Advertisement
০২ মে ২০২৪
Anti Matter obeys Gravity

পদার্থবিজ্ঞানে মাইলফলক, অ্যান্টিম্যাটারও মাধ্যাকর্ষণ মেনে চলে, প্রমাণ সার্নে

১৯১৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ‘থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’-তেই এর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবু পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই গবেষণা এক মাইলফলক।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

কোনও পদার্থ বা ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটারের পরমাণুর ভর একই। কিন্তু ইলেকট্রিকাল চার্জ উল্টো। কোয়ান্টাম নাম্বারও ভিন্ন। তাই অ্যান্টিম্যাটারকে ম্যাটারেরই ‘যমজ ভাই’ বলা হয়। এ হেন ‘অ-পদার্থ’-এর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে অবাধ পতন প্রথম চাক্ষুষ করলেন ইউরোপের পদার্থবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাগার সার্নের বিজ্ঞানীরা।

এই গবেষণা ও তার ফলাফল খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না পদার্থবিদদের কাছে। তাঁরা অনুমান করেইছিলেন কী হতে চলেছে। ১৯১৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ‘থিয়োরি অব রিলেটিভিটি’-তেই এর স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। তবু পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই গবেষণা এক মাইলফলক। কারণ, অ্যান্টিম্যাটার চিরকালই বিজ্ঞানীদের মনে রহস্য হয়ে বাসা বেঁধেছিল। আইজ্যাক নিউটন দেখেছিলেন আপেল মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে মাটিতে পড়ছে। কিন্তু আপেল যদি ম্যাটার না হয়ে অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি হত, তা হলে কী হত?
তা হলে কি মাটিতে না পড়ে উপরের দিকে উঠে যেত? এমন প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর ছিল না
এত দিন। বেশির ভাগ বিজ্ঞানী এটাই বিশ্বাস করতেন যে অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি হলেও আপেল মাটিতে পড়ত, কিন্তু তার প্রমাণ ছিল না। সার্নের গবেষণা প্রমাণ করে দিল যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অ্যান্টিম্যাটারের ক্ষেত্রেও একই ভাবে কাজ করে। অর্থাৎ আপেল অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি হলেও মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে মাটিতে পড়ত। এই গবেষণায় মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা আরও কিছুটা স্পষ্ট হল বিজ্ঞানী-মনে।

আমরা আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখতে পাই, সবই পদার্থ বা ম্যাটার। প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাংয়ের সময়ে সমপরিমাণ ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার তৈরি হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু দৃশ্যত এই মহাবিশ্বে কোনও অ্যান্টিম্যাটার নেই। কিন্তু তা হলে সেটা কোথায় গেল? সার্নের আলফা কোলাবোরেশনের এক সদস্য বিজ্ঞানী জেফরি হ্যাংস্টের কথায়, ‘‘বিশ্বের অর্ধেকই নিরুদ্দেশ।’’ পদার্থবিদেরা বিশ্বাস করেন, ম্যাটারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল অ্যান্টিম্যাটারের। কিন্তু বিগ ব্যাংয়ের সময়ে একে অপরকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল তারা। এখন যা পড়ে আছে, তার অনুপাত এ রকম— বিশ্বের পাঁচ শতাংশ ম্যাটার।
বাকিটা প্রায় অজানা ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরি। কিন্তু অ্যান্টিম্যাটার প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছিল।

অ্যান্টিম্যাটারের অস্তিত্ব নিয়ে যদিও নিশ্চিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাই একে ভাল করে জানতেই গবেষণাটি করেছিলেন তাঁরা। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে অ্যান্টিম্যাটার মাটিতে পড়ে না কি বিপরীতে গিয়ে উপরের দিকে উঠে যায়, তা দেখতে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন জেফরিরা। তিনি বলেন, ‘‘হাতেকলমে দেখে নিলেই তো হয়!’’ তিনি এই গবেষণাকে গ্যালিলিও-র সেই বিখ্যাত পরীক্ষার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৬ শতকে পিসার হেলানো টাওয়ারের উপর থেকে দু’টি ভিন্ন ভরের বল মাটিতে ফেলেছিলেন গ্যালিলিও। এ ক্ষেত্রে অবশ্য অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে গবেষণা ৩০ বছর ধরে চলেছে। গ্যালিলিও-র থেকে অনেক বেশি সময় নিয়েছে। এর অন্যতম কারণ, অ্যান্টিম্যাটারের আয়ু খুব কম, খুবই ক্ষণস্থায়ী। তাই একে নিয়ে পরীক্ষা করা কঠিন। ১৯৯৬ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা প্রথম গবেষণাগারে অ্যান্টিম্যাটারের পরমাণু— অ্যান্টিহাইড্রোজেন তৈরি করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CERN Isaac Newton Albert Einstein gravity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE