Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সান্তা সে মাংতা

বড়দিন চলে গিয়েছে তো কী হয়েছে, সান্তা ক্লজ কি একটু ওভারটাইম খেটে নতুন বছরের জন্যে এই দুর্দান্ত উপহারগুলো আনবেন না? চিরশ্রী মজুমদারমিছিলের ‘স্মার্ট কার্ড’ একটা বানিয়ে দিন না স্যর? যেটা দুটো তেরিয়া দেখতে লোকের মাঝখানে সেঁধিয়ে দিলেই খটাং শব্দে জ্যাম দু’ফাঁক হয়ে যায়। ঠিক যেমন খুব ছোটবেলায় মহাভারতে না কীসে দেখাত। একটা জরিদার জামা পরা লোক এসে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে কী সব বলল, অমনি মহাসমুদ্র দুফাঁক হয়ে গিয়ে তাকে পাস করে যেতে দিল। এ ব্যাপারটা তারই স্মার্ট ভার্সন। জনসমুদ্রের মধ্যে ঠেকালেই যে কোনও টাইপের যে কোনও সাইজের মিছিল-প্লাবন চিচিং ফাঁক।

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

স্মার্ট কার্ড

মিছিলের ‘স্মার্ট কার্ড’ একটা বানিয়ে দিন না স্যর? যেটা দুটো তেরিয়া দেখতে লোকের মাঝখানে সেঁধিয়ে দিলেই খটাং শব্দে জ্যাম দু’ফাঁক হয়ে যায়। ঠিক যেমন খুব ছোটবেলায় মহাভারতে না কীসে দেখাত। একটা জরিদার জামা পরা লোক এসে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে কী সব বলল, অমনি মহাসমুদ্র দুফাঁক হয়ে গিয়ে তাকে পাস করে যেতে দিল। এ ব্যাপারটা তারই স্মার্ট ভার্সন। জনসমুদ্রের মধ্যে ঠেকালেই যে কোনও টাইপের যে কোনও সাইজের মিছিল-প্লাবন চিচিং ফাঁক। লাল সিগনালে কাতরাতে থাকা প্যাঁকপ্যাঁককিঁকপিঁক বাস-ট্যাক্সি, গুলি-পাকানো নেতা, ‘মানছি না’ বলে চিল্লাতে থাকা পাকা দাড়িওয়ালা টুয়েলভের ছাত্রী, ‘কেন হাঁটছে জানেন নাকি’ আস্ক করে করে জেরবার অ্যাংকর, সব সড়সড় করে ঠিক মাঝখান থেকে লম্বালম্বি ভাবে কেটে দু’আধখানা হয়ে সাইডে সরে যাবে। আমি তার মাঝখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে বোঁবোঁ করে অফিস পৌঁছে যাব। কার্ডে একটু বেশি করে ব্যালেন্স ভরে দেবেন সান্তা-ঠাকুর। কারণ সাত দিনে হাফ-সেঞ্চুরিটাক রাইড তো লাগবেই।

সিক বেড

প্রতিটি ক্ষমতাবান পয়সেওয়ালা নাগরিক পিছু হাসপাতাল-নার্সিংহোম মে একঠো সিক-বেড তো বনতা হি হ্যায়। কোথাও কিছু সর্বনাশ করে বসলেই, ফটাস করে সেঁধিয়ে যাবেন। পরীক্ষা বা রেজাল্টের দিন বাড়ির ছোটরা সেখানে পেটব্যথার জন্য ভর্তি হবে। অ্যানিভার্সারি ভুলে গেলে, বউয়ের খুন্তির ছ্যাঁকা খাওয়ার ডর নেই। অফিস থেকে ফেরার পথে হাসপাতালে ঢুকে সিক বেডে চিৎপটাং হয়ে যান। ব্যাংক থেকে ইএমআইয়ের জন্য তাগাদা দিলেই হাসপাতালে অ্যাডমিশন ও মেডিকাল বোর্ড গঠন। তবে হ্যাঁ, যাদের বডিতে সত্যি কিছু ঘোটালা হয়েছে, তারা বেড হাউসফুল ও ডাক্তার বিজি দেখে অল্পবিস্তর ক্যাঁওম্যাঁও জুড়তে পারে। তা ওদের আবার বেডের দরকার কবে থেকে পড়ছে? বরাবরের মতো হাসপাতালের মেঝে বা বারান্দায় চাটাই পেতে শুয়ে পড়বে!

পি-পি প্রাইজ

মানুষকে পেটালে ভিলেন, কিন্তু পুলিশকে পেটালেই বিপ্লবী। বীরপুরুষের আপন দেশে এ রকমটাই নিয়ম। তাই সাধারণ মানুষের ডিউটি, অপরাধীকে ধরতে এলেই পুলিশকে ধোলাই দেওয়া ও তাড়া করে ময়দান পার করিয়ে দেওয়া। এই অভ্যাসকে তোল্লাই দিতে, পুলিশ পেটানো শুরু হওয়ার ঠিক আগে, ৪২২ ডায়াল করুন, সঙ্গে সঙ্গে ‘পি-পি’ (পুলিশ প্রহার) কনটেস্টের বিচারকরা সেখানে পৌঁছে যাবেন, সুষ্ঠু ভাবে একে একে সব উদ্যত নাগরিককে প্রচণ্ড বেধড়ক পুলিশ-পেটানোর চান্স দেবেন, স্টপওয়াচে নিখুঁত হিসেব উঠবে, কে কত মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে এক জন তালপাতার সেপাই পুলিশকে ধড়াম নক-আউট করে দিল। যে জিতবে, নিউ ইয়ার্স ইভ-এ জগঝম্প পার্টির কাপ্ল এনট্রি পাস। এন্টার মারলেই লাইফ হানি সিংহের গান। আন্টি পুলিশ বুলা লেগি, পর পার্টি ইয়ুহি চলেগি।

সিসিটিভি

সর্বত্র সিসিটিভি লাগানো হোক। হ্যাঁ, বাথরুমেও। ক্ষতি কী? আরশোলা অ্যাটাক করলে হাতেনাতে প্রমাণ চাই তো রে বাবা। সিসিটিভি না থাকলে, টিউটর বাচ্চাকে পড়াচ্ছে না তুলে আছাড় মারছে, আয়ামাসি বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে না হুইস্কি, মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ফাঁকা দুপুরে লুডো খেলছে না জুডোর প্যাঁচ, সে সব বুঝব কী করে? তবে হ্যাঁ, যারা সিসিটিভি-র আওতায়, তাদেরও কিছু বলার থাকবে। অ্যান্টি-হ্যাকিং একটা বন্দোবস্ত অ্যাটাচ করে দিতে হবে ওর সঙ্গে। নইলে, হয়তো ভীষণ সরল আর পবিত্র এক মহিলা কিছু গুন্ডা নিয়ে এক জন গেরস্থকে পেটাতে গেছেন, তিনি সব্বার মুখের ওপর লিফ্ট বন্ধ করে দিয়েছেন বলে, আর মহিলা বলেওছেন কিছু বাছাই সংস্কৃত শ্লোক, এ দিকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল তাঁর মুখে ‘ডাবিং’ করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে যাচ্ছেতাই সব শব্দ, দুষ্টু ভাবনা। ছি! তাই চাই সৎ সিসিটিভি, অ্যাটেস্টেড বাই রুলিং পার্টির বুদ্ধিজীবী।

সুইসাইড চুক্কি

ডাক্তাররা পয়সার বিনিময়ে একটা সলিড প্রেসক্রিপশন দিন, যাতে লেখা থাকবে, ঠিক কয়খান ঘুমের বড়ি খেলে রাতে ছ’ঘণ্টা ঘুম হবে, ক’টা খেলে মরে যাবে, আর ঠিক ক’টা খেলে মরো-মরো অবস্থা হবে কিন্তু সত্যি সত্যি মরে যাওয়ার কোনও চান্সই নেই। ওইটাই আসল, ওই সুইসাইড-চুক্কির ম্যাজিক নাম্বারটা। লোকজনকে বেধড়ক সারপ্রাইজ খাইয়ে টানা বাহাত্তর ঘণ্টা ঘুম লাগাও, ভাল হাতের লেখায় সুইসাইড নোট বালিশ চাপা দিয়ে রাখো, যাতে চরম শত্তুরকে বেড়ি পরানোর মশালা মজুত। তার পর উঠে বসে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে, সুইসাইড অ্যাটেম্পট-এর গ্ল্যামারখানা পশমি চাদরের মতো গায়ে জড়াও। অভিমানিনী শ্রীরাধিকার মতো তুলতুলে চাউনি লাগিয়ে সবাইকে বোঝাও, তুমি কত্ত ভাল আর পৃথিবী কত্ত বেইমান আর বঞ্চনা বন্ধ না হলে তুমি ফের গুনে গুনে নিরাপদ ওষুধ গিলবে।

অ্যাটাচ্ড হোম-থিয়েটার

ফেসবুক পড়ে পড়ে বুঝেছি, এ তল্লাটে প্রতি ১০০ জনে ১২৩ জন সিনেমাবোদ্ধা, অন্তত ১১১ জন সিনেমাকরিয়ে ও ৪২০ জন সাপ-ব্যাং-অন্নপ্রাশন-বিয়েশাদি-ছাদেওঠা-ঝাঁটদেওয়া ইত্যাকার অগুনতি ইম্পর্ট্যান্ট অনুষ্ঠানের ছবি-তুলিয়ে আছেন। কেসটা হচ্ছে, এত ছবি-সিনেমা রাখবে ও তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা, দেখাবে কোথায়? যেই এক জন তার মোবাইলে বানানো ‘আমরা বাঙালি’ তথ্যচিত্র দেওয়ালে টাঙাল, আধ সেকেন্ডের মধ্যেই হিচককের ফ্যান কলকাতার শ্মশানের ওপর থ্রিলার বানিয়ে চালিয়ে দিল। কোয়ার্টার সেকেন্ড পরেই রঘু রাইয়ের ভাবশিষ্য এসে সকালের চায়ের ভাঁড়ের তিন হাজার অ্যাঙ্গলের স্টিল-ফোটো আটকাল। ফলত ফেসবুক হ্যাং। আর, পৃথিবীর সকলেই তো ফেসবুকে নেই। তারা টার্গেট-দর্শক নয়? তাই সলিউশন, প্রত্যেকটি বাড়িতে অ্যাটাচ্ড টয়লেটের ঢঙে অ্যাটাচ্ড হোম থিয়েটার। সেখানেই বড় স্ক্রিনে নিজের ফিল্ম বা স্টিল-ছবির প্রদর্শনী। টিকিট ৫০ পয়সা। ব্যবস্থা ভালই, আপনার আঁতেল হোম-ভিডিয়োটি পাশের বাড়ির প্রতুলবাবু মর্নিংওয়াক থেকে ফেরার পথে দেখে যাবেন। তিনি বেরোলে নেক্সট শোয়ে রান্নার দিদি ঢুকবেন হাতটাত ধুয়ে। আধুলিগুলোরও তো অ্যাদ্দিনে একটা হিল্লে হল।

শ্রীনির ভগবান

কোথা আছ ভগবান আমি জানি না। কিন্তু শ্রীনিবাসন তো নির্ঘাত জেনে বসে আছেন। সারা বছর তাঁর এগেনস্টে পর পর মৌত কা বাউন্সার কেস, জনগণ লোপ্পা ক্যাচ লোফার ভঙ্গিতে সোফায় বসে, অদ্যই শেষ রজনী, কিন্তু কাঁচা কদলী! সকালের কাগজে তাঁর মস্ত ছবি, মন্দিরে গিয়ে ছাইভস্ম মাখছেন। সন্ধে হতে না হতেই, কামাল। কী দৈববলে সব কমপ্লেনকে কমপ্ল্যান বানিয়ে চোঁ-চাঁ গিলে তিনি আরও আরও শক্তিধর, শত্তুররা লাইন দিয়ে ছাতু হয়ে শুয়ে, চিঁ করবারও রেস্ত নাই। মহাশয় আবার ইন্ডিয়া বোর্ডের স্বামী হয়ে অফিসে গ্যাঁট। ঠিক এই ভগবানটিকেই আমাদের জন্যও ডেকে দিন না সান্তাবাবু। উনি মহাত্রাতা। নিশ্চিত হার থেকে বাঁচিয়ে জিন্দেগি টেকনিকালার বানিয়ে দেন। আমার চাই, যুবরাজ সিংহেরও চাই, সহবাগেরও, মদন মিত্র আর শুভাপ্রসন্নর তো বটেই। ও হ্যাঁ, খাড়া-কান বড়-বড়-চোখ পিকে-র’ও চাই। শুরুর দিকেই খোয়া হুয়া রিমোটটা পাইয়ে দিলে, আর গোটা সিনেমা গরুখোঁজা করতে হবে না।

টফি

মিরাক্ল-টফি। যেই না সেটা টপাং করে মুখে দেবে, আলজিহ্বার বেদীতে মা সরস্বতী বীণাপুঁথি হাতে, বরাভয় আর চাঁদমালা মেলে সটান দাঁড়িয়ে গেলেন। তার পরে? চমৎকার! মাতা কি লীলা অব্রহ্মপার!!! নেতাই হোক বা অভিনেতা, রাগে কিংবা রিভেঞ্জে ,যেই না কুকথাটি মুখ দিয়ে সড়াৎ করে বার করতে গেছে, অমনি দেবী সরস্বতী খপাৎ করে জিভ ধরে বেঁকিয়ে-চুরিয়ে সবটা ফিল্টার করে দিলেন। বাস, ঠোঁট খুলতেই সু-কথার পুষ্পবৃষ্টি। মন আর মুখের সকল আবর্জনা রিসাইক্ল হয়ে আপনে আপ মধুবাক্য বনে বেরোচ্ছে। কেউ শা...অব্দি বলেই বলে ফেলল শালুকফুল, কেউ রগ ফুলিয়ে চোখ পাকিয়ে হাত মুঠো করে বলল, ‘আমি আমার ছেলেদের ঢুকিয়ে....’ ‘ইয়ে, ন্যাতা দিয়ে দেওয়াল নিকিয়ে চলে যাব।’ ভড়কে গিয়েই, আবার দ্বিগুণ রোখে, ‘আমি বিষ্ণুনগরের...’ আবার আটকাল, ‘ইয়ে, আতপ চাল।’ তার পরই ভ্যাবলার মতো এ দিক-ও দিক তাকাচ্ছে। লোকজন খেপে উঠতে গিয়ে মিইয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সতীসাধ্বী জ্যোর্তিময়ী বলছেন রামজাদা ভার্সাস ইশকজাদা। উনি কি অর্জুন কপূরের ফ্যান? কেউ কিচ্ছু বুুঝছে না। প্রীতি জিন্টাও আরাম করে ম্যাচ দেখছেন, তাঁকে ফোঁসফোঁস করে যা খুশি তা-ই বলতে গিয়েই ফ্যাঁচফ্যাঁচ হেঁচে এক্সকিউজ মি বলে কেটে পড়ছেন নেস ওয়াদিয়া। জিভ টানলেই ব্রেন আসে, তাই খাড়ুসদের হাতে মরতে গিয়ে হঠাৎ বেঁচে যাচ্ছেন নিদো টানিয়া। কাফেতে ঢুকেই বন্দুক গুটিয়ে জঙ্গিরা কেক বিলি করছে। পাকিস্তানের ইস্কুলে মানব-বোম ফাটাতে ঢুকে নিউ মার্কেট থেকে কেনা মেগা-বেলুন উড়িয়ে ফিরে আসছে। খানিক পরই ক্রিসমাস রঙের চ্যাপলিন টুপি পরে কচি কচি বাচ্চারা তুরতুর করে বাড়ি ফিরছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE