Advertisement
০২ মে ২০২৪

মধ্যরাতের মাছবাজার

এশিয়ার একমাত্র চারা মাছের বাজার বসে রোজ রাত্রে রাজেন্দ্রপুরে। ‘পিক সিজন’-এ তিরিশ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকার হাতবদল হয়।পাঙাশ এক টাকা, চিতল সাত টাকা, কই পাঁচ, মাগুর এক টাকা কুড়ি পয়সা, ভেটকি বারো টাকা, রূপচাঁদা তিন টাকা ষাট পয়সা... প্রবল হাঁকাহাঁকি হাট জুড়ে। হঠাৎ শুনলে মনে হবে সত্যযুগের মাছবাজারে এসে পড়েছি! আসলে এ-মাছ সে-মাছ নয়, এ হল নেহাতই মাছের বাচ্চা। হাটুরে পরিভাষায় যার নাম পোনা বা চারা মাছ। এবং দর হাঁকা হচ্ছে ‘পিস’ হিসেবে। কিলো দরেও বিক্রি হচ্ছে, তবে তখন বিক্রেতা বলে দিচ্ছেন, প্রতি কিলোতে ক’পিস মাছ উঠবে।

সীমান্ত গুহঠাকুরতা
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

পাঙাশ এক টাকা, চিতল সাত টাকা, কই পাঁচ, মাগুর এক টাকা কুড়ি পয়সা, ভেটকি বারো টাকা, রূপচাঁদা তিন টাকা ষাট পয়সা... প্রবল হাঁকাহাঁকি হাট জুড়ে। হঠাৎ শুনলে মনে হবে সত্যযুগের মাছবাজারে এসে পড়েছি! আসলে এ-মাছ সে-মাছ নয়, এ হল নেহাতই মাছের বাচ্চা। হাটুরে পরিভাষায় যার নাম পোনা বা চারা মাছ। এবং দর হাঁকা হচ্ছে ‘পিস’ হিসেবে। কিলো দরেও বিক্রি হচ্ছে, তবে তখন বিক্রেতা বলে দিচ্ছেন, প্রতি কিলোতে ক’পিস মাছ উঠবে।

জায়গাটা হল: নৈহাটির কাছে ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে রাজেন্দ্রপুর গ্রাম। সময়: রাত দুটো। প্রতি রাতে এখানে, এই সময়ই বসে ভারতের, এমনকী এশিয়ার একমাত্র চারা মাছের বাজার। চলে ভোর সাড়ে চারটে-পাঁচটা পর্যন্ত। প্রতি রাতে জড়ো হন কমবেশি হাজার দশেক লোক। হাট বসে সারা বছরই, তবে ‘পিক সিজন’-এ, অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে— যখন মাছের পেটে ডিম আসে— প্রতি রাতে অন্তত ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার হাতবদল হয়ে যায়, পুরোটা নগদ নোটের কারবার।

সকালের দিকে শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ছাড়ে এমন লোকাল ট্রেনের ভেন্ডরের কামরায় উঠলেই দেখা যাবে, জাল দিয়ে ঢাকা ঢাউস ঢাউস জলভর্তি হাঁড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে সশব্দে থাবড়াতে থাবড়াতে নিয়ে চলেছেন এক দল লোক। ওঁরা রাজেন্দ্রপুরের হাট থেকেই মাছ নিয়ে ফিরছেন নিজের এলাকায়। পানাগড় বাসস্ট্যান্ডের কাছেও, সকালের দিকে একের পর এক লরি থেকে হাঁড়ি ভর্তি মাছ নিয়ে নামেন ব্যাপারীর দল। সেখান থেকে আবার বাস-ট্রেকার-ম্যাটাডোর— যে যাতে পারেন উঠে— জল থাবড়াতে থাবড়াতে চলে যান দিগ্দিগন্তে।

এঁরা সবাই চারা মাছের ব্যবসাদার। কেউ গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাছ ফিরি করেন। লোকেরা তাঁদের বাড়ির পুকুরের শৌখিন মাছ কেনেন এঁদের কাছ থেকে। অনেকে মাছ বেচেন অর্ডার অনুযায়ী, গ্রামে যাঁরা পুকুর বা দিঘি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন, তাঁদের কাছে। আর আছেন ‘ভারী’। ওঁরা ব্যবসায়ী নন। গাঁ-গঞ্জের বড় বড় পুকুর-মালিকদের হয়ে এই হাট থেকে মাছ কিনে পৌঁছে দেন।

আসেন ভিনরাজ্যের (মূলত ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড) প্রচুর বড় ব্যবসাদারও। ম্যাটাডোরের ওপর চাপানো বড় বড় লোহার ট্যাংকারে মাছ নিয়ে পাড়ি দেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্দিষ্ট জায়গায় মাছ পৌঁছে দিতেই হয়, কারণ বদ্ধ হাঁড়ির ভেতর চারা মাছের আয়ু বড়জোর ছয় থেকে আট ঘণ্টা।

হাটে ব্যাপারীদের আনাগোনা অবশ্য শুরু হয়ে যায় সন্ধ্যা থেকেই। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ট্রেন-বাস-ট্রেকার-অটো ধরে জোড়া জোড়া খালি হাঁড়ি আর বাঁক নিয়ে তাঁরা হাজির হন। আগে গ্রামের প্রান্তে হাইরোডের ধারে মাটির ওপর খোলা আকাশের নীচেই হাট বসত। বছর দুয়েক হল পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের অনুদানে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ওপর প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে কংক্রিটের বিরাট বাঁধানো চাতাল। জমি অবশ্য কিনে দিতে হয়েছে ‘রাজেন্দ্রপুর মৎস্য বাজার উন্নয়ন কমিটি’কে। ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন তৈরি হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, বহু আবেদন-নিবেদন চালিয়ে এত দিনে এটা আদায় করেছেন তাঁরা।

চাতালে বড় বড় হ্যালোজেন বাতি, ব্যবসায়ীদের হাঁড়ি আর ট্যাংকারে জলের জোগান দিতে আছে শক্তিশালী পাম্প। সেখান থেকে তাঁরা নগদ মূল্যে জল কেনেন। ব্যবসায়ীরা অনেকে চাতালেই দল বেঁধে গুলতানি করেন, তাস পেটান, বেশির ভাগই প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে মাঝরাত পর্যন্ত ঘুম দেন। আর আছে ছোট বড় নানা মাপের হোটেল। সেখানে লম্বা ডর্মিটরি— মাঝরাত পর্যন্ত বিশ্রামের জায়গা ও পেটচুক্তি খাওয়া, সস্তায়।

এক ডর্মিটরিতে আলাপ হল ৬৪ বছরের লক্ষ্মীনারায়ণ মিত্রের সঙ্গে। বাড়ি বাঁকুড়া জেলার বহল্ললপুর গ্রামে। আজ ত্রিশ বছর এই হাটে আসছেন। প্রতি দিন দুপুর নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভ্যান ধরে আসেন দীঘলগ্রাম। সেখান থেকে বাসে উচালন। সেখান থেকে আবার বাস বদলে বর্ধমান সদর। বর্ধমান থেকে ট্রেন ধরে ব্যান্ডেল হয়ে আসেন নৈহাটি। রীতিমত দীর্ঘ, প্যাঁচালো পথ। আবার মাছ কিনে ভোর-ভোর বেরিয়ে ট্রাক ধরে পানাগড় হয়ে গ্রামে ফেরেন। তার পর সাইকেলের ক্যারিয়ারের দু’দিকে দুটো হাঁড়ি বেঁধে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন এই মাছ। তার পর বাড়ি ফিরে চাড্ডি খেয়েই ফের রওনা নৈহাটিমুখো। এ ভাবেই চলছে ব্যবসা, বছরের পর বছর। যে বয়সে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খুনসুটি করে জীবন কাটানোর কথা, এমন তুমুল পরিশ্রম করেন কী ভাবে? হেসে একটা বিড়ি ধরালেন লক্ষ্মীবাবু, সুখটান মেরে বললেন, ‘আরও কুড়ি বচ্ছর আসব, দেখ্যে লিবেন।’

চাতালের এক কোনায় দল বেঁধে বসেছিলেন পুরুলিয়া জেলাপাড়া গ্রাম থেকে আসা কালোকুলো চেহারার জনা পনেরো লোক। সবাই ‘ভারী’। প্রতি দিন এখান থেকে মাছ নিয়ে পুরুলিয়া স্টেশনে নির্দিষ্ট মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়েই আবার ফিরতি ট্রেন ধরেন ওঁরা। বর্ষার মরশুমে একটানা সাত-আট দিন নৈহাটি-পুরুলিয়া যাতায়াত বাঁধা রুটিন। সঙ্গী বলতে স্রেফ একটা গামছা। মাছ নিয়ে তাঁরা লরিতে যান সিমলাগড়, সেখান থেকে দু’বার ট্রেন বদলে বর্ধমান হয়ে পুরুলিয়া। দলনেতা লক্ষ্মণ মুদি বললেন, ‘আমাদের জামাকাপড় গায়েই ভেজে গায়েই শুকোয়। এই সিজনে মাছ বয়ে আমরা দৈনিক মজুরি পাই ৪০০ টাকা। বাদবাকি সারা বছর তো একশো দিনের কাজ বা ইটভাটায় মজুরি। ওতে খোরাকির পয়সাও হয় না।’

‘আমাদের এই হাটকে কেন্দ্র করে প্রায় দু’লাখ লোকের রুজি-রুটি হয়’, বলছিলেন মৎস্য বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বাবলু কুমার ঘোষ। বাবলুবাবু এই হাটের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় নীলরতন ঘোষের ছেলে, পেশায় বাবার মতোই হ্যাচারি মালিক, যাঁদের হাটের ভাষায় বলে ‘গোলদার’। বাজার কমিটির ঘরে বসে হাট প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত শোনাচ্ছিলেন, ‘সালটা সম্ভবত ১৯৭৬। তখন এ সব এলাকা ওয়াগন-ব্রেকারদের আর নানা রকম দুষ্কৃতীর স্বর্গরাজ্য। সদ্য বিদেশ থেকে হাইব্রিড পাঙাশ, আমেরিকান কই, তেলাপিয়া চাষের প্রযুক্তি এসেছে। আমার বাবা এখানে জমি কিনে প্রথম একটা হ্যাচারি তৈরি করলেন। কাজে লাগালেন স্থানীয় ওই সব অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছেলেদের। আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ল। এলাকার কিছু ধনী মানুষও ব্যবসায় নামলেন। বাবা তখন রাজ্যের নানা প্রান্তের মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের ডেকে আনতে লাগলেন। শুরু হয়ে গেল হাট। আর বাবার উদ্যোগেই তাতে জড়িয়ে পড়ল এলাকার সমস্ত বেকার ছেলে। এখন এই এলাকায় ওয়াগন-ব্রেকিং তো দূরে থাক, অন্য কোনও বেআইনি কারবারও নেই।’ বাবলুবাবুর কথায় অতিশয়োক্তি ছিল কি না জানি না, কিন্তু মনে হল, বীরপূজক বাঙালি জাতি যে আজও ব্যবসাদারকে যথাযোগ্য সম্মান দেয় না, নীলরতনবাবুর মতো মানুষেরাই তার প্রমাণ।

কথায় কথায় রাত বাড়ছিল। ঘড়ির ছোট কাঁটা যেই দুটোর ঘরে, চাতাল থেকে যে গুনগুন আওয়াজটা আসছিল, সেটা বদলে গেল হইহই চিৎকারে। বাইরে থেকে একের পর এক পায়ে-চালানো ভ্যান এসে ঢুকছে চাতালের ভিতর। প্রত্যেকটার ওপর বসানো চারটে করে বিশাল হাঁড়ি। শুরু হয়ে গেল বিকিকিনি। বিক্রেতারা তখন হাঁড়ি থেকে মাছ তুলে কানা-উঁচু চকচকে স্টিলের থালায় ঢেলে দেখাচ্ছেন। ক্রেতারা আবার তার ওপর টর্চের আলো ফেলে দেখছেন সে মাছ কতটা তেজি।

ঘুরে-ফিরে দেখা গেল, মূলত তিন রকম সাইজের চারা মাছ বিক্রি হচ্ছে। একেবারে ছোট, পাঁচ থেকে দশ মিলিমিটার লম্বা ‘ডিম পোনা’ (যা এক কেজিতে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত ওঠে), আধ আঙুল লম্বা ‘চালাই পোনা’, আর মোটামুটি এক আঙুল লম্বা ‘চারা পোনা’। আর মাছের রকমফের? ‘তা গোটা ভারতবর্ষের মানুষ যত রকম মাছ খায়, তার সবই বিক্রি হয় এই বাজারে’, বললেন বাজার কমিটির সম্পাদক কৃষ্ণহরি বসু। ‘তবে যত লোক দেখছেন হাটে, বছর দশেক আগেও এর বহু গুণ আসত। যত দিন যাচ্ছে, ব্যবসা কমছে। একটা সময় হাটে মাছ কিনতে আসা গাড়ির ভিড়ে মাঝরাতে কল্যাণী হাইওয়েতে জ্যাম হয়ে যেত। আর এখন ভরা মরশুমেও শ’খানেকের বেশি ম্যাটাডোর আসে না।’ কিন্তু মাছ-ব্যবসার এমন পড়তি দশার কারণ কী? বাঙালির মাছ-বিলাসিতা তো কমেনি!

‘মূল কারণটা অবশ্যই আমাদের এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির তোলা-রাজ’, জানালেন কৃষ্ণহরিবাবু, ‘একটা ট্যাংকারে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার মাছ যায়। আর ইদানীং পথে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ আর মস্তানদের নগদ দিতে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রায় ওরই সমান টাকা। তা হলে আর ব্যবসাদারদের হাতে থাকে কী?’ কথা সাপোর্ট করলেন ঝাড়খণ্ড থেকে আসা দুই ব্যবসায়ী, প্রমথনাথ সিং এবং দীনবন্ধু দে। দীনবন্ধু ঝানু ব্যবসাদার, ঝাড়খণ্ড সরকারের মৎস্য-বিভাগ থেকে মাছ চাষের ট্রেনিং-প্রাপ্ত। এই দুই বন্ধু মিলেই সে রাজ্যের মাছ-চাষের ব্যবসার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রমথবাবু আক্ষেপ করে বললেন, ‘পরিমাণমত তোলা না পেলে পুলিশ নানা ভাবে পথে হেনস্তা করে। কর্মচারীদের মারধর, গাড়ির কাগজপত্র আটকে রাখা, কিছুই বাদ যায় না। আসলে ওরা বুঝে গেছে, মাছের গাড়ি আটকে রাখতে পারলে সব মাছ মরে যাবে, সেই ভয়ে ব্যবসাদাররা টাকা দিয়ে দেবে তাড়াতাড়ি। এ ভাবে কদ্দিন চালাব বলুন!’ দীনবন্ধুবাবু ইতিমধ্যেই মাছের ব্যবসার পুঁজি থেকে অধিকাংশ টাকা তুলে নিয়ে শেয়ার ট্রেডিং-এর কারবার খুলে ফেলেছেন।

হাটের ব্যবসায়ীদের অনেক দিনের দাবি: মাছ, বিশেষ করে চারা মাছকে দুধ, ওষুধ বা খবরের কাগজের মতো ‘জরুরি পরিষেবা’র তালিকায় আনা হোক। এই নিয়ে মৎস্য দফতরে একাধিক বার দরবারও করেছেন তাঁরা। লাভ হয়নি। দুধ বা ওষুধ বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে অনেক দিন রাখা যায়, কিন্তু মাছকে কৃত্রিম ভাবে বাঁচিয়ে রাখার কোনও উপায় নেই। তাই একটা বন্ধ বা আচমকা রাস্তা অবরোধ হলেও ব্যবসায়ীদের কয়েক লক্ষ টাকা জলে। এই সব দেখে নতুন করে কেউ আর টাকা ঢালতে রাজি হন না আজকাল।

এই হাট থেকে চারা মাছ যায় সুদূর রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাব, অসম প্রভৃতি রাজ্যেও। সেগুলো যায় মূলত প্লেনে। এর জন্য অবশ্য বিশেষ পদ্ধতিতে প্যাকিং করতে হয়। বড় বড় স্বচ্ছ পলিথিনের অর্ধেক জল ভরে তাতে পোনাগুলো ছেড়ে দিয়ে বাকি অংশে সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন ভরা হয়। তার পর সেই প্যাকেট সিল করে, কার্ডবোর্ডের বাক্সে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এয়ারপোর্টে। এ ভাবে ভিনরাজ্যে মাছ পাঠানোর ব্যবসা করেন যাঁরা, তাঁদেরও একটা সংগঠন আছে এখানে। ‘নৈহাটি ফিশ সিড সাপ্লায়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। নামটা যতই বড় হোক, ব্যবসার পরিধি ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। সংগঠনের সদস্য সরোজ রায় হিসেব দিলেন, দশ বছর আগেও প্রায় আশি জন ব্যবসায়ীর প্রত্যেকের মাসিক দুই থেকে তিন লক্ষ টাকার ব্যবসা ছিল। এখন হাল এতটাই খারাপ যে একক উদ্যোগে আর সম্ভব না হওয়ায় সবাই মিলে সমবায় করে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরা। সমবায়ের রোজগার? ‘মাসে কমবেশি বারো লাখ টাকা’, বললেন সরোজবাবু, ‘আমাদের গণেশ উলটে গেছে দাদা। এখন সবাই অন্য ধান্দায় লেগে পড়ছে। এটা হয়ে গেছে সাইড বিজনেস। মাছের ব্যবসা এখন একচেটিয়া করে নিচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ। ওখানে এত রাজনৈতিক চাপ, তোলাবাজি, পুলিশি জুলুম কিছুই নেই।’ সংগঠনের মেঝেয় বসে তাস খেলছিলেন বাসুদেব নাথ। তোবড়ানো মুখ, ভাঙাচোরা চেহারা। এক সময় অসমে পোনা মাছ পাঠানোর একচেটিয়া কারবার ছিল তাঁর। ‘পুলিশ, মস্তান আর আলফা জঙ্গিরা আমার সর্বস্ব নিয়ে ছেড়েছে’, বললেন বাসুদেববাবু, ‘এখন আমি ভ্যান চালিয়ে পেটের ভাতটুকু জোটাই।’

ভোর পাঁচটা। হাট প্রায় ফাঁকা। দেখি, জল-থইথই চত্বরটায় লাফিয়ে লাফিয়ে পড়ে থাকা কুচো মাছ খাচ্ছে তিনটে বেড়ালছানা। তাই তো, রাজেন্দ্রপুর হাটের ওপর নির্ভরশীলদের তালিকায় এই তিন জনও তো আছে! এবং বাকিদের মতো, ওদের ভবিষ্যৎও ঘোর অনিশ্চিত!

nachhorbanda@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE