবেষণা। সান্তার ঝোলায় এঁদের জন্য কী উপহার আছে, কেউ জানে না!

কৌশিক ভৌমিক

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৮:০০

সত্যি কি তিনি আসেন বড়দিনের আগের রাতে? শিশুদের দিয়ে যান উপহার?

১৮৯৭-এ আট বছরের ভার্জিনিয়া ও’হানলোনর এই প্রশ্নের উত্তরে নিউ ইয়র্ক সান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে সাংবাদিক ফ্রান্সিস ফারসেলাস চার্চ লিখলেন, ‘‘হ্যাঁ, সান্তা ক্লজ বলে সত্যি এক জন আছেন।’’

ক্রিসমাসের সকালে বালিশের পাশে উপহার দেখিয়ে বাবা-মা বলেন, ‘‘দেখো, মাঝরাতে সান্তা রেখে গিয়েছে তোমার জন্য।’’ ছোট্ট ভার্জিনিয়ার কৌতূহল, কে এই সান্তা ক্লজ? জিজ্ঞেস করল বাবাকে। সূর্যের দিকে দেখিয়ে বাবা বললেন, ‘‘তুমি যদি ‘সান’-এ দেখতে পাও, তা হলে তিনি আছেন।’’ ভার্জিনিয়া চিঠি লিখল ‘সান’ পত্রিকায়, ‘প্রিয় সম্পাদক মহাশয়, আমার বয়স আট। বন্ধুরা বলে, সান্তা ক্লজ বলে কেউ নেই। বাবা বলেন, তুমি যদি ‘সান’-এ দেখতে পাও, তা হলে তিনি আছেন। সান্তা ক্লজ বলে সত্যিই কেউ আছেন?’

২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৭। ‘দ্য সান’-এর সম্পাদকীয় কলামে ‘ইজ দেয়ার এ সান্তা ক্লজ?’ শীর্ষক চিঠির উত্তরে ফ্রান্সিস লিখলেন, ‘ভার্জিনিয়া, তোমার বন্ধুরা ভুল বলেছে।... হ্যাঁ, ভার্জিনিয়া, সান্তা ক্লজ বলে এক জন আছেন।...সান্তাকে কেউ দেখতে পায় না, তার অর্থ এই নয় যে সান্তা নেই। পৃথিবীতে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে যা কল্পনা করা যায় না। কেবল বিশ্বাস, কল্পনা, কবিতা, ভালবাসা, রোমাঞ্চই পারে বাস্তবতার আড়াল সরিয়ে তার পিছনে লুকিয়ে থাকা আশ্চর্য সৌন্দর্যকে উপস্থাপন করতে।... ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। সান্তা আছেন, চিরদিন থাকবেন। আজ থেকে হাজার বছর, না, দশ হাজার বছর পরেও তিনি পৃথিবীর সমস্ত শিশু-হৃদয়কে আনন্দ উপহার দেবেন।’

ছোট্ট ভার্জিনিয়ার মতো এই সময় কোনও শিশু যদি একই প্রশ্ন করে তা হলে সান্তার অস্তিত্ব নিয়ে আরও নিশ্চিত উত্তর দিতে পারবেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

৩৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর, গ্রিক বিশপ, সেন্ট নিকোলাস মারা যান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী সম্প্রতি তাঁর শরীরের পেলভিস অংশের এক টুকরো হাড়ের সন্ধান পেয়েছেন এবং গবেষণা করে দেখেছেন যে, হাড়টি নিশ্চিত ভাবেই সেই সময়ের, যে সময় সেন্ট নিকোলাস মারা গিয়েছিলেন।

প্রমাণ: সেন্ট নিকোলাসের সেই হাড়

কিন্তু কে এই সেন্ট নিকোলাস? সান্তা ক্লজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই বা কী? ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ, পূর্ব এশিয়ার মায়রা শহরে জন্ম সেন্ট নিকোলাসের। এখন যা তুরস্কে। শোনা যায়, অতি দয়ালু নিকোলাস অলৌকিক ক্ষমতারও নাকি অধিকারী ছিলেন। জনপ্রিয় ছিলেন শিশুদের গোপনে উপহার দেওয়ার জন্য। তিনি নাকি, একবার গভীর রাতে এক হতদরিদ্রের ঘরে চিমনি দিয়ে চুপিসারে ব্যাগ-ভর্তি মোহর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আর এক বার নাকি এক সরাইখানায় মৃত তিন শিশুকে তাঁর প্রার্থনার জোড়ে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। মাঝদরিয়ায় ঝড়ে তলিয়ে যাওয়া নৌকোর এক নাবিককে তিনি জীবন দান করেছিলেন। এই সব ঘটনাই আস্তে আস্তে জন্ম দেয় সান্তা ক্লজের।

সেন্ট নিকোলাসের শরীরের এক টুকরো হাড়ের মাইক্রোস্যাম্পল-এর উপর উন্নতমানের কার্বন-ডেটিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন অক্সফোর্ডে কেব্‌ল কলেজ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ সেন্টারের ‘রেলিক্স ক্লাস্টার’-এর ডিরেক্টর প্রফেসর টম হিগাম এবং জর্জেস কাজান। হাড়ের নমুনাটি দুই পুরাতত্ত্ববিদ সংগ্রহ করেছিলেন আমেরিকার ইলিনয়ের ‘সেন্ট মার্থা অব বেথানি চার্চ’-এর ধর্মযাজক, ফাদার ডেনিস ও’নিলের কাছ থেকে। তিনি পেয়েছিলেন ফ্রান্সের লিয়ঁ শহর থেকে।

গবেষণার ফলাফলে প্রফেসর হিগাম ও ডক্টর কাজান নিশ্চিত, হাড়ের নমুনাটি সেন্ট নিকোলাসেরই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সে কথা জানান তাঁরা।

১৮৯৭ সালে খবরকাগজের সম্পাদকীয়তে রূপকথার সান্তার অস্তিত্বের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। ১২০ বছর পর আজ অক্সফোর্ডের গবেষণায় সান্তার সেই অস্তিত্ব বাস্তব রূপ পেল!

Saint Nicholas Bones University of Oxford সেন্ট নিকোলাস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy