Advertisement
০৯ মে ২০২৪

এক চালেই বাজিমাত কল্যাণীর বিজ্ঞানীদের

দেখতে অবিকল বাসমতি, আর গন্ধে ষোলো আনা গোবিন্দভোগ। নাম ঠিক হয়নি, তবে ছিপছিপে শরীরে এমন স্বর্গীয় সুবাসের পরে নামে কি সত্যিই কিছু এসে যায়?

মিনিকিট গোবিন্দভোগ (বাঁ দিকে) ও সাবেক গোবিন্দভোগ। — নিজস্ব চিত্র।

মিনিকিট গোবিন্দভোগ (বাঁ দিকে) ও সাবেক গোবিন্দভোগ। — নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৩:০৯
Share: Save:

দেখতে অবিকল বাসমতি, আর গন্ধে ষোলো আনা গোবিন্দভোগ।

নাম ঠিক হয়নি, তবে ছিপছিপে শরীরে এমন স্বর্গীয় সুবাসের পরে নামে কি সত্যিই কিছু এসে যায়?

কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিসিকেভি) সম্প্রতি মিনিকিটের সঙ্গে গোবিন্দভোগ মিশিয়ে তৈরি করেছে এই নতুন প্রজাতির ধান। কৃষিবিজ্ঞানীদের দাবি, বাসমতির সঙ্গে রীতিমতো টক্কর দেবে এই ধান।

গোবিন্দভোগের মতো সামান্য ফুটলেই গলে পাঁক হয়ে যাবে না, সঙ্গে, বাসমতির মতো ঝরঝরে চেহারা আর সুঘ্রাণ। বিসিকেভি-র দামেও যা সাবেক বাসমতির চেয়ে অনেকটাই কম। বিসিকেভি-র বংশগতি ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক সোমনাথ ভট্টাচার্য জানান, মিনিকিট আর গোবিন্দভোগের মিশেলে এই নতুন ধানের চেহারা। গোবিন্দভোগ শুধু খরিফ মরসুমে চাষ হত। নতুন এই ধান, খরিফ ছাড়াও বোরো মরসুমেও দিব্যি চাষ করা যাবে। সে কারণেই গোবিন্দভোগ ও মিনিকিটকে বেছে নেওয়া হয় সংকর প্রজাতির এই ধান তৈরির জন্য।

সোমনাথবাবু জানান, ‘‘ধানে ১২টি ক্রোমোজোম থাকে। গ‌োবিন্দভোগের
‘জিন ম্যাপিং’-এর সময় দেখা যায়, ১ এবং ১২ নম্বর ক্রোমোজমে দু’টি জিন অনুপস্থিত। জিনের গঠনের খুঁতের জন্যই সুবাস থাকলেও ছিপছিপে ও লম্বা চেহারা ধরে রাখতে পারে না গোবিন্দভোগ। সেই জন্যই মিনিকিট আর গোবিন্দভোগের মিশেলে তৈরি এই নতুন ধানে ওই জিন দু’টিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই বাজিমাত।’’

নতুন এই ধানচাষে সুবিধা কী? কৃষিবিজ্ঞানীদের দাবি, ১৪৫-১৫০ দিন লাগে গোবিন্দভোগ তুলতে। কিন্তু মিনিকিট ১১৫ দিনের ধান। সাবেক গোবিন্দভোগের তুলনায় এর ফলন কিছুটা কম ঠিকই। কিন্তু চাষিরা এক মাস আগে ধান তুলে ফেলে অন্য একটি ফসল চাষ করতে পারবেন। ফলে লাভ বেশি হবে।

আরও একটি কারণে এই নতুন ধান বাজারে বাজিমাত করবে বলে মনে করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গোবিন্দভোগ চাল নরম। সহজে ভেঙে যায়। রান্নার সময় তাড়াতাড়ি গলেও যায়। নতুন ধরনের
এই ধানের চাল মিনিকিটের মতোই শক্তপোক্ত। আর তার সুবাসও অপরিবর্তিত থাকবে। এই ধান বেশ কয়েক বছর ধরে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হয়েছে।

নতুন ধরনের ধানকে স্বীকৃতি দেয় ‘অল ইন্ডিয়া কো-অর্ডিনেটেড রাইস প্রোগ্রাম’ (এআইসিআরপি)। এ ধানও রাজ্যে চাষের জন্য ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘শিগ্‌গির এই ধানের বীজ বাজারে ছাড়া হবে। তার পর দেখুন না কী হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BCKV scientist Rice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE