Advertisement
E-Paper

ব্রিদ্রোহী ধর্মযাজক

তিনি জেবেজ় সান্ডারল্যান্ড। ভারত ঘুরে লিখলেন এ দেশের দুর্ভিক্ষের কারণ। নিন্দা করলেন ব্রিটিশদের। সমর্থন করলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম। তিনি জেবেজ় সান্ডারল্যান্ড। ভারত ঘুরে লিখলেন এ দেশের দুর্ভিক্ষের কারণ। নিন্দা করলেন ব্রিটিশদের। সমর্থন করলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম।

দিলীপ মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
জেবেজ় টমাস সান্ডারল্যান্ড

জেবেজ় টমাস সান্ডারল্যান্ড

শৈশব থেকে ভারত সম্পর্কে কৌতূহল ছিল জেবেজ় টমাস সান্ডারল্যান্ডের। ১৮৪২-এ ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্ম। এর দু’ বছর পর তাঁর বাবা-মা চলে যান আমেরিকায়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন সান্ডারল্যান্ড। শুধু প্রভু জিশুর জয়গান নয়, জো়ড় দেওয়া উচিত মানুষের মনের প্রসারতায়— ইউনিটারিয়ানদের এই মতবাদে প্রভাবিত হয়ে এই সম্প্রদায়ের ধর্মযাজক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

মিশনারিদের কাছে ভারত সম্পর্কে নানা গল্প শুনে তাঁর মন চাইত দেশটা দেখার। স্বপ্ন পূরণ হল যখন খ্রিস্টান পাদ্রিদের ‘ব্রিটিশ ন্যাশনাল ইউনিটারিয়েন অ্যাসোসিয়েশন’ তাঁকে ভারতে গিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। তাঁকে পাঠানো হয়েছিল, ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে মিলিত হয়ে হিন্দু সমাজের পুনর্গঠন করার উদ্দেশে।

শুধু মিশনারিদের কথা শুনে নয়, ভারত সম্পর্কে ব্রিটিশ লেখকদের বিস্তর বই পড়েছিলেন তিনি। এ দেশে আসার আগে তাঁর মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ আধিপত্য ভারতীয়দের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু ভারতীয়দের সঙ্গে কথা বলে, এখানকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা পড়ে, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং ব্রিটিশ শাসনের স্বরূপ দেখে তাঁর ধারণা বদলে যায়। ভারত থেকে ফিরে তিনি লেখেন, ‘দ্য কজেস অব ফেমিন ইন ইন্ডিয়া’ বইটি। পাশাপাশি নিউ আটলান্টিক মান্থলি পত্রিকায় লেখেন ‘দ্য নিউ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ প্রবন্ধটি। ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে ওঠেন তিনি। ভারতীয়দের স্বাধীনতার সমর্থনে লেখেন ‘ইন্ডিয়া ইন বন্ডেজ: হার রাইট টু ফ্রিডম’ বইটি। এই বই প্রকাশের জন্য সান্ডারল্যান্ড আমেরিকায় দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রায় চোদ্দো জন প্রকাশকের কাছে। তাঁরা নিরাশ করেন সান্ডারল্যান্ডকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কোনও প্রকাশকই সাহস পাচ্ছিলেন না ব্রিটেনের বিরোধিতা করতে। অবশেষে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে বইটি প্রকাশিত হয় লুই কোপল্যান্ড কোম্পানি থেকে। ১৯২৮, ২১ ডিসেম্বর বইটি ভারতে পুনঃপ্রকাশ করেন সান্ডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ‘প্রবাসী’ ও ‘মর্ডান রিভিউ’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

বইটিতে সান্ডারল্যান্ড লেখেন— একটি জাতির অন্য আর একটি জাতিকে শাসন করার অধিকার নেই। তাই ব্রিটেনও ভারতকে শাসন করতে পারে না। ভারতের মতো ঐতিহ্যশালী ও সুসভ্য দেশকে পদানত করে রাখা অপরাধ এবং পৃথিবীর শান্তি ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ প্রয়োজন। যে ভারতবাসী বিগত তিন হাজার বছর ধরে নিজেদের শাসন করেছে, তারা আজও পারবে। তাই ইংরেজের গায়ে-পড়া অভিভাবকত্বের প্রয়োজন নেই। একমাত্র ভারতবাসীর হাতেই ভারতবাসীর স্বার্থ সুরক্ষিত থাকতে পারে। কয়েক মাসের মধ্যেই প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ। মহাত্মা গাঁধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দু’জনেই প্রশংসা করে সান্ডারল্যান্ডকে চিঠি লিখেছিলেন। দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ শুরু হতেই নড়েচড়ে বসে ব্রিটিশ সরকার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে এই বই। প্রমাদ গুনল তারা। নিষিদ্ধ করা হল বইটি। প্রবাসী পত্রিকার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বই বাজেয়াপ্ত করা হল। রাজদ্রোহের অপরাধে গ্রেফতার করা হয় সজনীকান্ত দাস এবং রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে। যদিও দু’জনেই এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন।

ভারতের স্বাধীনতার এগারো বছর আগে মারা যান সান্ডারল্যান্ড। আমৃত্যু এদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি মুখ খুলেছেন, কলম ধরেছেন। অলক্ষে তিনি নিজেকে জড়িয়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে।

Jabez Thomas Sunderland Independence Movement India UK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy