Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Novel

novel: মায়াডোর

ভরা অফিসবেলায় ব্যাঙ্কের কর্ণধার মোবাইল গেম খেলছে, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। গৌরগোপালের কেস আলাদা।

ছবি: বৈশালী সরকার।

ছবি: বৈশালী সরকার।

অভিনন্দন সরকার
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:২০
Share: Save:

মঞ্জীরা বোনের দিকে তাকাল। গত এক বছরের মধ্যে হঠাৎ যেন এক পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠেছে মিহিকা। অথচ কলেজে ওঠার পরেও বেশ কিছু দিন পর্যন্ত তার মধ্যে একটা খুকি-খুকি ভাব ছিল।

মঞ্জীরাকে লম্বায় ছাপিয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর, ছেলেদের মতো করে কাটা চুলে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে পড়ছে। জিন্স আর টি-শার্ট ছাড়া অন্য কিছু পরতে তাকে বহু দিন দেখে না মঞ্জীরা, তবু সেই ক্যাজ়ুয়াল পোশাকেও যৌবনের প্লাবন লুকিয়ে রাখতে পারা যাচ্ছে না আজকাল।

মঞ্জীরা চোখ সরিয়ে নিল। মিহিকার চোখের কোলে কালি জমেছে। ডার্ক সার্কল। খুব বেশি স্ট্রেস নিয়ে ফেলছে কি এইটুকু মেয়ে? আর একটু যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল কি মঞ্জীরার?

আসলে বোনের এই অমানুষিক খাটনির কোনও কার্যকারণ আজও খুঁজে পায়নি মঞ্জীরা।

দু’মাস কলেজ করতে না করতে মিহিকা একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ানোর কাজ নিয়ে নিল। সেখান থেকে বেরিয়ে দুটো টিউশন পড়াতে যেত, ইদানীং সেই টিউশনির সংখ্যা বেড়েছে। আজকাল রাত দশটার আগে বাড়িই ফেরে না মেয়ে।

আর মা মারা যাওয়ার পর থেকে তো আরও সাপের পাঁচ পা দেখেছ মিহিকা। মাকে তবু সে কিছুটা মান্যগণ্য করত, দিদিকে সম্ভবত সে মানুষের পর্যায়েই ফেলে না।

বেশ কিছু দিন এই অনিয়ম সহ্য করার পরে এক বার মঞ্জীরা ছাই মাখিয়ে ধরেছিল বোনকে, “এ সব কী শুরু করেছিস? এত খাটাখাটনি না করে মন দিয়ে পড়াশোনাটা শেষ করলে হত না? কলেজে ক্লাস কর, দরকার হলে চাকরির কম্পিটিটিভ পরীক্ষাগুলোর প্রিপারেশন নে।”

মিহিকা প্রথমে রা কাড়েনি, মঞ্জীরা বেশি চাপাচাপি করলে এক সময় বলেছিল, “কিসের চাকরি দিদি? তুই কি ভাবলি সারা জীবন তোর আর মায়ের মতো একটা চাকরি করে কাটিয়ে দেব আমি? আই অ্যাম অ্যান অন্ত্রপ্রোনর, নিজের স্টার্ট-আপ প্ল্যান করছি। আর তার জন্য আই নিড আ লট অব মানি। হার্ড ক্যাশ। তবে তুই চিন্তা করিস না। তোর কাছে হাত পাতব না।”

এর পর আর কী-ই বা বলা চলে। নীরবে সরে এসেছিল মঞ্জীরা। মিহিকার গলার স্বরে সে দিন আত্মবিশ্বাসের চেয়েও বেশি কিছু ছিল, ছিল মা-বাবা-দিদির অনাড়ম্বর জীবনযাপনের প্রতি এক প্রবল তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিত।

রঞ্জনাদির বলা কথাটা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল মঞ্জীরা। থাক, পরে এক দিন ঠান্ডা মাথায় সময় নিয়ে জানতে চাইবে। মিহিকা তত ক্ষণে ব্যাগ কাঁধে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছে। তার উদ্দীপনা আজ চোখে পড়ার মতো।

মঞ্জীরা চুপচাপ কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। মুখে কিছু না বললেও সে জানে, মিহিকা আজ কলেজ যাবে না, সে যাবে অন্য কোথাও। মিহিকা এত বড়ও হয়নি যে দিদির চোখকে বার বার ফাঁকি দিয়ে যাবে।

মঞ্জীরাও পৃথিবীটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছে। মিহিকার বয়সে ডাম্বো পেটে এসে গেছিল তার।

মিহিকা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে যেতেই হঠাৎ এই ফ্ল্যাটে নিজেকে ভীষণ রকম একা মনে হতে লাগল মঞ্জীরার। এই ঘটনাও খুব পুরনো নয়। প্রথম প্রথম আকাশদীপদের বালিগঞ্জের জমজমাট বাড়ি ছেড়ে মায়ের এই ফ্ল্যাটে এসে ওঠার পর, বেশ কয়েক দিন যেন একটা অন্য রকম জেদ ছিল তার ভিতরে। সম্ভবত মা-ই এই জেদটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল, এমনকি আকাশদীপ সংসার ফেলে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরেও যখন মঞ্জীরা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নড়ছিল না, মা নিজেই তার কানে মন্ত্রের মতো দিনের পর দিন আউড়ে গেছে, “মঞ্জি, তুই আমার মেয়ে হয়ে এ ভাবে পড়ে পড়ে মার খাবি? আমি কি তোকে এ রকম করে মানুষ করেছি? আয়, আমার কাছে আয়। তোর বাবা নেই তো কী হয়েছে, মা তো বেঁচে আছে।”

তবু সময় লেগেছিল মঞ্জীরার। শেষে যে দিন আকাশদীপের লিভ-ইন রিলেশনের খবরটা সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্র হতে লাগল, তখন পাকাপাকি ও বাড়ির পাট চুকল মঞ্জীরার।

তখন দিনের একটা বড় সময় একা থাকতে ভালবাসত মঞ্জীরা, অথচ এখন সেই নির্জনতাই যেন গিলে খেতে আসে তাকে।

সময় নিয়ে স্নান করল মঞ্জীরা, অফিসের পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়াল।

বেশ কিছু দিন হল আয়নায় নিজেকে দেখা হয়নি। লম্বা চুল, আয়ত চোখ, ভরভরন্ত দেহ... অথচ এতটুকু যত্ন নিচ্ছে না নিজের। চুলে আলগোছে চিরুনি, হালকা প্রসাধন আর সামান্য লিপস্টিক। কার জন্যই বা সাজবে সে? কে বসে আছে তার মুখের দিকে তাকাবে বলে?

কয়েক মুহূর্ত থমকে গেল মঞ্জীরা। যে ছিল, যে তাকালে মঞ্জীরার নিজেকে সুন্দরী মনে হত, আপাদমস্তক আশ্চর্য ভাললাগায় ভরে যেত মঞ্জীরা, তাকে তো নিজের হাতেই দূরে সরিয়ে দিয়েছে সে।

আয়না থেকে একটা ছোট্ট কালো টিপ কপালে পরতে গিয়েই ড্রেসিং টেবিলের তাকের দিকে চোখ পড়ল তার। ছোট্ট গণেশমূর্তিটা আজ নেই। জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে।

গত বছর দার্জিলিং গিয়েছিল উত্তীয়। একটা তিব্বতি কিউরিয়ো শপ থেকে তার জন্য নিয়ে এসেছিল স্মৃতি হিসেবে। আজ সেই মূর্তিটা নিয়েই স্কুলে চলে গেছে ডাম্বো।

বুকটা ফের হু হু করে উঠল মঞ্জীরার। মূর্তির জন্য, না কি উত্তীয়র জন্য, তা সে নিজেও ঠিক করে বুঝতে পারল না।

আজ তিনটে পয়েন্ট ভিজ়িট করার ছিল মঞ্জীরার। একটা প্রাইভেট ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আর দুটো শপিং মল।

শপিং মলের কাজ দুটো রেগুলেশন জব। মঞ্জীরাদের কোম্পানির পটেটো চিপসগুলোর ডিসপ্লে ঠিকঠাক আছে কি না, সেল্‌স-এর হার কেমন, এই সব নিয়ে ফ্লোর ম্যানেজারের সঙ্গে অল্প কথায় আলাপ সারল, টুকিটাকি ইনস্ট্রাকশন দিল ফ্লোরে তাদের কোম্পানির সেল্‌স-এর ছেলে দুটোকে।

একটু সময় লাগল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। সেখানকার ব্যাপারস্যাপার দেখে মঞ্জীরা অবাক। তাদের জন্য বরাদ্দ কাউন্টারগুলোয় অন্য একটা বহুজাতিক সংস্থার পটেটো চিপস-এর প্যাকেট উপচে পড়ছে।

মালিক আবার তখনও আসেননি। বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হল মঞ্জীরাকে। মালিক এলেন, দেখা গেল ভদ্রলোক রীতিমতো ক্ষুব্ধ, মঞ্জীরার আগে যে সেলস ম্যানেজার ছিলেন, তিনি নাকি এই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বাইরে একটা বড় গ্লো-সাইন বোর্ডের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার পর সব ভোঁ ভাঁ। মালিক বিরক্ত, ‘কথা দিয়ে কথা না রাখা, এ আবার কেমনতর বিজ়নেস আপনাদের...’ এই সব কথাও শুনতে হল মঞ্জীরাকে।

মঞ্জীরা পড়ল আতান্তরে। আগের সেলস ম্যানেজার সম্প্রতি ভাল অফার পেয়ে একটা কোল্ড ড্রিংক্স কোম্পানিতে চলে গেছে। তা যাক, তাতে কারও কোনও আপত্তি নেই, তবে যাওয়ার আগে মঞ্জীরাকে ফেলে দিয়ে গেছে মস্ত সমস্যায়।

ব্যাপারটা নিয়ে বসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। খুব দ্রুত। স্টোরের মালিকের সঙ্গে যথাসম্ভব বিনয়ের সঙ্গে কথা বলল মঞ্জীরা, সেলস-এর কাজে মাথা গরম করতে নেই, মনে মনে যতই গালাগাল দাও, মুখে থাকবে অনাবিল হাসি, ‘আসুন স্যর, বসুন ম্যাডাম’ করে যেতে হবে অনবরত। তবে না মিলবে কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশন, তবে না আকাশ ছোঁবে সেলস-এর গ্রাফ।

দু’দিনের মধ্যে হায়ার অথরিটির সঙ্গে আলোচনা করে ফিরে আসবে মঞ্জীরা, এমন কথা দিয়ে যখন সে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে বেরোল, তখন পশ্চিম আকাশে সূর্য লাল হয়ে এসেছে।

এক বার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে, স্পেশাল কোনও মিটিং না থাকলে অল্প সময় থেকেই কেটে পড়বে মঞ্জীরা। হেড অফিসে একটা মেল করতে হবে, সেটা অফিসের কম্পিউটার থেকে করবে, না কি রাতে নিশ্চিন্ত মনে নিজের মোবাইল থেকে পাঠাবে? আর ভাবতে ভাল লাগছে না... ‘ধুত্তোর’ বলে মঞ্জীরা একটা বাসে উঠে পড়ল।

অফিস ছুটির সময় হয়েছে শহরে, তবে মঞ্জীরা যাচ্ছে উল্টো দিকে, বাসে তাই ভিড় বেশ কম।

উল্টো দিকের একটা কফি শপে ছেলেমেয়ের দল জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। হাওয়ায় উড়ছে ক্যান্ডিফ্লস রোম্যান্স।

মঞ্জীরার মুখে একটা আবছা হাসি ফুটে উঠল। উত্তীয়র কথা কী ভয়ানক মনে পড়ছে তার। হয়তো বাকি জীবনে যত বার কোনও কফি শপের পাশ দিয়ে যাবে মঞ্জীরা, অবধারিত ভাবে তার ওই বোকা, তালকানা ছেলেটার কথা মনে পড়ে যাবে।

অথচ প্রথম দেখাটা কী বিচ্ছিরি ভাবেই না হয়েছিল! মায়ের হঠাৎ মারা যাওয়ার ধাক্কাটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মঞ্জীরা। এমন সময়েই তীব্র জটিলতা মায়ের বকেয়া টাকাপয়সা আদায় নিয়ে। এক বার মায়ের ব্রাঞ্চ, এক বার হেড অফিস, এক বার লোকাল যে ব্যাঙ্কে মায়ের অ্যাকাউন্ট— ছুটে ছুটে জুতোর সুকতলা খুলে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল মঞ্জীরার।

মাত্র ছাপ্পান্ন বছরে চলে গেছিলেন স্নিগ্ধা, ব্যাঙ্কের চাকরিজীবন কিছুটা বাকি থাকলেও নাকি তিনি ভিআরএস-এর অ্যাপ্লাই করেছিলেন। ব্যাপারটা অফিস ইউনিয়ন ভাল চোখে দেখেনি।

এই ভিআরএস অ্যাপ্লিকেশন এবং ইউনিয়নের রক্তচক্ষুর জাঁতাকলেই নাকি তাঁর পিপিএফ, গ্র্যাচুইটি সবটাই আটকে আছে। কোন লেভেলে, কোন অফিসে সেই ফাইলে ধুলো জমছে তা অবশ্য কেউ জানে না।

ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজার পদে ছেলেটি নতুন। উত্তীয়কে প্রথম দেখে ভরসা করা যায় বলেই মনে হয়েছিল মঞ্জীরার।

মুখোমুখি বসে কথা বলতে বলতে এক সময়ে হঠাৎ মঞ্জীরা দেখেছিল, সার্ভিস ম্যানেজার তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।

মঞ্জীরাকে আরও অবাক করে দিয়ে উত্তীয় বলেছিল, “আপনি কি আপনার চুল সব সময় এমন করেই টেনে বেঁধে রাখেন?”

মঞ্জীরা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়েছিল। ব্যাঙ্কের মধ্যে, এক জন স্টাফ, কাস্টমারের সঙ্গে যে এ ভাবে কথা বলতে পারে, এ যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।

বিস্ময় আর উত্তেজনা মিশে গিয়েছিল মঞ্জীরার প্রতিক্রিয়ায়, “এক্সকিউজ় মি!”

উত্তীয় শান্ত গলায় বলেছিল, “চুল খোলা রাখবেন মাঝে মাঝে, আমার মনে হয় আপনাকে বেশি মানাবে। আর একটা ছোট্ট কালো টিপ...”

মা মারা গেছে সম্প্রতি, নতুন চাকরির প্রাণান্তকর চাপ, বাড়িতে ডাম্বো আর মিহিকার দৌরাত্ম্য বাড়ছে পাল্লা দিয়ে— সব দিক থেকে যে নারী বিপর্যস্ত, ভাবের কথাও তার গাত্রদাহের কারণ হয়।

“হোয়াট ননসেন্স!”

উত্তীয় এ বার একটু গুটিয়ে গেছিল যেন, “ইয়ে, মানে, না ম্যাডাম, আমি আপনার ভালর জন্যই বলছিলাম, ইউ মাস্ট লুক গুড টু ফিল গুড।”

লোকটাকে জাস্ট সহ্য করতে পারছিল না মঞ্জীরা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল সে, ব্যাগ কাঁধে তুলে কাঁচুমাচু উত্তীয় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্যাগ কাঁধে তুলে মঞ্জীরা দূরের কেবিনে ঢুকে গেছিল, সেই কেবিনের দরজায় ইংরেজিতে লেখা ছিল— গৌরগোপাল ঘোষ, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার

ব্রাঞ্চ ম্যানেজার গৌরগোপাল ঘোষকে তাঁর অধস্তন কর্মীরা আড়ালে থ্রি-জি বলে ডাকে। তিনি নিজের কেবিনে বসে অত্যন্ত একাগ্রতার সঙ্গে মোবাইলে গেম খেলছিলেন। গেমটা মজার। রেলওয়ে ট্র্যাক ধরে ছুটে চলেছে একটা ছেলে। মোবাইলে বোতাম চেপে তার গতি কমানো বাড়ানো যাচ্ছে। সামান্য বেচাল হলেই বিপদ। সামনে থেকে আসা ট্রেন ধাক্কা দিয়ে উড়িয়ে দেবে ছেলেটিকে। অথবা ধরা পড়ে যাবে পিছু ধাওয়া করে আসা পুলিশের হাতে।

ভরা অফিসবেলায় ব্যাঙ্কের কর্ণধার মোবাইল গেম খেলছে, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। গৌরগোপালের কেস আলাদা। তাঁর ছোট ভাইঝি জেঠুর মোবাইলে এই গেম ডাউনলোড করেছিল এক সময়। সেই ভাইঝি বড় হয়েছে, তার এখন মোবাইল গেমে মতি নেই। বিপদে পড়েছেন গৌরগোপাল। নেশার মতো তাঁকে আঁকড়ে ধরেছে এই মোবাইল গেম। সর্বক্ষণ এই গেম নিয়ে পড়ে আছেন তিনি। বলা ভাল, থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বুঝছেন যে, কাজটা ঠিক হচ্ছে না, তবু জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারছেন কই?

হঠাৎ এক যুবতীকে রণরঙ্গিণী মেজাজে নিজের চেম্বারে ঢুকে পড়তে দেখে তাঁর পিলে চমকে গেল। অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন তিনি। ট্র্যাক ধরে ছুটতে থাকা ছেলের গতি কমে গেছে। পুলিশম্যান তার মাথায় কষিয়েছে ডান্ডার বাড়ি।

গেম ওভার!

মঞ্জীরা তাঁর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় বলল, “এই যে! আপনি এখানে বসে আছেন! আর ও দিকে আপনার স্টাফরা যে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে কাস্টমারদের সঙ্গে, সেটা কে দেখবে?”

গৌরগোপাল তাঁর প্রকাণ্ড ভুঁড়িসমেত উঠে দাঁড়ালেন, মেয়েটি রাগে কাঁপছে। খুব ছোটবেলায় এক জন উন্মাদ মানুষ রেগে গিয়ে গৌরগোপালকে কামড়ে দিয়েছিল, তার পর থেকে রাগত অবস্থায় কাউকে দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর ভয় হয়, এই বুঝি তাঁকে কামড়ে দিল।

তিনি মঞ্জীরার দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিলেন, “আপনি শান্ত হয়ে বসুন ম্যাডাম। একটু জল খান। তার পর বলুন কী হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE