Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দেবকে দেখতে সাঁতরে আসছেন ৫০০ লোক

একটা ছবির স্ক্রিপ্ট হারিয়ে যাওয়া। আর একটার শুটিংয়ে মোবাইলের আলোয় পাহাড়ি পথে খাদের ধার বেয়ে নামা। কখনও ক্যামেরায় অযাচিত ধরা দিচ্ছে প্রকৃতি, কখনও অচেনা মানুষের ভালবাসা, ক্যামেরার বাইরে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী ১৯৮৭-’৮৮। বি কম পড়ি। কলেজ যাই না, ঘুরে বেড়াই। ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে জীবন। ‘হাজার চুরাশির মা’ বইটা খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। ঠিক করলাম, ছবি করব। এক বন্ধু স্ক্রিপ্ট বানাল। খুব খাটলাম স্ক্রিপ্ট নিয়ে। তখন ক্যামেরা কাকে বলে, কী করে শট নিতে হয়, কিছুই জানি না। কতকগুলো ইমেজ মাথায় আসছে, সে-ই সম্বল।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

১৯৮৭-’৮৮। বি কম পড়ি। কলেজ যাই না, ঘুরে বেড়াই। ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে জীবন। ‘হাজার চুরাশির মা’ বইটা খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। ঠিক করলাম, ছবি করব। এক বন্ধু স্ক্রিপ্ট বানাল। খুব খাটলাম স্ক্রিপ্ট নিয়ে। তখন ক্যামেরা কাকে বলে, কী করে শট নিতে হয়, কিছুই জানি না। কতকগুলো ইমেজ মাথায় আসছে, সে-ই সম্বল। সুপ্রিয়াদিকে বলেছিলাম ‘সুজাতা’র রোলটা করতে। ওঁর সঙ্গে একটা আত্মিক যোগাযোগ হয়ে গেছিল। তখন এনএফডিসি-র চেয়ারম্যান ভূপেন হাজারিকা, ওঁর কাছে গেলাম। বলেছিলেন, ঠিক আছে, নিশ্চয়ই হবে। অনেক দূর এগনোর পর, স্ক্রিপ্টটাই গেল হারিয়ে! তখন কম্পিউটার কোথায়! অনেক খুঁজেও স্ক্রিপ্টটা আর পাওয়া গেল না।

দূরদর্শনের অফিসে গিয়ে বলেছিলাম, ইয়ুথ টাইম স্লটে এমন একটা কিছু করব, যেটা ফিল্মের মতো হবে। ওঁরা আমাকে বিশ্বাস করে, এইচএমআই লাইট, ক্যামেরা, ট্রলি, সব দিলেন। আধ ঘণ্টার একটা টেলি-ছবি করলাম, ‘স্টেপিং আউট’। ন্যাশনাল নেটওয়ার্কে দেখাল। তার পরই বিজ্ঞাপন-জগতে ঢোকার রাস্তাটা তৈরি হল।

‘অনুরণন’ ছবিটার প্ল্যান এর পরই। নিজেদেরই টাকায় ছবি হবে। লন্ডন-প্রবাসী এক গুজরাতি মানুষের সঙ্গে আমাদের গাঁটছড়া হল। খুব প্যাশনেট মানুষ, কিন্তু সিনেমার কিচ্ছু বোঝেন না। লন্ডন গেলাম আমরা ক’জন, লোকেশন দেখে সব ফাইনাল হলে শুট শুরু হবে। কিন্তু আমার ঠিক ভরসা হচ্ছিল না। উনি মানুষ ভাল, কিন্তু এতখানি শুটিং টানতে পারবেন তো? শুধু প্যাশন দিয়ে কি কাজ হয়? হঠাৎ একটা ফোন পেলাম, লন্ডনেরই এক সাহেবের কাছ থেকে। ক্রয়ডন থেকে কিছুটা দূরে, একটা গল্ফ কোর্সের মাঝখানে সেই সাহেবের প্রাসাদোপম অফিস। গেলাম। বিশাল ভিক্টোরিয়ান হলঘর, এখানে চায়ের সরঞ্জাম, ওখানে পেস্ট্রি। রাজকীয় ব্যাপার। দূরে একটা সোফায় সাহেব বসে। আমাদের সঙ্গে সিনেমা নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। তাঁর কথাবার্তায় তো আমরা মুগ্ধ! আমরা সেই গুজরাতি লোকটিকে ত্যাগ করলাম। সাহেবের সঙ্গে টাই-আপ হল। ফিরে এলাম, সব লোকেশন, শিডিউল ঠিক হল। লন্ডন যাওয়া এগিয়ে আসতেই, কেন জানি না, মনের মধ্যে একটা কু ডাক দিচ্ছে। সকালে বেরিয়েছি, সন্ধেয় বাড়ি ফিরতেই আমার স্ত্রী ইন্দ্রাণী বলল, খুব খারাপ খবর। ওরা এখন যেতে বারণ করছে। ওদের টাকা জোগাড় হয়নি। সেই রাতেই কয়েক জন অভিনেতা-কলাকুশলী প্লেন ধরবে, মাঝরাস্তা থেকে ওদের বাড়ি পাঠালাম। পর দিন আমাদের টিকিট, যাওয়া হল না। সব ভেস্তে গেল। ২০-২২ লাখ টাকা নষ্ট হল। মানসিক অবস্থা দুর্বিষহ। সেই সাহেবকে আর যোগাযোগ করাই গেল না! একটা মস্ত শিক্ষা পেলাম: চাকচিক্যে ভুলো না। কিন্তু রাহুল (বোস) আর ঋতুপর্ণার রোখ চেপে গেল। ঠিক হল, ছবিটা আমরা করবই, যে ভাবেই হোক। পরে ইন্দ্রাণী, জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রযোজনা করল ‘অনুরণন’। হইহই করে চলল। মানুষ মাল্টিপ্লেক্সে এসে বাংলা ছবি দেখা শুরু করলেন, অনেক কিছু পালটাল। কিন্তু ছবি-শুরুর পথে ওই একেবারে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার মতো শকটা কোনও দিন ভুলব না।

‘অনুরণন’-এরই শুট, সিকিমের রাবদান্তসে-তে। দুর্দান্ত লোকেশন, পেছনে অপূর্ব কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবিতে যেটা শেষ সিকোয়েন্স, রাহুল আর বাচ্চা ছেলেটা হেঁটে বেড়াচ্ছে, তার শুটিং। একটা উতরাই ছিল, প্রায় ২০-২৫ মিনিট পাহাড়ি পথে নেমে, আবার উঠে লোকেশনে পৌঁছতে হবে। বাঁ দিকে গভীর খাদ। রাত সাড়ে তিনটেয় আমরা চলেছি, এ দিকে প্রোডাকশন টর্চ আনতে ভুলে গেছে। এখন টর্চ আনতে হোটেলে গেলে আমাদের শট মিস হয়ে যাবে। বড় বড় কৃত্রিম আলো, ভারী ফিল্ম ক্যামেরা নিয়ে অন্ধকারে নামছি। পড়ে গেলে, ছবি তো বটেই, জীবনও শেষ। পুরনো নোকিয়া ফোনের টর্চে যেটুকু আলো হয়, সেই আলোতেই সব নিয়ে নামা হল। এক ঘণ্টা লাগল। আমরা জানি, যখন পৌঁছব তত ক্ষণে আলো ফুটে যাবে, মানে শট মিস। কিন্তু আমরা লোকেশনে পৌঁছে ক্যামেরা বসালাম, আর সূর্যও উঠল। দেরি করেই। চকচক করে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাচ্চা ছেলেটা, যে ঘুমিয়ে ছিল, সে-ও জেগে উঠল। সময়, প্রকৃতি, ক্যামেরা, মানুষ— আশ্চর্য সমীকরণে জুড়ে গেল এ ওর সঙ্গে!

‘অন্তহীন’-এর শুটিংয়ে, রাহুল শুয়ে আছে, বাইরে বৃষ্টি, জানলায় সেই বৃষ্টির শট। দেশপ্রিয় পার্কের তিন তলা বাড়ি লোকেশন। অত উঁচুতে ট্যাঙ্কার দিয়ে জল উঠল না। রেন মেশিনও ফেল। আমার তো মাথায় হাত! হঠাৎ একটা প্ল্যান হল। টবের গাছে যে স্প্রেয়ার দিয়ে জল স্প্রে করি, বা মেক-আপ শিল্পীরা যে ছোট স্প্রেয়ার ব্যবহার করেন, সেই একটা খুঁজেপেতে নিয়ে আসা হল। একটা কাচের টুকরো ক্যামেরার সামনে রেখে, তাতে স্প্রে করা হল সেই দিয়ে। পিছনে সফ্‌ট ফোকাসে রাহুল। খুব কাব্যিক হয়েছিল শটটা। চাপের মুখে, হঠাৎ করেই এ রকম এক-একটা জিনিস হয়ে যায়।

এই ছবিতেই, রিনাদিকে নিয়ে বাইপাসের একটা বাড়িতে, চোদ্দো তলার ওপর শুটিং। হঠাৎ দেখি, অর্ধেক ইএম বাইপাস কালো। বিরাট একটা মেঘ এগিয়ে আসছে। দেখেই সিনেম্যাটোগ্রাফার অভীককে বললাম, ক্যামেরা ঘোরাও। অভীক ক্যামেরা ঘুরিয়ে শট নেবে, হঠাৎ ক্যামেরাটা লক হয়ে গেল। ভেতরের ম্যাগাজিন জ্যাম হয়ে গেছে। শটটা নেওয়া গেল না। বাথরুমে গিয়ে কেঁদেছিলাম সে দিন। কোটি টাকা দিয়েও ওই শট তো আমি আর পাব না! ক’দিন শুট হয়ে গেল। এক দিন শট হচ্ছে, খুব উঁচু একটা বাড়ির ওপর থেকে রাধিকা ওর মা’কে (শাশ্বতীদি করেছিলেন রোলটা) শহরটা দেখাচ্ছে। সাউথ সিটি আবাসনের ৩৫ তলা আমাদের লোকেশন। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখি, সেই সে দিনের মেঘটা! ঘন কালো মেঘ, বৃষ্টি নিয়ে ধেয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে ফের ক্যামেরা ঘোরানো, রোল। যে মেঘকে ক’দিন আগেই ধরতে পারিনি, সে নিজেই, অযাচিত এসে ধরা দিল ক্যামেরায়।

সান ফ্রান্সিসকো-তে ‘অপরাজিত তুমি’র শুটিং। ২০-২৫ জনের দলের সবাই পৌঁছে গেছি, কারও ভিসা পেতে অসুবিধে হয়নি, হল শুধু ছবির অভিনেত্রী পদ্মপ্রিয়ার। ওর আসার কথা চেন্নাই থেকে, ভিসা পাচ্ছে না। কেন, কেউ জানে না। আমরা ভাবছি, ঠিক আছে, কাল-পরশু পাবে। ১৮ দিন কেটে গেল, স্রেফ বসে আছি। প্রযোজক সুজিত সরকার মুম্বই থেকে আমাদের ভরসা দিচ্ছে, দেখো ঠিক হয়ে যাবে সব। কিন্তু আমরা তো বুঝছি, কত টাকা নষ্ট হচ্ছে রোজ! বুম্বাদাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) বললাম, অন্য অভিনেত্রী নেব? বুম্বাদা বলল, হয় তাই? একটা মানসিক প্রস্তুতি হয়ে আছে, এখন অভিনেত্রী বদলানো যায় না। রাতে পদ্মপ্রিয়া স্কাইপে বলল, টোনি, আয়্যাম লুজিং দ্য ফিল্ম। ভীষণ মনখারাপ সবার। রাতে এক বন্ধু-দাদার বাড়ি নেমন্তন্নে গেছি, চুপচাপ বসে ভাবছি, ছবিটা আর হল না। হঠাৎ, একটা শব্দ। ক্রিকেটে শেষ বলে সচিন ছয় মেরে ম্যাচ জেতানোর মুহূর্তে গোটা স্টেডিয়াম যেমন ফেটে পড়ে, সেই রকম একটা শব্দ, ঘরের ভেতর থেকে। ছুটে গেলাম। চেন্নাই থেকে ফোন, পদ্মপ্রিয়া ভিসা পেয়েছে! সবাই চিৎকার করছে আনন্দে।

‘বুনো হাঁস’ করার সময় দেবকে বলেছিলাম, তুই বিরাট স্টার, কিন্তু আমি একটা শটও সেট লাগিয়ে নেব না। তুই চিৎপুর, ধর্মতলায় হাঁটবি, আমি শুট করব। যা হওয়ার হবে। উল্টোডাঙায় চায়ের দোকানে শুট করছি, ১৫ হাজার লোক ঘিরে ধরল। তার মধ্যেই শট নিলাম। এই ‘শুট করবই’ জেদটা বাংলাদেশে শুটিংয়েও বজায় ছিল। পদ্মায় নৌকো নিয়ে ঢুকে একটা চর, সেখানে সূর্যাস্তের সময় দেব বসে আছে, বাবার কথা মনে পড়ায় মাটি হাতে নিয়ে মাথায় মাখছে, এটাই শট। বাংলাদেশে সবাই বলেছিল, দেবকে রাস্তায় বের করবেন না, কেলেংকারি হবে। পুলিশ তো ছিলই, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও সিকিয়োরিটির লোক চলে এসেছিল। ইন্দ্রাণীকে পাড়ে থাকতে বলেছিলাম। হঠাৎ দেখি, অন্তত ৫০০ লোক সাঁতরে আসছেন। কোনও মতে শট শেষ করে, নৌকোয় ঠেলে তুললাম দেবকে। পাড়ে গেলাম, সেখানে ২৫-৩০ হাজার লোক। পুলিশ লাঠিচার্জ করছে। দেব আর ইন্দ্রাণীকে পুলিশের গাড়িতে ঠেলে তুলে, আমিও উঠলাম। সে দিন মনে হয়েছিল, বাঁচব না। সঙ্গে দুজন সাদা পোশাকের সিকিয়োরিটি সব সময় ছিল। আমরা থানায় ঢুকে গেলাম। সেখানে মেক-আপ ভ্যানটা ছিল, তাতে দেবকে তুলে দেওয়া হল। ইন্দ্রাণী আর দেবের মেক-আপম্যানও উঠল। চার দিকে লোক, সবাই ভ্যানের গায়ে ধড়াম ধড়াম মারছে। পুলিশ বলল, আপনারা এতে করেই এক্ষুনি চলে যান। গাড়ি কোনও মতে বেরিয়ে হাইওয়েতে পড়ল। সেখানেও বাইক নিয়ে লোকের তাড়া। খানিক পরে, গাড়ি যখন ফুল স্পিডে, ভ্যানের দরজায় বার বার ধাক্কা: ‘খুলুন, খুলুন!’ উন্মাদ ফ্যানের দল তাড়া করে, ভ্যানের দরজাতেও ঝুলছে! ঠিক করলাম, খুলব। যেই কেউ ভেতরে আসবে, ঝাঁপিয়ে পড়ব। আমার অ্যাক্টরকে তো আমাকে বাঁচাতে হবে! গাড়ি দাঁড় করাতে বললাম। দরজা খুলতে, দেখি, সেই সিকিয়োরিটির লোক দুজন! হাঁপাচ্ছে, চোখ লাল। আমি হতভম্ব: আপনারা এটা কী করলেন? ছুটন্ত মেক-আপ ভ্যানের দরজায় রড ধরে ঝুলে ঝুলে আসছেন, মরে যেতেন তো! ওঁরা উত্তর দিলেন, ‘দাদা, আমাদের একটা দায়িত্ব আছে তো!’ এখনও মনে হলে গায়ে কাঁটা দেয়। এই ভালবাসা জীবনে ভুলব না।

চার বছর ধরে ‘পিংক’-এর গল্পটা ভাবা। সুজিত আর রনিকে শোনাতে, ওরা তখনই বলেছিল, এটা হিন্দিতে করব। এক দিন সুজিত বলল, আমরা মিস্টার বচ্চনকে শোনাব গল্পটা। ক’দিন পরেই মুম্বই গেলাম ওঁর বাড়ি। সেটা সেপ্টেম্বরের একটা দিন, গল্প শুনে উনি বললেন, ‘ঠিক আছে, জানুয়ারিতেই শুরু করে দিই?’ ঘাবড়ে গেছি, আবার বাইরে এসে লাফাচ্ছি, উনি এত তাড়াতাড়ি ডেট দিয়ে দিলেন!

শুটিং অনেকটা হয়েও গেল। শেষ দশ দিনের কোর্টরুম শুটিংয়ের সময় আমার পায়ে একটা চোট লাগে। বরফের মধ্যে পা ঢুকিয়ে বসে আছি, নাড়াতে পারছি না। অসহ্য যন্ত্রণা। ছ’টা ক্যামেরা নিয়ে আমরা শুট করছিলাম। সুজিত অনলাইন এডিট করছে, আমি মনিটর দেখছি। এক-একটা সিন টেক-এর পর বাধ্য হচ্ছিলাম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভেতরে যেতে, মেয়েগুলোকে জড়িয়ে ধরতে। অবাক হয়ে দেখতাম, জুনিয়র আর্টিস্টরা, সিংক সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, তারও অ্যাসিস্ট্যান্ট, এমনকী যারা ছবিটার সঙ্গে সে ভাবে যুক্ত না, কোনও কাজে শুটিংয়ে এসেছে, তারাও— কাঁদছে। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে সমানে। মনে হচ্ছিল এটা সত্যি কোর্টরুম, যা ঘটছে সব সত্যি। শটের পর কীর্তি (ছবিতে ‘ফলক’ চরিত্রে) এক দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে গেল!

একটা অ্যাড করেছিলাম পার্থিব পটেল আর বীরেন্দ্র সহবাগকে নিয়ে। লোকেশন খুঁজতে গেলাম রাজস্থান। ধু-ধু মরুভূমির মধ্যে একটা হাভেলিওয়ালা গ্রাম চেয়েছিলাম— পুরনো, পরিত্যক্ত। কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দিন গাড়ি নিয়ে চষে বেড়াচ্ছি। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি এক দিন, চোখ খুলতেই দেখি, গাড়িটা একটা গ্রামে ঢুকছে। একদম আমি যেমনটা চেয়েছিলাম, তেমনই একটা গ্রাম! ভাবলাম, বেশ ভাল হল, এই পরিত্যক্ত গ্রামে কেউ আসবে না। যে দিন শুট হচ্ছে, ৪৯-৫০ ডিগ্রি গরম। তারই মধ্যে দেখি, ১০ হাজার লোক হাজির! সবাই সহবাগ-পার্থিবের সঙ্গে ছবি তুলবে। গরমে আমাদের লোক অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এক জন অজ্ঞান হয়ে গেল। হঠাৎ টের পেলাম, কানের কাছটায়, মাথার পেছনটায় ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগছে। আশি বছরের এক বৃদ্ধ, গামছা জলে ভিজিয়ে, সেটা দুলিয়ে হাওয়া করছেন আমাকে! আমি তো অবাক! তিনি বললেন, ‘আপ হমারা মেহমান হ্যায়, ইস লিয়ে।’ ছবি করতে গিয়ে ক্যামেরার বাইরে কত মুহূর্ত এ ভাবেই জীবনকে ঋদ্ধ করে গেছে বার বার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aniruddha Roy Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE