Advertisement
E-Paper

একটা ভয় কষ্ট [লজ্জা]

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়গড প্রমিস, বিদ্যাহস্ত বলছি, হাওয়ায় তখন লিরিল সাবানের গন্ধ বেরোত। সব বাঙালির হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া থাকত, লোডশেডিং, পুজো, ল্যান্ডলাইন ছিল, আর পাঁচ টাকায় দশটা ফুচকা ছিল। দ-শ-টা! নিটোল রাংতা-দিন।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০

গড প্রমিস, বিদ্যাহস্ত বলছি, হাওয়ায় তখন লিরিল সাবানের গন্ধ বেরোত। সব বাঙালির হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া থাকত, লোডশেডিং, পুজো, ল্যান্ডলাইন ছিল, আর পাঁচ টাকায় দশটা ফুচকা ছিল। দ-শ-টা! নিটোল রাংতা-দিন।

আমাদের হাজরা অঞ্চলের কয়েকটা ফুচকাওয়ালা বেশ ফেমাস ছিল। এক জনের কাছে এত ভিড় হত যে, মা’র সিমেন্টের মতো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, ওই ফুচকাওয়ালা নির্ঘাত ড্রাগ মেশায়। সেই সময়টায় আবার ড্রাগ খাওয়ার খুব রমরমা চলছিল। কিন্তু মায়ের সব বারণ ট্যাক্ল করে সাইড কাটিয়ে আমি আর দিদি ওই ফুচকাওয়ালার কাছেই ফুচকা খেতাম।

সে দিনও প্যাচপেচে গরমের সঙ্গে ফুরফুরে মেজাজ সহাবস্থানে ছিল। দাদার শ্বশুরবাড়ি থেকে শালাশালিবৃন্দ, বউদির বউদিরা, অল্পবয়সি ছোটকাকিমা সহ বিরাট পল্টন এসেছিল। আমি উৎসাহ করে কলার অল্প তুলে প্রায় বচ্চনের মতো জনপ্রিয় সেই ফুচকাওয়ালার কাছেই ওদের নিয়ে গেলাম। সে যখন পুর মাখতে থাকে, আমি পাক্কা শেফের মকো ইনস্ট্রাকশন দিই। এই ঘুগনির ছোলা দাও, ওই মশলাটা, সেই বিটনুনটা, তেঁতুল মাখো মাখা শেষ করে সে এ বার ফুচকা দিতে শুরু করে। সবাই খেয়ে হইহই করে ওঠে, আমি তখন মুচকি হেসে মিস ইন্ডিয়া। দু’রাউন্ড হওয়ার পর বললাম, ‘এই, থোড়া একস্ট্রা হরা মির্চ ডাল দো।’ ঝাল মিশে সেই সুখাদ্য আরও মনোরম হইয়া উঠিল। ‘এই, তুমি কিন্তু জল কম দিচ্ছ। আরে, তোমার নাম করে আমি এদের খাওয়াতে নিয়ে এসেছি, আমার একটা প্রেস্টিজ আছে তো!’

খাওয়া শেষ। তখন এ-ও পাবলিকলি ঢেকুর চাপছে। আমি বলে উঠলাম, ‘একটা করে ফাউ দাও তো।’ এ বার ঝটাক বুমেরাং, সারা জীবন অত্যন্ত নিরীহ, পেয়ারের ফুচকাওয়ালা বলে উঠল, ‘ফাউটা কি আপনার পিতাজি পাঠিয়ে দিয়েছে যে আমি সোবাইকে দেব? আ যাতে হ্যায় সব ফাউ মাঙনে।’

আমি প্রথমটা থ। তার পর মনে হল, কোন চুলোয় গিয়ে মুখ লুকোই, ধরণীর কোল আর মেট্রোর থার্ড লাইন কি খুব দূরে? যে আগের দিন অবধি ভোলাভালা দেশোয়ালি বাত করা ‘ও ভাইয়া’ ছিল, সে কেন হঠাৎ এমন আঘাত দিল? আর ফুচকাওয়ালার কাছে ফাউ চাইতে তো আমি সবাইকেই দেখেছি। আমার মা পর্যন্ত কোনও দিন বারণ করেননি, তাই এটাকে অনৈতিক চাওয়া ভাবিনি।

সবাই গুম হয়ে গেছে। আমার প্রেস্টিজ পাংচার। সব গর্ব দুমড়েমুচড়ে। তখন অন্ধকার কোণ খুঁজছি আমি। ফুটপাতের সব লোক মনে হচ্ছে আমার দিকেই তাকিয়ে। সবাই যেন আওয়াজ দিচ্ছে, ‘এ বাবা, ফেকলু পার্টি, ফেকলু পার্টি।’ দাদার শ্বশুরবাড়ির কাছে আমার মাতা হেঁট। ওরা আবার সবাই আমায় সান্ত্বনা দিচ্ছে, চিয়ার আপ করার চেষ্টা করছে। সে সব একস্ট্রা হরা মির্চ সেঁধোচ্ছে আমার নুনছাল ওঠা গায়ে।

এর পর ভেবেছিলাম, কোনও দিন ফুচকাই খাব না। কিন্তু ধকে কুলোয়নি। বছর দুই বাদে লজিক-টজিক দিয়ে মন ও জিদকে ফুচকাগামী করে তুলেছি। তবে আর কোনও দিন ফাউ বা একস্ট্রা মির্চি চাইনি। এমনকী কিছু কিনতে গেলে যদি অফার দেয় বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি, তখন ফ্রি-টা আমারই প্রাপ্য কি না, অন্তত চল্লিশ বার যাচাই করি। নেওয়ার আগে শিয়োর হই, আমার পিতাজির কথা কেউ তুলবে না তো?

amisanchari@gmail.com

rabibasariyo probondho sanchari mukhopadhay ekta bhoy kasta lajja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy