Advertisement
E-Paper

দর্শক চেঁচাল ‘মোজা চোর’

ক্রিকেটের অভিধান থেকে তখনও ‘‘জেন্টলম্যান’স গেম’’ কথাটা মুছে যায়নি। ১৯৭৪-এর ইংল্যান্ড সফরে ভারত যখন ল্যাজে-গোবরে হচ্ছে, তখন সেই জেন্টলম্যানস গেম-এ বাড়তি উত্তেজনা যোগ করল মাঠের বাইরের এক কেলেঙ্কারি। চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক ভারতীয় ক্রিকেটার! কী চুরি? দু-জোড়া মোজা! সুধীর নায়েক। ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘বোম্বে’-র হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একেবারেই টিকতে পারেননি।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০০:০৩

ক্রিকেটের অভিধান থেকে তখনও ‘‘জেন্টলম্যান’স গেম’’ কথাটা মুছে যায়নি। ১৯৭৪-এর ইংল্যান্ড সফরে ভারত যখন ল্যাজে-গোবরে হচ্ছে, তখন সেই জেন্টলম্যানস গেম-এ বাড়তি উত্তেজনা যোগ করল মাঠের বাইরের এক কেলেঙ্কারি। চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন এক ভারতীয় ক্রিকেটার! কী চুরি? দু-জোড়া মোজা!

সুধীর নায়েক। ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘বোম্বে’-র হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একেবারেই টিকতে পারেননি। খেলেছেন মোটে তিনটে টেস্ট আর দুটো ওয়ান ডে। বর্তমানে বিসিসিআই-এর মাঠ ও পিচ সংক্রান্ত কমিটির তিনি অন্যতম মাথা। ওয়াংখেড়ের পিচ নিয়ে গত বছর রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে তীব্র বিবাদ তাঁকে কিছুটা প্রচারে এনেছিল। কিন্তু সুধীর নায়েক স্মরণীয় রয়ে গিয়েছেন সেই মোজার কাহিনির জেরে।

আগাগোড়া অভিশপ্ত ছিল ’৭৪-এর ইংল্যান্ড সফর। শুরু থেকেই নাকানি-চোবানি খাচ্ছিল অজিত ওয়াড়েকরের দল, মোক্ষম বেইজ্জতিটা হল যখন লর্ডসে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস মোটে ৪২ রানে ফুরিয়ে গেল। ব্যঙ্গ করে লোকে ডেকেছিল – ‘সামার অব ফর্টি টু’! কে জানত বেইজ্জতির আরও বাকি আছে! অক্সফোর্ড স্ট্রিটে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার্স-এর সুবিশাল বিপণিতে কেনাকাটা করছিলেন দলের অন্যতম সদস্য সুধীর নায়েক। সামনেই তৃতীয় টেস্ট, এজবাস্টনে। সেখানেই তাঁর অভিষেক হওয়ার কথা। এ হেন নায়েককে হঠাৎই আটকাল মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার্স কর্তৃপক্ষ। নায়েক নাকি আরও নানা জিনিস কেনার সময় লোকজনের নজর এড়িয়ে সুকৌশলে হস্তগত করেছেন দু-জোড়া মোজা, অথচ তার দাম দেননি। গুনে দেখা গেল, সত্যিই তাই, দু-জোড়া মোজা বাড়তি। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন সুধীর নায়েক। স্তম্ভিত সুধীর বার বার বোঝাতে চাইলেন, এত সামান্য জিনিস তিনি কেন চুরি করবেন, তাঁর বিন্দুমাত্র কুমতলব ছিল না, তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যই এই গোলমাল— কিন্তু কেউ কর্ণপাতও করল না।

নায়েক সত্য বলেছিলেন, না ডাহা মিথ্যা, তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু ঘোর দুঃখজনক ছিল বিসিসিআই ও ইংল্যান্ডে ভারতীয় দূতাবাসের ভূমিকা। তাঁরা চেয়েছিলেন, ঘটনাটা ধামাচাপা দিতে, যাতে কোনও মতে এটা পুরোদস্তুর কূটনৈতিক সমস্যায় পরিণত না হয়। তাই নায়েকের পাশে না দাঁড়িয়ে, উলটে তাঁকেই দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন তাঁরা। নায়েকও আদালতের সামনে চুরির ‘অপবাদ’ মেনে নিয়ে নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে দেন। কিন্তু দাগি অপরাধীর কালো দাগ তাঁর ক্রিকেটীয় সাদা পোশাকে চিরতরে লেগে যায়। আত্মহত্যার কথা ভাবতেও দ্বিধা করেননি তিনি। রুমমেট হয়ে তাঁকে কিছুটা সামলান সুনীল গাওস্কর। ৪ জুলাই, ১৯৭৪। এজবাস্টনে অভিষেক টেস্টে নায়েকই হলেন গাওস্করের ওপেনিং পার্টনার। প্র্যাকটিসের চেয়ে বেশি সময় আদালতে কাটিয়েও দ্বিতীয় ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করলেন। সাতাত্তর।

কিন্তু বাইরের চাপ অত সহজে কাটার ছিল না। গোটা সিরিজ পর্যদুস্ত হওয়া, সঙ্গে মোজা চুরির মতো হাস্যকর কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া। বিদেশের মিডিয়া, দেশের দর্শক, কেউ ছেড়ে কথা বলেনি। শোনা যায়, ওয়াড়েকরের বাড়িতে যেমন পাথর ছুড়ে হামলা চলে, তেমনই সুধীর নায়েকের বাড়ি তাক করে অসংখ্য পুরনো মোজা ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা! কার্টুন আঁকা হয়, যেখানে এক মা তার সন্তানকে বলছে, ‘তুমি ক্রিকেটার হতে চাও? তুমি মোজা চুরি করতে চাও?’

সুধীর নায়েকের জীবনের শেষ টেস্ট ছিল ইডেন গার্ডেন্সে। বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭৪। ওপেন করতে নেমে দিনের প্রথম বলেই আউট হন নায়েক। পর দিন আনন্দবাজার পত্রিকার ম্যাচ রিপোর্টে মতি নন্দী লিখছেন, ‘সব থেকে দ্রুত পলায়ন-দক্ষতায় সুধীর নাইক ভারতীয় রেকর্ড স্থাপন করেছে।’ সেই পলায়ন প্রসঙ্গে কথিত আছে, অ্যান্ডি রবার্টস যখন বল হাতে ছুটে আসছেন, ইডেনের দর্শকাসন থেকে চিৎকার ওঠে, ‘মোজা চোর!’ তাতেই নাকি নায়েকের মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়। অফ স্টাম্প লক্ষ করে ছুটে আসা দ্রুতগতির বল মুহূর্তে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার মারে-র দস্তানা, মানে ওই হাত-মোজায়।

Robibashoriya Sudhir nayak The socks thief Susnato Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy