Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

শান্তনু চক্রবর্তী

জেপ গাম্বারদেল্লা এক জন লেখক, যিনি তাঁর জীবনের একমাত্র উপন্যাসটা লিখেছিলেন প্রায় চল্লিশ বছর আগে। জেপের বয়স তখন কুড়ির কোঠায়। ওই একটা উপন্যাসই তাঁকে রোমের আঁতেল-এলিট সমাজে সেলেব্রিটি বানিয়ে দিয়েছিল। আর সেটা ভাঙিয়েই এই ৬৫ বছর বয়স অবধি তিনি এই শহরের রাতের রাজা হয়ে থেকেছেন। অসংখ্য পার্টিতে, অফুরান ককটেল আর অজস্র নারী-পুরুষের সাহচর্যে টইটম্বুর ভেসেছেন। এই সময়টায় জেপ নামী কাগজে সাংস্কৃতিক কলাম লিখেছেন। কড়া-ঠোঁটকাটা সাক্ষাত্‌কারে আভাঁ-গার্দ নাটকের দেমাকি নায়িকা কিংবা জাঁক-দেখানো ভুঁইফোঁড় লেখিকার আত্মবিশ্বাসের বেলুনে পিন ফুটিয়েছেন। আর সাংবাদিকতার এই সব একঘেয়ে খুচরো কাজে তাঁর মগজ-মেধা ক্ষয় করতে করতে ক্লান্ত হয়েছেন। রোজকার চেনা জল ছেড়ে জেপ তাই তাঁর জীবনের নৌকোটা ভিন স্রোতে বাইতে চাইছিলেন। কেন তিনি তাঁর দু’নম্বর উপন্যাসটা কিছুতেই লিখতে পারছেন না, এ রকম একটা প্রশ্নের উত্তরে জেপ এক বার বলেছিলেন, এই রোম শহরে, তাঁর চার পাশে তিনি কোত্থাও কোনও ‘মহত্‌ সৌন্দর্যের’ চিহ্নটুকুও খুঁজে পাচ্ছেন না।

ছবিটা জেপের সঙ্গে সেই অলীক-সুন্দর খুঁজে বেড়ানোর সফর। এই চলতে চলতে চিত্রনাট্যে অনেক মানুষের ভিড় জমে। অনেক কথার ভিড়। কথার প্যাঁচে কথা। কাটাকাটিও। বুদ্ধিজীবীদের আড্ডায় যে ভাবে ঢিল-পাটকেলের মতো কথা ছোড়াছুড়ি হয়, সে ভাবেই কোনও সিরিয়াস-সুন্দরী জেপকে হয়তো ‘নারীবিদ্বেষী’ বললেন! জেপ পালটা জবাবে বললেন, শুধু নারী নয়, তিনি মানুষ-বিদ্বেষী! অথচ তার পরেও তিনি কোনও কোনও মানুষের জীবনের বেশ কাছ ঘেঁষে হেঁটে যান। যেমন তাঁর বন্ধুর মেয়ে রামোনা। রামোনার বাবা তাঁর এই স্ট্রিপ-টিজ নাচিয়ে মেয়েটার বিয়ের জন্য জেপকে একটা ভাল পাত্র খুঁজে দিতে বলেছিলেন। জেপ সে মেয়েটার শরীর, নগ্নতা পেরিয়ে তার অন্তরমহলে একটু হাতড়ে দেখেন।

এমনি করেই অনেক অনেক চরিত্রদের সঙ্গে নিয়ে, পেরিয়ে জেপের সফর চলতেই থাকে। সেখানে আজকের সময়ের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুরনো স্বপ্ন, ছদ্মবেশী স্মৃতি। ঠিক যেন রোম শহরটার মতোই। ইতিহাস আর আধুনিকতা, পাপ ও পবিত্রতা, মহান বিশালতা আর খেলো তুচ্ছতা যেখানে জড়িয়ে-মড়িয়ে থাকে। জেপের সফরসঙ্গী হিসেবে রোম শহরটা তাই ধ্রুবক। পরিচালক এখানে যে ভাবে রোমকে দেখিয়েছেন, কেউ কেউ এই ছবিটাকে ফেলিনির ‘লা দোলচে ভিতা’র রঙিন রিমেক অবধি বলে ফেলছেন। হ্যাঁ, এই ছবির বুনটে, চেতনে ফেলিনি অবশ্যই আছেন। জেপের চরিত্রটার মধ্যেও হয়তো ‘লা দোলচে ভিতা’র সাংবাদিক আর ‘এইট অ্যান্ড হাফ’-এর ফ্লোর-পালানো পরিচালক দুজনেই আছেন। কিন্তু তার পরেও ছবিটা এই সময়েরই ছবি। জেপের এই যে উদ্ভ্রান্ত ঘুরে মরা, প্রেমহীনতার গোপন হাহাকার, সেখানে কোথাও তো আজকের ইতালির নৈতিক অস্থিরতা, ভ্রষ্ট সমাজ-রাজনীতির পুঁজ-রক্ত লেগে থাকে। বার্লুসকোনি-র মতো একটা চরিত্রকেও আমরা যেন এক ঝলক দেখে ফেলি।

এ ছবির শুরুর দিকের দৃশ্যে রোম শহরটা যেন টুরিস্ট গাইড বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসে। তার পর একটু একটু করে রোম তার স্থাপত্য-ভাস্কর্য-ট্র্যাডিশন, মাধুর্য, ছেনালি, নেশা আর নিষ্ঠুরতা-সুদ্ধ জেপকে পাকে পাকে জড়ায়। জেপের নাট্যকার বন্ধুর সে বাঁধন অসহ্য লাগে। তিনি এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চান। কিন্তু জেপ যান না। তার সেই ঘৃণা আর ভালবাসার শহরে যেন কোনও ফেব্ল-বইয়ের পাতা থেকে আসেন এক অতি বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনী। জেপের জাদুকর বন্ধু যেমন ম্যাজিক করে আস্ত জিরাফ ভ্যানিশ করে দেন, তেমনি করেই কি ওই সন্ত নারী পাথরের প্রাসাদে সমুদ্র-সারসদের ডেকে আনেন? ইট-কাঠের শহর কি ক্রমে জাদু-নগরী হয়ে ওঠে? বিশ্বাসহীনতার এই সময়ে কি ফিরে আসে বিশ্বাসের হারানো ইন্দ্রজাল? ১০৪ বছরের বৃদ্ধা বিশ্বাসের ভরসাতেই পবিত্র ক্যাথিড্রালের খাড়াই সিঁড়ি ভাঙেন! জেপের স্বপ্নে ভাসে তাঁর কিশোরী প্রেমিকার মুখ। তিনি বুঝে যান, জীবনটা আসলে জাদুরই খেলা। কখন কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না! জীবনকে বিশ্বাস করলেই সে সুন্দর হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয়ে যেতে পারে তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাসটা! সাউন্ডট্র্যাক তত ক্ষণে ভরে উঠেছে চার্চ-সঙ্গীতের সুরে। এন্ড-টাইটেলেও বাজতে থাকে সেই সুর। আর পরদা জুড়ে তখনও তার সৌন্দর্যের তীব্রতা নিয়ে অনিঃশেষ, উদ্ধত বহমানতায় জেগে থাকে রোম শহর।

sanajkol@gmail.com

অবশেষে ভারতে শুরু হল টাইম ট্রাভেল-এর জন্য বুকিং। পর্যটন মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, এই বুকিং হবে সারা দেশে হাতে গোনা কিছু বিশেষ বুকিং কাউন্টার থেকে। সেগুলোর সামনে গত কাল রাত থেকেই লম্বা লাইন। ধর্মতলার কাউন্টারে দাঁড়িয়েছিলেন শিলিগুড়ির ঝন্টুু ঘোড়ুই। তাঁর ৭৫ বছরের ঠাকুমা বিধবা হয়েছিলেন ৩০ বছর আগে। এখন ঠাকুমার ইচ্ছে স্বামীর সঙ্গে দেখা করার। তাই ঝন্টুবাবু ঠাকুমার জন্য ৪০ বছর আগের টাইম রুট-এর টিকিট কাটতে এসেছেন। আবার নদিয়া থেকে আসা দুই ভাই জয় আর বীরু ৫ বছর পিছনে যেতে চান, মৃত মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য। উদ্দেশ্য: মৃত মাকে দিয়ে সম্পত্তির ভাগযোগ করিয়ে নেওয়া। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই নন, শিল্পপতি, ডাক্তার, উকিল, খেলোয়াড়, সাংসদ সকলেই সময়-সফরে যেতে উত্‌সাহী। ক্রিকেটার কবিরাজ সিংহ জানিয়েছেন, তিনি গত মাসের এক দিনের সিরিজটায় ফিরে যেতে চান। উদ্দেশ্য প্রতিটা ম্যাচের ভুলভ্রান্তির পুনর্মূল্যায়ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতির ইচ্ছে ৭৫ বছর পিছিয়ে গিয়ে মৃত বাবার কাছে ব্যবসা বিষয়ক পরামর্শ নেওয়া। তবে, টাইম ট্রাভেল সংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। ১) এই ট্রাভেল একমাত্র অতীতেই করা যাবে। ২) অতীতে কোনও জিনিস নিয়ে যাওয়া যাবে না, অতীত থেকে কোনও জিনিস বর্তমানে আনা যাবে না। ৩) ১০০ বছরের বেশি টাইম ট্রাভেল করতে গেলে পর্যটন মন্ত্রকের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। ৪) অতীতে গিয়ে কোনও লিখিত তথ্য বা ঘটনা পরিবর্তন করা যাবে না। ৫) অতীতে গিয়ে প্রেম বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। ৬) অতীতের কাউকে শারীরিক ভাবে আঘাত করা যাবে না। শেষ দুটি নিষেধাজ্ঞা শুনে অবশ্য অনেকে মুষড়ে পড়েছেন, কারণ অনেকেই যাচ্ছিলেন করিনা কপূরের যৌবনের সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, বা শয়তান পড়শির পাঁচ বছর বয়সে গিয়ে, তাঁর কান আচ্ছাসে মুলে দিতে।

সুদীপ্ত মোদক, বাঁশবেড়িয়া, হুগলি

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in


(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE