Advertisement
E-Paper

বুড়ো সাধু কেবলম্‌

বিজ্ঞাপন নেই, তবু জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এ যেন রামনাম কেবলম্ ! বিজ্ঞাপন নেই, তবু জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এ যেন রামনাম কেবলম্ ! 

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
সুরাস্রষ্টা: কপিল মোহন।

সুরাস্রষ্টা: কপিল মোহন।

ও আমার প্রিয়তম বন্ধু। আমার ভাল সময়ে পাশে ছিল, খারাপ সময়েও। যে কোনও দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে ভরসা করতাম ওকেই। সাফল্য উপভোগ থেকে শুরু করে ঠান্ডা লাগলে আরাম দেওয়া— ওর হাজারটা গুণ।’

পড়ে মনে হবে, কে এমন বন্ধু? কোনও মানুষ নয়, এই বন্ধু এক পানীয়, বিখ্যাত ভারতীয় রাম ‘ওল্ড মঙ্ক’। এই রাম যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য ইন্টারনেটে পিটিশন করেছিলেন এক সুরাপ্রেমী। প্রিয় রাম সম্বন্ধে তিনিই লিখেছেন এই ভূমিকা।

ওল্ড মঙ্ক-এর বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া আটকাতে সত্যিই পিটিশন করে ইন্টারনেটে সই সংগ্রহ শুরু হয়েছিল। ২০১৫-তে। গুজব রটে, বিক্রি কম বলে নাকি ওল্ড মঙ্ক তৈরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সুরাপ্রেমীদের হাহাকারে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিন কয়েক ধরে ট্রেন্ডিং ছিল ওল্ড মঙ্ক। শেষে নির্মাতা সংস্থা বিবৃতি দিয়ে জানায়, বন্ধ হচ্ছে না ওল্ড মঙ্ক।

এ বছর জানুয়ারিতে ওল্ড মঙ্কের ‘জনক’ কপিল মোহনের মৃত্যুর পরও নস্টালজিয়ার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঢেউয়ে উঠে আসে অনেক জানা, না জানা ইতিহাস। এডওয়ার্ড ডায়ার নামে আদতে স্কটল্যান্ডের এক বাসিন্দা ১৮৫৫-তে হিমাচল প্রদেশের কসৌলিতে শুরু করেন এক বিয়ার তৈরির কারখানা। সেটা হাতবদল হয়ে আসে মোহনদের কাছে। মোহন ম্যাকিন নামে নতুন কারখানায় ১৯৫৪ সালে প্রথম তৈরি হয় ওল্ড মঙ্ক। আর একটি চমকপ্রদ তথ্য, এই এডওয়ার্ড ডায়ার ছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কুখ্যাত ব্রিটিশ আর্মি অফিসার রেজিনাল্ড ডায়ারের বাবা।

১৯৭০-এর গোড়ার দিকে কপিল কোম্পানির দায়িত্ব নেন। তাঁর নেতৃত্বেই ‘ওল্ড মঙ্ক’ সারা দেশে জনপ্রিয় হয়। মৃত্যুর খবরে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গিয়েছিল কপিল মোহনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যে।

জনপ্রিয় ডার্ক রাম ‘ওল্ড মঙ্ক’

ওল্ড মঙ্ক-এর এই জনপ্রিয়তার পিছনে বিপুল বিজ্ঞাপনের অবদান নেই। কপিল মোহন বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞাপন নয়, ওল্ড মঙ্কের অনন্য স্বাদই সুরাপ্রেমীদের কাছে টানবে। সেটাই হয়েছে। মুখে মুখে প্রচারের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে ‘বুড়ো সাধু’। কিছু কিছু পণ্যের জনপ্রিয়তা এমনই হয়, পণ্য ও তার ব্র্যান্ড মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওল্ড মঙ্ক তেমনই। তাই কপিল মোহনের মৃত্যুর পরে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছিল ঠান্ডা পানীয়, এমনকী, প্রতিদ্বন্দ্বী রামের ব্র্যান্ডও। জনপ্রিয়তার আর এক প্রমাণ ওল্ড মঙ্ক-প্রেমীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘কমরেড’। কমরেড, অর্থাৎ ‘কাউন্সিল অব ওল্ড মঙ্ক রাম অ্যাডিকটেড ড্রিঙ্কারস অ্যান্ড এক্সেনট্রিক্স।’ গ্রুপে সব ‘কমরেড’ শেয়ার করেন ওল্ড মঙ্ক-এর সঙ্গে তাঁদের প্রিয় মুহূর্ত। এ এক অন্য দুনিয়া, যেখানে ‘কমরেড’-এর মুখে শোনা যায় ‘রাম’-এর জয়গান।

মুখোমুখিও দেখা করেন এই কমরেডরা। যেমন সম্প্রতি করেছিলেন বেঙ্গালুরুতে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগ করে তাঁরা আয়োজন করেন ‘গ্যাদারিং অব দ্য মঙ্কস’, নামের এক অনুষ্ঠানের। দিল্লিতেও একটি পাব-এ শুরু হয়েছে ওল্ড মঙ্ক-প্রেমীদের বৈঠকি আড্ডা।

আড্ডাটা শুরু করে দিয়ে গিয়েছেন কপিল মোহন। তিনি নেই, তবু সেই আড্ডা ফুরোবার নয়।

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর

Kapil Mohan Creator Old Monk Indian entrepreneur Teetotaller Dark Rum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy