Advertisement
E-Paper

কেচ্ছা

নিপ্লগেট। স্তনবৃন্তের বিতর্ক। যে ঘটনার স্থায়িত্ব ছিল বড়জোর ১ সেকেন্ডের ৯/১৬ ভাগ, কিন্তু তার কেচ্ছার রেশ আজও চলমান বর্তমান। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। টেক্সাসের রিলায়ান্ট স্টেডিয়াম। সে দিন আমেরিকান ফুটবলের টানটান লড়াই, সে বছরের সবচেয়ে বড় খেলা: ‘সুপার বোল থার্টিএইট্থ’। তখন সবে হাফ টাইম। খেলার বিরতিতে আয়োজন ভরপুর বিনোদনের। সরাসরি সম্প্রচার চলছে টিভিতেও। মঞ্চ দাপাচ্ছেন, দর্শকাসন দুলিয়ে দিচ্ছেন দুই মার্কিন পপস্টার।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

নিপ্লগেট। স্তনবৃন্তের বিতর্ক। যে ঘটনার স্থায়িত্ব ছিল বড়জোর ১ সেকেন্ডের ৯/১৬ ভাগ, কিন্তু তার কেচ্ছার রেশ আজও চলমান বর্তমান। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। টেক্সাসের রিলায়ান্ট স্টেডিয়াম। সে দিন আমেরিকান ফুটবলের টানটান লড়াই, সে বছরের সবচেয়ে বড় খেলা: ‘সুপার বোল থার্টিএইট্থ’। তখন সবে হাফ টাইম। খেলার বিরতিতে আয়োজন ভরপুর বিনোদনের। সরাসরি সম্প্রচার চলছে টিভিতেও। মঞ্চ দাপাচ্ছেন, দর্শকাসন দুলিয়ে দিচ্ছেন দুই মার্কিন পপস্টার। জেনেট জ্যাকসন ও জাস্টিন টিম্বারলেক। লিরিকের সঙ্গে শরীরী ভাষার মিশেলে মুহুর্মুহু ফাটছে কামোত্তেজনার কনফেটি। পারদ যখন তুঙ্গে, ‘রক ইয়োর বডি’ গানের শেষ কলিটি গেয়েই টিম্বারলেক যে খেল দেখালেন, তাতে সে দিনের বাকি খেলাটেলা সবই মাঠে মারা গেল!

সেই শেষ লাইনটি ছিল এ রকম: ‘আয়্যাম গনা হ্যাভ ইউ নেকেড বাই দি এন্ড অব দিস সং’। তার পর সত্যি সত্যিই জেনেট জ্যাকসনের চামড়ার পোশাকটির ঊর্ধ্বাংশে মারলেন এক অভাবনীয় হ্যাঁচকা! মুহূর্তে বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ল জেনেটের ডান স্তন। প্রায় পনেরো কোটি মানুষ তখন হাঁ করে গিলছে সেই দৃশ্য, জেনেটের স্তনবৃন্তটি ঢেকে আছে একটি সূর্যের মতো দেখতে কারুকাজ করা দর্শনীয় অলংকার। কেউ হতচকিত, কেউ অপ্রস্তুত, কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ কামাতুর— কিন্তু কারও চেখেই আর পলক পড়ে না। তবে, সবই ওই... আধ সেকেন্ডের কিছু বেশি সময়ের জন্য মোটে।

গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে। সেই সেকেন্ডের ভগ্নাংশটুকু যাঁরা মিস করেছিলেন, তখুনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন ওয়েব-সাগরে। কী করে ফের চাক্ষুষ করা যায় বিরল দৃশ্যটি? এ সব প্রশ্নের উত্তর জোগাতে গিয়েই ইতিহাসে জায়গা পেল ‘নিপ্লগেট’। সেই অনুসন্ধিৎসুদের মধ্যে ছিলেন সদ্য কম্পিউটার সায়েন্স পাশ করা এক জার্মান— জাভেদ করিম। ঢের সার্চ চালিয়েও হয়রান হয়ে সে দিনই নাকি তাঁর মাথায় উঁকি দেয় ভিডিয়ো শেয়ার করার একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা। এক দিন যে ভাবনা থেকে জন্ম নেবে ‘ইউটিউব’! যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাত হবেন সেই খুঁজি-খুঁজি-‘নারী’ জার্মান তরুণ!

‘নিপ্লগেট’-এর প্রভাব জ্যাকসন ও টিম্বারলেকের কাছে অবশ্য স্বস্তিদায়ক হয়নি। যদিও এ ঘটনার ফলেই ২০০৭-এর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম ওঠে জেনেট জ্যাকসনের, ‘মোস্ট সার্চড ইন ইন্টারনেট হিস্ট্রি’ এবং ‘মোস্ট সার্চড ফর নিউজ আইটেম’ বিভাগে। তবে তার আগেও, ২০০৪-০৫ সালেই আন্তর্জাল-অনুসন্ধানের তালিকায় যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন জ্যাকসন। সমস্যাটা হল, এরই উলটো দিকে এই ঘটনা আরও একটি রেকর্ড গড়ে ফেলে— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফসিসি-র কাছে জমা পড়ল প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ অভিযোগ। অশ্লীলতার কথা তো সেখানে ছিলই, সঙ্গে এ-ও বলল অনেকে, গোটা ঘটনাটাই পরিকল্পিত স্টান্টবাজি, স্রেফ বাণিজ্যিক ফায়দা লোটার কৌশল। সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্বভাবতই সে অভিযোগ মানেনি। ঘটনার পরই দুই শিল্পীও ক্ষমা চেয়ে নেন। টিম্বারলেক জানান, তিনি চেয়েছিলেন, জ্যাকসনের বাইরের বক্ষ-আবরণীটি কেবল হটিয়ে লাল-লেসের ব্রা-টুকু প্রকাশ করতে, তার পর যা ঘটেছে, তা নেহাতই অনিচ্ছাকৃত, দুর্ঘটনা। টিম্বারলেক সে দিন যা বলেছিলেন, তা অন্য একটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। বলতে গেলে, সেখানেই প্রথম উঠে আসে ‘ওয়াড্রোব ম্যালফাংশন’ শব্দবন্ধটি, তার পর থেকেই যা বহুল ব্যবহৃত।

তবে, ক্ষমা চেয়ে টিম্বারলেক পার পেলেও, জ্যাকসনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই ঘটনার পর পরই অনেক জায়গায় তাঁর গান বা পারফরমেন্সের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গ্র্যামির অনুষ্ঠান থেকেও তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়। ওয়াল্ট ডিজনি থিম পার্কে মিকি মাউসের গা থেকে জ্যাকসনের আইকনিক ‘রিদ্ম নেশন’ পোশাকটিও সরে যায় তৎক্ষণাৎ। কিন্তু তাঁর গা থেকে এত দিনেও সেই কালো দাগ পুরোপুরি ওঠেনি। টিম্বারলেক ও জ্যাকসনের এক যাত্রায় পৃথক ফল অবশ্য কারও কারও কাছে বৈষম্যের ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু সে বৈষম্য কীসের, নারী-পুরুষের, না সাদা-কালোর?

susnatoc@gmail.com

rabibasariya anandabazar susnato chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy