Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ভারতীয়দের গালি দেওয়ার জন্য স্কুলে শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীকে প্রহার কিংবা সাহেব কর্তার মুখের উপর ইস্তফা, তিনি সর্বত্রই আপসহীন
Newspaper

কলমকেই চাবুক করে তুলেছিলেন তিনি

‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ কাগজের সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। দেশকে লুটেপুটে নেওয়া ইংরেজ এবং শহুরে বাবুশ্রেণির সাহেব-তোষণ— সমান কষ্ট দিয়েছিল তাঁকে।

স্মৃতিস্তম্ভ: হরিশ মুখার্জি পার্কে স্থাপিত। তাঁরই স্মৃতির উদ্দেশে ।

স্মৃতিস্তম্ভ: হরিশ মুখার্জি পার্কে স্থাপিত। তাঁরই স্মৃতির উদ্দেশে ।

রাহুল দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

মৃত্যুর আগেও ঘোরের মধ্যে ‘গিরীশ, গিভ দ্য প্রুফ! গিভ দ্য মেশিন প্রুফ প্লিজ়...’ বলে গিরীশচন্দ্র ঘোষের কাছে প্রুফ চেয়েছিলেন ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’-এর আপসহীন সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ‘ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক’ বলা হয় তাঁকে। সিপাহি বিদ্রোহকে ‘দি গ্রেট ইন্ডিয়ান রিভোল্ট’ বলার দুঃসাহসিকতা সে সময়ে তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন।

ভবানীপুর তখন একেবারেই গণ্ডগ্রাম। সাত বছরের হরিশচন্দ্র রেভারেন্ড পিফার্ডের বদান্যতায় ভবানীপুরের ইউনিয়ন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এক শ্বেতাঙ্গ ইংরেজ, ভারতীয় ছেলেদের ‘ব্লাডি ইন্ডিয়ান নিগার’ বলে গালিগালাজ করায় স্কুলচত্বরেই হরিশ তাঁকে বেদম প্রহার করেন। পিফার্ড তাঁকে সস্নেহে সতর্ক করে বলেন, শুধু নির্ভীক হলেই হয় না, আত্মরক্ষার কৌশলটাও জানতে হয়। তেজস্বী হওয়া ভাল কিন্তু রাগের বশে নির্বুদ্ধিতা ঠিক নয়। মাত্র পনেরো বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে বেরোতে হয় হরিশকে, কিন্তু মাসের পর মাস ঘুরেও কোনও চাকরি জোটে না। তাঁকে শুনতে হয়, “এত অনেস্টি দেখালে কোম্পানির রাজত্বে কি আর পয়সা রোজগার করা যায় রে বাপ?”

শেষ পর্যন্ত ‘টলা অ্যান্ড কোম্পানি’-র কলুটোলার অফিসে নেটিভ রাইটারের চাকরি পান হরিশ। সেখানে গিয়ে দেখলেন, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে নেটিভদের বেতনে বিরাট ফারাক। দেশীয় লোকেরা প্রাপ্য মর্যাদাও পায় না, শ্বেতাঙ্গরা তাদের সব সময়ই ঘৃণা আর তাচ্ছিল্য করে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে পর পর হারালেন স্ত্রী এবং সন্তানকে। আবার বিয়ে করলেন তিনি, কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে খুঁজতে শুরু করলেন ভালবাসার প্রথম স্ত্রী-কেই। প্রথম স্ত্রীকে তিনি ‘ওফেলিয়া’ বলে ডাকতেন, হ্যামলেটের গল্প শোনাতেন। হরিশের দ্বিতীয় বিয়ে সুখের হল না। অফিসেও মসৃণ ভবিষ্যৎ আর উন্নতির পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াল তাঁর প্রতিবাদী স্বভাব। নেটিভ কর্মচারীদের হয়ে মাইনে বাড়ানোর আর্জি নিয়ে গেলেন এবং অপমানের জবাবে মুখের ওপর ইস্তফা দিয়ে এলেন। সাহেব কর্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়েও এলেন, ‘যাঁরা অজস্র বেআইনি পথে উৎকোচের টাকায় এদেশ থেকে লাখোপতি, কোটিপতি হয়ে দেশে ফিরে গেছেন, তাঁরাও নিশ্চয়ই ইন্ডিয়ান নেটিব?’

এ বার মাসখানেকের মধ্যেই পেয়ে গেলেন নতুন চাকরি, মিলিটারি অডিটর জেনারেলের অফিসে। এই অফিসে বাঙালি কেরানির সংখ্যা খুবই কম। তাঁদেরই এক জন, গিরীশচন্দ্র ঘোষ খুব বন্ধু হয়ে গেলেন হরিশের। ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি হয়ে উঠল হরিশের তীর্থক্ষেত্র। সেখানকার লাইব্রেরিয়ান প্যারীচাঁদ মিত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপ হল তাঁর। ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস তন্নতন্ন করে পড়লেন তিনি। শ্বেতাঙ্গদের ভাগ্যান্বেষণে এ দেশে এসে আখের গুছিয়ে নেওয়া এবং এ দেশের মানুষের হ্যাংলামি, দুটোই পীড়া দেয় হরিশকে। তিনি বুঝতে পারেন, ব্রিটিশ শাসনের বহু কলঙ্কজনক কাহিনি নেটিভদের সামনে থেকে সরিয়ে রাখতে চান কোম্পানির শাসকেরা। এই দেশটা ব্রিটিশদের কাছে সোনার-ডিম-পাড়া হাঁসের মতো, কলকারখানার কাঁচামাল জোগাড় আর বেপরোয়া লুঠের আদর্শ উপনিবেশ। এ দেশের মানুষের চোখ ফোটাতে হলে, তাদের মতামত ব্রিটিশদের কাছে পৌঁছে দিতে হলে, এ দেশের মানুষের হাতেও থাকা দরকার এক ধারালো অস্ত্র, যার নাম সংবাদপত্র। গিরীশের মুখ থেকেই হরিশ জানতে পারেন, নতুন এক সংবাদপত্র আসতে চলেছে, যার নাম, ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’। এত দিনে ব্রিটিশ-ঘেঁষা পক্ষপাতদুষ্ট ‘ইংলিশম্যান’ কাগজের যোগ্য জবাব দেওয়া যাবে।

‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ কাগজে লিখতে শুরু করলেন হরিশ। তাঁর কলম হয়ে উঠল চাবুক। ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নিলেন তিনি। তিন মাসের মধ্যেই পত্রিকাটি সম্পাদনা করার দায়িত্ব পড়ল তাঁর উপর। এর পাশাপাশি ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের কাজ। ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’-কে বাঁচাতে তার মালিকেরই অনুরোধে তিনি তার স্বত্ব কিনে নিতে বাধ্য হলেন নিদারুণ ঋণের ভার সহ্য করেও। সরকারি চাকরি বাঁচাতে স্বত্বাধিকারী হিসেবে রাখলেন দাদার নাম। ব্রিটিশ অফিসের এক সাধারণ কেরানি, একের পর এক অসাধারণ পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখায় আক্রমণ করে চলেছেন লর্ড ডালহৌসির নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবিস্তার এবং কোম্পানির নিজস্ব আইনের কারচুপিকে, ভারতীয় সভ্যতার তুলনায় হেয় করে দেখাচ্ছেন ব্রিটিশ সভ্যতাকে— এমন অভূতপূর্ব ঘটনা পরাধীন দেশ আগে কখনও দেখেনি।

তত দিনে গোটা বাংলা জেনে গেছে, ঝড়-জল-ভূমিকম্প যা-ই হোক না কেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ বেরোবেই। হরিশের মনে তখন হিন্দু সমাজের নিষ্ঠুর লোকাচারের বিরুদ্ধে তীব্র বিতৃষ্ণা। তিনি বুঝতে পেরেছেন, দেশের লোকের নির্লজ্জ তোষামোদ আর আত্মসমর্পণের সুযোগেই ব্যবসা করতে এসে এত বড় দেশের কর্তৃত্ব পেয়ে বসেছে কোম্পানি। ব্রিটিশের ধূর্ত অভিসন্ধি, আইনের নামে গোটা ভারত গ্রাস করে নেওয়া। কোম্পানির হয়ে লড়াই করেছে শুধু সমাজের নিচু স্তরের মানুষ, একের পর এক আছড়ে পড়েছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, তাঁতি বিদ্রোহ, রেশম চাষিদের বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ। আর এ দিকে এডুকেটেড বাবুরা, দেওয়ান আর বেনিয়ারা ব্রিটিশের সঙ্গে বখরায় কারবার করে, দেঁতো হাসি আর হিসেবি স্বার্থবুদ্ধি দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন।

তখন এক দিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলন, অন্য দিকে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাদের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। হরিশ বুঝতে পারেন, হিন্দুস্থানি সেপাইদের জানকবুল মদত না পেলে হিন্দুস্থানের এত মুলুক দখল করার শক্তি ব্রিটিশদের হত না। আর এই হাজার হাজার মানুষ সারা বছর দানাপানি জোটে না বলেই বাধ্য হয়ে এসে নাম লেখায় কোম্পানির খাতায়। যথারীতি চোখ-কান বুজে থাকে শিক্ষিত নেটিভরা, নানা রকম সুযোগ-সুবিধে পেয়ে রাজভক্তিতে গদগদ হয়ে ওঠে। হরিশ অনুভব করেন, দেশের সামান্য সেবা করার সুযোগ একমাত্র রয়েছে ওই পেট্রিয়ট-এর পৃষ্ঠায়। ইতিমধ্যে গোটা দেশে সিপাহি বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেপাইদের বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে গরিব চাষি-মজুরের দলও।

বিদ্রোহের করুণ পরিণতির পর হরিশ বিশে ডাকাতের কাহিনি জানতে পারেন। দুর্ধর্ষ এবং নৃশংস নীলকর স্যামুয়েল ফেডির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে বিশের ফাঁসি হয়েছিল। বিশ্বনাথ সর্দার সঙ্গীদের কাছে ছিলেন ‘সাক্ষাৎ মহাপুরুষ’, গরিব মানুষের ত্রাতা, অত্যাচারীর যম। তীব্র শ্লেষে হরিশের মনে হয়, ‘ইংরেজের চোখে শেরউড জঙ্গলের রবিন হুড এক আদর্শ প্রবাদপুরুষ, কিন্তু নদীয়ার বামনীতলার জঙ্গলের বিশ্বনাথ সর্দার এক ঘৃণ্য ডাকাত!’ একে একে অনেক তথ্যই জানতে পারলেন হরিশ। ক্যারেল ব্লুমই বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম ইংরেজ নীলকর। জানলেন, বেঙ্গল ইন্ডিগো কোম্পানির দোর্দণ্ডপ্রতাপ ম্যানেজার লারমুর সাহেবের কথা।

চাষিরা এই নীলকর প্রভুদের নিঃশর্ত দাসে পরিণত হয়েছে। দাদন যে এক বার নেবে, নীলচাষ তাকে করতেই হবে। না করলে কারাদণ্ড অনিবার্য। নীলকরের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ? আইন নেই যে! মফস্সলের আদালতে শ্বেতাঙ্গদের নামে মামলা ঠোকা যায় না। বাংলার গ্রামে গ্রামে তখন চাষির ঘরে-ঘরে আগুন জ্বলছে, তার চোখের সামনে বৌ-মেয়েদের বিবস্ত্রা করে চাবুক মারা হচ্ছে, তার পর কুঠিতে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের চূড়ান্ত সম্ভ্রমহানি করা হচ্ছে। রাজা রামমোহন বা প্রিন্স দ্বারকানাথের মতো কলকাতার বাবুরা অনেক সংস্কারেই হাত দিয়েছেন কিন্তু অধিকাংশই ছিল একপেশে। জমিদারির স্বার্থে যেখানে আঘাত পড়েছে, সেখানেই শুধু বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষের জন্য তাঁদের ভাবনাচিন্তার পরিচয় বিশেষ মেলেনি।

বাংলার গ্রাম তখন কাঁপিয়ে দিচ্ছেন দুই ভাই— বিষ্ণুচরণ আর দিগম্বর বিশ্বাস, যে দুই বাগদি সর্দার বিশ্বনাথের প্রকৃত উত্তরাধিকার। নীলকরদের চোখে ত্রাস হয়ে উঠেছেন নানাসাহেব আর তাঁতিয়া টোপি। বিষ্ণুচরণ আর দিগম্বরের চৌগাছা গ্রামে নীলকুঠির হাজার হাজার লেঠেল এক গভীর রাতে কী ভাবে অত্যাচার চালায়, তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন লেখক। দুঃখিত হরিশের মনে হয়, ‘যে উদ্ধত চোখে ওরা আমাদের দেশের মানুষকে মানুষ বলেই দেখে না, দুঃখের কথা, ওদের সেই উদ্ধত চোখে আরো ঔদ্ধত্যের সুর্মা পরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরই দেশের এক দল মানুষের চেষ্টার ত্রুটি নেই!’ নদিয়ার গ্রামাঞ্চলের প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদদাতা হিসেবে হিন্দু পেট্রিয়ট-এর প্রথম প্রতিনিধি হন কুমারখালির হরিনাথ মজুমদার, যিনি ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামেই সমধিক পরিচিত। সেই সময় চাষিরা কত প্রতিকূলতা সহ্য করে বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন, নীলকর, ব্রিটিশ প্রশাসন এবং সংবাদপত্র কী ভূমিকা নিয়েছিল, এ সবেরই বিশদ বিবরণ দিয়েছেন লেখক। নীল বিদ্রোহের একের পর এক বিবরণ প্রকাশ করতে থাকেন হরিশ। তাঁর মনে হয়, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক অসাধারণ ঘটনা। এই বিরাট বিপ্লবের সময় তাদের হয়ে না লিখে যদি হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে সেটা বোধহয় হবে জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাপ!’ বার বার নীল কমিশন বসানোর দাবি জানান তিনি।

হরিশচন্দ্র তাঁর অগ্নিগর্ভ ভাষায় লেখেন, ‘নীল আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার পর থেকে এই বাংলাদেশের রায়তেরা যে অসামান্য নৈতিক শক্তির স্পষ্ট পরিচয় দিয়েছে, এখন পর্যন্ত তা পৃথিবীর আর কোনো দেশের কৃষকদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এইসব দরিদ্র কৃষকদের রাজনৈতিক জ্ঞান এবং ক্ষমতা নেই। সরকার, সংবাদপত্রগুলি, আইন–আদালত সমস্তই তাদের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও প্রায় নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় এই নিঃস্ব কৃষকসমাজ এমন একটা বিপ্লব ঘটাতে সমর্থ হয়েছে, যা গুরুত্ব এবং মহত্ত্বে পৃথিবীর যে কোনো দেশের উল্লেখযোগ্য সামাজিক বিপ্লবের তুলনায় কোনোক্রমেই নিকৃষ্ট নয়।’ অথচ তখনকার এই জীবন-মরণ সংগ্রামের কোনও প্রভাবই পড়েনি কলকাতার বুকে। সেখানে তখন শহুরে বাবু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাহেব-তোষণের প্রতিযোগিতা। জাতির শিক্ষিত অংশের এই ভণ্ডামি এবং অন্তঃসারশূন্যতার বিরুদ্ধে একা লড়াই করে যান হরিশ। যখন-তখন গাঁয়ের চাষিরা তাঁর বাড়িতে এসে আছড়ে পড়ে, তাদের জন্য টাকার সংস্থান রাখতে হয় তাঁকে। শুধু কলম দিয়েই নয়, নিজের যথাসর্বস্ব সংস্থান দিয়েও তিনি আমৃত্যু সাধ্যমতো বিপ্লবের রসদ জুগিয়েছিলেন।

সাঁইত্রিশ বছরের হরিশের শেষ দিনগুলো কাটে ঔপনিবেশিক শাসক আর যক্ষ্মা রোগের সঙ্গে লড়াই করে। হরিশ শয্যাশায়ী, এ দিকে নদিয়া, যশোর, পাবনা, রাজশাহী, ফরিদপুরের লাখ লাখ চাষি আগ্রহে অধীর, কবে তারা তাঁকে এক বার চোখের দেখা দেখবে! নীলচাষিদের সম্মিলিত শক্তি শেষ অবধি অসাধ্যসাধন করে। এক দিন বত্রিশ বছরের দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণ’ নিয়ে দেখা করতে আসেন হরিশের সঙ্গে। আর এক দিন এলেন রেভারেন্ড জেমস লং, নীল আন্দোলনের আর এক পুরোধা। কালীপ্রসন্ন সিংহ দেখা করতে এসে বললেন, ‘লক্ষ লক্ষ গরীব নীলচাষী এ বার পিতৃহীন
হয়ে যাবে!’

নিজের দেশকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন হরিশচন্দ্র এবং সেই উনিশ শতকের বাংলায়, নিজে এলিট শ্রেণির এক জন হয়েও, সেই দেশকে তিনি খুঁজে পেয়েছেন শোষিত, নিপীড়িত, প্রান্তিক মানুষের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newspaper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE